
ছোট বেলায় অনেক অনেক খেলাধুলার মাঝে আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলা ছিলো গাছে চড়া। তখন বড় মাঠ বা গাছ খুঁজতে দূর-দূরান্তে যেতে হতো না। আমাদের এলাকাটাই ছিলো গাছে-মাঠে পরিপূর্ণ। পরীক্ষার সময়টা ছাড়া তখনকার মা-বাবারাও পড়া নিয়ে স্টিমরোলার চালাতো না। সন্তানের মেধার উপর তাদের বিশ্বাস-ভরসা শতভাগই ছিলো, আর ছিল নিকটতম প্রতিবেশীদের প্রতি আস্থা। তখন ছোট ছেলেমেয়েদের কেউ রেপ করতে পারে এমন ধারণার জন্মই হয়নি হয়তো। তাই আমি/ আমরা আমাদের দুরন্তপনার শীর্ষে অবস্থান করতাম। 😀
স্কুলটা যত না পড়া জন্যে ভালো লাগতো, তারও বেশি ভালো লাগতো বড় মাঠে খেলাধুলা করতে পারার জন্যে। আর ঐ সময়ের স্যার/ ম্যাডাম! তারা সাক্ষাৎ দেব-দেবী ছিলো। এত দুষ্টুমি করেছি, এত করেছি কিন্তু বাড়িতে কখনো নালিশ পাঠায়নি। মাঝে মধ্যে শাস্তি দিতেন। আমাদের স্কুলের মাঠে দলবদ্ধ করে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখতেন। ঐ শাস্তিটা কেন জানি আমাদের শাস্তি মনেই হতো না। কারণ প্রতিদনই ১০০/৫০ জন একই অবস্থানে থাকতো।
আমরা বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে প্লান করতাম স্কুলে বসে বসে। বাড়ি ফিরে কি কি করবো। সকাল সাতটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত স্কুল টাইম। প্রাইভেট টিচার আসতো বিকেল তিনটায়। বড়জোর এক ঘন্টা তাকে সময় দিতাম। এরপর মাগরিবের আজানের আগে মা আমাকে দুরবিন দিয়েও খুঁজে পেতো না।
তারপর শুরু হতো গাছে চড়ার প্রতিযোগিতা। কে কত বড় গাছে উঠে লাফ দিয়ে নামতে পারি, এটাই ছিলো প্রতিযোগিতার মুল অংশ। অনেকে উঠতো ঠিকই কিন্তু নামতে আর পারতো না। পরে তাদের বাসা থেকে লোকজন এসে নামিয়ে দিয়ে যেতো। আমার অবশ্য তেমন কিছু হয়নি। লাস্টবার দুপুর বেলায় বেল গাছের মগডালে বসে আছি, এমন সময় দূর থেকে দেখি মাই ফাদার ইজ কামিং, ওমনি দিলাম লাফ। পায়ে দুটো কাঁটা বিঁধে ছিলো। ঐ অবস্থাতেই দৌড়ে বাড়ি ফিরেছিলাম। আব্বাও লাঠি হাতে আমাকে এমন পিটুনি দিলেন,,,এক সপ্তাহ পর জ্বর ভালো হয়েছিলো।
এরপর আর গাছে চড়িনি। কেমন করে জানি শখটা ধিরে ধিরে ভালোবাসায় পরিনত হয়ে গেলো। গাছকে ভালোবাসলাম। আমার গাছ ভালো লাগে। বড় গাছ। কেন যেন ছোট ছোট গাছ বা লতানো গাছ গুলো আমার বেশি একটা পছন্দ না। বড় প্রাচীন ছায়া-বৃক্ষের প্রতি আমার মনে শুধু ভালোবাসাই না শ্রদ্ধা কাজ করে। যখনই কোন প্রাচীন বৃক্ষের সামনে দাড়াই, একবার হলেও তাকে জড়িয়ে ধরি। আমি শান্তি পাই।
তালগাছ আমার অনেক পছন্দের একটা গাছ। এটাই একমাত্র গাছ যেটাতে আমি কখনো চড়তে পারিনি। চলতি পথে যখনই কোন তালগাছ দেখি তাকিয়ে থাকি, যতক্ষণ না দৃষ্টির আড়াল হয়।
* ভালোবাসা হয় বৃক্ষের সাথে, গাছের সাথে নয় *
১৫টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
মজার গল্প তো !
গাছ , বৃক্ষ , লতা পাতা
স্কুল , শাস্তি , জ্বর
কি নেই তাতে ?
আর একবার শৈশবে গেলাম ফিরে
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
তাল গাছ দেখার আরো অনেক কারণ আছে, তাহলো শত গাছ থাকলে যতোটা সুন্দর দেখা যায় তাদের ভেতর একটা তাল গাছ থাকলে ঐখানটার সৌন্দর্য্য শতগুণ বেড়ে যায়। তাই আমি বলি তাল গাছ সকল গাছ থেকে সুন্দর গাছ।
কামাল উদ্দিন
আর গাছে চড়ার ব্যাপারে সমান বন্ধুদের মধ্যে আমিই ছিলাম সেরা। ডাল ভেঙ্গে পরার অভিজ্ঞতাও কিন্তু আমার আছে। পাখির ছানার জন্য অনেকবার তাল গাছে উঠেছি। তবে তাল গাছ একটা ভয়ঙ্গর গাছ, ওটায় চড়লে কাটাছেড়া ছাড়া নামা প্রায় অসম্ভব।
জিসান শা ইকরাম
শিরোনাম হতে আরম্ভ করে সমস্ত লেখা জুড়েই আছে গাছ বন্দনা,
” কেমন করে জানি শখটা ধিরে ধিরে ভালোবাসায় পরিনত হয়ে গেলো। গাছকে ভালোবাসলাম। আমার গাছ ভালো লাগে”
শেষে কিনা বললেন * ভালোবাসা হয় বৃক্ষের সাথে, গাছের সাথে নয় * !
