
নব্বই এর দশকের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের বাংলা চলচ্চিত্রে নষ্টামি, নোংরামি, রগরগে অশ্লীল দৃশ্যের সুড়সুড়ি আর কাটপিসের জয়জয়কার চলছিল। সেই সময় দেশের বিনোদনপ্রিয় সিনেমা হলমুখী মানুষ সেই যে হল বিমুখীতার সম্মুখীন হতে শুরু করল যা কিছুক্ষেত্রে এখনও বিদ্যমান। এরই মাঝে কিছু পরিচালক হাতেগোনা দু’একটি সামাজিক বাংলা চলচ্চিত্র দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। কিন্তু মানুষকে হলমুখী করতে খুব একটা কাজে দেয়নি সেসব জনপ্রিয় চলচ্চিত্রও। শুরু হয় সিনেমা হল ধ্বংসের খেলা অর্থাৎ সিনেমা হলে দর্শক যাচ্ছেনা তাই প্রেক্ষাগৃহগুলি প্রচুর পরিমান অর্থের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিল। ইউটিউবের সুবাদে এবং ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি সিনেমা নিজেদের মোবাইলে, কম্পিউটারে ডাউনলোড করার সুযোগ যখন হাতের মুঠোয় সহজেই চলে আসলো মানুষের প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে বাংলা চলচ্চিত্র দেখার প্রতি আকর্ষণ আরও হারিয়ে যেতে শুরু করে।
বাংলা চলচ্চিত্রের এমন দুর্দিনে কিছু মানুষের আপ্রাণ প্রচেষ্টা এবং উদ্যোগের ফলে পরিচালক-প্রযোজক, শিল্পী, কলাকৌশলীদের অনেকেই আবার বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের হলমুখী করার সংকল্প গ্রহণ করেন। বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিন ফেরাতে সরকার নিজেও অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। মানসম্মত সিনেমা হল বানানো, অর্থলগ্নি, ভালো গল্প, ভালো ক্যামেরা, ফিল্ম সবই এসবের অন্তর্ভুক্ত ছিল। যার ফলে আমরা গত ক’বছরে পেয়েছি অনেক ভালো মানের কিছু চলচ্চিত্র।
এই ধারাবাহিকতার নতুন সংযোজন ছিল স্টার সিনেপ্লেক্স প্রতিষ্ঠানটির প্রযোজনায় “ন ডরাই” চলচ্চিত্রটি। যা গত ২৯ নভেম্বর মুক্তি পায় স্টার সিনেপ্লেক্স সহ দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির এক সপ্তাহের মধ্যেই চলচ্চিত্রটির সেন্সর বাতিল ও প্রদর্শনী বন্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হলো। নোটিশে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয় সচিব, ছবিটির প্রযোজক মাহবুব রহমান, পরিচালক তানিম রহমান অংশু ও চিত্রনাট্যকার শ্যামল সেনগুপ্ত বরাবর চলচ্চিত্রটি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
“ন ডরাই” চলচ্চিত্রটি আমার দেখা হয়নি বা সুযোগ হয়ে ওঠেনি দেখার। তবে ইন্টারনেট ঘেটে যা পেলাম তা হচ্ছে- বাংলাদেশের প্রথম নারী সার্ফার নাসিমা আক্তারের সত্যিকারের জীবনকাহিনী হতে অনুপ্রাণিত হয়ে “ন ডরাই” চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। এই চলচ্চিত্রটি আয়শা নামের একটি মেয়ের উদ্যমের গল্প, নিজের সংকল্পের গল্প। আয়শা চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সমুদ্রে সার্ফিং নিয়ে নির্মিত এমন একটি চলচ্চিত্র বাংলাদেশে এই প্রথম। ছবিটির মূল চরিত্র আয়শা যে সমস্ত সামাজিক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সার্ফিং করে। এই আয়শা নামটি নিয়েই মূলত আপত্তি তোলেন একজন আইনজীবী- মো. হুজ্জাতুল ইসলাম।
আইনি নোটিশে বলা হয়, এই চলচ্চিত্রে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর স্ত্রী হযরত আয়শা (রা.) সম্পর্কে বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও চলচ্চিত্রে কিছু অংশ অশ্লীল ও অনৈতিক। এসব বিষয় মুসলিম ধর্মালম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত সৃষ্টি করতে পারে। চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার সস্তা প্রচারণার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় উস্কানিমূলক পথ বেছে নিয়েছেন। তাই নোটিশে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী বন্ধ এবং মুসলিম সমাজের কাছে ক্ষমা চাইতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
“ন ডরাই” চলচ্চিত্রটি যখন প্রথম সেন্সরবোর্ডে যায় তখন কিছু আপত্তিকর সংলাপের কারণে তার ছাড়পত্র স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে আপত্তিকর সেসব সংলাপ এবং ভিডিও চিত্র বাদ দিয়ে এই চলচ্চিত্রটিকে সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দেয়। তাহলে সেন্সর বোর্ড কি তখন দেখেননি বা জানতেননা যে সেখানে কোনো সংলাপ ও দৃশ্য আপত্তিকর আছে কিনা? নিশ্চয়ই দেখেছেন এবং তারপরেই ছাড়পত্র দিয়েছেন। তাহলে এই নোটিশ কেন?
