
রাজশাহী শহরটা আমাকে খুব টানে। তার একমাত্র কারন পদ্মার চর। হরেক প্রজাতির পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠে এই চর। সারাদিন নৌকায় বসে পাখিগুলির উড়াউড়ির দৃশ্যে ও বর্ণীল রঙে নিজেকে হারিয়ে ফেলি । তাই গত সপ্তাহে টানা তিন দিন বন্ধ থাকায় চলে যাই রাজশাহীতে। মূল উদ্দেশ্য ফটোগ্রাফী।
শুক্রবার খুব ভোরে পৌছি প্রিয় শহরে। হোটেলে মালপত্র রেখে বের হয়ে যাই পদ্মার চরে। হোটেলের সামনের রাস্তায় বসে মাঠা বিক্রি করছেন একজন মাঠাওয়ালা। আমরা সবাই মাঠা পান করছি।এরই ফাঁকে একটি ছবি তুলে “ Good morning Rajshahi” লিখে ফেসবুকে পোষ্ট দেই। পরের দিন সকাল ৭টায় মোবাইলের স্কীনে ভেসে উঠে একটি নাম। আদরের ছোট ভাইটির নাম ভেসে উঠাতে একটু থমকে যাই। এতো সকালে ম্যাসেঞ্জারে কল! ধুরু ধুরু বুকে কলটা রিসিভ করি। হ্যালোঃ বলার সাথে সাথে অপর প্রান্ত থেকে পরিচিত ও মিষ্টি একটি কন্ঠ ভেসে আসে। সালাম দিয়ে বলে ভাই আপনি কি রাজশাহী?
উত্তর দিলাম, হুম আমি রাজশাহী।
অপরপ্রান্ত থেকে উত্তর আসে আমিও রাজশাহী। কোথায় উঠেছেন? বললাম হোটেল মুনে। ভাইটি বলে উঠলো আমি চিনি আপনার হোটেল। দেখা করতে চাই। কখন থাকবেন? সন্ধ্যা ৭টায় আসতে বললাম। ওর সাথে কথা শেষ করে ছুটে গেলাম আবারো পাদ্মার চরে। সেদিন “বুলবুল” তান্ডব নৃত্য দেখাতে পারে বলে সারা দেশ ছিলো আতঙ্কে। অথচ ছবিয়ালদের কোন ডর-ভয় নেই। উত্তাল পদ্মার বুকে নৌকা নিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছি। আকাশে কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে। তারপরও কি যেন এক নেশা সমস্ত ডর-ভয় পাশ কাটিয়ে পুরোদ্দমে সামনে চলার শক্তির যোগান দিচ্ছে। সারাদিন পদ্মায় কাটিয়ে সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরি। ফ্রেশ হয়ে চা’র কাপ হাতে নিয়ে বসে আছি। এরই মাঝে বেঁজে উঠলো ফোন। বললো, ভাই আমি আপনার হোটেলের নীচে। রুমে আসার আমন্ত্রন জানালে উত্তর দিলো আপনি নীচে আসুন। স্বশরীরে ভাইটিকে দেখবো বলে শরীরের ভিতরে বেশ উত্তেজনা কাজ করছিলো। কোন কথা না বাড়িয়ে নীচে নেমে আসলাম।
নীচে নেমে তৌহিদকে দেখে কিছুক্ষন বোবা হয়ে রইলাম। মনে মনে ভাবলাম এটাও কি সম্ভব? ভার্চুয়াল জগতে দেখা ও ভার্চুয়াল কথা। ভার্চুয়াল কি করে রিয়েল হয়? নানা প্রশ্ন যখন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো তখন তৌহিদের স্বভাব সূলভ হাসি, মিষ্টি কথা ও ভালোবাসায় নিজেকে হারিয়ে ফেলি। বড় ভাই হিসেবে আমাকে শ্রদ্ধা,ভালোবাসা ও বিশ্বাস করার প্রবনতা দেখে আমার মনে হলো আমরা একই মায়ের গর্ভে দুই ভাই। অতীত জীবনের অনেক ঘটনাই আমার কাছে শেয়ার করলো। সব শুনলাম। শুধু একটি কথাই বললাম জীবন সংগ্রামে তুমি জয়ী।
হোটেলে বসে নানরুটি ও হালিম খাবার ফাঁকে ফাঁকে আলাপচারিতায় মশগুল ছিলাম তৌহিদের সাথে। আড্ডার অধিকাংশ জুড়ো ছিলো সোনেলাকে ঘিরে। তাতে বুঝতে পারলাম সোনেলা তৌহিদের আরেকটি সন্তান।
তৌহিদের মেধা, গুনাবলী, সাহসিকতা ও বন্ধুসূলভ মনোভাব যে কাউকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। সুন্দর মনের একজন মানুষের সাথে ভিন একটি শহরে দেখা ও কথা হওয়ায় নিজেকে ধন্য মনে করেছি। যা সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র তৌহিদের ইচ্ছা শক্তির জন্য।
