
আমি পুরুষ। আমি প্রথম যখন নারীকে ভালোবাসি, তখন হৃদয়ের সমস্ত আবেগ ও আগ্রহ ঢেলে দেই তার প্রতি। প্রথম প্রেমের আলোকে আমার প্রিয়াকে পরম মনোহর মনে করি। আমার সেই প্রেমে থাকে নিবিরতা, একান্ত আপন করে পাবার ব্যাকুলতা। আমাদের দু’জনার প্রেমলীলা চলে শতমুখে-শতধারায়।
কিন্তু! আমার এই রঙিন নেশার ঘোর বেশিদিন থাকে না। নেশার অন্তে আমি পূর্বেকার চোখে আর সেই নারীকে দেখিনা। সামাজিকভাবে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হলেও ধীরে ধীরে আমার প্রেমের মধ্যকার অসাধারণত্ব ও অনির্বচনীয়ত্ব যেন ধীরে ধীরে উবে যায়।
আমি পুরুষ। আমি যখন কোন নারীর মোহ বেড়াজালের বন্ধনে শৃঙ্খলিত করি নিজেকে, তখন জগতের সবকিছু ভালোলাগা-ভালোবাসায় পরিণত হয়। কঠিন থেকে কঠিনতর ইস্পাত দেয়াল ভাঙতে আমি পিছপা হইনা।
কিন্তু! সংসারের শত ঘাত-প্রতিঘাতে, বাস্তবের সংকীর্ণ গণ্ডিতে আমার যৌবন-কামনার মুর্তিমতী দেবী এক অতি সাধারণ নারীতে পরিনত হয়। আমার মোহ কেটে যায়, প্রেমের বন্ধন ছিন্ন হয়। এটাই চিরন্তন সত্য যা আমি পুরুষের এক মর্মান্তিক রুপ।
আমি পুরুষ। আমি চিরকাল আদর্শবাদী। বৃহৎ ভাব বা আদর্শের দ্বারা আমি জীবনকে পরিচালিত করি। আমার জন্য প্রেমিকার হৃদয়ে একটি চিরন্তন রূপ আছে। সেই মানস-বিহারিণী আমার প্রিয়তমা অপূর্ব সুন্দরী, পরম রমণীয়া, অনির্বচণীয় মাধুর্যমন্ডিতা ও লীলাময়ী নারী- আমি পুরুষকেই তার দেহ-মন দিয়ে কামনা করে।
কিন্তু! বাস্তবের রুঢ় আবেষ্টনে আমার মানসসুন্দরীর অনুপম-চিত্র মোসীচিহ্নিত হয়ে যায়, আমার উচ্চ আদর্শ ভেঙে পড়ে। যে নারীকে আমি আমার আদর্শের প্রতীক বলে মনে করেছিলাম, যার মধ্যে আমি মানসীর মাধুর্য উপভোগ করতে চেয়েছিলাম; সে নারীকে আমার অতি সাধারন বলে মনে হয় একসময়। আমার কাছে তখন সে শুধুই রক্তমাংসে গড়া একটি পুতুল ছাড়া অন্য কিছু তো নয়!