বাংলাদেশে ইদানীংকালে ধর্ম নিয়ে বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম নিয়ে যত বাড়াবাড়ি হচ্ছে, নানা মুনির নানান মতের ভীড়ে ইসলাম ধর্মের আসল উদ্দেশ্য ও গাম্ভীর্যতাই হারিয়ে যেতে বসেছে। আর বারবার একটি কথাই সামনে আসছে তা হলো “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত” এই লাইনটি। আমার ধর্ম আমার নিজের কাছে। নিজেই শতভাগ ইসলাম মানতে পারিনা আমি অন্যকে কি করে উপদেশ দেবো? দেশের সংস্কৃতির সাথে ধর্মকে গুলিয়ে ফেলা মোটেই কাম্য নয়। এমন বাড়াবাড়ি যারা করে এরা কিন্তু তারাই যাদের বাসায় ডিশের সংযোগ নিয়ে ভারতীয় নাচ গান হরহামেশাই দেখছে তাদের ছেলেমেয়েরা। তাদের বাসাতেও চলে স্টার জলসা, স্টার প্লাস, জি টিভির সব টিভি সিরিয়াল। আজ তারাই ধর্মের কথা বলে বাংলা সিনেমা সংস্কৃতির বিরুদ্ধাচারণ করছে কিন্তু!
সার্ফিং নিয়ে বানানো এই চলচ্চিত্রটিতে নাকি বিকিনি পরার দৃশ্য আছে, চুমু খাবার দৃশ্য আছে। তো সমস্যা কিরে ভাই? শাড়ি পড়ে কেউ সার্ফিং করে নাকি? এখনকার কোন চলচ্চিত্র রোমান্টিক দৃশ্য নেই? হালের হিন্দি চলচ্চিত্রগুলোতো পরিবারের সবার সাথে দেখার মত নয়। ভারতীয় কিছু বাংলা চলচ্চিত্র যে পরিমাণ অশ্লীল দৃশ্য দেখানো হয় তা কোন অংশেই নীল ছবির চেয়ে কম নয়। আর যেখানে ভারতীয় টিভি সিরিয়ালগুলোতে বেডরুমের দৃশ্য এখন ডালভাতের মত কমন একটি বিষয় হয়েছে সেখানে এসব কথা বলাই অবান্তর। আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়িনা কিন্তু এমন ধর্মীয় গোঁড়ামী কর্মকাণ্ডে সর্বদাই আগ্রাসী ভূমিকা পালন করতে সচেষ্ট থাকি।
“ন ডরাই” চলচ্চিত্রের আয়শা নামটিও নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে, কেন? আয়শা নামধারী পৃথিবীতে আরো হাজারো মানুষ আছে তাদের সবাই কি মুসলিম? আমি নিজেই দেখেছি আয়শা নামীয় খৃষ্টীয় ধর্ম পালনকারী নারী। আমাদের মনে রাখতে হবে হযরত মোহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর সহধর্মিনীগন, তাঁর সন্তান-সন্ততি, বংশধরগণ এনারা সকলেই সকল বিতর্কের উর্ধ্বে। এই ভাবগাম্ভীর্যতার মধ্যে থেকেই আমাদের ইসলাম ধর্মের সকল বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। আমার নামের প্রথমেওতো মো. আছে, তাহলে মহানবী (স.) এর নামের সাথে মিল আছে বলে কি তা আমার জন্য প্রযোজ্য নয়? যে হুজুর আমার নাম রাখছে সেতো তাহলে মহা অন্যায় করেছে, পাপ করেছে। যিনি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সেই মো. হুজ্জাদুল ইসলাম তাঁর নামেও মো. শব্দটি আছে। মহানবীর (সা.) এর নামের সাথে মিল থাকায় পৃথিবীর মোহাম্মদ নামের সবাইকে এখন কি নাম পরিবর্তন করতে হবে?
