
জীবনের অনেক প্রশ্ন থাকে উত্তর জানতে চাওয়া যেমন উচিত না।তেমনি কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর থাকেও না। হাসির প্রতি এমন অনেক প্রশ্ন থাকলেও, কতটা জানি,কতটা কখনো জানতে চাইনা। হাসু স্বাধীনচেতা, একরোখা, জিদ্দি, সবার থেকে নিজেকে আলাদা ভাবনা বিশিষ্টা একজন কর্মজীবী নারী। জীবনের সংঘাতগুলোকে কখনো প্রশ্রয় দেয়নি দুর্বলতার অজুহাত মনে করে। যখন যেখানে যেমন পেরেছে নিজেকে শিং মাছের মতো পিছলে কেটে বের করে নিয়েছে, শিংএর কাঁটা উঁচিয়ে। মজার ব্যাপার হলো শিংমাছ মোটেই পছন্দ করেনা খেতে হাসু। ২২ বছর ধরে অযথা অন্যায় অনুশাসন মেনে নেবেনা বলে একা জীবন কাটিয়ে যাচ্ছে। আবার একাই বা বলি কি করে? ছেলে লাবিব আছে তো! আছে। সেও সেই তাঁর মতো করেই আছে। মাঝে মাঝে আসে মায়ের কাছে! বেশিই থাকে মামা বাড়ি।আর আছে লাবিবের একপাল বন্ধুবান্ধব! ছেলেটার কোনো বদঅভ্যাস নেই,এতেই শান্তি পায় হাসু। মায়ের কাছে এলে, মায়ের পিঠের সাথে পিঠ লাগিয়ে ঘুমাবার অভ্যেস ছেলেটার।মায়ের খুঁটিনাটি সবকাজে সাহায্য করার মানসিকতা বজায় রাখে। তবুও ছেলেটার মধ্যে কি যেন নেই।নেই যেন দায়বদ্ধতা, যতটুকু মায়া হাসু আশা করে হাসুর প্রতি, হয়তো ততটুকু পায়না। পায়না বলে হাসুর অভিযোগও নেই,নেই
কোনো হায়আফসোস।
ডাক্তারও অনেকবার বলেছে, আপনার আবার জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবা উচিত নিজের জন্যই। হাসুর ওই এক কথা……সম্ভব না আর।অনুশাসন মানতে পারবোনা আর নতুন করে। এমনিই অনেক ভালো আছি। একজন পিছু পিছু ঘুরেছিলো বেশ কিছুদিন। ইনবক্সেও অনেক রিকোয়েস্ট করতো।পারিবারিক ভাবেও চেষ্টা চালাতে ছাড়েনি। কাজ হয়নি।হাসু এক কথায় অনড়। বিশ্বাসটাই নেই হয়ে গেছে পুরুষ মানুষের প্রতি।ওটা ইহজীবনে আর ফেরার সম্ভাবনা নেই। আমিও বোঝাবাবার চেষ্টা করে বুঝে গেছি, হাসু’কে বোঝানো পৃথিবীর কারো পক্ষে সম্ভব না। থাক তুই এমনেই থাক।
তারপর একদিন একাঘরে মরে পরে থাক।
–ময়না? তুই কি ভাবছিস?
হঠাৎ খেয়াল হলো মগের কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে।
–না,তেমন কিছুনা। বললি নাতো কি রান্না করবো?
— বেশি কিছু লাগবেনা।লাউ আছে, ডিম ভেঙে ভাজি করবি আর রুই মাছ ভাজবি। আমি তোকে সব জোগাড় করে দিচ্ছি।
বলতে বলতেই চলছে আমাদের গসিপিং।
— সেদিন মীরা দি ছবি পোস্ট করলো দেখেছিস মৌসুমীর সাথে? মীরা দি কি লিখলো? মৌসুমীর আমন্ত্রনে ওর বাসাতে গিয়েছে! ময়না,আমার কি জানিস?
রসুন পেঁয়াজ চপিংবোর্ডে কাটতে কাটতে মুখে কোনো কথা না বলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম হাসুর চোখে।
মৌসুমীর কোনো সমস্যা আছে হয়তো! যার জন্য হয়ত গুটিয়ে রাখে সবার থেকে আলাদা করে নিজেকে,নইলে দেখ আমরা তো একই সাথের বন্ধু ছিলাম একসাথে একই স্কুলে।অথচ আমার সাথে কেন, কারো সাথেই মনে হয় তেমন কোনো ভালো যোগাযোগ রাখেনা।
— কি জানি? হতেও পারে! কি দরকার মৌ’কে নিয়ে এত চিন্তা করার?
