
মা-বাবা বলতে আমি শুধু তাদের ছবিই দেখেছি। কিন্তু তাদের ভালোবাসা কি জিনিস জানি না বা আমার মনে নেই । নিজেকে যখন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় হতভাগা মনে হয় তখন মনের অজান্তেই চোখের গোড়ায় পানি চলে আসে।
“কি? আবার কান্না করছো তাই না ? তোমাকে নিয়ে আর পারি না। কোথায় একটু আমার কাজে হেল্প করবে তা না। এই বাচ্চা উঠো। সকাল হয়ে গেছে। আব্বু-আম্মু যখন তোমাকে উপর থেকে এভাবে কান্না করতে দেখবে তখন কি ভাববে বল তো ?”
কান্নায় চোখ ঘোলাটে হয়ে গিয়েছিলো। তবুও আবছা আবছা চোখে ক্যারোলিনের হাতের ইশারা বোঝার চেষ্টা করছিলাম।
ক্যারোলিন আমার স্ত্রী। কথা বলতে পারেনা। ভার্সিটির ক্যান্টিনে ওর সাথে দেখা হয়েছিল। কফি খেতে এসে খেয়াল করছিলাম অনেক্ষন ধরে ক্যান্টিনের জ্যাক’কে কি যেন বোঝাতে চাইছে। জ্যাক ক্যান্টিনে কাজ করে। তখন আমি সামনে এগিয়ে গিয়ে ক্যারোলিনকে হেল্প করলাম ওর জন্য বার্গার অর্ডার দিতে। ঐদিন থেকে প্রেম। এখনও প্রেম কিন্তু বিয়ের পরের প্রেম।
আমার এখন লাইফ বলতে শুধু এই মেয়েটিই। সকালে অফিসের জন্য বের হয়ে যাই। রাতে বাসায় আসি। যতক্ষণ বাসায় থাকি , ওর কাছ থেকে সারাদিনের ঘটে যাওয়া সব কিছু শুনি। ও হাতে ইশারা করে বললে কি হবে , আমি সবই শুনতে পাই।
ছুটির দিন অন্য দিনগুলো থেকে ভিন্ন হয়। তখন আমি ওর আগে ঘুম থেকে উঠে ওকে কফি বানিয়ে দেই। তারপর প্ল্যান করি ঐদিন কি করবো। কোনোদিন মুভি দেখতে যাই। কোনোদিন হয়তোবা দূরে কোথাও বেড়াতে যাই। রাতে বাসায় এসে ওর হাতের উপর শুয়ে পড়ি। ও অন্য হাত দিয়ে আমার মাথা বুলিয়ে দেয়। ওর নরম হাত আমার চুলগুলোকে একবার আঁচড়ে দেয় আবার এলোমেলো করে দেয়।
আমি সব সময় ভাবি , ইস্স , মেয়েটা যদি কথা বলতে পারতো? কত কথাই না বলতো। আমি কি ওর সব কথা ঠিকঠাক মত বুঝতে পারি তো?
” এখন উঠবে, নাকি…………???”
দেখলাম ওর দুইহাত আমার দিকে আসছে। ও জানে আমার একটু কাতুকুতু বেশি। একটু কাতুকুতু দিলেই আমার লাফিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
আজ ছুটির দিন। আমার আগে ঐই উঠে পড়েছে। বিছানার পাশে কফিও রেখে দিয়েছে ঠিকঠাক।
আমি ওয়াশরুমে দাঁত ব্রাশ করতে করতে ভাবছিলাম আজ কোথায় যাওয়া যায়? অনেকদিন ধরেই ও বলছিল ভার্সিটির দিকে যাবে ওই জায়গাটা যেখানে ওর আমার প্রথম দেখা হয়েছিল।
– আশ্চর্য , এতক্ষন কারো ফ্রেশ হতে সময় লাগে ওয়াশরুমে ?