অনেক দোয়া আর ভালোবাসা রইলো আমার এই ছোট ভাইটির জন্য। তৌহিদ আবারো প্রমান করলো পৃথিবীটা কমলালেবুর মতন গোল।
১৫টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
আপনাদের দুইজনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সোনালীয় অভিনন্দন।
আসলে গোলাকারে ঘুরতে ঘুরতে সবাই একজায়গায় হাজিরা দিই।
খুব আনন্দিত ওবং চিন্তিত ছবি দেখে কিবাভে মিল্ল পরে বুঝলাম। পড়ে। ভাল থাকুন দুই ভ্রাতা।
নৃ মাসুদ রানা
ফটোগ্রাফি দেখার আগ্রহ রইলো…
সুরাইয়া পারভিন
চমৎকার স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে
আপনাদের দু’জনের জন্য রইল শুভকামনা
অনন্য অর্ণব
দু জনের জন্যই শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
দেখা হয়েই যায় কিভাবে যেন,
দুজনের প্রতিই শুভেচ্ছা, শুভ কামনা।
রেহানা বীথি
বাহ্, দারুণ ব্যাপার তো! খুব ভালো লাগলো আপনাদেরকে একসাথে দেখে। শুভকামনা দু’জনের জন্য।
এস.জেড বাবু
স্বশরীরে ভাইটিকে দেখবো বলে শরীরের ভিতরে বেশ উত্তেজনা কাজ করছিলো।
অনেক প্রিয় একজন, তেমন কারো সাথে কেটে যাওয়া একটি দিন একটি সুন্দর গল্পের মতো।
দুইজনের জন্য শুভকামনা
মোঃ মজিবর রহমান
আমরা ধাকায় থেকেই হয়না দেখা আর দেশের দুই প্রান্তের মিলন বাহ!
ছাইরাছ হেলাল
আহা কমলালেবু!
ছবির মতই বর্ণনা। আমরাও অপেক্ষ করতেই পারি!
————————————-
নোমান ভাইয়ের আম্মা এখন কেমন?
তৌহিদ
ভাই আপনি একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ। আপনার সাথে প্রথম দেখাতে যে আন্তরিকতা নিয়ে আমাকে আপন করেছেন তা আমি কখনওই ভুলতে পারবোনা।
ছবির দিকে তাকিয়ে যে কেউ বলবে আমরা সত্যিকারের দুই ভাই। পাশে থাকবেন সবসময়।
ভালোবাসা রইলো।
মনির হোসেন মমি
সত্যিই অবাক হবার মত। আমরা ভার্চুয়ালে একে অন্যের সাথে কথা বলি কিন্তু বাস্তবে দেখা হয় না তেমন যদি হয়েই যায় তাতো স্বর্গীও পাওয়া। আপনারা দু’জনই আমার খুব প্রিয় মানুষ প্রিয় ভাইজান, আমারে ফালাই এ ভাবে একা একা খাওয়া দাওয়া শেষ করা কি ঠিক হল?
যাক যেহেতু তৌহিদ ভাই পৃথিবীটা কমলালেবুর মত প্রমাণ করে ফেলেছেন আমরাও পারব ইনশাল্লাহ্।
চমৎকার উপস্থাপনা।
ইঞ্জা
দুই ভাইয়ের জন্যই ভালোবাসা, এ ছিলো নিয়, নাহলে দুই শহরের মানুষ অন্য শহরে কিভাবে দেখা হয়ে যায়, সত্যি পৃথীবিটা কমলালেবুর মতোই। 😍
কামাল উদ্দিন
পদ্মার চর, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ, ব্লগিং এ যে আমার কাছে ইয়াবার নেসগার থেকে কোনও অংশে কম নয়। সেই সাথে যদি বিশেষ কোন ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তো সোনায় সোহাগা। ভ্রমণ ব্লগের প্রতিটা অক্ষর আমি খুটিয়ে পড়ি, বিস্তারিত চাই, সেই সাথে চাই সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি………..মনে গোল পৃথিবীতে আপনার সাথে কোন সময় দেখা হয়েও যেতে পারে।
কামাল উদ্দিন
নেসগার = নেশা
প্রদীপ চক্রবর্তী
আপনাদের দুজনকে একসাথে দেখে বেশ ভালো লাগছে।
শুভকামনা দাদা।