
চুড়িওয়ালি হাঁক দিচ্ছে। চুড়ি লাগবে চুড়ি। নির্জন দুপুরকে ছিন্ন করে তার ডাক ভালো লাগছে।
আমি অপরাজিতা। বাবা মা দুজনেই আমাকে তালা দিয়ে চলে যান কাজে। আমি ঐ জানলার ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখি। কখনোও দুধ বিক্রেতা, কখনোও ফেরিওয়ালা, কখনো আইসক্রিম ওয়ালার সাথে কথা বলি।
এই চুড়িওয়ালি! এই যে, শুনছেন? উনি এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন আর আমি হাত নাড়ছি।
ও — তুমি— আমায় ডাকছো?
তুমি কি মন খারাপ করছো, ডাকছি বলে।
না,,,,, চুড়ি নিবে?
রঙধনুর মতো চুড়ি আছে তোমার কাছে।
বাহ বা! তোমার ছোট ঈশ্বরের মতো হাতে এক গোছা চুড়ি মানাবে খুব।
একটু দাঁড়াও, খুঁজে দেখি।
আচ্ছা, তুমি কি শুধু চুড়ি বিক্রি করো?
না, চুড়ি ছাড়াও, ফিতে, ব্যান্ড, টিপ, মালা, কানের দুল———আরও কতো কি!!! এইতো পেয়েছি। এই গোছা মানাবে খুব।
আমি একটু পরে দেখবো।
তোমার হাতখানা জানালা দিয়ে বাড়িয়ে দাও। এইতো; আর একটু! মানিয়েছে বেশ।
এখানে রংধনুর সাত রং আছে? তুমি কি জানো রংধনুর রংগুলো কি কি?
আমি তো মুর্খ মানুষ। এই ধরো লাল, নীল কমলা–এই তিনটা দেখি। আচ্ছা মা, আর চারডা কি কি?
বেগুনি, আসমানি, সবুজ, হলুদ–এই চারটি বেশি মিশে থাকে। তাই অতো দেখা যায়না। তোমার চুড়িতে তো চারটা রং দেখছি।
কি কি পেলে?
লাল, হলুদ, সবুজ, নীল!
ও! পছন্দ হইছে?
অ——-নে———ক!
মা কে দেখিয়ে আসো। দাম ত্রিশ টাকা বলিও। আচ্ছা যাও, তোমার জন্য পঁচিশ টাকা।
আমার আম্মু তো বাসায় নেই। কাজে গেছেন। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হবে।
দূর! তাহলে আমাকে দেরি করালে কেনো?
চুড়িওয়ালি, আমি না একা একা থাকি। কতক্ষণ আর টিভি দেখবো? তাই মাঝে মাঝে তোমাদের মতো কাউকে পেলে কথা বলি। আবার কাকদের সাথেও কথা বলি।
কি বলো, মা! তুমি একাই সারাদিন থাকো?
হ্যাঁ, একাই। তুমি কি দুপুরে খেয়েছো?
না, সওদা করে, বাড়ি ফিরে তারপর গোসল করে খাবো।
আজ আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা। তুমি যদি আমার খাবারটা খেতে। মা, এসে আমায় খুব বকবে। তুমিই বলো, রোজ রোজ একা খেতে ভালো লাগে। এক কাজ করি চলো, আমার খাবারটা দুইভাগ করি। তুমিও খাও। আমিও খাই।
মা, রে। আমার পেট এমনিতেই ভরে গেছে। এতো সুন্দর চাঁদমুখ করে কেউ আমাকে বলেনি। আর শোন, তুমি ঐ চুড়িগুলো রেখে দাও। আমি এদিক দিয়ে, যেদিন যাবো, তোমার গল্প শুনবো। সাথে হাসি আর খুশি দিবে। আর চুড়ির টাকা দিতে হবেনা!
চুড়িওয়ালি, তুমি কি এখন যাবে?
