লাইক করা বনাম লাইক দেয়া

রুমন আশরাফ ২৪ নভেম্বর ২০১৯, রবিবার, ০৫:৫৩:৩৯অপরাহ্ন গল্প ২১ মন্তব্য

বারেক সাহেবের বয়স প্রায় বাষট্টি। গত বছরের প্রথম দিকে দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড হতে স্থায়ীভাবে অবসরে গেছেন। পেনশনের টাকা যা পেয়েছেন তার কিছু অংশ ব্যাংকে রেখে বাকি টাকা দিয়ে গাজীপুরে দোতলা একটি বাড়ি বানিয়েছেন। বাড়ির তৈরির তদারকি কাজ বলতে গেলে উনি একাই করেছেন। পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসা ছেড়ে নিজ বাড়িতে উঠেছেন তাও দু মাস হয়ে গেলো। স্ত্রী, এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে তার ছোট পরিবার। ছেলেটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছে। মেয়েটি বিবিএ তে অধ্যয়নরত। আর স্ত্রী মিসেস সুলতানা একজন গৃহিণী।

বারেক সাহেব বেশীরভাগ সময় বাড়িতেই কাটান। নামাজের সময় নিয়মিত মসজিদে যান। ফজরের পর প্রায় এক ঘণ্টা প্রাতঃ ভ্রমণ করেন। দু একদিন পরপর বাজার সদাই করেন। আর বাকীটা সময় বাড়ির ছাদে লাগানো গাছের পরিচর্যা করেন। সময়গুলো এভাবেই কেটে যায় তাঁর। ছেলে মেয়ের সাথে দেখা সাক্ষাতও তেমন একটা হয় না। দুজনেই সকালে বেরিয়ে যায় তাদের নিজ নিজ কাজে। বারেক সাহেব তখন থাকেন প্রাতঃ ভ্রমনে কিংবা বাজারে। স্ত্রী ব্যস্ত থাকেন রান্না-বান্না নিয়ে। ছুটির দিন ছাড়া পরিবারের সবাইকে একসাথে পাওয়াও মুশকিল। মাঝেমাঝে অবশ্য বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনদের সাথে মোবাইলে আলাপচারিতা করেন। তবে তাঁর এই নতুন মোবাইল প্রায়ই তাঁকে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। অবসর নেবার দিন ফেয়ারওয়েলে তিনি এই মোবাইলটি উপহার পেয়েছিলেন। নামীদামী ব্র্যান্ডের বেশ দামী একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল। তবে সমস্যা হল বারেক সাহেব ভালভাবে এটি চালাতে পারেন না। কেমন যেন উল্টা পাল্টা লাগে। আগের মোবাইলটি টিপেটিপে কাজ করতে হতো। আর এখন ঘষাঘষি করতে হয়। কেউ কল দিলে উনি মাঝেমাঝে রিসিভ না করে ভুলে রিজেক্ট করে দেন।

এদিকে আবার কিছুদিন আগে তাঁর মেয়ে তাঁর জন্য একটি ফেইসবুক আইডি খুলে দেন। মোবাইল থেকেও চালানো যায় ফেইসবুক। বারেক সাহেবকে শিখিয়েছেন কি করে ফেইসবুক ব্যবহার করতে হয়। কিছু আত্মীয় এবং পরিচিতদের ফ্রেন্ড লিস্টে অ্যাডও করে দিয়েছে তাঁর মেয়ে। মোবাইল ধরার ব্যাপারটি এখনও যিনি ঠিকমতো রপ্ত করতে পারেননি তাঁর কাছে ফেইসবুক তো বড়ই দুর্বোধ্য ব্যাপার। তবুও মাঝেমাঝে কৌতূহল বশত একটু উঁকিঝুঁকি দেন। অন্যদের পোস্ট করা কোনও কিছুতে দুচারটি লাইক দেবার ব্যাপারটি উনি কিছুটা রপ্ত করেছেন ইদানিং।

সেদিন ছিল শুক্রবার। ছুটির দিন। বাজার থেকে ফিরলেন বারেক সাহেব। ভালমন্দ খাবারের আয়োজন চলছে আজ। মিসেস সুলতানা ব্যস্ত রান্না নিয়ে। ছেলে মেয়েরা যে যার রুমে। কি করছে কে জানে। বারেক সাহেব রান্না ঘরের দিকে উঁকি দিলেন। মিসেস সুলতানা ঘুরে তাকালেন। মুখে হাসি টেনে বললেন-
-“কিছু বলবে?”
-“একটু চা করতে পারবে? চায়ের তৃষ্ণা পেয়েছে খুব”।
-“একটু অপেক্ষা করো। দিচ্ছি”।
-“আচ্ছা দাও”।

বারেক সাহেব ফিরে এলেন নিজের রুমে। ইজি চেয়ারে বসে মোবাইলটি হাতে নিলেন। ফেইসবুকে ঢুকে অন্যদের পোস্ট দেখছেন। কারও কারও কমেন্ট পরছেন। মন চাইলে কোনও কোনও পোষ্টে লাইক দিচ্ছেন। আর মাঝেমাঝে একা একাই মৃদু হাসি হাসছেন। চায়ের পেয়ালা হাতে মিসেস সুলতানা রুমে ঢুকলেন। বারেক সাহেব একা একা হেসেই চলেছেন। কারও আগমন যেন তাঁর চোখেই পরেনি। মিসেস সুলতানা চায়ের পেয়ালাটি এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, “কি ব্যাপার, এভাবে একা একা পাগলের মতো হাসছ কেন?” বারেক সাহেব মুখ তুলে চাইলেন। চায়ের পেয়ালাটি হাতে নিতে নিতে বললেন, “একটা মজার ব্যাপার নিয়ে হাসছি। বেশ মজা লাগলো ব্যাপারটি। হা হা হা”। মিসেস রেহালা অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন-
-“কি হয়েছে খুলে বল। বোকার মতো হাসবে না”।
-“আচ্ছা বলছি শোন। একটা সময় ছিল যখন ছেলে বেলায় রোকেয়াকে লাইক করতাম বলে কত কথাই না শুনতে হয়েছে। রোকেয়ার বড় ভাই তো আমাকে অনেক শাসিয়েছিল। ঐযে তোমাকে ঘটনাটি একদিন বলেছিলাম না! আর এখন সেই রোকেয়া আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ড। এখন ওর ছবিতে অনায়াসে লাইক দিলেও কিছু হয় না। কেউ কিছু মনেও করে না। ব্যাপারটি বেশ ইন্টারেস্টিং না?”

মিসেস সুলতানা কটমট করে তাকিয়ে আছেন বারেক সাহেবের দিকে। দৃষ্টিটি বেশ ক্রুদ্ধ মনে হল। বারেক সাহেব তাঁর মুখের হাসি সঙ্কুচিত করে ফেললেন। নিমিষেই হাসিটি কোথায় যেন মিলিয়ে গেলো। বারেক সাহেবের এমন অপরাধী মুখ দেখে মিসেস রাহেলা এবার ফিক করে হেসে দিলেন। বারেক সাহেব এবার অবাক হয়ে স্ত্রীর হাসি দেখছেন আর মনে মনে হাসির অর্থ বোঝার চেষ্টা করছেন।

(পুনশ্চঃ আগে মানুষ মানুষকে লাইক করতো আর এখন মানুষ মানুষকে লাইক দেয়। তবে এই দু ধরণের লাইকের ক্ষেত্রেও কখনও কখনও স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও পড়তে পারে)।

৬৩২জন ৫২১জন
0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