গত বছর ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবালের “ভূতের বাচ্চা সোলায়মান” নামক বইটির কথা মনে আছে কি? নবী সোলায়মান (আ.) এর নাম ব্যবহার করে বইটির মূল চরিত্রটি লেখা হয়েছে বলে এটিকেও ঠিক একই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের তকমা দেওয়া হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে ড. জাফর ইকবালকে বর্বর হামলার শিকার হতে হয়েছে। ভূতের বাচ্চা সোলায়মান আর নবী সোলায়মান (আ.) কি একই জিনিস হল? আসলে কিছু ভ্রান্ত ধারনাকে প্রতিষ্ঠিত করতেই ধর্মের নামে দোহাই দিয়ে আমরা দেশের সংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করার অপপ্রয়াস হিসেবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এই লাইনের অপব্যহার করি অনেকক্ষেত্রেই।
দেশের বাংলা চলচ্চিত্রগুলিতে শর্ট স্কার্ট, লো কাট ব্লাউজ পরিধান করে নায়িকারা যখন বিকৃত অঙ্গভঙ্গি করে আমাদের আনন্দ দেয় সেটি খুব মজা লাগে তাইনা? ইসলাম ধর্মেতো এমন পোষাক পড়া হারাম তাহলে সেগুলোর জন্য ধর্মীয় অনুভূতিতে তাদের আঘাত লাগেনা কেন বলতে পারেন? তাই যদি হয় তাহলে এদেশে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম সব বন্ধ করে দেয়া হোক কারন এসবের মাধ্যমেও কুরুচিকর অনেক কিছুই চাক্ষুষ হয় যেগুলো ইসলাম ধর্মে কোন বিধানই নেই। দেশ থেকে ইন্টারনেট বিলুপ্ত করা হোক কারন এত বিধিনিষেধের পরেও মানুষ পর্নগ্রাফী দেখতে সেই গুগোলেই সার্চ করে প্রতিনিয়ত। আবার অনেকেই দেখতে না চাইলেও কিছু ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সেসব চোখে পড়ে যায়ই অনেকসময়। তখন ধর্মীয় অনুভূতি কোথায় হারায় তাদের জানতে চাই।
“ন ডরাই” চলচ্চিত্রটি নিয়ে এত যে হৈ চৈ আদতে কিন্তু সিনেমাটিই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। নারী-পুরুষ সবার জন্যই অনুপ্রেরণামূলক একটি সিনেমা এটি। আইনি নোটিশটি যেহেতু আদালতের মাধ্যমে এসেছে তাই তার প্রতি আমাদের পূর্ণ সম্মান এবং শ্রদ্ধা আছে। আদালত নিশ্চয়ই বিচার বিবেচনা করেই এই নোটিশ পাঠিয়েছেন। চলচ্চিত্রটিতে আপত্তিকর কিছু থাকলে তা আবারো সেন্সরবোর্ডে রিভিউ হতে পারে। কিন্তু “ন ডরাই”-কে যাতে ধর্মীয় অন্ধ রোষানলের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে না হয় এটাই কাম্য।
তথ্যসূত্রঃ ধর্মীয়-অনুভূতিতে-আঘাতের-অভিযোগে-ন-ডরাই-সিনেমা-বন্ধে-আইনি-নোটিশ
৩৮টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহা, এই পোস্টের ফার্স্ট প্রাইজও আমার! এত আনন্দ নিয়ে আজ ঘুমাবো কখন 😀😁
পড়ে এসে বাকি কমেন্ট দিচ্ছি।
তৌহিদ
আপনার ফার্স্ট হবার রহস্য কি আফা? আমি এখনো ফার্স্ট প্রাইজ পাই নাই। প্লিজ একটু পরামর্শ দিন ☺
রাতে ঘুম হয়েছিল তো!!