–না, ঠিক চিন্তা না! ভাইয়া ওকে খুব পছন্দ করতো জানিস?
—হুম,বলেছিলি একবার তুই।
–আম্মাকেও বলছিলো ভাইয়া, যদি বিয়ে করতে হয় তবে কোনো হিন্দু মেয়েকেই বিয়ে করবো।
—মৌসুমীতো প্রেম করেই বিয়ে করলো! গিয়েছিলাম একবারই ওদের বাসায়।সেই তখন। যখন শুনেছিলাম মৌ বিয়ে করেছে হঠাৎ করেই কাউকে কিছু না জানিয়ে একা একা। বলেছিলো তখন, মাত্র একঘন্টার সিদ্ধান্তে মৌ তাঁর প্রেমিককে নিয়ে কোর্টম্যারেজ করলো। অবশ্য ওর শিক্ষিকা মা প্রফেসর বাবার রিআ্যকশন জানা যায়নি। যাই করুক। ভালোই তো আছে এ পর্যন্ত!
—আমার মনে হয় কেন যেন……
— বাদ দেতো মীরাদি আর মৌসুমীর কথা!
—–আসলে কি জানিস তো?
মীরা দি বল আর মৌসুমী! এরা এরাই মেলে ভালো।
অর্থাৎ যতই মননশীলতার কথা মুখে আওড়াক না কেন! মনে মনে এরা সাম্প্রদায়িক মনোভাব ছাড়তে পারেনা।
— এটা আমারো মনে হয় রে হাসু। ফেসবুকে ফাটাইয়া ফালায় ভালবাসা দিয়া।আর মনে মনে দূরত্ব বজায় রেখেই চলে।হেপোক্রেটের দল।
–যাক বাদ দে। এই দ্যাখ, পিঁয়াজ কিন্তু দুইটা, তাও সাইজ দেখ!! পিঁয়াজ ছাড়া তুই কেমনে কি রানবি?
আমি হেসে ফেললাম। — তুই দেখ খালি এইটুকু পিঁয়াজ দিয়াই কেমনে রান্না করি?
আর কি করা লাগবে বল।
– ডাক্তারের কাছে গেলে কিছু খাওয়ার পর ইঞ্জেকশন দেয়। এক প্যাকেট নুডুল আছে, করে দিবি?
আচ্ছা ময়না! তুই একবার আমাকে ব্রকলি গোল মরিচ, নুন দিয়ে টস করে খাইয়েছিলি না? একটা ব্রকলি আছে। দিবি টস করে? ওটাই নিয়ে যাবো বক্সে করে? নাকি ব্রকলি দিয়ে নুডুল রান্না করে দিবি গাজরও আছে?
— তাই করি,নুডুল ব্রকলি দিয়ে রান্না করে দেই। ওটাই ভালো হবে তোর জন্য।
বেশি সময় লাগলো না আমার পুরো রান্না শেষ করতে। হাসুকে বললাম খাবার রেডি করতে।আমি নুডুলটা রেডি করে আসছি।হাসু নামাজ আদায় করে। বিছানাতেই খাবার নিয়ে বসলো। আমি হাতমুখ ধুয়ে এসে বসতেই দেখি পাশেই একটা বই রাখা।বইয়ের নামটা বেশ আকৃষ্ট করলো আমাকে। হাসু বললো এটা পড়! আমি অবাক হলাম। এখন ভাত খাবার সময় আমাকে বই পড়তে বলছে কেন? বইটা হাতে নিলাম….
শিরোনামঃ– গণকবিতাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
চলবে……….
২২টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভিন
দারুণ সম্পর্ক দুই বন্ধুর।
পরের পর্বের অপেক্ষা,,,
বন্যা লিপি
বড় আজব সম্পর্ক দুই বন্ধুর! ব্যাখ্যায় ধরবে না। তাই পাশ কাটিয়ে, একদিনের কথাই উল্লেখ করছি কেবল।
পড়ছেন বলে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
ছাইরাছ হেলাল
আগের লেখা থেকে এটি উৎরে গেছে, ডায়েরি ভাবটি এখানে আর নেই।
গসিপিং এর ছলে বাস্তবতা উঠে এসেছে।
বইটি কি আখতারুজ্জামানের?
