
#পর্ব_৬১
আলোকিত চাঁদকে সাক্ষী রেখে গানের রাগরাগিণী তৈরি হয়েছিলো। সে চাঁদ পূর্ণিমা রাত্রিতে ছিলো ষোড়শী।
অভিসারের মধুময় মধুক্ষণে শিউলি কাননের অপার মুগ্ধতার সন্ধিতে আমিও বেসেছিলাম ভালো পার্বতী নামক কোন এক ষোড়শীকে। যদিও আকাশের বুকে চাঁদের কলঙ্ক রয়েছে। চাঁদের কলঙ্ক থাকে থাকুক,ডুবেছি আমি তাহার প্রেমাবিষ্ট নয়নের পানে। যে মুগ্ধতার যুগল নয়নে চেয়ে থাকলে আসে এক স্নেহার্ত ভালোবাসা।
আসে জন্মজন্মান্তরে পাশে থাকার এক শপথনামা।
যুক্ত হয় ভালোবাসার এক সমসন্ধী।
আকাশের অগণিত তারকারাজি আলোর বেষ্টনীতে কৌতুক ভরা নক্ষত্র সৃষ্টি করে। আমরা দুজন কখনো বাঁধনছাড়া হতে চাই না। ঈশ্বরের কাছে সবসময় আমাদের একটাই প্রার্থনা জাগ্রত আমরা যেন একি গ্রন্থিবন্ধনে গ্রথিত।
ঈশ্বর বলে দিয়েছন সেটা আমাদের নিয়তির উপর নির্ভর।
নিয়তিকে বুকে রোজ ধারণ করে মহাসমুদ্র স্বপ্ন চোখে ভাসতো আমাদের মনে। যদিও আমরা কিছুটা বাকবন্ধী ছিলাম তবুও পাকদণ্ডী খেয়েও কিছু স্বপ্ন একে অপরকে বিলিয়ে দিতাম। যেমন করে সূর্য বিলিয়ে দেয় আলো দিনেরবেলা। রাত্রিবেলা তেমনি করে চাঁদ বুকে কলঙ্ক ধারণ করে বিলিয়ে দিয়েছে স্নিগ্ধ কিরণের আলোর পরশতা।
পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে কত প্রেমিক,কত কবিসাহিত্যিক তাদের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে কত হাজারো কাব্য লিখেছেন। মৃত্তিকাকে ধারণ করে যেমন জলের বসতি,তেমনি করে কবির কবিতাকে ধারণ করে আছে তাদের ভালোবাসার প্রিয় মানুষ।
সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ ভালোবাসার পিছে ভবঘুরে হয়ে ছুটছে, রহস্য আছে বলে মানুষ ভালোবাসার জন্য এতো ভবঘুরে।
যেইদিন পার্বতীকে দেখে বেসেছিলাম ভালো সেইদিন হতে আমি তার প্রতি অনেকটা ভবঘুরে। কোন এক আলোকিত পূর্ণিমারাত্রিতে আমিও তাকে স্বপ্নাবেশে দেখেছিলাম। সেইদিন ভেবেছিলাম সে আমার অন্তর্যামী ষোড়শী। যার কাছে আমার ইহকাল ও পরকালের ভালোবাসার বন্ধন গ্রথিত।
কেননা পার্বতী ছিলো ষোড়শী রূপে ভালোবাসার রূপদাতা,আমি ছিলাম তাহার প্রাণ প্রতিষ্ঠাত।
তাই নিয়তির কাছে আমরা অপেক্ষারত আমাদের পূর্ণতা আসুক ভালোবাসার উপাখ্যানে। দুজন মিলে নিয়েছি পাশে থাকার সংযম।
#পর্ব_৬২
বলরাম দাদার বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের রাস্তা পেরিয়ে রেলস্টেশন।
একপ্রহর প্রায় শেষ। হেমন্তের কুয়াশাভেজা রাত্রি আর কাশফুলের অন্তিমতায় ডাহুক ডাকছে। রাত্রি প্রায় দশটা। খাওয়াদাওয়া এখনো হয়নি। জয়িতা বৌদি রান্না করতে ব্যস্ত। এদিকে পার্বতী আবির কে নিয়ে গোপাল ভাঁড়ের রসিক গল্প শুনাচ্ছে আর আবির খিলখিলিয়ে হাসছে। আবির এমন হাসিতে মনে হচ্ছে গল্প বেশ রসাত্মক। কেননা গোপালের সকল কথাই সবসময় রসাত্মক।
