
হঠাৎ ওঠা কালবৈশাখীর ঝড় হয়ে শাওন এলো নিলুর জীবনে। শাওন নিলুর কলেজের প্রভাষক। মধ্যবয়সী স্মার্ট সুদর্শন পুরুষ এই শাওন আহমেদ। দেখতে যতোই সুদর্শন হোক না কেনো মানুষ হিসেবে অনেকটায় নিকৃষ্ট। অসহৎ চরিত্রের অধিকারী এই প্রভাষককে নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ রীতিমতো নাকানিচুবানি খেয়েছে। অনেক বার কলেজ থেকে বের করে দিলেও ক্ষমতার জোড়ে ঠিকই রয়ে গেছে । তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হলেও নিরুপায় হয়ে মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছে তার সমস্ত অপকর্ম।
কোনো সুশ্রী চেহারার ছাত্রীরা রেহাই পায়নি তার কুদৃষ্টি থেকে। অনেকেই আত্মসমর্পণ করলেও কেউ কেউ প্রতিবাদও করেছে। কিন্তু শাওনের রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটের কাছে সবরকম অভিযোগ পানসে হয়ে গেছে। কুৎসিত মস্তিষ্কের এই প্রভাষক প্রচণ্ড দক্ষ এবং সফল শিক্ষক। একাডেমিক ব্যাকগ্ৰাউন্ড
দুর্দান্ত। সপ্তম,অষ্টম সেমিস্টারের ক্লাস পায় শাওন।
সপ্তম সেমিষ্টারের প্রথম ক্লাসে শাওনের নজরে পড়ে নিলু। নিলু যেমন মেধাবী তেমনি দেখতে সুশীলা সুন্দরী। সুন্দরী কোনো মেয়ে যেনো নেশা শাওনের কাছে। যা দেখলেই মাতাল হয়ে ওঠে সে।
প্রথম দেখায় শাওনের কুদৃষ্টি পড়ে নিলুর উপর। যেটুকু সময় ক্লাস নিচ্ছেন তার বেশিটা সময় লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে নিলুর। শিক্ষকের এমন দৃষ্টিভঙ্গি দেখে প্রচণ্ড অস্বস্তি বোধ হলো নিলুর। এই প্রভাষক সম্পর্কে কলেজের প্রায় সবাই জানে। নিলুরও অজানা নয় তার সম্পর্কে। হঠাৎ নিলুর বুক কেঁপে উঠলো। শাওনের এমন কামুক দৃষ্টি নিয়ে নিলুর দিকে তাকিয়ে থাকা মোটেও সুবিধার লাগছে না । ইচ্ছে করছে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে । কিন্তু উপায় নেই ক্লাস তো করতেই হবে।
যতোই দিন যায় শাওনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ততোই বাড়তে থাকে। কারণে অকারণে নিলুকে ডিস্টার্ব করতে থাকে শাওন। নিলুর ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগে না। প্রচণ্ড ভয়ে ভয়ে দিন কাটতে থাকে নিলুর। শাওন একদিন তার অফিস কক্ষে নিলুকে ডাকলো। নিলু বুঝতে পারছিলো না সে কি করবে? শাওনের দৃষ্টি থেকে কি ভাবে নিজেকে সামলে রাখবে? কিন্তু না গেলেও তো উপায় নেই। প্রাকটিক্যাল মাকর্স ঐ লোকটার হাতে। এমন অনেক ঘটনা আছে তার অবাধ্য যারা হয়েছে সবাইকে ফেল করে দিয়েছে। নিলু ভয়ে ভয়ে পৌঁছে গেলো তার রুমে। শাওন কোনো রকম ভনিতা ছাড়াই বললো ।
শাওনঃ নিলু আমি তোমাকে পছন্দ করি। তোমার সাথে একটা রিলেশনে যেতে চাই।
নিলুঃ স্যার এটা আপনি কি বলছেন? আপনি বিবাহিত, স্ত্রী,কন্যা নিয়ে সুখের সংসার। আমি গরিব বাবার একমাত্র সন্তান। আমাকে লেখা পড়া শেষ করে বাবা মায়ের অবলম্বন হতে হবে। আমার এ সব ভাবনাতেও স্থান দেবার কথা নয়। আর তাছাড়া আপনি এসব কথা একজন স্টুডেন্ট কে বলেন কি করে?