বন্যা লিপি
চেষ্টা করছি একটু একটু করে উৎরে যেতে। আপনার প্রশংসনীয় মন্তব্যই পারে আমাকে উৎরে যাবার অনুপ্রেরনা যোগাতে।
হ্যাঁ, বইটা আকতারুজ্জামানের।
পরের পর্বে তাঁর লেখার কোটেশন থাকবে আশা করি।
নুরহোসেন
বইটার লিংক থাকলে দিবেন ডাউনলোড করে নিবো।
বন্যা লিপি
আমার কাছে বইটার কোনো লিঙ্ক নেই।দুঃখিত।লেখকের নাম সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন।
মনির হোসেন মমি
লাউ আছে, ডিম ভেঙে ভাজি করবি আর রুই মাছ ভাজবি আর হবে মজার নুডুল। পেয়ে গেছি গত পর্বে মন্তব্য করার উত্তর। আপনার গল্পে কেবল রান্নার সুঘ্রান পাই ।এর রহস্য কী?
জীবন চলার পথে যখন বিতৃষ্ণা এসে যায় তখন একলা চলার নীতি অবলম্বন করাই শ্রৃেয়। চলুক লেখা।
বন্যা লিপি
ভাই রান্না বান্না ছাড়া বাঁচুম কেমতে?
খাওন তো লাগবোই!
একেকজনের জীবনদর্শন এক এক রকম ভাই।কেউ জিতে গিয়ে হেরে যায়, কেউ হেরে গিয়ে জিতে যায়। কেউ কাউকে টপকাতে পারেনা। সবাই নিজ নিজ অবস্থানে কেন্দ্রিভূত! সেই যায়গা থেকে হাসু আমার কাছে রেস্পেক্টেবল পার্সন।
হাসু যা পারে সমাজের অনেক মেয়েই তা পারেনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
স্বাধীনচেতা হাসির পক্ষে অনুশাসনের জীবন পছন্দ নয়। বেশ এভাবেই হাসিখুশি মনে থাকুন তিনি। রান্নার আইটেম শুনে ক্ষিদে পেয়ে গেলো। এমন করে খাওয়া দাওয়ার বিস্তারিত কথা বলতে নেই, হুহ!!
পরের পর্ব কখন দিবে?
বন্যা লিপি
হাসু ভালো থাকুক ওর নিজের মতো স্বাধীনতায়। বিস্তারিত তো বলিইনি রান্নার রেসিপি। তোমার জন্য পরবর্তিতে নিয়ে আসবো আরো ভালোরকম রেসিপি যাতে তোমার খিদে আরো একটু তাজা হয়😜
পরবর্তি পর্ব আজ রাতেই দেবো সময় করে।
আরজু মুক্তা
এখন, কি বইটা সম্পর্কে বলবেন না নতুন কিছু।
অপেক্ষায়।
বন্যা লিপি
বই এবং সম্পর্কে সাসান্য কিছু তো থাকবেই! ধৈর্য ধরে পড়তে থাকুন আপু,আশা করি খারাপ লাগছে না!!
জিসান শা ইকরাম
দুই বন্ধুর মাঝে খুবই আন্তরিক সম্পর্ক,
কথা বার্তার মাঝে তা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
ময়না হাসুর ঘটনাবলীর দিকে চোখ রাখছি।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
একটা দিনের কয়েকঘন্টায় অনেককিছু ঘটে আমাদের সাধারন জীবনে! সেরকম একদিন কাটানো দুই বন্ধুর মধ্যকার কথোপথন এবং কিছু ব্স্তবতার দিক এই গল্পে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি মাত্র।
কৃতজ্ঞচিত্তে অনুপ্রািণিত হচ্ছি
বার বার বলছি।
শ্রদ্ধা রইলো।
সঞ্জয় মালাকার
দারুণ সম্পর্ক দুই বন্ধুর।
দিদি গল্প পড়ে ভালো লাগলো খুব।
বন্যা লিপি
আসলেই দাদা! দারুন এক সম্পর্ক এই দুই বন্ধুর।অজস্র ধন্যবাদ আপনাকে। পড়েছেন জেনে আনন্দিত হলাম।
শুভ কামনা।
সঞ্জয় মালাকার
আপনার জন্যও শুভ কামনা দিদি।
সুপায়ন বড়ুয়া
এক নিমিষে পড়া যায়
সম্পর্ক টা বুঝা যায়
শুভ কামনা
বন্যা লিপি
অসংখ্য কৃতজ্ঞতা সহ ধন্যবাদ জানবেন শ্রদ্ধেয়!
ইঞ্জা
আগে পড়া হয়নি আপু, আজ পড়লাম, বেশ ভালো লাগছিলো, এখন দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
বন্যা লিপি
খুব সম্ভবত ভাইজান আপনি দ্বিতীয় পর্বই পড়েছেন। তৃতীয় ও শেষ। এরপর চতুর্থ অংশ নিয়ে আসবো খুব শীঘ্র।
কৃতজ্ঞতা ভাইজান।
ইঞ্জা
তাই, আচ্ছা আগামীকাল সব পড়বো আপু।