আকবর হোসেন রবিন
কিছু মানুষ ভালো কিছু করার জন্য স্রোতের বিপরীরে চলে। আবার কিছু মানুষ ফোকাসে আসার জন্য স্রোতের বিপরীতে চলে। এখানে ২য় ক্ষেত্রের মানুষ গুলো অনেকটা অন্ধ থাকে। ভালো খারাপ বিচার করার ক্ষমতা তাদের থাকেনা।
খোঁজ নিলে হয়তো দেখা যাবে, যারা রাত জেগে ‘কসমিক সেক্স’ এর মতো মুভি গুলো দেখে, তারাই দিনের বেলা ‘ন ডরাই’র মতো মুভি গুলোকে অশ্লীল বলে ব্যাখা করে। তাদের আসলে জিঙ্গেস করা উচিত, শ্লীল-অশ্লীল এর মাপকাঠি কী?
আর ধর্মের কথা বাদই দিলাম। মানুষ এখন ধর্মকে বিক্রি করে, ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করে চলে।
আপনার বিশ্লেষণ খুব ভালো হয়েছে।
তৌহিদ
হ্যা ভাই, একই অঙ্গে আমরা ভিন্নরুপ প্রকাশ করি। উপরে সাদা আর ভিতরে কালো। এই লোকগুলিই আবার সবার সামনে সাধু সাজে।
আমাদের দেশে সবকিছু স্রোতের বিপরীতে চালানো কিছু মানুষের অভ্যেস। ভালো খারাপ বিচার করার মাপকাঠি তাদের নেই।
ন ডরাইয়ের মত একটি সিনেমা বন্ধ হোক কিছুতেই কাম্য নয়। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার লেখা পাচ্ছিনা কেন ভাই? শিঘ্রই লেখা দেবেন আশাকরি।
শুভকামনা রইলো।
আকবর হোসেন রবিন
হ্যাঁ, অনেকদিন কিছু লেখা হচ্ছেনা।
বেকারদের ব্যস্ততা বেশি থাকে। যার কোন নির্দিষ্ট কাজ নাই, তার উপর দুনিয়ার সব কাজ এসে হাজির হয়। এইভাবে একটু ব্যস্ততায় দিন যাচ্ছে। তবে আশা রাখি দ্রুত লিখতে বসবো।
তৌহিদ
আপনি ভালো লেখেন ভাই। অপেক্ষায় রইলাম।
জিসান শা ইকরাম
এত ধর্মীয় অনুভূতি রাখেন কই এনারা? হুজুররা যখন বিভিন্ন মাদ্রাসায় অপকর্ম করেন, কই থাকেন তখন এই অনুভুতিওয়ালারা? একজন হুজুরও তো এর প্রতিবাদ করেন না।
আয়শা নামে মিল হলেই হয়ে গেল চেতনায় আঘাত? আমার নামেও মোহাম্মদ আছে। তাহলে আমার যারা নাম রেখেছেন তারা অন্যায় করেছেন?
অত্যন্ত ভাল একটি পোস্ট দিয়েছেন, ছবিটি দেখতে হবে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আমিও আপনার সাথে একমত
তৌহিদ
ধন্যবাদ ফাল্গুনী আপু।
তৌহিদ
এদের চেতনানুভূতির উৎপত্তিস্থল জানতে চাই আমিও ভাই। লজ্জা লাগে এমন কর্মকান্ডে। তাদের বোধদয় হোক এটাই কাম্য।
ভালো থাকবেন ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
এই মুভিটি নিয়ে সাম্প্রতিক খুব লেখা-লেখি হচ্ছে। প্রিন্ট মিডিয়া+ সোশ্যাল মিডিয়া কোথাও বাদ নেই। পক্ষে/ বিপক্ষে যৌক্তিক অযৌক্তিক অনেক তর্কও দেখতে পেয়েছি। যেহেতু মুভিটা আমি এখনো দেখিনি তাই এর বিস্তারিত বিষয় নিয়ে কিছু বলতে পারছি না।
মুভিটা না দেখার কারন গুলোর বেশির ভাগ আপনিই বলে দিয়েছেন। নব্বই দশকের মাঝামাঝি স্কুলে পড়া অবস্থাকালিন সময়ে আমি হলে গিয়ে সিনেমা দেখেছি। ফ্যামিলির নারীদের সাথে পারা-প্রতিবেশি চাচি, খালাম্মারা সহ তাদের মেয়েরাও যেত। এক শুক্রবার এমনি এক সিনেমা দেখতে গিয়ে অর্ধেক দেখেই সেই যে সবাই মিলে সিনেমা হল ছেড়ে এসেছিলাম, তারপর বছর দশেকের মধ্যে আর ঐদিকে যাওয়া হয়নি। কারন সেদিনের মুভিটি চরম মাত্রার অশ্লীল ছিলো। অশ্লীলতার প্রকোপ এখনো বাংলা সিনেমা জগতে রয়ে গেছে। কবে শেষ হবে তা হয়তো কেউ জানে না।
ন’ ডরাই, মুভির রিভিউ পড়ে যতটুকু বুঝেছি, এখানে গল্পের নায়িকার নাম নিয়েই সাধারণ দর্শকের বেশি আক্ষেপ। কারন নামটির সাথে ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব জড়িয়ে আছেন। এটা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি। নাম দিলেই কি একটি চরিত্র আরেকটি চরিত্রের সাথে এক হয়!! ইসলাম ধর্মের বেশি ভাগ মানুষের নামের আগে/পিছে মোহাম্মদ নাম বসানো হয়, তাই বলে কি সবাই রাসুলুল্লাহ ( সাঃ)? অথবা রবী নামের বহু লোক আছে, তাই বলে কি সবাই বিশ্বকবি!
