আজকে বাবা,জামাই , ভাসুরদের জন্য পান্জাবী আর মেয়েদের জন্য জামা কিনব…গুলশান আড়ংয়ে যাবো …কাছাকাছি থাকলে চলে এসো একসাথে লান্চ করা যাবে।
– তোমার ফ্লাইট আজকে না?
সেটাতো রাত দুটায়…রাত ১১ টায় এয়ারপোর্ট গেলেই হবে।
– তুমি বললে না করার সাধ্য আমার নেই ..কাছাকাছি এসে কল দিও।
প্রিয়তা আজকে চলে যাবে। দেখা করা জরুরী ছিলনা কিন্তু মন চেয়েছে বলেই আমাকে কল দিয়েছে…হয়ত কিছু বলবে..যাবার আগে হয়ত পুরানো কোন কথা বলবে যেগুলোর এখন তেমন মূল্য নেই। লালন সাঁই বলে গেছেন “সময় গেলে সাধন হবেনা”।
আড়ংয়ে দেখা হবার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে পান্জাবী গুলো কেনা হয়ে গেল । মেয়েদের জন্য পোষাক কেনার পর শাড়ী সেকশনে কিছুক্ষন থাকলাম..ওকে একটি শাড়ী পছন্দ করতে বললাম …কোন ভাবেই রাজী হলো না।আড়ংয়ের ভেতরে ছোট একটা ফুড কর্নার আছে ওখানেই লান্চ করে নিলাম। এরপর নর্থ গুলশান গেলাম কফি খেতে। খুব কাছাকাছি দুজন বসা কিন্তু তেমন কোন কথা বলছেনা প্রিয়তা।জানতে চাইলাম চুপ করে আছো কেন। বললো….দেশে বাবা-মা রেখে এতদূর থাকি ..কাছে পেলে উনারা কেমন করতে থাকে …মনে হয় পরেরবার আসলে যদি কেউ একজন না থাকেন … মনটা ভারী হয়ে যায়।কফি খাবার সময় একটা পরিচিত গন্ধ পেলাম …..
-জানতে চাইলাম তুমি কি Midnight Fantasy by Britney Spears (perfume)ব্যাবহার কর।
..হাঁ ,কেন তোমার পরিচিত কেউ ব্যাবহার করে।
-হ্যাঁ ,আমার ওয়াইফ এটা ব্যাবহার করে…।
আমাকে একটু মিরপুর নামিয়ে দিয়ে এসো…..আরও কিছুক্ষন কথা বলা যাবে। গাড়ীতে উঠার পর প্রিয়তা ..বললো …..অনলাইনে এতদিনের পরিচয় ,আজকে মাত্র দ্বিতীয় বার দেখা..যদি তোমার আপত্তি না থাকে … আমার হাতটা একটু ধরবে।
-তোমার বাসার কাছে পরিচিত কেউ আমাদের দেখলে কোন প্রবলেম হবে না?
প্রিয়তা অনেকক্ষন হেসে উত্তর দিলো…কেউ দেখলে বলবো উবার ড্রাইভার তুমি…উল্টা-পাল্টা চালাচ্ছিলে তাই সামনের সিটে বসে গাইড করছিলাম।
ওকে নামিয়ে দিয়ে বাসায় আসার সময় খেয়াল করলাম আমার হাতে মিডনাইট ফ্যানটাসির গন্ধ লেগে আছে ,তীব্র গন্ধটা সহজে যাবেনা।
বাসায় আসার পর বার বার ঘড়ির দিকে চোখ যাচ্ছে রাত ৯টা ….১০টা…।
ঠিক ১১ টায় ইন্টারন্যাশনাল ডিপার্টচারে টিকিট কেটে ভেতরে নজর রাখছি কখন প্রিয়তা আসে। ১০ -১২ মিনিট পর দেখলাম প্রিয়তা কান্নাভেজা চোখে একটা ট্রলি নিয়ে ভেতরে আসছে । আমি একটু আড়ালে পেছন থেকো প্রিয়তার চোখ ধরে বললাম …বলতো কে?
তোমার হাতে এখনও গন্ধটা আছে…একটু অবাক হয়ে বললো ..এখানে আসবে আমাকে বলনি কেন।
কাউন্টারে লাগেজ দিয়ে বোর্ডিং কার্ড নিয়ে আমরা চেয়ারে বসলাম।প্রিয়তা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নেগেটিভ কথা বলা শুরু করলো….শেষে বললো …এই দেশের কোন ভবিষ্যৎ নেই…।তোমরা দেশে থেকে ভুল করেছো…। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল । বললাম….আমি এসেছি তুমি খুশী হওনি?
