
‘বড় বসন্তবৌরি আমাদের দেশীয় আবাসিক পাখি। অঞ্চল ভেদে এর নাম ‘নীল-গলা বসন্তবৌরি’ ‘বড় বসন্তবৌরি’ বা ‘ধনিয়া পাখি’। এরা মেগালাইমিডি গোত্রের অন্তর্ভূক্ত দক্ষিণ ও দক্ষিণ এশিয়ার একই প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও চীনের দক্ষিণ অঞ্চলে এদের বাস।
নীল-গলা বসন্তবৌরির মুখ, গলা ও বুকের উপরের দিকে গাঢ় আসমানী নিল (এ কারণে এই প্রজাতির ইংরেজি নাম Blue-throated Barbet)। দেহের বাকি অংশ কলাপাতা-সবুজ। মাথার উপরে লাল, হলুদ ও কালো পরপর তিনটি পট্টি। ভ্রু নীলাভ যার উপরে কালো ডোরা, যেটি মাথার কালো পট্টির সঙ্গে সংযুক্ত। ভারি ঠোঁট, ঠোঁটের সামনের অর্ধেক কালো, বাকি অংশ হয় নীলাভ, না হয় নীলের উপরে হলুদের আভাযুক্ত। পা ধূসর বর্ণের। চোখের তারা লালচে। চোখের চারদিকে লাল পট্টিবিশিষ্ট। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম, কেবল অপ্রাপ্ত বয়সের পাখিগুলোর চেহারায় বয়স্কদের চাকচিক্য থাকে না। দৈর্ঘ্যে ২৫ থেকে ২৭ সেন্টিমিটার। ওজন ৯০ থেকে ১০০ গ্রাম।
এই প্রজাতির পাখি সাধারণত শীতকালে আামদের দেশে প্রচুর দেখা যায়। এরা দল বেঁধে থাকতে ভালোবাসে। খাবারের অন্বেষনে বা শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেক সময় দল গঠন করে। খাদ্যকে কেন্দ্র করে এরা নিজেদের মধ্যে অনেক সময় শত্রুতায় জড়িয়ে পড়ে। কুটুর কুটুর শব্দে সারাদিন চিৎকার করতে থাকে। এরা প্রতি মিনিটে ২৫-৩০ বার পর্যন্ত একটানা ডাকতে পারে। এদের চিৎকারে কানে তালা লেগে যাবার উপক্রম হয়। বসন্ত ঋতুতে এদের চলাফেরা চোখে পড়ার মত। শীত কালে কম দেখা যায়। সাধারণত বনাঞ্চল ও যেখানে গাছপালা বেশি সেখানে উড়তে দেখা যায়। সারা দেশে এবং লোকালয়ের গাছেও এদের দেখা যায়।
নরম ফল বিশেষ করে বটফল, কদম, দেবদারু ফল, ডেউয়া, আম, কলা, পেঁপে, তেলাকুচা, কিছু পোকামাকড় ও শুঁয়োপোকা খেতে পছন্দ করে। এরা প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত এদের প্রজনন কাল। এদের ঠোঁট কাঠ ঠোকরার মতো অনেক শক্ত। নিজেরাই গাছের নরম বা পঁচা কাণ্ডে গর্ত করে বাসা বানায়। অনেক সময় কাঠঠোকরার পরিত্যাক্ত বাসাতেও ডিম পাড়ে। এরা খুব একটা উঁচুতে বাসা বানায় না। একসঙ্গে ৩-৪টি ছোট ডিম দেয়। পুরুষ এবং স্ত্রী বসস্তবৌরি পর্যায় ক্রমে ছানার লালন-পালন করে। বাচ্চা বড় হলে বাসা ত্যাগ করে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যায়।
বাংলা নাম: নীল-গলা বসন্তবৌরি
ইংরেজি নাম: Blue-throated Barbet
বৈজ্ঞানিক নাম: Pisilopogon asiaticus
২৪টি মন্তব্য
তৌহিদ
বাহ! কি সুন্দর দেখতে! আর নামটাও কিন্তু সেইরকম। বসন্তবৌরি। আমি ভেবেছলাম কাঠঠোকরা পাখি। আপনার লেখা পড়ে সে ভুল ভাঙলো। অবশ্য ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য ভাইজান।
শামীম চৌধুরী
শুভ কামনা রইলো ভাইজান।
সঞ্জয় মালাকার
এই পাখি দেখেছি অনেক বার তবে নামটা অজানা ছিল, আজ জানাহলো নাম, বসন্তবৌরি অজানা তথ্য জানলাম।
