
“আামাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে?
কিছুই কি নেই বাকি?”
নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করি, আবার নিজেই উত্তর দেই,
“রাতের সকল তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে।”
এভাবে তোমার সাথে রোজ কথা বলি একাকী। জানো আকাশ, আজকাল আমার একা থাকতেই ভালো লাগে। একা থাকলেই কেবল কল্পনাতে তোমাকে পাই, নিজের করে। কেউ কাছে এলে, কথা বললেই তুমি যেন দূরে সরে সরে যাও, তাই আমি ভীষণ রেগে যাই। এসব কারণে আজকাল আর কেউ আমার ধারে পাশে আসে না, আমাকে সবাই চেনে বদ মেজাজী হিসেবে। আমার তাতে কিছু যায় আসে না, আমিতো তোমাতেই ডুবে রই, বুঁদ হয়ে রই তোমার নীলে। সত্যি বলতে কি, তোমার দেয়া অবহেলার বিষে আমি নীল হয়ে রই সারাবেলা, সারা দুপুর…
মাঝে মাঝে খুব মন চায়, তোমাকে জিজ্ঞেস করি “কেন আমার চোখের সামনে আমার আকাশে অন্য মেঘের ভেলা ভাসাতে? তুমিতো জানতে আমাকে। এতটুকু বোঝার মত বোধ কিংবা বিবেক কি তোমার ছিলো না?” হয়ত কোনদিনও জিজ্ঞেস করা হবে না সে কথা তোমাকে। আবার হলে হতেও পারে৷ এ প্রশ্নের উত্তর না নিয়ে পৃথিবী ত্যাগ করলে এ বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে একটা বিরাট বড় প্রশ্নবোধক রয়েই যাবে আমার।
মাঝে মাঝে মনে হয়, “ইশ আমার যদি ক্যান্সার হতো!” তবে কি তুমি আমাকে দেখতে আসতে? একান্তে কিছুটা সময় পেতাম তোমাকে, তাহলে ঐ প্রশ্নটা অবশ্যই জিজ্ঞেস করতাম। কিংবা ধরো রবি ঠাকুরের “হঠাৎ দেখা” র মতো আমাদের দেখা হয়ে গেলো কোন এক স্টেশনে, একই কামরায়। তা বোধহয় হয় না… না? কেন যে হয় না…!
এরপর আমার জীবনে কতশত ক্ষনিক ভ্রমর এসেছে! সত্যি বলতে এক মুহূর্তের জন্য তাদেরকে আমার ভালোও লেগেছে। পরমুহূর্তেই আবার তাদের ভুলেও গেছি। তেমাতেই যে আমি আটকে গেছি, তাই আর অন্য কোথাও স্থির হতে পারিনি। সবাইকে বিদেয় দিয়েছি। কতবার সিদ্ধান্ত পাল্টেছি, আবার তোমাতেই ফিরে ফিরে এসেছি।
একদিন প্রকৃতি তার অমোঘ নিয়মে তোমার ওপর প্রতিশোধ নিলো, তোমার মেঘ তোমারই চোখের সামনে, কিন্তু তা নিবন্ধিত অন্য এক আকাশে! সেদিন হয়ত তুমি কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলে কেমন লাগে। আমি কখনও চাইনি তোমার মেঘ তোমার বিশালতা ছেড়ে অন্য আকাশে ভাসুক৷ কিন্তু সব তো আমার হাতে নেই। তাই কি আর করা?
তারপর একদিন শুভ্র নরম কাশফুলের মত তুমি এলে। ততদিনে আমি তোমাকে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছেটা ত্যাগ করেছি। আমার ভেতরের ইচ্ছেগুলো শুকিয়ে কাঠ। অনেকদিন জল না ঢাললে চারাগাছ যেমন মরে যায়, আমার ইচ্ছেরাও তেমনি করে মরে গেলো। “ভালোবাসলেই সর্বদা তাকে পেতে হয় না।” এই মতবাদে বিশ্বাস করে নিয়েছি। তখন তুমি এলে…কিন্তু আমার ভাগ্যটা এবারও বাধ সাঁধলো।কোন এক অখন্ডনীয় ভাগ্যের ইশারায় নিজে থেকেই দূরে সরে যেতে হলো আমাকে…এরচেয়ে কঠিন আর কি হতে পারে?