কান্না লুকিয়ে বললো ..পরের বার আসলে তোমাকে আবার হারিয়ে ফেলবো নাতো।প্রিয়তা ওর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে সুন্দর একটা midnight fantacy সেন্টের প্যাকেট আমাকে দিয়ে বললো…এটা তোমার ওয়াইফের জন্য!
প্রিয়তাকে বিদায় দিয়ে মধ্যরাতে ঢাকার নিয়ন আলোতে মাতালের মতো গাড়ী চালিয়ে বাসায় ফেরার সময় ..একটা চিন্তায় মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকলো……এই শহর আমার…এই দেশ আমার।।
১৬টি মন্তব্য
ব্লগ সঞ্চালক
প্রিয় ব্লগার, সোনেলায় নিয়মিত লেখার জন্যে আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি দয়া করে লেখার শিরোনামটি বাংলা অক্ষরে লিখুন। সময় করে ব্লগের নীতিমালায় চোখ বুলিয়ে নিন। তাহলে সোনেলা ব্লগ পরিবারে আপনার জন্য ব্লগিং করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
নিয়মিত পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
শুভ ব্লগিং।
মহানন্দ
ধন্যবাদ।
ব্লগ সঞ্চালক
দয়া করে লেখার শিরোনামটি বাংলা অক্ষরে লিখুন।
সাবিনা ইয়াসমিন
মাত্র দু’বার দেখা। হয়তো প্রথমবার হাতটি ছুঁয়ে দেখা হয়নি, সুবাসটা মনের কোণে লুকানো ছিলো। পরেরবার হাতের টানেই ছুটে যেতে হয়েছে বিদায়ের মুহুর্তে। ছোঁয়ার মাঝে যে মায়া থাকে, তার সৌরভ কাটানো মুশকিল। আবার কিছু টান মোহের চাইতেও খুব বেশি প্রবল হয়, যেমন মাটির টান, জন্মভূমির টান। মাটির সুবাস যে প্রানভরে নিতে পারে, তার মনে অন্য কোন সুবাস দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
খুব ভালো লাগলো দাদা।
শুভ কামনা 🌹🌹
মহানন্দ
ধন্যবাদ আপনাকে । মধ্যবয়স পার করার পর মনে হচ্ছে জগতে মায়াটা অনেক মূল্যবান। এই উপলদ্ধি যদি কিছুকাল আগে আসতো তাহলে হয়তো বেঁচে থাকাটা অনেক সুন্দর হতো।
সাবিনা ইয়াসমিন
হ্যা দাদা, মায়া খুব অদ্ভুত জিনিস। জীবনের একেকটা অধ্যায়ে একেক রকম মায়ার আবির্ভাব হয়। নিজের প্রতিও এক সময় মায়া জন্মে যায়। তখন এটাকে আবিষ্কার করার মতোই লাগে। বেঁচে থেকেও বাঁচার মায়া উপলব্ধিতে যখন আসে, তখন আনন্দ আর উদাসীনতা একসাথে ধরা দেয়। মনেহয় কেন আরেকটু আগে এলো না, আরেকবার নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার তাগিদ অনুভূত হয়।
ভালো থাকুন দাদা। 🌹🌹
মাছুম হাবিবী
ভাইজান লেখার ভেতরে…… গুলো একটু কম দিলে লেখাটি আরো স্পষ্ট হত। খুব ভালো লেগেছে, অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য!
মহানন্দ
ধন্যবাদ আপনাকে।
শাহিন বিন রফিক
অনু গল্প কিন্তু ছুঁয়ে দিয়ে গেল এক অসাধারণ ভাললাগা।
অনুগল্প হিসাবে এই গল্পে আমার রেটিং-৭.৫/১০
মহানন্দ
ধন্যবাদ আপনাকে ।
হালিম নজরুল
লেখার আর্ট চমৎকার
মহানন্দ
ধন্যবাদ আপনাকে
মোঃ মজিবর রহমান
হাতের ছোয়ায় মিডনাইট ফ্যান্টাসি সুগন্ধ ওয়াও। যা আত্বজ থেকে উঠে আসে তা কি সহজে ভুলা যায় প্রিয়।
মহানন্দ
ধন্যবাদ আপনাকে
ফয়জুল মহী
অনুপম,অতুলনীয় লেখা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আবেগঘন লেখা, ভালো লাগাটা যেনো ছুঁয়ে গেল হৃদয়ে। ধন্যবাদ দাদা