
বানীশান্তা নামটা শুনেছি অনেক আগেই। তবে প্রথম যেবার সুন্দর বনে গেলাম, সেবার লঞ্চের সারেংকে জিজ্ঞেস করেছিলাম নদীর পারে ঐযে সারি সারি কুঁড়ে এটা কোন এলাকা। তিনি জবাব দিয়েছিলেন ওটা খারাপ এলাকা, নাম বানীশান্তা। হুট করে মনে পড়ে গেল বানীশান্তা নিয়ে কোথাও পড়েছিলাম। আর তারপর থেকে বানীশান্তার বাসিন্দাদের সাথে পরিচিত হওয়ার ইচ্ছেটা মনের ভেতর পুষে রেখেছিলাম।
বানীশান্তা এক সময় দেশের সবচেয়ে বড় পল্লী হিসেবে স্বীকৃত ছিল। ১৯৫৪ সালে যখন মংলা সমুদ্র বন্দর গড়ে ওঠে তখন থেকেই এই পল্লীর যাত্রা। এটি তখন আজকের জায়গাটিতে ছিল না। ছিল মংলা শহরতলীর কুমারখালী খালের উত্তরে। প্রথমে ২০/২৫ যৌন কর্মী নিয়ে পল্লীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। তারপর যখন ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে মংলা বন্দরের শহর বড় হয়, লোকসংখ্যা বাড়ে তখন পল্লীটিও পশুর নদীর পশ্চিম পাড়ে স্থান্তরিত হয়।
তো আমার মনে কোথাও যাবার ইচ্ছে থাকলে সেটা কোন না কোন ভাবে পুরণ হয়েই যায়। বানীশান্তার ইচ্ছেটাও একদিন পুরণ হলো। বাগের হাটে গেলাম খানজাহান আলীর মাজারে তারপর গেলাম মংলা বন্দর দেখতে। মংলা থেকে ট্রলারে করে বানীশান্তা অনায়াসেই যাওয়া যায় জেনে আর দেরি করলাম না। ছুটলাম ট্রলার ভাড়া করে বানীশান্তার উদ্দেশ্যে। বানীশান্তা নিয়ে খুব বেশি তথ্য আমার কাছ থেকে পাওয়া যাবেনা, এটা মুলত একটা ছবি ব্লগ।
(২) মংলা থেকে ট্রলার নিয়ে ছুটছি বানীশান্তার উদ্দেশ্যে।
(৩) ভাটার টানে পশুর নদীর পানি নেমে যাওয়ার পর খাবারের সন্ধ্যানে একটা বক।
(৪) পশুর নদীতে জাল ফেলছে একজন জেলে।
(৫) দূর থেকে দেখা যাওয়া পানির তীরের এই গোল পাতায় ছাওয়া ঘরগুলোই আমাদের গন্তব্য।
(৬) কাছে আসতেই দেখা গেল তীরে উঠার জন্য বাঁশ কাঠের সেতু তৈরী করে রাখা আছে।
(৭/৮) আমাদের ট্রলার তীরের দিকে আসতে দেখেই কেউবা হাত ইশারায় কেউবা নেচে গেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। খদ্দের ধরার আশায় যৌন কর্মীদের এমন কিছু নিজস্ব কৌশল হয়তো থাকতেই হবে।
(৯) অবশেষে আমাদের ট্রলার পৌছাল বানীশান্তার ঘাটে।
(১০/১১) প্রথমেই চোখে পড়ল বেশ কিছু ছোট ছোট দোকান ঘর। মূলত এই ঘরগুলো থেকে এই পল্লী পরিচালিত হয়। প্রতিটা দোকানীর আছে বেশ কিছু ছোট ছোট খুপরী ঘর, যাতে রয়েছে ছোট্ট একটা চৌকি, কমদামী কিছু প্রসাধনী, ছোট্ট একটা আয়না আর রয়েছে একটা স্যাতস্যাতে পরিবেশ। পশুর নদীর তীরে হলেও এই বদ্ধ খুপরিগুলোতে নদীর নির্মল বাতাসদের প্রবেশ নিষেধ।
কয়েকটি দোকানে বসে যা শুনলাম তার সারমর্ম হলো এরকমঃ এখানে এখন তীব্র মন্দাভাব। এক সময় এখানে প্রচুর বিদেশী জাহাজ আসত, তখন ওরা পেত কড়কড়ে ডলার আর বিদেশী বোতল। তখন তারা স্থানীয় জেলেদেরকে কমই পাত্তা দিত। এখন বিদেশীরা আর এদিকটা মারায় না, আর রাক্ষুসে নদীর ভাঙ্গনে ক্রমান্নয়ে ওদের স্থলভুমি কমে যাচ্ছে বলে অনেকে স্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
(১২) নদীর পাড়ের রাস্তা ধরে এমাথা ওমাথা ঘুরে আরো কিছু ছবি তুললাম।
(১৩/১৪) অপেক্ষা কার জন্য এটা তাদের জানা নাই।
(১৫) জীবন কোথাও থেমে থাকে না।
(১৬) পৃথিবীর সর্বত্র মায়েদের একই রূপ।
(১৭/১৮) পল্লীর পাশে পশুর নদীতে বিশাল বিশাল জাহাজগুলোর কর্ম ব্যস্ততা চোখে পড়ে বেশ।
(১৯) এই পল্লী ছেড়ে অল্প এগোলেই সুন্দরবনের করমজল এলাকা, এদিক থেকে যাকে সুন্দরবনের শুরু বলা যায়।
(২০) এবার ফেরার পালা। (আলোর বিপরিতেই সবগুলো ছবি উঠাতে হয়েছে বলে ছবিগুলোর মান ভালো হয়নি)।
২৩টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
তিন নম্বর ছবিটি সত্যিই সুন্দর। এই আলোতে ছবি খুব খারাপ তা কিন্তু না।!
