
নামটা শুনেই যাওয়ার আগ্রহটা বেড়ে গিয়েছিল। আমি ভাবছিলাম ঐ মসজিদে চামচিকাদের ব্যপক আনাগোনা। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই ছিল না। ১৪৫০ থেকে ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দ অবধি গৌড় যখন বাংলার রাজধানী ছিল তখন এই চামচিকা মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। চামচিকা মসজিদের নামকরণের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়না। তবে বর্তমান ভারতে অবস্থিত বড় চামচিকা মসজিদের আদলেই এটি তৈরী। ইট ও পোড়ামাটির কারুকার্য খচিত নকশায় এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর দেয়ালের পরিধি এত মোটা যে চৈত্র মাসের প্রচন্ড গরমে এর ভিতরে শীতল পরিবেশ বিদ্যমান থাকে। এর মূল গম্বুজটি অতি সুন্দর। এই মসজিদের পূর্ব পাশে ৬০ বিঘা আয়তনের খঞ্জন দিঘী বা খনিয়া দিঘী নামে একটি বড় দিঘী রয়েছে যার কারণে অনেকে এটাকে খনিয়াদিঘি মসজিদ বা রাজবিবি মসজিদ নামেও ডাকে। মসজিদটি একটা বিশাল আম বাগানের ভেতরে অবস্থিত। এটাকে গৌড়ের প্রাচীন কৃতিগুলোর অন্যতম বলে মনে করা হয়।
প্রধানত ইটের তৈরি এ মসজিদে রয়েছে ৯ মিটার পার্শ্ববিশিষ্ট একটি বর্গাকৃতির প্রার্থনা কক্ষ এবং পূর্বদিকে ৯ মি. × ৩ মি. মাপের একটি বারান্দা। প্রার্থনা কক্ষের উপরের ছাদটি বিশাল গোলাকার গম্বুজ আকারে নির্মিত। অন্যদিকে বারান্দার উপরে আছে তিনটি ছোট গম্বুজ।
(২) চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের একটু আগে ডানে ঢুকে গেলে বিশাল এই পুরোনো আম বাগান।
(৩) আম বাগানের ভেতরের দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই সামনে পড়বে শতাব্দি প্রাচিন এই চমৎকার মসজিদটি।
(৪) সামনের দিকে তিনটি প্রবেশদ্বার থাকলেও গ্রীল দিয়ে দুটি বন্ধ করে রেখেছে, তাই এটাই মসজিদের একমাত্র প্রবেশ পথ।
(৫) কিবলা দেওয়াল অভ্যন্তরভাগে সম্পূর্ণরূপে গ্রানাইট পাথরের টুকরা দ্বারা আবৃত। এ দেওয়ালে আছে অর্ধবৃত্তাকৃতির কুলুঙ্গিতে তিনটি মিহরাব, পূর্ব দিকের তিনটি খিলানপথের বরাবরে।
(৬) তিনটি মিহরাবের মধ্যে মাঝেরটি পার্শ্বস্থ দুটি মিহরাবের চেয়ে বড় এবং দেওয়ালের উচ্চতার পাশাপাশি বাইরের দিকে আয়তাকারে বেশী।
(৭) মসজিদটায় আলো প্রবেশের পথ অনেক কম থাকায় ভেতরটা তুলনা মূলক ভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে দিনের বেলায়ও।
(৮) প্রধান গম্ভুজের ভেতরের অংশ এমন।
(৯) দুইপাশে জানালার ডিজাইনে পোড়ামাটির কাজ করা, তবে কোন ফাকা নাই।
(১০) প্রধান মেহরাবের পেছনের অংশ এমন।
(১১) মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের দেওয়াল এমন দেখতে একই রকম, কোন ফাঁকফোকর নাই।
(১২) দক্ষিণ পশ্চিম কোন থেকে তোলা ছবি এটা।
(১৩) মসজিদের পুর্ব পাশে এটাই খঞ্জন দিঘী বা খনিয়া দিঘী।
(১৪) আমের পাতার ফাঁকে একটা ফটিকজল পাখি খাবার খুজে বেড়াচ্ছিল।
(১৫) খনিয়া দিঘীর পাড় দিয়ে মাল বোঝাই একটা গাড়ি যাচ্ছি 😉
(১৬) অদূরেই একটা তালগাছে তালের রস সংগ্রহের জন্য এমনভাবে গাছে কলসি বেধে রেখেছিল।