দেখা যাক মাননীয় আদালত কি রায় দেয়।
সমসাময়িক পোস্ট খুব ভালো হয়েছে তৌহিদ ভাই।
শুভ কামনা 🌹🌹
তৌহিদ
এমন একটি উৎসাহমূলক সিনেমাকে যারা ধর্মান্ধতার চাদরে ঢেকে দিয়ে বন্ধ করাতে চায় তখন বোঝাই যায় এরা অপসংস্কৃতি নিয়েই মেতে আছে। এমনটা মোটেই কাম্য নয়।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ সাবিনা আপু।
সঞ্জয় মালাকার
এত ধর্মীয় অনুভূতি রাখেন কই এনারা? হুজুররা যখন বিভিন্ন মাদ্রাসায় অপকর্ম করেন, কই থাকেন তখন এই অনুভুতিওয়ালারা? একজন হুজুরও তো এর প্রতিবাদ করেন না।
আর শুধু হুজুর নয় সমাজে সর্বতরে মানুষ কমবেশি এমন বিনোদনে আনন্দিত হয় তখন কেউ তো প্রতিবাদ করে না।
ভালো কিছু করলে সব সময় ভালোই লাগে, কিন্তু আমরা ভালো’টা করি কই।
সমাজের বাস্তব ।
তৌহিদ
বিনোদনধর্মী মানুষ যখন একটু ভালো কিছু সিনেমা দেখার আশায় এখন সিনেমাহলমুখী হচ্ছে তখন এ ধরনের একটি পদক্ষেপে যথেষ্ঠ হতাশার বাণী শোনায় আমাদের। ভালো থাকবেন দাদা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সত্যিই ধর্মের দোহাই দিয়ে অনেক কিছু থেকেই আমরা বঞ্চিত হই। এইসব নোংরামি কবে যে মানুষের মন থেকে মুছে যাবে? সবকিছুতেই ধর্ম আর রাজনীতি যেন আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত করছে।
তৌহিদ
ধর্ম এবং রাজনীতিকে আমরা ব্যবহার করছি আমাদের সংস্কৃতিকে মুছে ফেলার কাজে যা মোটেই উচিত নয়। আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি সবার জন্য উন্মুক্ত হোক এটাই কাম্য।
ভালো থাকবেন।
কামাল উদ্দিন
…………….এই চলচ্চিত্রে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর স্ত্রী হযরত আয়শা (রা.) নাম এসেছে, সেই জন্য ইসলাম প্রিয় মানুষদের মনে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি করবে। সত্যিই আমাদের বুদ্ধির কোন তুলনা হয় না। হলি আর্টিজানের ভুত আমাদের সমাজে যে গভীর ভাবে শেকড় গেড়ে বসেছে এটা ভালোই বুঝা যায়।
তৌহিদ
ধর্মীয় গোঁড়ামী থেকে আমরা এখনো মুক্ত হতে পারিনি। আমাদের সংস্কৃতিকে বিশ্বপরিমন্ডলে পরিচিতি করাতে এই অপতৎপরতা রোধের বিকল্প নেই।
ভালো থাকবেন ভাই।
সুরাইয়া পারভিন
আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়িনা কিন্তু এমন ধর্মীয় গোঁড়ামী কর্মকাণ্ডে সর্বদাই আগ্রাসী ভূমিকা পালন করতে সচেষ্ট থাকি।
একদম সঠিক বলেছেন ভাইয়া।
যা আমাদের জন্য ফরয/ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তা কিন্তু মোটেও পালন করছি না। অথচ ধর্মের দোহাই দিয়ে গেঞ্জাম ঠিকই পাকাচ্ছি। শান্তির নামে অশান্তির আগুনে ছারখার করছি । যখন মাদ্রাসা মক্তবের ছোট ছোট কন্যা শিশু গুলো ধর্ষণ হয় তখন কোথায় থাকে এই আইনজীবীরা।
তৌহিদ