জাহাজের ছবিটি কিন্তু আলো পেয়েছে।
কামাল উদ্দিন
হুমম, জাহাজটা বিপরিত দিকে ছিলো, ধন্যবাদ ভাইজান, ভালো থাকুন সব সময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অন্যরকম একটি ছবি ব্লগ পেলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া
কামাল উদ্দিন
ঠিক বলেছেন আপু, অনেকে নাক ছিটকাইতে পারে। ওরা পতিতা, কিন্তু পতিতদের নিয়া কেউ নাক ছিটকায় না……..শুভ কামনা জানবেন।
সুপায়ন বড়ুয়া
ভ্রমন কাহিনী মন্দ না
জায়গাটা হল চেনা।
সাথে অনেক সুন্দর ছবি
হল উপরি পাওনা।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল কবি।
তৌহিদ
মায়ের সাথে বাচ্চার ছবিটি অসাধারণ লাগলো। আমি কিন্তু আজ প্রথম বানীসান্তার নাম শুনলাম। ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ তৌহিদ ভাই, ভালো থাকুন, সব সময়।
সঞ্জয় মালাকার
ভ্রমন কাহিনী মন্দ না,
সাথে সুন্দর একটা ছবি ব্লগ, ধন্যবাদ অনেক অনেক শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও রইল আন্তরিক শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
৫আর ১৬ নং ছবি দুটো দারুণ লেগেছে
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা জানবেন আপু
আরজু মুক্তা
মা তো মাই। ঐ ছবিটা ইউনিভার্সেল।
কামাল উদ্দিন
হুমম, শুভেচ্ছা জানবেন আপু।
জিসান শা ইকরাম
করমজল যাবার পথে ট্রলারে বসে দুর থেকে দেখেছি বানিশান্তা,
মোংলা বন্দরে বিদেশী জাহাজ আসার পরিমান কমে গিয়েছে।
কেমন মৃত এলাকা মনে হয় বানিশান্তাকে।
ছবিব্লগ ভাল হয়েছে।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ইকরাম ভাই, ভালো থাকুন, সব সময়।
মনির হোসেন মমি
নীল আকাশের নীচে শেষ ছবিটা চমৎকার হয়েছে এছাড়া ৩ ৫ ভাল লাগল। বানিশান্তা জায়গা জানি যাওয়া হবে না তবে আপনার ছবিতে দেখা হয়ে গেল।
কামাল উদ্দিন
ওখানে যাওয়াটা সত্যিই দুঃসাহসের ব্যাপার। তাও আবার জনসম্মুখে পোষ্ট দিয়ে তা জানিয়ে দেওয়া। আমার ওখানে যাওয়াটা ছিল জাষ্ট ওদের ব্যপারে কিছু জানা……..শুভেচ্ছা জানবেন ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
১৩/১৪ অপেক্ষা কার জন্যে এটা তাদের জানা নেই।
১৬ / পৃথিবীর সর্বত্র মায়েদের একই রূপ।
এবারের লেখায় সবচেয়ে ভালো লেগেছে ছবির ক্যাপশন গুলো। প্রতিটি ক্যাপশনে আপনার বক্তব্যের মাঝে আন্তরিকতার ছোঁয়া ছিলো। বাস্তবতাকে এভাবেই দেখতে হয়, বাস্তব জীবনের গল্পগুলো ছবির চাইতেও জীবন্ত হয়।
শুভ কামনা কামাল ভাই 🌹🌹
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা জানবেন আপু, আমি আসলে সব কিছুই দেখতেও জানতে চাই বলেই কোথাও যাওয়ার সুযোগ পেলে মিস করতে চাই না……..শুভ সকাল।
সাবিনা ইয়াসমিন
শুভ সকাল,
ভালো কাটুক সারাদিন 🌹🌹
নিতাই বাবু
বানীশান্তা পতিতা পল্লীর নাম শুনেছিলাম বহু আগে। তো আপনার মতো করে ঘুরে দেখার সৌভাগ্য আমার কখনো হয়ে উঠেনি বলে আর দেখা ভাগ্য হয়নি। এখন আপনার পোস্টের ছবি দেখেই বাস্তবে দেখার স্বাদ মেটালাম। আসন্ন পৌষ সংক্রান্তির শুভেচ্ছা রইল।
কামাল উদ্দিন
আপনাকেও আসন্ন পৌষ সংক্রান্তির শুভেচ্ছা