
আজ থেকে বত্রিশ বর্ষ পূর্বের কথা। বাদামতলীতে বসবাস করতো এক মেয়ে, নাম তার বাতাসী। তাকে অস্বচ্ছলতা খুব যে কুড়ে খেয়েছে সেটাও নয়। গাও গ্রামের মুরুব্বীদের মুখে শুনেছি “ইজ্জ্বত যায় না ধুইলে আর খাছলত যায় না মরলে।” বাতাসী তেমন এক হাওয়াই মিঠাই। মুখে তুলে নিলেই যেন শেষ। কি আজব এ মিঠাই।
বাতাসীর নাম যথার্থই হয়েছে। বাউরা বাতাসের মতো তার সর্বাঙ্গের সাথে মিলেমিশেই পরিপূর্ণ। যে একবার দেখেছে সে এমনটাই যথার্থই বলেছে। বাতাসের স্পর্শ যেমন অনুভবেই পূর্ণ তেমনি বাতাসীকেও যে একবার দেখেছে তার অন্ধ জল খরস্রোতা নদীর জলের মতোই প্রবাহিত হয়েছে।
বেশী সুন্দর আর বেশি কুৎসিত এ দুজনাই যেন সমাজের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায় অসময়ে। আর যদি নিন্মমধ্য বিত্ত ঘরে এমন ঘটনা ঘটে তবে চোখ বন্ধ করে বলা যায় সমাজপতি, অস্ত্রপতি আর রাজপতিদের দৃষ্টি যেন ঐ নারীর জীবেন শকুণের মতোই তীক্ষ্ণ তীরে রক্তাক্ত। কুৎসিত সে তার ঘর দুয়ার দু জায়গা থেকেই বঞ্চিত হতে হতে একদিন দু’টাকার ইঁদুরের বিষে নিজেকে বিসর্জন দেয়। আর বাহ্যিক সুন্দর যে সে সব ভুলে জলের মতো হয়ে যায়।
ব্যক্তি জীবনে সুখের কথা দূরে থাক তখন বেঁচে থাকার তাগিদেই নিজেকে নিজেরা হাওয়াই মিঠাই হিসেবে গড়ে তোলে অনেকে। আবার কেউ কেউ মর্ডানের নামে আল্ট্রামর্ডান সেজে নিজেকে হাওয়াই মিঠাইয়ে রুপান্তরিত করে নানারুপ ও বর্ণে।
বাতাসী সেই আল্ট্রামর্ডানদের একজন আজ। বয়স সবে মাত্র আঠার বা কুঁড়ি। কচি ডাব, আর জোয়ারের জল নিন্মমুখী ধেয়ে যাওয়া পথে রেখে যাওয়া পলির মতোই। এ যেন সোনায় সোহাগা। অনেকে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি ও বলে। এভাবেই কাটছে বাতাসী দিন গণনা। সমাজের নিচুস্তর থেকে উঁচুস্তরের সবাই যেন তার পা চাটা গোলাম।
সৃষ্টিকে ভুলে কতদিন বেঁচে থাকা যায়? কেউ ভুলে থাকতে পারেনি পারবেও না। মৃত্যু যে অবধারিত।
আজ বাতাসীর বয়স পঞ্চাশ। মুখের চামড়াগুলো নাদুস নুদুস পালিত কুকুরের মতোই ঝুলে গেছে। ছোট্ট বাচ্চারা সেটা টেনে যেন খুব মজা পায়। আজ আর ক্রেতার দৃষ্টি নেই তার দিকে। কেউ মুখ ফিরে ভুল করেও তাকায় না একবার।
কিন্তু কথায় আছে – “ইজ্জ্বত যায় না ধুইলে আর খাছলত যায় না মরলে।” যৌবন নেই তাতে কি হয়েছে। বাতাসীর সর্বাঙ্গে নামিদামি পারফিউম আছে আর আছে তার কামুক ঘ্রাণ কিন্তু শুধু নেই চুম্বকের আকর্ষন।
আজ পাশের বাড়ির ময়নাকে দেখে বাতাসীর খুব ইর্ষা হয়। মনে পড়ে যায় অতীতের কথা; কত জর্জ, ব্যারিস্টার, উকিল, মোক্তার, ডাক্তার, রাজপতি, অস্ত্রপতিদের মুখে হাসি তুলে দিয়ে কত এনাম পেয়েছি। আজ সবাই যেন ঈমানদার হয়ে গেছে। দেখে মনে হয় তাদের মতো ভাল মানুষ জগতে আর একটিও নেই।
আজ বাতাসী বাড়ির পাশে বয়ে চলা সড়কে সারিসারি পায়খানা স্তুপ করে রাখে। নিজের মলমূত্র নিজেই ত্যাগ করে রাখে। আজ সে নিঃস্ব আজ আর তার কিছুর প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নেই অন্যদেরও। তার আজ শুধু প্রয়োজন পথিক যেন মলমূত্রের দেখে নষ্ট বাক্য উচ্চারণ করে। এই নষ্ট বাক্যই বাতাসীর স্বস্তির একমাত্র ভরসা। যৌবনের টগবগে জয়গান। আসলেই “ইজ্জ্বত যায় না ধুইলে আর খাছলত যায় না মরলে ।”
২১টি মন্তব্য
এস.জেড বাবু
কলাগাছ একবারই ফসল দেয়
তার যত্ন এক ফসলের আগেই-
রূপ বেঁচে যারা তাদের মর্ম টানটান চামড়া যতদিন-
সব বাতাসি’দের পরিণতি প্রায় একই রকম, –
একটা কথা চমৎকার – ইজ্জত যায় না ধুইলে আর খাছলত যায় না মরলে।
সুন্দর হয়েছে ভাই।
রুদ্র আমিন
মন্তব্যে ভালোবাসা রইল।
হালিম নজরুল
বাতাসী সেই আল্ট্রামর্ডানদের একজন আজ। বয়স সবে মাত্র আঠার বা কুঁড়ি। কচি ডাব, আর জোয়ারের জল নিন্মমুখী ধেয়ে যাওয়া পথে রেখে যাওয়া পলির মতোই। এ যেন সোনায় সোহাগা। অনেকে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি ও বলে। এভাবেই কাটছে বাতাসী দিন গণনা। সমাজের নিচুস্তর থেকে উঁচুস্তরের সবাই যেন তার পা চাটা গোলাম।
————————-লেখার স্টাইলটা সুন্দর
রুদ্র আমিন
জেনে ভালো লাগলো ভাই
বন্যা লিপি
মন্তব্য করার ভাষা পাচ্ছি না। কি মন্তব্য করবো এমন লেখায়?