এরা ধর্মীয় পুঁজিবাদীদের রক্ষা করে কিন্তু আমাদের দেশের ভালো কিছুতে এদের যত বাঁধা।
ভালো থাকবেন আপু।
নৃ মাসুদ রানা
মুভি দেখে তারপর মন্তব্য জানাবো
তৌহিদ
হ্যা ভাই, যদি কখনো এই ছবি আবারও রিলিজ পায় তাহলে তখন দেখে মন্তব্য করবেন কিন্তু। ততদিন আমি অপেক্ষায় থাকবো আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের ।
ভালো থাকবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সবকিছুতেই অনুভূতি।
এতো অনুভূতি কোথায় কিভাবে কেমন করে সঞ্চয় করে রাখা হয় বুঝা বড্ড মুশকিল।
ধর্মের দোহাই দিয়ে অনেক কিছু থেকেই আমরা বঞ্চিত।
বাস্তবতাটা আজকাল মানুষের অনুভূতিতে আসেনা।
.
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখনী।
শুভকামনা দাদা।
তৌহিদ
অথচ এমন অবস্থা মোটেই কাম্য নয়। পড়ার জন্য ধন্যবাদ দাদা।
মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা রইলো ।
নিতাই বাবু
সিনেমা নিয়ে আপনার মন্তব্য যুক্তিযুক্ত! আমি ব্যক্তিগতভাবে একমত পোষণ করছি। সেইসাথে বলছি, বর্তমান ডিস এন্টেনার কথা। এই ডিস এন্টেনার জন্যই আমাদের দেশের চলচ্চিত্র আজ ধ্বংসের মুখে। মানুষ এখন আর সিনেমাহলমুখি হচ্ছে না। যার কারণে আমাদের সৃংস্কৃতি আমাদের ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে। তা ক্রমশ…
তৌহিদ
ঠিক বলেছেন দাদা, ডিশের কারনে আমাদের সংস্কৃতিতে অপ শব্দটি যোগ হচ্ছে। যা মোটেই কাম্য নয়।
ভালো থাকবেন দাদা।
ছাইরাছ হেলাল
এ সিনেমাটির শুধুই নাম শুনেছি,
আপনার লেখায় অন্যান্য বিষয়াদি জানলাম।
ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি নিয়ত-ই এখানে হচ্ছে, আরও হবে হয়ত।
প্রকৃত ধর্মে কী আছে তা নিয়ে কেউ ভাবছে বলে মনে হচ্ছে না, আর ভাববে কী করে ফেরকা আর ফেরকা।
তৌহিদ
আমার কাছে মনে হচ্ছে এদের নিজেদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বও এতে যোগ হয়েছে। দেখা যাক কি হয়।
মাহবুবুল আলম
আপনার লেখাটি পড়ে যা অনুধাবন করতে পারলাম, তাতে মনে হচ্ছে ন-ডরাই ছবিটি সাম্প্রদায়িকতার নির্লজ্জ শিকার।
দেশের চিলচিত্র বর্তমানে চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একে একে সিনেমাহল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই এখাতে কেউ আর বিনিয়োগ করতে চাইছেনা।
আমি ছবিটি দেখেনি, তাই এ নিয়ে বেশি কিছু বলা অন্ধের হস্তিদর্শনেরই নামান্তর।
ভাল থাকবেন তৌহিদ ভাই!
তৌহিদ
আমিও সিনেমাটি দেখিনি ভাই তবে যা পড়েছি সেটা নিয়েই এই লেখা। দেখা যাক কি হয়।
ভালো থাকবেন ভাই।
এস.জেড বাবু
তাহলে সেন্সর বোর্ড কি তখন দেখেননি বা জানতেননা যে সেখানে কোনো সংলাপ ও দৃশ্য আপত্তিকর আছে কিনা? নিশ্চয়ই দেখেছেন এবং তারপরেই ছাড়পত্র দিয়েছেন। তাহলে এই নোটিশ কেন?