আমি পুরুষ। কিন্তু আমার প্রেম কাঁচের মতো, অতি চাপে ভেঙে যায়। হুটহাট নারীর প্রতি ভালবাসার মোহ কেটে যায়। আমার প্রেম তখন নারীর প্রতি অনুরাগে লুপ্ত হয়। কেবল গৃহ-কর্তব্য-চক্রের ঘর্ঘর ধ্বনির তলে চলে দু’জনার আত্মবিস্মৃতির আয়োজন।
কিন্তু কেন? এই কিন্তুর পিছনে কারণ হচ্ছে পূর্ণতা। পুরুষ সবসময় পূর্ণতাপ্রাপ্তি চায়। প্রেমের চোখে নারীকে দেখে একরূপে, পরবর্তীতে অন্য রূপে। নারীকে পুরুষ মনে করে নির্দিষ্ট আবেষ্টনী। নারী আমার ঘরকে আঁকড়িয়ে ধরে থাকে। আমার দৃষ্টি আকাশ-পানে, নারীর দৃষ্টি তার নীড়ের দিকে।
নারী চায় একনিষ্ঠা অথচ পুরুষের দৃষ্টি বহির্মুখী। স্ত্রী স্বভাব গঠনশীল, পুরুষ স্বভাব ধ্বংসশীল। পুরুষ সর্বদাই চঞ্চল ও গতিশীল। কি প্রেমে, কি কার্যে, কি চিন্তায় সে চিরকাল চলেছে পূর্ণতার অভিসারে। অথচ আমি পুরুষ একবারও ভাবিনা, আমাদের দু’জনার আবেগ উত্তেজনাময় সেই প্রথম প্রেম আজ উত্তাপহীন শিষ্টাচারে পরিণত বলেই নারী হয় ব্যতীত ও নৈরাজ্য-মথিত।
আমি পুরুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করা সে নারীর পক্ষে আমার এই প্রেমের হ্রাস চরম মর্মান্তিক এক রূপ। আমি পুরুষ তা কখনোই বুঝতে পারিনা এবং বুঝতে চাইও না। চাই না অনুভব করতেও।
অথচ আমি বিধাতার নিজ হাতে গড়া বিশ্ব বেহায়া একজন পুরুষ…!
৪০টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসাধারণ আত্নোপোলদ্ধী । ধন্যবাদ ভাইয়া। কিন্তু অনুবাদক পাইনি এখনও
তৌহিদ
সব পুরুষ একই পাত্রের ভীন্নরুপ। অনেকেই স্বীকার করতে চাইনা। লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপু।
অনুবাদক নানাবিধ চাপের ব্যস্ততায় রাস্তা ভুলে গিয়েছেন। আসবেন শীঘ্রই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
☹️☹️☹️☹️
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি পুরুষ এক সময় নিজেকে জয় করে মহা পুরুষ হয়ে যায়, কিন্তু নারী বাধা রয় তার নীড়ে।
চমৎকার লিখেছেন, নিজেকে দেখতে পায় সবাই, কিন্তু প্রকাশ করার সৎ সাহস সব পুরুষদের থাকে না।
তৌহিদ
সৎসাহস-টাহস কিছু নয় আফা, আমি যেমন আমি তেমনি। প্রকাশ না করলেও নারীচোখে ধরা পড়তে বাধ্য তা ভুলি ক্যামনে?
ভালো থাকবেন আপু।☺
ছাইরাছ হেলাল
আসলে প্রকৃতিগত ভাবেই পুরুষ বহুগামী, যা সময় সুযোগে প্রকাশিত হয়েই যায়।
আর এর কিভাবে, কে কেমন করে ব্যবহৃত হবে বা ব্যবহার করবে সেটি-ই ভাবনার বিষয়।
সত্যের সাহসী প্রকাশ এ লেখায়।
তৌহিদ
প্রকৃতি জন্মগতভাবেই পুরুষকে এই রুপ দিয়েছে। তা সে যতই অস্বীকার করুক। প্রেম ভালোবাসা যা সে করে তা কিন্তু গ্যাঁড়াকলে পড়েই করে। বাহ্যিক চাপ! বুঝলেন মহারাজ।
তবে সে কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটি কিন্তু অনেক বড় ফ্যাক্টর। এই কারনেই সেই একই পুরুষ চিরবন্ধনে আবদ্ধ থাকে সবসময়।
শবনম মোস্তারী
চমৎকার লিখেছেন ।
উপলব্ধি করাটা যতটা সহজ..
কিন্তু এর প্রতিকার করাটাও কি ততোটা সহজ..??
তৌহিদ
উপলব্ধি করা সহজ নয়। যদি সহজ হতো পুরুষ তা স্বীকার করতো, কিন্তু ক’জনাই তা করে?