হ্যাঁ, মা! ঐ দূরে আমার গ্রাম। যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
চুড়িওয়ালি হাঁক ছাড়লো—-চুড়ি লাগবে, চুড়ি! লাল, নীল রংধনু রঙের চুড়ি।
আমি ওর পথ চেয়ে, আমি ও বলি, চুড়ি লাগবে, চুড়ি। রংধনু রঙের চুড়ি।
৩১টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভিন
একটি চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি শৈশব
সুন্দর প্রকাশ
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ আপনাকে।
গালিবা ইয়াসমিন
সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বন্দী শৈশব এর কথা গুলো ।
আরজু মুক্তা
শুভকামনা
ইঞ্জা
বন্দি শৈশবের একাকিত্ব সুন্দর ভাবে তুলে ধরলেন আপু, আমারও খুব পছন্দ ছিলো ফেরিওয়ালা, ওর বাক্সে উঁকি দিয়ে দেখতাম আগ্রহ ভরে, লাল, নীল, সবুজ হলুদ আর রঙধনু রঙের হরেক কিছু।
আরজু মুক্তা
শৈশবটা তখন অন্যরকম ছিলো।
ইঞ্জা
সত্যি তাই আপু
তৌহিদ
জানালার এপারে বন্দী বাসনা। গল্পে গল্পে একরাশ হাহাকার ভালোই ফুটিয়ে তুলেছেন। নারীদের বন্দী জীবন কাম্য নয়। মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াক শান্তির পায়রা।
লেখা ভালো লেগেছে
আরজু মুক্তা
শুভকামনা ভাই।
আকবর হোসেন রবিন
গল্প ভালো লেগেছে। নিজের শৈশবের কথা ভেবে, অনেক ভাগ্যবানও মনেহচ্ছে। আমার শৈশব অনেক মধুর ছিলো।
আরজু মুক্তা
শৈশব ভোলা যায়না। তবে, এখন শৈশব বন্দি।
সাখিয়ারা আক্তার তন্নী
মন ছুঁয়ে গেলো,আপু
আরজু মুক্তা
শুভকামনা
জিসান শা ইকরাম
ভিন্ন ধরনের একটি গল্প পড়লাম,
এভাবে শৈশবকে বন্দি করে রাখাটা খুবই অন্যায়,
একাকীত্বে ভুগে সন্তান একসময় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যেতে পারে।
ভালো লেগেছে গল্প,
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
শুভকামনা।
ছাইরাছ হেলাল
কোন একটি লেখার কথা মনে পড়ে গেল
এই সুন্দর গল্পটি পড়তে পড়তে।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ, গল্পটি ভালো লেগেছে জেনে।
মাহবুবুল আলম
লেখাটি মন ছূঁয়ে গেল। অনেক অনেক ভাললাগা শুভেচ্ছা!!
আরজু মুক্তা
শুভকামনা!
চাটিগাঁ থেকে বাহার
অল্প কথায় গল্প খুবি সুন্দর হয়েছে।
আরজু মুক্তা
শুভকামনা
শিরিন হক
শহুরে জীবন আমাদের জীবনের শৈসব কেনো পুরো জীবনটা কেড়ে নিয়েছে সেকল পড়া বন্দি কারাগারে। এ থেকে মুক্তি নেই।হয়তো একদিন একারনে সবাই অনুভুতিহীন হয়ে যাবো। হবো যান্ত্রিক।
আরজু মুক্তা
যান্ত্রিকতার বাড়াবাড়ি।
শাহরিন
সময় মানুষকে কঠিন করে তোলে। যে বাবা মায়ের আদরের দুলাল সন্তান কিন্তু সে সন্তানকেই কষ্ট দিতে হয়। শিশুর ভাবপ্রকাশ অনেক সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আরজু মুক্তা
আপনাদের ভালো লাগলেই লিখা সার্থক মনে হয়।
ধন্যবাদ আপনাকে।
কামাল উদ্দিন
এমন বন্দি শৈশব কারো যেনো না হয় সেই কামনা করি। আপনার লেখনিতে জোর আছে, চোখের কোনটা যেন চিকচিক করে উঠলো……..অনেক অনেক ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম আপু।
আরজু মুক্তা
শুভকামনা।
কামাল উদ্দিন
[ছবি মুছে ফেলা হয়েছে]
আরজু মুক্তা
শুভকামনা।
কামাল উদ্দিন
চায়ে চিনি ঠিক আছে আপু?
রুমন আশরাফ
ভাল লাগলো