মানুষের চেয়ে পশু পাখিকে আমি বেশি পছন্দ করি, কেন জানো? কারন তাদের চোখে যে ভালোবাসাটা তা মেকি নয়। একটু সত্যিকারের ভালোবাসা পাবার লোভে আমি তাদেরকে সঙ্গ দেই, যত্ন করি। তোমার থেকে তা নাইবা পেলাম। হারানোর ভয়ও আমার নেই।
আজকাল মানুষ ফেসবুকে কত মেকী জন্মদিন পালন করে। অনেকেরটা তো আসল তারিখই না। তবুও শুভেচ্ছা জানানোর হিড়িক পড়ে যায়। তোমারও একই অবস্থা। তবে আমি কিন্তু ভুলিনি তোমার সত্যিকারের তারিখটা! জীবনে একবারই সুযোগ হয়েছিল তোমাকে শুভেচ্ছা জানানোর। মানুষ শুভেচ্ছা পেলে খুশি হয়, আমি তোমাকে জানাতে পেরেই মহাখুশি। তোমার কাছ থেকে এমনকি কারো কাছ থেকেই পাবার আশা রাখিনা! যা তোমার কাছে পাইনি, তা অন্য কারো কাছে পেতে মন চায় নাহ্।
একবার মনে পড়ে, কী দায়সারা একটা আচরণ করেছিলে আমার সাথে? তোমার মেঘের সেই তারিখে কতশত জাঁকজমক! আর আমার বেলায়? অন্য কাওকে দিয়ে কি একটা কিনিয়ে,তাকে দিয়ে লিখিয়ে তাকে দিয়েই তোমার মেঘের হাতে পাঠালে আমাকে পৌঁছে দেবার জন্য! সেদিন আমার ভাঙা পাঁজরের হারগুলো, যারা সদ্য জোরা নিতে চাইছিলো, তারা আবারও সশব্দে ভেঙে গেলো! নাইবা পেলাম ভালোবাসা, তাই বলে এতটুকু সম্মান কি আমি পেতে পারতাম না? এতটাই অবহেলা? তাই তুমি জেনো,
★জেনে রেখো
যখন দেখবে শিশিরে শিশিরে ঘাসগুলো সব ভিজে
জানবে আমি ছিলাম সেথা
একটু আগে মিশে।যখন দেখবে আকাশটা খুব
মায়াবী নীলাভ সেজে
জানবে আমি ছুঁয়েছিলাম
আকাশটাকে নিজে।দেখবে যখন ঢেউগুলো সব
আছড়ে পড়ে ঘাটে
মনে করো একটু আগেই
ছিলাম আমি তটে।কিন্তু এখন নেই আমি
নেইতো কোন বাটে,
নেইতো আমি, নেইতো ছোঁয়া
ফিরবো না ঐ হাটে।
আমি ফিরিনি বলে তোমার জীবন থেমে নেই, তোমার বুকে আজ নতুন মেঘ, নতুন মেঘের ছোঁয়ায় এসেছে নতুন একটা প্রাণ। তাই অবশেষে তোমাকে এটাই বলতে চাই…
“আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি।”
“ভালো আছি, ভালো থেকো”
সোনেলার ঠিকানায় চিঠি লিখো,
যদি কখনো মনে পড়ে।
২১টি মন্তব্য
আকবর হোসেন রবিন
‘চিঠি পৌঁছে যাবে, পৃথিবীর প্রান্তে
চিঠি পৌঁছে যাবে, রঙিন খামে’
নীরা সাদীয়া
তাই হোক তবে।
শুভ কামনা রইলো।
নিতাই বাবু
আপনার আগের লেখা “চিঠি” শিরোনামে আমি আমার মন্তব্যের মাঝে একটা গানের লিংক দিয়েছিলাম, দিদি। এর প্রত্যুত্তরে আপনি বলেছিলেন,
কিন্তু দিদি, এখন আপনার এই পোস্ট আমি পড়ে দেখালাম, গান আছে গায়ক নেই। মানে আপনি আপনার পোস্টে গান লিখেননি এবং কোনও সাইটের লিংকও দেননি। যাক দিদি, তবুও কিন্তু আপনার চিঠি দ্বিতীয় পর্ব পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। আশা করি এমন আর পড়তে পারবো।
ধন্যবাদের সাথে শুভকামনা থাকলো।
নীরা সাদীয়া
আকাশকে লিখতে বলা চিঠি আবার আকাশের ঠিকানায়ই যদি পাঠাতে বলি তাহলে সেটাতে সামঞ্জস্য হয় না। গুজামিল হয়ে যেতো। আর তাই গানের একটা লাইন কোট করেছি মাত্র। তাছাড়া চিঠিকে আমি গানের লিংক যোগ করে ডিজিটালাইজ করতে চাইনি। আমি শুধুমাত্র যে অংশটুকু খাপ খায়, সেটুকু কোট করেছি।