সজীবঃ দেখো নিলু আমি অতো সব বুঝি না। আমার তোমাকে ভালো লেগেছে। প্রথম দর্শনেই তুমি আমার হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছো। এখন তুমিই পারো আমার হৃদয়ে শীতলতা দান করতে বলেই নিলু হাত ধরে ফেলে।
নিলু অনেক কষ্টে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কষে এক থাপ্পর বসিয়ে দিলো শাওনের গালে। ক্ষিপ্ত শাওন রেগে গিয়ে বললো কাজটা তুমি ঠিক করলে না। এর ফল ভোগ করতে হবে তোমায়। প্রস্তুত থেকো।নিলুর টেনশনে দিন কাটতে থাকে।
সেদিনের পর থেকে শাওন আর নিলুর দিকে ফিরেও তাকায়নি বা কোনো প্রকার ডিস্টার্ব করেনি। ক্লাসে আসে, ক্লাস নিয়ে চলে যায়। এভাবেই সপ্তম ও অষ্টম সেমিস্টার শেষ হলো। ফাইনাল পরীক্ষাও হয়ে গেলো।
নিলু ভেবেছিলো সব কিছু বোধহয় সেদিনই শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু না কিচ্ছু শেষ হয়নি। এতো দিন শাওন কাল সাপের মতো ফণা তুলে অপেক্ষা করেছে মোক্ষম সময়ের। অপেক্ষা করেছে সুযোগ বুঝে ছোবল দেবার। দিলোও তাই।
রেজাল্ট আউট হয়েছে। সবাই পাশ করেছে শুধু নিলু ছাড়া। অথচ এই নিলুরই সবোর্চ্চ রেকর্ড নিয়ে পাশ করার কথা। নিলুর এমন রেজাল্টে শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে হায় হায় কলোরব উঠলো। এটা কি করে সম্ভব? নিলু নির্বাক। স্বপ্ন ভাঙ্গার যন্ত্রণা চোখের জলে প্রকাশ করতে পারছে না। যেনো পাথরে পরিণত হলো নিলু। প্রাণহীন এক মানবী। নিলু নেট থেকে মার্কসিট তুলে দেখলো কোনো সাবজেক্ট এ ফেল করেছে। তার ধারণা সত্যি হলো। বুঝতে বাকি রইলো না এটা কার কাজ।
কলেজ অধ্যক্ষ নিলুকে ডেকে পাঠালো
অধ্যক্ষঃ তোমাকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা জানা নেই নীলাঞ্জনা। মা আমাদের ক্ষমা করো। আমরা নিরুপায়, সব দেখেও নিশ্চুপ থাকতে হয়। পরের বারের জন্য প্রস্তুতি নাও।
নিলুঃ তাতেও কি কিছু লাভ আছে স্যার? পরের বার যে একই কাজ করবে না তার ভরসা কি? বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যায় নিলু
নিলুঃ আসবো?
শাওনঃ আরে নিলু যে। আসো আসো। তা কেমন আছো বলো? কেমন লাগলো গেইমটা
নিলুঃ আপনি বড্ড আনাড়ি খেলোয়াড়। এ তো কমন গেইম। আপনি আমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কেড়ে নিয়েছেন। এতে কষ্ট হলেও আক্ষেপ নেই। তবুও একজন নিকৃষ্ট মানুষের কাছে মাথা নত করিনি, এটাই আমার জয়। ধন্যবাদ আপনাকে। এবার নিজের কৃতকর্মের ফল ভোগ করার জন্য অপেক্ষা করুন।
শাওনঃ হা হা হা হা। তুমি কি আমাকে থ্রেট দিচ্ছো? দেখো কিছু করতে পারো কিনা? তোমার মতো অনেকেই এমন থ্রেট দিয়েছে। শেষে সবাইকেই আমার সামনে নত হতে হয়েছে।
নিলুঃ নীলাঞ্জনা আমি। কোনো অসৎ মানুষের কাছে মাথা নোয়াতে জানি না আমি। হেসে নিন কয়দিন। ভালো থাকবেন
২৩টি মন্তব্য
নৃ মাসুদ রানা
নীলাঞ্জনা নামটি ভিষণ পছন্দের। এমন শিক্ষকের অধঃপতন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
সুরাইয়া পারভিন
একদম সঠিক বলেছেন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
নুর হোসেন
আরও লজিক্যাল পর্ব আশা করছি,
নোট করে রাখলাম।
শুভ কামনা রইলো।
সুরাইয়া পারভিন
ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো
তৌহিদ
কাকে বিশ্বাস করবো? এ জগতে সামান্য মনোমালিন্যের রেশ ধরে খুনোখুনি পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে।
নারীলোভীরা এরকমই। তাদের প্রতিহিংসার আগুনে কতজনে জ্বলেপুড়ে গেলো, যাচ্ছে তার হিসেব আমরা কতজনাই বা রাখি?
