
শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রবীন্দ্রস্মৃতি-বিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান ও পর্যটনকেন্দ্র। ১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইলসূত্রে রবীন্দ্রনাথের দাদা দ্বারকানাথ ঠাকুর এ জমিদারির মালিক হন। রবীন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে প্রথম শিলাইদহে আসেন ১৮৮৯ সালের নভেম্বর মাসে।
কবির যখন ভরা যৌবন এবং কাব্য সৃষ্টির প্রকৃষ্ট সময়, তখনই তিনি বিচরণ করেছেন শিলাইদহে। কখনও একাকী, কখনও স্ত্রী, পুত্র-কন্যা নিয়ে এসেছেন শিলাইদহে, পেতেছেন ক্ষণিকের সংসার; ঘুরে বেড়িয়েছেন বোটে, পালকিতে। যে লেখার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ বিশ্ব দরবারে পরিচিত হন; নোবেল পুরস্কার পান, সেই লেখার স্থান শিলাইদহ হওয়ায় কুষ্টিয়াবাসী তথা দেশবাসী আজ গর্বিত। শিলাইদহে বসে রবীন্দ্রনাথ যেসব গান-কবিতা লিখেছেন, তার মধ্যে কুঠিবাড়ির পাশে বকুলতলার ঘাটে বসে লেখা “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে” গড়াই নদীতে বোটে বসে লেখা “সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর” “শিলাইদহে বসে লেখা “আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ”, “কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি” প্রভৃতি। কবিগুরু শিলাইদহে ছিলেন ১৯২২ সাল পর্যন্ত। এই সুদীর্ঘ ৩০ বছর এখানে অবস্থানকালে তিনি সৃষ্টি করেছেন সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
১৯৫৮ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ব্যবস্হাপনায় শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িটি গৌরবময় স্মৃতিরূপে সংরক্ষিত আছে । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুঠিবাড়িটি গুরুত্ব অনুধাবন করে কবির বিভিন্ন শিল্পকর্ম সংগ্রহপূর্বক একে একটি জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় । পুরো ভবনটি এখন জাদুঘর হিসেবে দর্শকদের জন্যে উম্মুক্ত । জাদুঘরের নীচ ও দ্বিতীয় তলায় ১৬টি কক্ষেই কবি রবীন্দ্রনাথ, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, কৃষক বন্ধু রবীন্দ্রনাথ অর্থাৎ নানা বয়সের বিচিত্র ভঙ্গির রবীন্দ্রনাথের ছবি । বাল্যকাল থেকে মৃতু্শয্যার ছবি পর্যন্ত সংরক্ষিত আছে । তাছাড়াও রয়েছে শিল্পকর্ম এবং তাঁর ব্যবহার্য আসবাবপত্র দিয়ে পরিপাটি দিয়ে সাজানো।
(২) কুষ্টিয়া শহর থেকে শহর থেকে শিলাইদহ যেতে পাড়ি দিতে হয় গড়াই নদী। গড়াই নদীর মাঝ খানে বালির চর থাকায় প্রথমে এক ট্রলার দিয়ে নদীর মাঝখানে নামতে হয়। পরে অন্য ট্রলার দিয়ে বাকী অর্ধেক পার হয়ে উপারে যেতে হয়। এখানে আমরা মাঝ নদীর বালুচরে নামছি।
(৩) মাঝ নদী থেকে দ্বিতীয় ট্রলারে চড়ছি। অবশ্য অন্য পাশ দিয়া নদী পার হওয়ার জন্য ব্রীজও আছে।
(৪) এমন রাস্তা দিয়ে সিএনজি নিয়ে ছুটে গেছি আমরা শিলাইদহের দিকে।
(৫) রাস্তার পাশে কখনো দেখেছি এমন ফুলে ভরা ডোবা, কখনো ধান ক্ষেত। মূলত এটা একটা নিরেট গ্রাম।
(৬) গ্রামের বাড়ি ঘর গুলো প্রায় এমনি।
(৭) এক সময় আমরা পৌছে গেলাম কুঠিবাড়ির দরজায়।
(৮/৯) লনের ঘাস ও রঙ্গন বনে খেলা করছিল প্রজাপতিরা। কবি এসব দেখলে হয়তো সৃষ্টি হতো আরো কিছু কাব্য গ্রন্থ।
(১০) এমন পাকা রাস্তা প্রায় ১১ একরের পুরো কুঠি বাড়ি ঘুরে দেখার জন্য বিস্তৃত।
(১১) পুকুরের মাঝে ডুবে আছে একটা বোট, যদিও এটা আসল বোট নয়। রবিন্দ্রনাথের মূল পদ্মা বোটের ডামি হিসাবে বানানো হয়েছিল। এই কুঠিবাড়ি ও পদ্মা বোটে বসে রচিত হয় রবীন্দ্রসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফসল সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী, কথা ও কাহিনী, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য ও খেয়ার অধিকাংশ কবিতা, পদ্মাপর্বের গল্প, নাটক, উপন্যাস, পত্রাবলী এবং গীতাঞ্জলি ও গীতিমাল্যের গান।
(১২) ডাব গাছ, সুপারি গাছ, কাঠ বাদাম গাছ যেন, মিলেমিশে আছে ওরা আত্মীয় হেন।
(১৩) রবিন্দ্রনাথের সময়ের একটা পুরোনো আম গাছ, তার ফাঁকে দেখা যাচ্ছে রবিন্দ্র কুঠিবাড়ি।
(১৪) রবিন্দ্রনাথের আমলের পুরোনো অনেক আম গাছের সাথে নতুন আমের গাছও লাগানো হয়েছে প্রচুর। তার মাঝখান দিয়া চলাচলের জন্য নির্মিত পাকা রাস্তা।
(১৫) একটা ছোট বসন্ত বাউরি অন্য পুকুরটার অশথ্থের ডালে বসে উঁকিঝুঁকি মারছিল।
(১৬) এবার ঢুকে গেলাম বাড়িটির ভেতরের রবিন্দ্র সংগ্রহশালায়। এই সিন্দুকটি বরি ঠাকুর নিজে ব্যবহার করতেন।
(১৭) রবি ঠাকুরের সময় ব্যবহৃত আট বেহারার পালকী।
(১৮) এই ডিম্বাকৃতির টেবিলটি রবি ঠাকুর নিজে ব্যবহার করতেন।
(১৯) রবি ঠাকুর কর্তৃক ব্যবহৃত সোফা।
(২০) ইঞ্জিন চালিত স্পিডবোট (চপলা)। এটি রবি ঠাকুর নিজে ব্যবহার করতেন।
(২১) কুঠিবাড়ির দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোলা বাড়ির সামনের দিকের ছবি।
(২২) সব শেষে কুঠিবাড়ির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আমি।
২১টি মন্তব্য
রুমন আশরাফ
দুই বার গিয়েছিলাম ওখানে। একবার কুষ্টিয়া থেকে আর একবার পাবনা থেকে নদী পার হয়ে।
কামাল উদ্দিন
আমার মাত্র একবারই ওখানে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে ভাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
ওয়াও!