ঠিক বলেছেন রোজ যদি ১০০-৫০ জন এই শাস্তি পায়, তা শাস্তি বলে মনে হবে কেন?
তালগাছের উপরের আড়াই হাত খুবই পিচ্ছিল, কেউ হাত পা জড়িয়ে ঐ আড়াই হাত উঠতে পারে না।
লেখা সুন্দর হয়েছে, কিভাবে গুছিয়ে লিখতে হয়, তা আপনি জানেন। ।
শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
দেখুন প্রাচীন গাছ খুব উপাদেয়, ছায়া-বাতাস দেয় ঠিক-ঠাক, তবে এগুলোতে সাপ-কোপ বিছে-আরশোলা গিরগিটি
আর ভুত-প্রেত থাকে। ডাইনীরাও বাসা বাঁধে!
তালগাছে-ও প্রেতদের আস্তানা হয়, তবে তালের রস না কী সাধু!
স্মৃতিচারণের গল্প সুন্দর হইছে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
🤣🤣🤣🤣🤣 ভয় দেখাচ্ছেন !
ইকবাল কবীর
বলেন কি মগডাল থেকে লাভ দেওয়াতো ভয়ংকর ব্যাপার। আমি ছোট বেলা গাছে চরতাম। কিন্ত এখন সেই গাছ দেখেলে নিজেরই বিশ্বাস হয়না যে এই গাছে একদিন আমি চড়েছি। যাইহোক বয়সের সাথে সাথে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়। এখন গাছে না চড়লেও সময় সুযোগ বুঝে গ্রামে গেলে গাছ লাগাই। আমি বেশীরভাগ লাগাই ফলের গাছ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপু আপনার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে , আপনি তালগাছ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেন না বলে। প্রাচীন গাছগুলো দেখলে সত্যিই কেমন জানি মনে হয়। ওরা এভাবে দাঁড়িয়ে আছে বছরের পর বছর কত শত স্মৃতি নিয়ে। ভালো লাগলো আপনার একান্ত অনুভূতি। শুভ কামনা রইলো
তৌহিদ
তালগাছ কিন্তু নিরপেক্ষ তা জানেন? বিচারের মধ্যে দেখেন না সবাই তালগাছটি চায়? আপনি যে দারুণ দুরন্ত ছিলেন বোঝাই যাচ্ছে।
প্রেম বৃক্ষের সাথেই হয় গাছের সাথে নয়। অত্যন্ত গম্ভীর কথা। ভালো থাকবেন আপু।
সুরাইয়া পারভীন
ছোট বেলায় অনেক অনেক খেলাধুলার মাঝে আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলা ছিলো গাছে চড়া। আরে বাহ্ এটা তো আমার প্রিয় ছিলো। ইশ এ জন্য যে কতো বকা দিয়েছে মা।
সুরাইয়া পারভীন
ভালোবাসা হয় বৃক্ষের সাথে, গাছের সাথে নয় *
ভালো লেগেছে এটা। পুরো তাল গাছে উঠতে না পারলেও মাঝ বরাবর উঠেছি আমি🌴🌴
নিতাই বাবু
তালগাছে একবার হলোও চড়ে দেখা আপনার দরকার ছিল বলে আমি মনে করি। কারণ, আপনি গাছ প্রিয় একজন। গাছে চড়া আর স্কুল জীবনে ঘটনা পড়ে আমার নিজের স্মৃতিতে চলে গেলাম, শ্রদ্ধেয় দিদি। শুভকামনা থাকলো।
সঞ্জয় মালাকার
দিদি পড়তে পড়তে একবার শৈশবে গেলাম ফিরে।
শুভ কামনা দিদি 🌴🌴
সৈকত দে
মনে হলো আবার ছোটবেলায় ফিরে গেলাম। তাল গাছে রস খেয়েছেন কখনো?
আসিফ ইকবাল
চমৎকার লেখা! গাছের প্রতি বলো আর বৃক্ষের প্রতি বলো আমার-ও রয়েছে প্রগাঢ় ভালবাসা। তাল, নারকেল, সুপারি- সব-ই ভালোবাসার গাছ। তবে, ছোটবেলায় গাছে চড়ার সুযোগ খুব একটা পাইনি। জন্ম, বেড়ে ওঠা সব-ই ঢাকায় বলেই হয়তো। তবে আমাদের স্কুলেও প্রচুর গাছ ছিল। বেশীরভাগ-ই ছিল অনেক পুরানো, আর বিশাল। বিশেষ করে আকাশমণি আর কৃষ্ণচূড়া গাছের ছড়াছড়ি ছিলো। ফলের গাছ কম ছিল, তবে আম গাছ ছিলো কিছু।