খুব ভালো লাগলো পড়ে শ্রদ্ধে দাদা।
শামীম চৌধুরী
কৃতার্থ দাদাভাই।
বন্যা লিপি
বর্নণা পড়তে পড়তে চোখের সামনে নাচছে যেন বসন্তবাউড়ি। যেমন ছবি তেমন বর্ননা।
আপনাকে ধন্যবাদ পক্ষীপ্রেমিক শামীম ভাই।
শামীম চৌধুরী
কৃতার্থ বন্যাপু।
নাজমুল হুদা
এই পাখি প্রায়ই দেখি । কিন্তু নাম জানতাম না। ওরা পেয়ারাও খাই ।
আপনার পোস্টগুলো পড়লে প্রকৃতির ছোঁয়া লাগে। অনেক শিখতে পারি । আরো বেশি বেশি জানতে চাই লিখার মাধ্যমে। এই লেখাগুলো আগামী প্রজন্মের সম্পদ যখন প্রকৃতিবিহীন একটা প্রজন্ম বেড়ে উঠবে তখন ওরা এসব পড়ে প্রকৃতির স্বাদ নিবে্।
শামীম চৌধুরী
প্রকৃতিবিহীন হলে মানবও হারিয়ে যাবে। তাই আমাদের উচিত পরবর্তী প্রজন্মের জন্য প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা।
রেজিনা আহমেদ
আমরা কলকাতায় এই পাখিকে ধনিয়া পাখি নামে চিনি,, আমার বাড়ির আশেপাশে আছে, তবে খুবই কম
শামীম চৌধুরী
আমাদের দেশে আঞ্চলিক নাম হলো বন টিয়া।
কামাল উদ্দিন
বড় বসন্ত বাউরির থেকে ছোটটা অনেক বেশী সুন্দর, আমি ছোট বসন্তভাউরির প্রেমে মজে আছি দীর্ঘ দিন যাবৎ। ওদের ক্যামেরা বন্দি করা একটু কঠিন তবু অনেক বন্দি করেছি, বড়টাও করেছি……….তথ্য বহুল লেখার জন্য ধন্যবাদ।
শামীম চৌধুরী
আসলেও cooper smith barbet খুব সুন্দর।
ছাইরাছ হেলাল
খেয়াল কয়রে দেখিনি এই পাখাটি।
দেখতে সুন্দর লাগে, তবে পাখির তুলনায় ঠোঁট অনেক বড় বড় লাগে।
শামীম চৌধুরী
এদের ঠোঁট খুব শক্ত হয়। তাদের সকল খাবারই ঠোঁটের মাঝে হেলাল ভাই।
এস.জেড বাবু
আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন,
আগে হয়ত শুনিনি-
চমৎকার দেখতে,
তথ্য জানতে পেরে ভাল লাগছে।
ছবিগুলি চমৎকার ।
শুভকামনা রইলো
শামীম চৌধুরী
আপনার জন্যও রইলো শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভিন
যেমনি নামের বাহার নামের তেমনি রূপেরও। অদ্ভুত সুন্দর দেখতে এই পাখি।
চমৎকার পোস্ট
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ আপু।
নিতাই বাবু
আমি মনে হয় পাখিটি এই প্রথম দেখলাম এবং এই বসন্তবৌরি পাখি বিষয়ে আপনার পোস্ট পড়ে এখনই জানলাম। পাখিটি দেখতেও খুব সুন্দর!
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ দাদা ভাই লেখাটি পড়ার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
বসন্তবৌরি পাখিটি সম্পর্কে জানতাম না তেমন কিছুই,
অনেক সুন্দর দেখতে পাখিটি,
পাখিয়াল ভাই ( আপনি ) আমাকে পাখি সম্পর্কে জানাচ্ছেন, এতে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ জিসান ভাই। আপনার জন্যও রইলো শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি
মুখের অংশটা অনেকটা মনে হয় রঙিন কার্পেট।বসন্তবৌরি পাখি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম।খুব ভাল লাগল।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ মমি ভাই সময় নিয়ে লেখাটা পড়ার জন্য্