অপেক্ষায় থাকি আর চোখ রাখি সোসাল মিডিয়া আর প্রতিকার পাতায়।
লক্ষ্মী নামের একজন আমার সামনের চা দোকানে পানি তোলে।
যারা বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন, তারা বিতর্কের উর্ধ্বে নিজেদের প্রচারনা করছেন মনে হচ্ছে।
নামে কি আসে যায়, “নাবালক” এর আজকাল বাষট্টি বয়স। মিষ্টি দোকানের “অমর” সেই কবে তালি হইছে মনে নাই।
কোটি মানুষ অহরহ মিথ্যে বলে, মারে চুরি করে, গুদামজাত করে পণ্যের দাম চড়ায়, নামাজে যায় না, ভিক্ষা দেয়না, কর্মচারির হালাল রোজগার মেরে খায়- “এই সবে ধর্মের কোন ক্ষতি কি হয় না ?
ঘরে ঘরে ব্যাংক লোন আর এনজিও’র মাধ্যমে সূদ বাণিজ্য ইসলামী অনুভুতির চরম ক্যান্সার- সেদিকে দৃষ্টি কবে হবে আল্লাহ ভাল জানে।
আগে মানুষ হও
পরে মুসলমান
এরপর ধর্মভীরু হয়ে শান্তির পথে এগিয়ে গেলে নাহয় ধর্মানুরাগী হওয়া মানায়।
আমার বুদ্ধিসুদ্ধি কম- এর বেশি বুঝি না।
তৌহিদ
কথা কিন্তু সত্য। নামে কিই বা এসে যায়। দেশের সংস্কৃতির ধারা বজায় থাকুক এটাই কাম্য। আমাদের মানুষ হতে হবে আগে। এই বোধটাই তো নেই।
ভালো বলেছেন ভাই।
নুর হোসেন
আমরা সেই গোড়া ধার্মিক জিংজিং মোল্লার অনুসারী, যারা মাদ্রাসা ছাত্রদের বলৎকার করে আর পর্নভর্তি মোবাইল পকেটে করে ইমামতি করে!
ছবিতে যারেই নাম থাকুক তা প্রচার করার প্রয়োজন,
ছবিটিতে আপত্তিকর কোন কিছু থাকলে দেশের শিক্ষিত লোকজন সেটার প্রতিবাদ করার সুযোগ পাবে।
কোন আইনজীবির আপত্তিতে ছবি বন্ধ করা ঠিক নয়।
-ধর্মের ফরমালিনগুলোকে ধুঁয়ে সাফ করার প্রয়োজন!
তৌহিদ
একদম ঠিক। জিংজিং মোল্লারাই এসবের উস্কানিদাতা। আপনার গঠনমূলক মন্তব্য আমাকে অঅনুপ্রেরণা দেয় ভাই।
ভালো থাকবেন।
নুর হোসেন
দ্রুত রাজনীতি প্রেক্ষাপট নিয়ে লিখবো, আপনাদের সহযোগীতা কামনা করছি।
তৌহিদ
তবে মনে রাখবেন- কারো মনে যেন আঘাত না লাগে। কারন আমরা একেকজন একেক ধারনায় বিশ্বাসী। সোনেলা কাউকে বা কারো মনে আঘাত করতে চায়না।
শুভকামনা।
রেহানা বীথি
রাজশাহী শহরে এখন একটাও সিনেমা হল নেই। যতই ইউটিউব আর কম্পিউটারে দেখি না কেন, হলে বসে সিনেমা দেখার আনন্দই আলাদা। যেটা আমরা পেয়েছি। কিন্তু আমার সন্তানেরা জানেই না হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে কেমন লাগে। এটা বড় দুঃখজনক।
আমাদের শিল্প সংস্কৃতি যেন দিন দিন পঙ্গু হয়ে পড়ছে।
তৌহিদ
সিনেমা হল বিমুখ মানুষ আবার যখন হলে যাওয়া শুরু করেছে তখন এমন অপতৎপরতা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। সিনেমাহল নামে কিছু ছিলো বাচ্চারা তা জানেইনা এখন। হাতের মুঠোয় পাচ্ছে যে সবকিছু!
রাজশাহী সিএন্ডবি এর মোড়ে এখন যেখানে অডিটোরিয়াম হয়েছে সেখানে একটি সিনেমাহল ছিলো মনে আছে আপু?