– আরে বাবা , বের হচ্ছি। দাড়াও না একটু।
– হুম , কফি ঠান্ডা হোক , তারপর বের হইয়ো।
তাড়াতাড়ি মুখে পানি দিতে লাগলাম। এক সেকেন্ড , কি হচ্ছে এটা ? আমার হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছে। আসে-পাশের সব সাউন্ড একদম স্টপ হয়ে গিয়েছে। আমি ক্যারোলিনের কথা শুনতে পাচ্ছিলাম। মানে কি ? ক্যারোলিন কথা বলছে? ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হতেই এক-ঝাপটা পানি এসে আমাকে ভিজিয়ে দিলো।
দমকল বাহিনী এসেছে। সারাঘর আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে।
ক্যারোলিন কোথায় ? আমি চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম। আমি দৌড়ে বাইরে গিয়ে দেখি চারপাশ মানুষ ভোরে গিয়েছে। আমি পাগলের মতো এদিক সেদিক ক্যারোলিনকে খুঁজতে লাগলাম। হটাৎ করেই চোখ পড়লো একটা অ্যাম্বুলেন্স-এ কাউকে উঠানো হচ্ছে।
দৌড়ে গিয়ে দেখি ওরা আমারই লাশ উঠাচ্ছে।
২৬টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
রহস্য গল্প খুব ভালো লেখেন আপনি। এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম। এক কথায় দারুন। আরও লিখুন।
শুভ সকাল,
শুভ কামনা 🌹🌹
ফয়সাল খান
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসাধারণ। শুভেচ্ছা রইল
ফয়সাল খান
আশা করি সব সময় সাথেই থাকবেন
তৌহিদ
একনাগাড়ে পড়লাম লেখাটি। ভালো লেখেন আপনি। অন্যদের লেখা পড়ুন। তাদের লেখায় আপনার মন্তব্য দিয়ে অনুপ্রাণিত করুন।
শুভ কামনা।
ফয়সাল খান
জি, অবশ্যই। ধন্যবাদ
ছাইরাছ হেলাল
আপনার লেখার তো চমৎকার।
লিখু্ন লিখুন নিয়মিত।
ফয়সাল খান
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । সামনে আরও ভালো লিখার চেষ্টা করব ।
নুরহোসেন
চমৎকার লিখেছেন
-সত্যিই ভয়ের ব্যাপার কখনোই নিজেকে লাশ হিসেবে দেখতে ভালো লাগবেনা।
ফয়সাল খান
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
সুরাইয়া পারভিন
মর্মান্তিক চমৎকার গল্প
দারুণ লেগেছে
ফয়সাল খান
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
কামাল উদ্দিন
এরকম গল্প আমার অসম্ভব ভালোলাগে। কেমন যেন ভৌতিক কিন্তু ভালোলাগার মতো………এমন গল্প আরো চাই ফয়সাল ভাই।
ফয়সাল খান
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । সামনে আরও ভালো লিখার চেষ্টা করব ।
কামাল উদ্দিন
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই
নিতাই বাবু
গল্প লেখায় আপনার হাত বেশ চমৎকার! লিখতে থাকুন! সত্যি ভালো লেগেছে।
ফয়সাল খান
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । সামনে আরও ভালো লিখার চেষ্টা করব ।
ব্লগ সঞ্চালক
প্রিয় ব্লগার, সমস্ত বাংলা ব্লগ সাইটের মত সোনেলা ব্লগেরও নিজস্ব একটি নীতিমালা আছে। আপনি কম্পিউটার/ ল্যাপটপ ব্যবহারকারী হলে নীতিমালা দেখতে পাবেন উপরে ব্যানারের নিচেই। আর মোবাইল ব্যবহারকারী হলে নীতিমালা দেখতে পাবেন প্রথম পাতার একদম নিচে। নীতিমালাটি ক্লিক করে পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
নীতিমালার ৫ নং ধারাটি পড়ুনঃ
” ৫/ সোনেলা পোস্ট ফ্লাডিং নিরুৎসাহিত করে। একজন ব্লগার দিনে একের অধিক পোস্ট না দেন , সোনেলা এটি প্রত্যাশা করে। ২৪ ঘন্টায় কোন ব্লগারের একাধিক পোস্ট হলে , একটি রেখে অন্য সব পোস্ট খসড়ায় রেখে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে ব্লগার ইচ্ছে করলে পরেরদিন খসড়ায় জমাকৃত পোস্ট পুনঃ পোস্ট দিতে পারবেন। ”
আপনি যেহেতু নতুন ব্লগার সোনেলায়, ধরে নিচ্ছি যে আপনি এই নিয়মটি জানতেন না। আশাকরি এর পরে পোষ্ট গুলো ২৪ ঘন্টা অতিক্রমের পরে দিবেন।
সোনেলার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
শুভ ব্লগিং।
ফয়সাল খান
এরপর থেকে আর ভুল হবে না
জিসান শা ইকরাম
এক নিঃশ্বাসে লেখাটি শেষ করলাম,
দারুণ লেখেন আপনি।
এমন লেখা চালু থাকুক।
শুভ কামনা।
ফয়সাল খান
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
শাহরিন
অসাধারণ হয়েছে, প্রেমের গভীরতা ও ট্রাজেডি দুটোই খুব সুন্দর করে প্রকাশ করেছেন।
ফয়সাল খান
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
আরজু মুক্তা
মনে হচ্ছে আত্মা ফ্ল্যাস ব্যাক করে সব বললো
ফয়সাল খান
হাঁ হাঁ হাঁ
ফয়সাল খান
হাঁ হাঁ হাঁ