নীলাঞ্জনা ভালো কাজ করেছে। শুভকামনা রইলো।
সুরাইয়া পারভিন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
এস.জেড বাবু
চারপাশের নিরেট সত্য উঠে এসেছে।
এটা একটা জাতির জন্য কত যে লজ্জার তা যদি কেউ আন্দাজ করতে পারতো।
///////তবুও একজন নিকৃষ্ট মানুষের কাছে মাথা নত করিনি, এটাই আমার জয়।
প্রত্যেকটা মেয়ের ভেতর এই অনুভুতি জেগে উঠলে ভালো হতো।
থাপ্পরটা ইচ্ছেমত হইছে।
সুরাইয়া পারভিন
ঠিকই বলেছেন ভাইয়া
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
জিসান শা ইকরাম
এমন কামুক শিক্ষক প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই দু একজন থাকে, এরা আবার প্রভাবশালী হয়।
নিলু মাথা নত করেনি দেখে ভালো লাগছে।
দেখা যাক নিলু প্রতিশোধটা কিভাবে নেয়।
গল্প ভালো হচ্ছে।
সুরাইয়া পারভিন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ছাইরাছ হেলাল
বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে থ্রিলার!
চলুক।
সুরাইয়া পারভিন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কিন্তু উপায় নেই ক্লাস তো করতেন হবে।
যতোই দিন যায় শাওনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ যতোই বাড়তে থাকে। করতেই হবে মনে হয় লেখাটা। ততোই বাড়তে থাকে হবে। প্রাকটিক্যাল মার্কস হবে। এই ভুলগুলো বাদ দিলে গল্প টা ভালো হয়েছে। থ্রিলারধর্মী
সুরাইয়া পারভিন
কৃতজ্ঞতা অশেষ
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
সুপায়ন বড়ুয়া
নিরেট সত্য বাণী
এনেছেন তুলে
ক্ষুরধার লেখনী
সুরাইয়া পারভিন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা
মনির হোসেন মমি
হেসে নিন কয়দিন। ভালো থাকবেন।
অপেক্ষায় রইলাম।তবে অবাক হলাম নিলু নিজের ক্ষতি করে অন্যকে শায়েস্তা করতে এতো ব্যাস্ত কেন? ভাল লাগছে। চলুক লেখা।
সুরাইয়া পারভিন
শিশুর ক্ষতি হয়ে গেছে অলরেডি
এখন তারই প্রতিশোধ নেবে
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
সুরাইয়া পারভিন
নিলুর
কামাল উদ্দিন
কলেজ অধ্যক্ষের এখানে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করাটা উচিৎ ছিলো, শুধু দুঃখ প্রকাশের কোনও মানে হয় না। নিলুর প্রতিশোধ দেখার অপেক্ষায় পরের পর্বে যাচ্ছি।
সুরাইয়া পারভিন
অনেক বার চেষ্টা করেছে কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে কিছুই করতে পারেনি। সেক্ষেত্রে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা
সঞ্জয় মালাকার
এমন শিক্ষকের অধঃপতন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
পরের পর্বে, নিলুর প্রতিশোধ দেখার অপেক্ষায় পরের পর্বে যাচ্ছি।
শুভ কামনা দিদি।