আপনি মুগ্ধ হয়েছেন জেনে ভালো লাগলো।
নিতাই বাবু
প্রত্যুত্তরের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
নাজমুল হুদা
চিঠি পড়তে অনেক ভালোই লাগে যদিও তেমন স্পেশাল চিঠি পড়ার সুভাগ্য এখন জুটে নাই।
আমি মনে করি চিঠি এক অনন্য সুন্দর মনের বহিঃপ্রকাশ। আপনার চিঠির ভাষায় অনেক আবেগ এবং তাড়না সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে।
লিখতে থাকুন আকাশের ঠিকানায় স্বপ্নের চিঠি । শুভকামনা রইল।
নীরা সাদীয়া
সেরকম সৌভাগ্য আমারও হয়নি। তবে লিখে তো ফেললাম ঠিকই। 😉
যাই হোক, আপনি পুরোটা পড়েছেন এবং আপনার ভালো লেগেছে জেনে প্রীত হলাম।
শুভ কামনা জানবেন।
জিসান শা ইকরাম
এভাবেই হয় আসলে,
ইচ্ছেরা ইচ্ছের বিরূপ আচরণে এক সময় মরে যায়,
মেঘ পায় নতুন আকাশ,
আকাশ পায় নতুন মেঘ।
তারপরেও হৃদয়ে বাজে বিরহের গান,
প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির টানাপোড়নে অন্তরের গহীনে কাটা বেঁধে ক্ষতবিক্ষত হয়
কোন এক অলস দুপুর বা গভীর রাতে।
সোনেলার ঠিকানায় যেন সে চিঠি লেখে।
চিঠি ভালো লেগেছে নীরা।
অনেক অনেক শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
বাহ্, আপনিও দারুন লিখেছেন। অনেক শুভকামনা রইলো।
বন্যা লিপি
সোনেলার ঠিকানাতেই ভীড় জমুক ভালবাসার যত চিঠি। আকাশ, মেঘের দরকার কি? সোনেলায় মালির অভাব আছে নাকি শুকাতেই দেবোনা মনের চারাগাছ!
চিঠির আবেগ ভালো লেগেছে নীরা।
আপনার নামটা এমন যেন, সুণীলের নীরা আপনি ” এ হাত ছুঁয়েছে নীরা’র মুখ
আমি কি এ হাতে আর কোনো…..”
কবিতাটা মনে পড়ে যায়।
শুভেচ্ছা জানবেন।🌷🌷
নীরা সাদীয়া
আপনি এত সুন্দর করে গুছিয়ে মন্তব্য করেন যে, মনটা ভরে যায়। মনের চারাগাছ বেড়ে উঠুক আপনাদেরই হাতে। শুভ কামনা রইলো।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
এককথায় লেখা অসাধারণ হয়েছে।
আপনি ভালো লিখেন।
নীরা সাদীয়া
জেনে প্রীত হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
সুরাইয়া পারভিন
চিঠির কথার মায়া পড়ে গেলাম
এতো সুন্দর গোছানো পরিপাটি চিঠি
পাঠে মুগ্ধতা অশেষ
নীরা সাদীয়া
তাই নাকি? প্রায় ১ বছর পর লিখলাম আবার। আপনাদের ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
সাবিনা ইয়াসমিন
এই চিঠি পড়ে চোখ ভিজে এলো। জানিনা কেন এমন হলো, হয়তো আমার আকাশ হঠাৎ দেখা দিলো তাই।
কখনো আকাশ বদলে যায়, কখনো আমরা দূরে সরে আসি। ভালো থাকার বাহানায়, ভালো রাখার চেষ্টায়।
চমৎকার লিখেছো। আরও লিখো।
শুভ কামনা অবিরত 🌹🌹
নীরা সাদীয়া
আমার লেখা কারো মন ছুঁতে পেরেছে জেনে ভালো লাগলো। অনেক শুভকামনা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
ভালোবাসা নামক বিষয়টির জটিল রসায়ন তুলে ধরেছেন, চিঠিটিতে।
নীরা সাদীয়া
তাই চেষ্টা করেছি।
শুভ কামনা জানবেন।
আরজু মুক্তা
ভালো লাগলো
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।