প্রতিকারের কিছু নেই। নারীর ভালোবাসাই সেই পুরুষকে এক অমোঘ বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে সবসময়। এ ভালোবাসা পুরুষ এবং নারী দু’জনাই একে অপরকে দেয়া উচিত।
তবু বেহায়া কিছু পুরুষ অকৃতজ্ঞের মত এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ প্রিয়।
ছাইরাছ হেলাল
ডর পাওয়া ঠিক আছে!
চাকরি রক্ষা করা ফরজ!
তৌহিদ
কিছু জায়গায় কবি নীরব হয়ে যায় মাননীয় স্পীকার মহারাজ। 😃😃
সুরাইয়া পারভীন
যাক সত্যিটা সবাই স্বীকার করতে না পারলেও কেউ তো একজন স্বীকার করেছে। চমৎকার প্রকাশ
তৌহিদ
আমি মনেহয় একটু বেশিই লিখে ফেলেছি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপু।
সুরাইয়া পারভীন
সংশয় হচ্ছে বলার পরে?
তৌহিদ
না যেভাবে রিয়াক্ট করছে অনেকেই তাই বললাম আর কি!
মোঃ মজিবর রহমান
অথচ আমি বিধাতার নিজ হাতে গড়া বিশ্ব বেহায়া একজন পুরুষ…! আমি আপনার এই বাক্যের প্রতি দ্বিমত প্রকাশ করি। বিধাতা স্রিস্টি করেছেন সবাইকে বেহায়া করে, তা মানিনা। আমি চরিত্রহীন আপনি সুপুরুষ যেমন ঠিক তেমনি উল্টাও আছে এ ধরাধমে।
আপনার উপলদ্ধি সবার খেত্রে সবার সময় কি সঠিক???? পুরুষ বহুগামী সব পুরুষ!!!
তৌহিদ
ভাইজান, সুন্দর বললেন। আমি শুধু এতটুকুই বলি- বিধাতা পুরুষদের বেহায়া করে সৃষ্টি করেননি। এই ধরাধামে এসে হয়েছে বেহায়া। তা না হলে নারীকে সম্মান করেনা সে কেমন পুরুষ?
জগতের সব পুরুষ এক নয় এটি আপনার চিন্তা। সেটাকে সম্মান রেখেই বলছি- আচ্ছা বলুনতো, কোন পুরুষ আছে যে প্রেমপিয়াসী নয়? আপনি নন?
লেখাটির ভীন্ন অর্থ খোঁজার কিছু নেই ভাই। পুরুষ নারীর ভালোবাসার কাছে অসহায়, তবে সব পুরুষের মনেই এক শয়তান বসবাস করে। কেউ তাকে নিয়ন্ত্রণ করে কেউ করেনা।
ভালো থাকবেন ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
সেই শয়তান কি শুধুই পুরুষকে ধরে না নারীকেও ধরে বেহাপনা নারী কি নাই। যারা প্রেমের ফাদে ফেলে পুরুষের সর্বনাস করে???