আপনার সৌজন্যে অনেক কিছুর মাঝে
শিয়ালদহের রবি ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও
দেখা হল।
ধন্যবাদ। শুভকামনা।
কামাল উদ্দিন
আপনাকেও ধন্যবাদ দাদা, ভালো থাকুন সব সময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আমিও চার বছর আগে গিয়েছিলাম। অসম্ভব ভালো লেগেছিল। পাংশা থেকে ট্রেনে তারপর অটোতে ওখানে গেলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, ভালো থাকুন সব সময়।
হালিম নজরুল
চমৎকার তথ্যবহুল পোস্ট
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা জানবেন নজরুল ভাই।
ফয়জুল মহী
সবই চমৎকার ।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
অনেক স্মৃতিময় এই স্থানটি, বহুবার গিয়েছি এখানে।
থেকেছি দিন ভর।
আবার দেখে ভাল লাগল।
কামাল উদ্দিন
আমি মাত্র একবারই গিয়েছি ভাই, ভালো থাকবেন।
সুরাইয়া পারভীন
চমৎকার তথ্যবহুল পোস্ট। আমি কখনো যাইনি
তবে আপনার সৌজন্যে দেখা হয়ে গেলো
শিয়ালদহের রবি ঠাকুরের কুঠিবাড়ি
কামাল উদ্দিন
আমার খালি ঘুরতে মন চায় আপু, তাইতো সুযোগ পেলে তা হাতছাড়া করি না, ধন্যবাদ।
বন্যা লিপি
কুষ্টিয়া বেড়াতে গিয়েছিলাম ১৯৮৮ সালে।তখন খুব যেতে ইচ্ছে করছিলো, লালন ফকির আর কুঠিবাড়ি দেখতে। বিধিবাম! যাওয়া হয়নি।
আপনার এমন তথ্যবহুল চমৎকার পোস্ট পড়ে দারুন সব ছবি আর তথ্য জানা হলো।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
কামাল উদ্দিন
বিধি হয়তো কোন এক সময় ডান হবে……শুভ কামনা জানবেন আপু।
নাজিয়া তাসনিম
পোস্টটি পড়ে আমারও যেতে ইচ্ছে করছে।
কামাল উদ্দিন
ইতিহাসকে জানার ইচ্ছে যাদের আছে তাদের যেতে ইচ্ছে করাটা অস্বাভাবিক নয় আপু, শুভ কামনা সব সময়।
নিতাই বাবু
একসময় যখন টেক্সটাইলে কাজ করতাম, তখন অনেক সহকর্মীদের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলা কয়া গ্রামেরই ছিল। মালিকের বাড়িও ছিল কুষ্টিয়া কয়া গ্রামে। শেষতক মালিক তাঁর নিজের জন্মভূমিতেই টেক্সটাইল মিল স্থাপন করে ফেললো। মিলের নাম ছিল মহিউদ্দিন স্পেশালিষ্ট টেক্সটাইল মিলস্। মিলে তৈরি হতো ছাতার কাপড়। যেই কাপড় দিয়ে ছাতা তৈরি হতো, সেই ছাতার নাম ছিল “লালন ছাতা”। কুষ্টিয়া মেইন টাউনেই ছিল লালন ছাতার দোকান। সেসময় আমাকে অনেক অনুরোধ করেছিল, তাঁদের কুষ্টিয়ার মিলে যাবার জন্য। কিন্তু যাবো যাবো করেও আর এপর্যন্ত যাওয়া হয়নি। তাই আর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুটিবাড়ীও দেখা হয়নি। এখন দেখলাম আপনার ছবি ব্লগের ছবিতে। শুভকামনা থাকলো দাদা।
কামাল উদ্দিন
আপনার জীবনটা সত্যিই বৈচিত্রে ভরপুর দাদা, শুভ কামনা থাকল।
জিসান শা ইকরাম
একবার গিয়েছিলাম বন্ধু ছাইরাছ হেলাল সহ,
পুকুরের নৌকাটি তখন ভেসেই ছিল।
প্রজাপতির ছবিতে মুগ্ধ,
শুভ কামনা।