রুদ্র আমিন
ক্যানো ভয় পাচ্ছেন, আপনি ভয় পেলে যে আমি কিছুই শিখতে পারবো না। গঠনমূলক আলোচনা হলে শিখতে পারা যায়।
রেহানা বীথি
এমন বাতাসীরা যে জীবনটা যাপন করে, তা থেকে বের হয়ে আসতে পারে না। আর পারবেই বা কেমন করে? বেরিয়ে এলেই কেউ কি তাদেরকে জায়গা দেবে? দেবে না। শরীরকে পুঁজি করে পেটের ক্ষুধা মেটায় ওরা। শরীরে ভাঙ্গন ধরলে ফিরেও দেখে না কেউ।
ভালো লিখেছেন।
রুদ্র আমিন
আমাদের সমাজ ও আমরা এদের ফিরে আসতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছি… তারাও সুস্থ্য জীবন যাপন করতে চায়।
সুরাইয়া পারভিন
বাতাসী হাওয়াই মিঠাই হতে বাধ্য হয়েছিল।বাধ্য করেছিল সমাজপতিরা,,, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের বাতাসীর আর কিইবা করার ছিলো।
চমৎকার লিখেছেন
রুদ্র আমিন
বোন তুই ঠিক বলেছিস
মনির হোসেন মমি
কিছু নিয়তি গড়তে হয় কিছু নিয়তি ভাগ্যের সাথী হয় । কিন্তু বেলা শেষে যদি তার হুস না আসে তখন লোকের তাচ্ছিল্য তার প্রাপ্যতা। খুব ভাল লাগল।
মনির হোসেন মমি
দেশে আছেন নাকি দেশের বাহিরে?
সাবিনা ইয়াসমিন
এক পাক্ষিক লেখায় মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
রুদ্র আমিন
ধন্যবাদ…… গঠনমূলক সমালোচনা তো হতে পারে, যা আমার জন্য ভালো হবে।
সাবিনা ইয়াসমিন
মানুষের কি শুধু রুপের বড়াই থাকে? অর্থ-বিত্ত, শক্তি-জনবল এসব নিয়েও বড়াই করে। এক সময়ের সেরা মল্ল যোদ্ধারাও বৃদ্ধকালে দুর্বল হয়ে পরে। অপরের কাধে ভর দিয়ে তাদের চলতে হয়। আপনার লেখার মুল বিষয় ছিলো ” কোনো কিছুই দীর্ঘস্থায়ী নয় “, আপনি এখানে শুধু একজন মেয়ে এবং তার অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতি আলোকপাত করেছেন। এটা আমার কাছে ভালো লাগেনি।
জিসান শা ইকরাম
এটিই নিয়ম,
একটি সময় এরা পরিত্যাক্ত হয়ে যায়।
রুদ্র আমিন
সময় সবাইকে অসময়ের হিসেব বুঝিয়ে দ্যায়।
কামাল উদ্দিন
এজন্যই একটা সংসার থাকা দরকার, নইলে ক্ষণস্থায়ী রূপ যৌবন শেষ বেলায় কাল হয়ে দাঁড়ায়…….কেমন আছেন আমিন ভাই?
রুদ্র আমিন
সংসার গড়েও যে অর্বাচিন সুখের জন্য সংসার ভেঙে চলে যাচ্ছে…… আদৌও কি সুখের সন্ধান পায় তারা? অতঃপর আরেকটি বাতাসীর জন্ম।
আরজু মুক্তা
বাতাসির দোষ। আর পুরুষগুলো সবসময় নতুন?
রুদ্র আমিন
আমি কিন্তু বলনি পুরুষগুলো সব সময় নতুন… এই যে আপনি পুরুষ এর সাথে গুলো যুক্ত করেছেন এখানেই সমস্যা… ৫ আর পঞ্চম এর মাঝে যেমন অনেক ব্যবধান তেমনি বাতাসী আর নারীর মাঝে অনেক ব্যবধান।