
কথাটা মুখে মুখে আজকাল-
ঝাঁলর মোড়ানো বাঁশের ডগায়
লেগে গেছে তিরপাল,
আজকের সন্ধ্যেটা বর্ণিল,
উজ্জলতায় কেটে গেছে রাত্রীর নিরবতা,
বদলে গেছে এ বাড়ির হালচাল ।
আল্পনায় সেজেছে ঘরের মেঝে,
সিড়িগুলিও সেজেছে রঙ্গীন সাজে।
মুহুর্মুহু সারাবাড়ি, লেগে গেছে ঝাড় বাতি;
এই তো সময়-
শুরু হবে ক্ষণ, “গায়ে হলুদের আরোতি”
প্রিয়ন্তী হাসে-
এমন লগন জীবনে কি আর, বার বার ফিরে আসে !
আঙ্গিনা জুড়ে সারি সারি চেয়ারে গল্প জমজমাট-
শিশু কিশোর যুবকের মেলা,
কচিকাঁচারা করছে খেলা,
খন্ড আড্ডার টুকরো আসরে, পূর্ণ সারাটা মাঠ।
কে যেন নাচছে হেলে দুলে-
ছান্দিক কড়তালি আর
স্পিকারে জোড়ালো শব্দের তালে তালে-
তোমরা দেখ গো আসিয়া
কমলায় নৃত্য করে থমকিয়া থমকিয়া।
ডজন ডজন পরিচিত অপরিচিত মুখের আনাগোনা
যেন সবাই কত আপন !
কত কালের পুরুনো জানাশোনা।
প্রিয়ন্তী হাসে-
আগামী দিনের সম্ভাবনায়, স্বপ্নের সাগরে ভাসে___॥
লাল পাড়ের হলদে শাড়িতে,
সেজেগুজে দাড়িয়েছে আয়নায়,
খোপাটাও কেমন বাঁধা পড়েছে,
গাঁধা ফুলের গাথা মালায়।
শুনেছি ও বাড়ি থেকেও এসেছে ক’জন,
সেই কখন সেরেছে ভোজন,
গাঁয়ে হলুদের লগ্নটা খুব জলদি হয়ে এলো,
মাত্র সূর্য্যটা পশ্চিমে হেলেছে, কখন যে সন্ধ্যে হলো !
ভেজা চোখে মা,
তাই কাকীমা এলো, কনে কুঞ্জে নিয়ে যেতে-
আজকে অন্তী’র গাঁয়ে হলুদ
বিয়ে হবে কালরাতে।
প্রিয়ন্তী হাসে-
কত বসন্ত ফুরিয়েছে জীবনের- এই ক্ষণ টাকে ভালবেসে ॥
গুটি গুটি পায়ে হাটে ললনা,
চির চেনা পথ, আজ কত অচেনা !
কার হাত ধরে হাটছে সে আজ, নিজ বাড়ির আঙিনায় !
এমনি বুঝি নারী জীবনে আপন-পর বদলায়।
হ্যাঁ বদলায়
সত্যি বদলে যায়______!
স্বপ্নগুলি ছেঁটে-ছুটে আজ বিবেকের কাঠগড়ায়,
সম্পর্কের কাছে, এতটা বছরের ভালবাসাও যে অসহায় !!
প্রিয়ন্তী হাসে,
যাকে ঘিরে আজ হলুদের সন্ধ্যা- তাকে কি সে ভালবাসে !!
পাগলাটে সেই ছেলেটাও কি এখনো হাসে ?
শেষ বেলাটায়, কেন সে ভাবনা বারবার ফিরে আসে ?
যখন, ফুলের কুঞ্জের মধ্যমণি- ফুলকন্যা হয়ে বসে ॥
কোথায় যেন, কাটতো সময়টা তার !
আজও কি তেমন সেখানেই আছে- মুখখানি ভিষন ভার।
হেরে গেছে আজ সত্যি সে ও, অজানায় ভালবেসে-
একলা সে ?
না হাজারো মানুষ- অনন্ত’র আশেপাশে !?