সব পক্ষেই আচে তাই এটা নিয়া আমি লিখতে ও চাইনা।
তৌহিদ
নারীর কথা যখন কোন নারী লিখবে সেটাই উত্তম উপলব্ধি। আমি আমার কথা লিখলাম।
প্রদীপ চক্রবর্তী
দারুণ উপলব্ধি।
বেশ ভাবার্থ বিষয় দাদা।
তৌহিদ
পড়ার জন্য ধন্যবাদ দাদা। ভালো থাকবেন।
সুপায়ন বড়ুয়া
“ অথচ আমি বিধাতার নিজ হাতে গড়া বিশ্ব বেহায়া একজন পুরুষ…! “
আত্নসমালোচনা , আত্ন উপলব্ধী যতার্থ হতে পারে
সার্বজনীন নয় , ব্যতিক্রম ও হয়।
শুভ কামনা
তৌহিদ
হ্যা, ব্যতিক্রমও হয়। তবে সবাইতো আর সাধুপুরুষ নয়। আর ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হয়ে পারেনা দাদা।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
পুরুষ নারী উভয়েরই উপলব্দি এবং বাস্তব আচরনে বৈপরিত্ব আছে। পুরুষ প্প্রকাশ করে আর নারী প্রকাশ করেনা।
লেখার বিষয়বস্তু চমৎকার।
ভাল লেগেছে একান্ত অনুভুতি।
তৌহিদ
বাহ কথাটি যৌক্তিক এবং দারুণভাবে যৌক্তিক বললেন ভাই।
সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রেরণা পেলাম। পেলাম কিছুটা ভরসা।
নিতাই বাবু
আমিই সেই বিশ্ববেহায়া চরিত্রের এক পুরুষ! যখন কোনোএক নারীর প্রেমে পড়ি, তখন ওই নারীর জন্য নিজের জীবনটাকেও দিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকি। যখন তাঁকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চিরস্থায়ীভাবে পেয়ে যাই, তখন কিছুদিন পরপরই শুরু হয়ে যায় তাঁর প্রতি অবহেলা, অত্যাচার নির্যাতন। আমি নারীর কাছে আমার সব চাওয়া পরিপূর্ণ চাই। তাঁর চাওয়া-পাওয়ার উপর গুলি মারি।
হ্যাঁ, এটাই আমার একমাত্র আসল রূপ।
তৌহিদ
ধন্যবাদ দাদা। আপনার সুগঠিত মতামতে অনুপ্রেরিত হলাম।
ভালো থাকবেন সবসময়।
রেহানা বীথি
নিজেকে নিয়ে ভাবনা, এতটা বলিষ্ঠভাবে প্রকাশ করলেন, ভালো লাগলো ভীষণ।
তৌহিদ
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করাই একজন লেখকের অন্যতম গুণাবলী বলে মনে করি। মানুষ হিসেবে আমি কেমন তা নিজেকে জানতে হবে সবারই।
ভালো থাকবেন আপু।
ফয়জুল মহী
খুবই সুন্দর পরিবেশনা। অনেক অনেক ভালো l
তৌহিদ
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন সবসময়।
কামাল উদ্দিন
পাওয়ার আগের আকাংখা আর পাওয়ার পরেরটা সমান হয়না। পর্যায় ক্রমে কিছুটা হলেও তার প্রতি আকর্ষণ কমে, এটা চিরন্তন, নারী বা পুরুষে এর ব্যতিক্রম হয় না। তবে প্রাকৃতিক ভাবেই পুরুষরা একটু সেচ্ছাচারী, এটা প্রকৃতির দিকে অন্যান্য প্রাণীদের দিকে তাকালেই বুঝা যায়। তবে মানুষ হিসাবে আমরা চেষ্টা করলে এর থেকে বেড়িয়ে আসতে পারি………..শুভ কামনা সব সময়।
তৌহিদ
বাহ! খুব সুন্দর বললেন ভাই। তবে আমাদের নিজেদের প্রচেষ্টাই আদি থেকে আজ পর্যন্ত নারী পুরুষকে এক নিগুর বন্ধনে আবদ্ধ রেখেছে, রাখছে।
লেখাটি মন দিয়ে পড়েছেন বোঝাই যাচ্ছে। আপনার জন্য একরাশ ফুলেল শুভেচ্ছা।
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও থাকল আন্তরিক শুভেচ্ছা।
সঞ্জয় মালাকার
অসাধারণ আত্নোপোলদ্ধী দাদা!
তৌহিদ
ভালো থাকবেন দাদা।
ইসিয়াক
চমৎকার লেখনী। ভালো লাগলো।
তৌহিদ
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দাদা। ভালো থাকবেন।
শান্ত চৌধুরী
ভাবনার নিপুণ কারুকার্য, সতত শুভ কামনা ……
তৌহিদ
আপনার জন্যেও শুভকামনা।