ছোটবেলা আমার ঠাকুমা আমায় গোপালের কত গল্প শুনিয়েছেন। তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
স্টেশন থেকে একে একে ট্রেন ছুটে যাচ্ছে দেশবিদেশে।
ছোটবেলা বাড়ির পাশ দিয়ে ট্রেন লাতু হয়ে কলকাতা দিল্লী ইত্যাদি অঞ্চলে যেতো। ট্রেনের শব্দ শুনে বেরিয়ে পড়তাম ট্রেন দেখার জন্য। মনে পড়ে শামসুর রহমানের সেই কবিতা “ট্রেন চলেছে ট্রেন চলেছে ট্রেনের বাড়ি কই”
আজও খুঁজি আমি ট্রেনের বাড়ি কই।
এদিকে বিনোদের দুদিন ধরে মন ভালো নেই।
পড়ার টেবিলে পড়তে তার মন বসছে না। কয়েক দিবস অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে অন্নপূর্ণার সাথে দেখা ও কথাবার্তা হয়নি তাহার।
বিনোদের যখন মন খারাপ তখন সে চলে যায় স্টেশনে ট্রেন দেখতে। মন খারাপ হলে বিনোদ এসব করতো বাড়িতে। কলকাতার ট্রেন ইহা বড়বড় কামরা। এক নিমিষে দেশের এক প্রান্ত হতে অন্যপ্রান্তে ছুটে চলছে।
এদিকে আমি একা বসে বাবার কাছে একখানা পত্র লিখতে বসেছি। শুনেছি বাবার চাকরীতে প্রমশন হয়েছে। শরতের ন্যায় হেমন্তকাল আমার বেশ পছন্দের এক ঋতু। দক্ষিণার হিমেল হাওয়া আর তৃণভেজা ধূসর কুয়াশা। সে এক প্রকৃতির অনন্য দান। বাড়ির চারপাশ ঘিরে বাগান। নাকে আসছে সুগন্ধিতার ঘ্রাণ।
চিঠি প্রায় লিখা শেষ,খামে ভর্তি করে করিডোরের একপাশে রেখে দিয়েছি। সকালবেলা ভার্সিটিতে যাওয়ার পথে ডাকঘরে চিঠিটা পাঠিয়ে দিবো।
এদিকে রাতের খাবার খেতে বলরাম দাদা আমাকে আর বিনোদকে ডাকছেন। বিনোদ স্টেশনে ট্রেন দেখতে গিয়ে,কেন যে এতো দেরি করছে বুঝতে পারছিনা।
এসব ভাবতে না ভাবতে বিনোদ চলে এসেছে। যাইহোক সবাই মিলে রাতের খাবার খেয়েদেয়ে নিলাম।
আজ আর দেরি না করে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালবেলা উঠে ভার্সিটিতে যেতে হবে।
এদিকে পার্বতী বাবা চিঠি পাঠিয়েছেন বলরাম দাদার কাছে পার্বতী বাড়িতে চলে যেতে। চিঠির পরপৃষ্ঠায় লেখা রয়েছে পার্বতীর সাথে যার বিবাহ হইবে সে ইতিমধ্যে কলকাতায় চলে এসেছে।
এসব শুনে চোখেরজলে ভাসতে শুরু করছে পার্বতী।
যদিও পার্বতীর বাগদান ও সম্প্রদান সম্পূর্ণ হয়নি।পার্বতী চায় না যে এখন তার বিবাহ হোক,সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়।
কিন্তু পার্বতীর বাবা পার্বতীর বিবাহ সম্পাদনের জন্য উঠেপড়ে আছেন। একে একে জিনিসপত্র তৈরির জন্য অনুমিত দিয়ে দিয়েছেন।
এসব কথাশুনে আমি অনেকটা নির্বাক। আর ভাবছি আমার আশার প্রদীপ কি জ্বলে উঠবে? না সেখানে সমাপ্তির পথে আলোর প্রদীপ নিভে যাবে?