প্রিয়ন্তী হাসে-
ভিষণ শব্দ করেই হাসে।
থামছে না যেন, হাসিটা কেমন- মিশে গেছে নিঃশ্বাসে।
শুনে মা ছুটে আসে, বাবা কাছে আসে,
থেমে গেছে গান, আপনজন সব দাড়িয়েছে চারপাশে।
দুনিয়ার সমস্ত খেয়াল ভুলে-
প্রিয়ন্তী কেবলি হাসে, ভাবে-
বিঁষ দংশনে নীল হলো কেউ- নাগিনীকে ভালবেসে।
সেই থেকে প্রিয়ন্তী হাসে,
ফুলের হাসিতে, সবুজের ছোঁয়ায়- রৌদ্র, বৃস্টি, মেঘে,
সে কেবলই শুধু হাসে-
যেমন করে খিলখিলিয়ে- হাসেনি সে কভূ আগে।
শুধু সন্ধ্যেবেলায়, হাসি থেমে যায়,
ঘুরে ফিরে- বাগানে কাটায়,
ফুলে ফুলে ছুঁয়ে,
গুনগুনিয়ে,
গান গেয়ে যায় – অশ্রু ঝড়ায়,
কখনো কারো পাশে থেমে যায়,
রুস্ট কন্ঠে- আবৃত্তি শোনায়,
মাস কেটে যায়, বছরটা গড়ায় ।
যেখানে দেয়াল ঘেড়া লোহার খাঁচায় হাসি কান্না অর্থহীন,
সেখানে মা আসেনি কোনদিন।
বাবা লোকটা প্রায়ই বহি:র্বিভাগে আসে,
হাত বুলিয়ে দেয় মাথায়- যত্ন করে ডেকে বসে,
মিস্টি করে হেসে-
বাড়ি ফিরে যাওয়ার গল্প বলে- মিছিমিছি আশ্বাসে ।
বলে- অনন্ত আজও আছে,
কৃষ্ণচূড়া খুড়ি মেলেছে তার- মাটির ঘরের চারপাশে ।
অন্তী অবাক,
কেমন করে, এতোদিন ধরে অনন্ত রেগে থাকে !
পুরুনো ডাকবাক্স ভেঙ্গে গেছে হয়ত, যেখানে সে কথা রাখে।
শেষ চারটি বছরে অন্তী পায়নি-
অনন্তের কোন কবিতা,
যেথায় ছন্দের ভানে গুণত সময়
পাগলাটে সেই ছেলেটা ।
আর আজকাল !!
অন্তী গুণে, সারা রাত বসে
ক’ টা শব্দে হাঁটে, দেয়াল ঘড়িটা______॥
প্রতিদিন কতো মুখ ফিরে যায় ঘরে,
সুস্থ সুন্দর জীবনের তরে ।
নতুন মুখের আরও কতজন- নতুন করেই আসে।
প্রিয়ন্তী সারাবেলা তেমনি হাসে,
যেমনি হাসতো নিত্য সন্ধ্যায়, উঠেনে, বাগানে বসে।
এখানেও ফুল ফুটে-
শুধু উঁচু দেয়াল ঘিরে আছে সে- বাগানের চারপাশে।
যখন রাত্রীটা ঘুমায় সুখ নিদ্রায়- অন্তী একেলা বসে-
তখন মন খুলে প্রিয়ন্তী হাসে-
ঝিঁমুনী ভেঙ্গে বুড়ো চৌকিদার, সোজা হয়ে টুলে বসে,
ডিউটি ভুলে ডাক্তার দাঁড়ায়, লোহার দরজার পাশে।
কখনো হাসে নার্স, কখনো হাসে ডাক্তার-
কখনো ওপাশের পাগলীরাও হাসে অযথাই উল্লাসে-
পাগলা গারদের দেয়াল ডিঙ্গিয়ে সে হাসির শব্দ ভাসে,
মাইল পাঁচেক দুরের জংলায়, অনন্তের কবর পাশে_____॥
-০-
____১৪/১০/২০১৮
১৭টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
একবার পড়লাম,
আরো পড়তে হবে।
পুর্নাংগ মতব্য পরে করব।
এস.জেড বাবু
অবশ্যই ভাইজান।
শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য
ছাইরাছ হেলাল
আপনার লেখা ধৈর্য্য হিংসে করার মত,
আবার পড়তে হবে। আসছি একটু পরে।
এস.জেড বাবু
আপনার মন্তব্য – আমি উল্টে দিবো-
আপনার লিখা দেখে নিত্য হিংসায় পুড়ি আমি-
ভাবি- কেউ এতো সুন্দর কি করে লিখে।