(১৭) আম বাগান থেকে বের হয়ে বর্ডার এলাকায় একটু ঘুরাঘুরি, ট্রাকগুলো ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে।
(১৮) এটা ভারতের ভেতরের অংশ, ওদের বিএসএফ ও পতাকা দেখা যাচ্ছে।
(১৯) সিমান্ত পিলার ১৮৫তে আমি।
(২০) চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভ্রমণের মাঝপথে এই ভদ্রলোকের কথা আলাদাভাবে না বললেই নয়, তিনি সামহোয়ারইন ব্লগে আমার প্রিয় গল্পকার “আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম ভাই।” উনার আতিথেয়তার কথা মনে হলে আবারও ছুটে যেতে ইচ্ছে করে রাজশাহীতে।
১৮টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
পুরনো স্থাপত্যের প্রতি আগ্রহ আজন্ম।
দেখতে ভালই লাগে।
কামাল উদ্দিন
আমারও ঐতিহাসিক স্থান বা স্থাপনাগুলো ছুয়ে দেখে শিহরিত হতে ইচ্ছে করে সব সময়।
…………ভালো থাকবেন বড় ভাই।
সুরাইয়া পারভিন
চমৎকার উপস্থাপন ও দুর্দান্ত ফটোগ্রাফী।
ভাইয়া আমাকে শেখাবেন ফটোগ্রাফী
কামাল উদ্দিন
ফটোগ্রাফির “ফ” জানিনা, যা ভালো লাগে তাকে ক্যামেরায় বন্ধ করে ফেলি। এই মোবাইলের যুগে তো আপু আমরা সবাই অলিখিত ফটোগ্রাফার।
তৌহিদ
চামচিকা মসজিদের নামই শুনিনি কখনো আজ জানলাম। আপনার তথ্যসমৃদ্ধ লেখা এবং ছবির মাধ্যমে জানা এবং দেখা দুটোই হলো।
ফটিকজল পাখি এবং দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ছবিতে ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে। ব্লগারদের নিজস্ব সম্পৃতি বৃদ্ধি পাক এটাই কাম্য।
এমন সুন্দর পোস্টের জন্য অশেষ শুকরিয়া ভাই। ভালো থাকবেন।
কামাল উদ্দিন
এমন নাম শুনেই ওখানে যাওয়ার আগ্রহটা আমার বেড়েছিল তৌহিদ ভাই, শুভ কামনা জানবেন।
মনির হোসেন মমি
খুব আনকমন সব করুকার্য মন ভরে গেল। সবগুলো ছবিই এ পর্বেও খুব সুন্দর হয়েছে।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ মমি ভাই, ভালো থাকুন, সব সময়।
জিসান শা ইকরাম
চামচিকা নামে একটি মসজিদ আছে, এটি ভাবতেই অবাক লাগে।
পুরাতন স্থাপত্য, দারুন লাগছে।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
হুমম, আমার অবাক লেগেছিল এবং আগ্রহও জন্মেছিল খুব, তাই তো ওখানে যাওয়া……..শুভ শীত সকাল।
ইসিয়াক
অসাধারণ ছবি ব্লগ কামাল ভাই।
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম ভাই কে দেখে ভালো লাগলো্ ।
দুজনের জন্য ই শুভকামনা রইলো্ ।
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও রইল অনেক শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আরো একটি অসাধারণ ভ্রমণ কাহিনী পেলাম । ধন্যবাদ ধন্যবাদ
কামাল উদ্দিন
বেচে থাকলে এমন পেতেই থাকবেন আপু
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অবশ্যই বেঁচে থাকবেন এমন সুন্দর জায়গা গুলো আপনার চোখ দিয়ে আমাদেরকে দেখানোর জন্য। শুভ কামনা রইল
কামাল উদ্দিন
শুভ কামনা
মাহবুবুল আলম
আপনার ভ্রমনকাহিনীগুলো সত্যিই সুন্দর। শুভ কামনা রইলো!
কামাল উদ্দিন
উৎসাহিত করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ বড় ভাই।