আমাদের গ্রন্থিবন্ধনে গ্রথিত স্বপ্ন,নিয়তি কি আমাদের তা পূর্ণতা এনে দেবে?
আমি অনেকটা নির্বাক।
১১টি মন্তব্য
তৌহিদ
প্রথম ভালোলাগা “আলোকিত চাঁদকে সাক্ষী রেখে গানের রাগরাগিণী তৈরি হয়েছিলো। সে চাঁদ পূর্ণিমা রাত্রিতে ছিলো ষোড়শী।” এই লাইন দুটি। পার্বতী বাড়ি যাবে তার বিয়ের বর কোলকাতায় চলে এসেছে। তার মানসিক অবস্থা নিশ্চিত খারাপ। তাহলে নায়কের কি হবে? প্লিজ আপনি নায়কের সাথেই পার্বতীরর বিয়ে দিয়ে দিন গল্পে দাদা।
ভালো লাগলো লেখা। শুভকামনা রইলো।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আপনার ভালো লাগা আমার প্রাপ্তি।
নায়ক মর্মাহত।
তবে নিয়তির উপর বিশ্বাসী।
নিশ্চয় তাদের ভাগ্যে তাদের ফল নির্ধারণ করে দিবে।
অজস্র ধন্যবাদ ও শুভকামনা দাদা।
বন্যা লিপি
পার্বতীর চোখের জল কি বাবার মনে কোনো প্রভাব ফেলবে না? আপনার লেখার ধরন আমার খুব ভালো লেগেছে দাদা। সবসময় পরিনতিই অব্যক্ত ভালবাসার সফলতা নয়।এটাও এক চরম বাস্তব।
এগিয়ে চলুক উপন্যাস।
শুভরকামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
নিশ্চয় প্রভাব ফেলবে।
কিন্তু পার্বতী স্বয়ংবরা নয়। সে তার পিতামাতার উপর নির্ভরশীল।
সবসময় পরিনতিই অব্যক্ত ভালবাসার সফলতা নয়।এটাও এক চরম বাস্তব।
একদম সত্য বলেছেন দিদি।
অজস্র ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
আরজু মুক্তা
আচ্ছা, মেয়েরা সবসময় জলাঞ্জলি হয় কেনো?
একটু ভাবুন।সমাপ্তিটা দারুণ চাই।
প্রদীপ চক্রবর্তী
জলাঞ্জলি থেকে পুষ্পাঞ্জলিতে নিয়ে যেতে চাই।
নিশ্চয় সমাপ্তিটা দারুণ হবে না মর্মাহত হবে তা নিয়তি ঠিক করে দিবে।
তবে গভীর অনুমানের উপর….
.
ধন্যবাদ দিদি।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
উপন্যাসের সিরিজ চলুক।
আপনি কি এটাকে বই আকারে ছাপাবেন?
প্রদীপ চক্রবর্তী
অজস্র ধন্যবাদ দাদা।
দেখা যাক সমাপ্তি পর্যায়ে এসে কিছু করা যায় কিনা।
পাশে থাকবেন দাদা।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
পাশে থাকবো ।
মনির হোসেন মমি
চমৎকার শব্দের বিন্যাষে বাক্যের বর্ননায় বরাবরের মত এবারো মুগ্ধ।কলকাতায় যখন সে এসে গেছেন দেখা যাক পার্বতীর কপালে কি আছে আর আমাদের হিরোরই বা কি ভুমিকা থাকে। তবে সমাপ্তিতে প্রেম নেই প্রেম আছে বিরহে।
প্রদীপ চক্রবর্তী
প্রাপ্তি
অজস্র ধন্যবাদ ও শুভকামনা দাদা।