তবে হিংসা করি আর শিখি।
শুভেচ্ছা ভাই
মোঃ মজিবর রহমান
এমনি বুঝি নারী জীবনে আপন-পর বদলায়। আসলেই তাই। শেষে কস্ট ভরা হাসেএ না মন।
এস.জেড বাবু
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই
শুভেচ্ছা অশেষ
ছাইরাছ হেলাল
এ তো জীবনের ভালোবাসার করুন অপ্রাপ্তি শেষে শেষ আশ্রয় পাগলা গারদ।
যা বলছিলাম, এতখানি টেনে নিয়ে যাওয়া সত্যি সত্যি কঠিন, এহেন কঠিন কাজটি কত অবলীলায় কত সহজে সাহসে
এফোঁড় ওফোঁড় করার সমসক্ষমতা সবার হয় না, সবাই পারবে-ও না। আপনার সাহস আছে বলতেই হবে। আর সাহসীরা ই
দিন শেষে বিজয়ী হয়,
তবে আমি মনে করি আর একটু মনোযোগ আপনি চাইলেই দিতে পারেন।
এস.জেড বাবু
লিখিয়ে হিসেবে একজন সার্থক হবে যদি আপনার মত গুণী পাঠক পাশে থাকে।
সুবিচার / লিখার মর্ম অনুধাবন করার মত মন দিয়ে অনেকেই পড়ে না। আমিও অনেকাংশেই তেমন।
আর ভাইজান- একটা থীম মাথায় আসলে লিখতে চেষ্টা করি, সেক্ষেত্রে কখনো কোন লিখা চার ছয় মাস এমনকি বছর শেষেও অপূর্ণ থাকে।
সব চেষ্টা সফল হয় না।
অনেক ভালো থাকবেন প্রিয় ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
খালি বেশি কয়, বেশি বেশি কয়! বেশি বেশি-ই কয়!
যাক যা বলছিলাম, আবার বলি,
আপনি যাই লেখেন না কেন, সেখানে আরও মনোযোগী হতে বলি।
এর বেশি তো বলা যায় না। বলিও না।
মনির হোসেন মমি
পুরোটা বুঝে উঠা কষ্টকর। নারীর জীবন বৈচিত্রময় -হাসি কান্না র মাঝে বয়ে যায় জীবন।
এস.জেড বাবু
ছেলেটা হয়ত বলেছিলো- মেয়েটা যদি অন্য কারো নামে হলুদ পড়ে- সেদিন ছেলেটার শেষ দিন হবে।
এতদিন মেয়েটা বিশ্বাস করেনি- তবে আজ মেয়েটা সেই কথাটা বিশ্বাস করে সময় হারিয়ে।
অনেক শুভেচ্ছা রইলো ভাইজান
সুরাইয়া পারভিন
প্রিয়ন্তী হাসে, কেবলই হাসে
হাসি যে হৃদয়ে ঝড় বয়ে যাওয়ার হাসি
ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ের রক্তক্ষরণের হাসি
এ হাসি কষ্টে কষ্টে নিঃশেষ হবার হাসি
হাসুক প্রিয়ন্তী হাসুক প্রাণ খুলে হাসুক
চমৎকার উপস্থাপন
এস.জেড বাবু
জ্বী
তবে হাসুক প্রিয়ন্তী।
অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় আপু
সুখী জীবন কামনা করছি
নৃ মাসুদ রানা
পাগলাটে সেই ছেলেটাও কি এখনো হাসে ?
এস.জেড বাবু
হয়ত হাসে
ওপাড়ে যদি কেউ কারও বিরহে হাসতে পারে, তবে হয়ত হাসে।
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ভাই।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
অনেক লম্বা কবিতা, কেমনে পারেন লিখতে!
ভালো লেগেছে।
এস.জেড বাবু
একটা ঘটনার শুরু থেকে শেষ না হলে কেমন দেখায়।
এগুলি অনেক লম্বা সময় নিয়ে লিখা। তিন চার মাস এমনকি বছরের পরও একটা লিখা শেষ হয়েছে।
শুভেচ্ছা ভাই