
দেড় মাস পরের কথা . . . . .
শ্রাবণ মাসের তিন তারিখ। সকাল দশটা। সকাল থেকেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। রাস্তা-ঘাট সব বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ। চারিদিক বর্ষনমুখর। সােহিনীর মা, সােহিনীর বাবা, হাসনাত সাহেবের বড় দুই বােন, বোনদের জামাইরা, হাসনাত সাহেবের বড় ভাই আর তার ভাবীসহ দুই পক্ষের আরও অনেক অনেক আত্মীয় স্বজন হাসপাতালের করিডােরের চেয়ারে বসে আছে। হাসনাত সাহেব চিন্তিত মনে পায়চারী করছেন অপারেশন থিয়েটারের সামনের প্যাসেজটাতে। কিছুক্ষন পর অপারেশন থিয়েটারের দরজা খুলে চাকমা চেহারার অল্প বয়সী একজন নার্স বেরিয়ে এলেন। হাসনাত সাহেব দৌড়ে গেলেন নার্সটার কাছে।
হাসনাত সাহেব তাকে দেখা মাত্র বলতেযাচ্ছিলেন,”এক্সকিউজ মি,ম্যাডাম! আমার স্ত্রী এখন কেমন আছে? বাট হাসনাত সাহেব প্রশ্ন করার আগেই নার্সটি তাকে পাত্তা না দিয়ে খুব দ্রুত হেটে সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেলেন। হাসনাত সাহেব হতাশ মনে হাসপাতালের দেয়াল ঘেষে চুপচাপ দাড়িয়ে রইলেন। একটু পর সোহিনীর ডাঃ মিসেস লায়লা বানু অপারেশন রুম থেকে বেরিয়েই হাসনাত সাহেবের মুখের দিকে চেয়ে হাসি দিয়ে বললেন, কনগ্রাচুলেশন মিঃ হাসনাত সাহেব! আপনি কিছুক্ষণ আগে একজন ফুটফুটে কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন। আপনার স্ত্রী মিসেস সােহিনী ও আপনার নতুন মা, দুজনেই বেশ সুস্থ আছেন। আপনি তাদের সাথে দেখা করেন। তারা আপনার জন্যে অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
হাসনাত সাহেব রুমে ঢুকতেই সােহিনী তার স্বামী হাসনাতের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বললেন, আমি ওর নাম রেখেছি কৃষ্ণচূড়া। কারন আমার রাজকন্যা দেখতে একদম আমার শ্বাশুড়ির মতো হয়েছে। হাসনাত সাহেব তার ভ্রুদ্বয় কুচকে এক গাল হাসি দিয়ে সোহিনীর দিকে চেয়ে বললেন,” এখানেও ভাগাভাগি করছো সোনা? বল , আমাদের রাজকন্যা! সোহিনি, ওহ সরি! ঠিক আছে আর এভাবে বলব না। এই তােমার মনে আছে? মা যেদিন আমাদের বাসায়, প্রথম আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন, সেইদিনের কথা? সেইদিন তিনি আমার দিকে একটিবারও তাকাননি, তিনি তাকাচ্ছিলেন আমাদের বসার ঘরের এদিক সেদিক। সেদিন তিনি আমার উপর খুব রেগে ছিলেন। তােমার মেয়েও আজ তাই করছে দেখাে। হাসনাত সাহেব মনে মনে বলছেন, অনেক বছর পর তােমায় এমন হাসি দেখছি সােহিনী, কত বছর তুমি একটি বারের জন্যেও হাসো নি!
হাসনাত সাহেব সােহিনীর পাশ থেকে তার নবজাতক কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, মা! ও মা! তুমি এতাে দেরী করে কেন এলে? বাবা তােমার জন্যে কত্তগুলাে বছর অপেক্ষা করেছি। তােমার প্রতীক্ষায় কতগুলাে বর্ষা তার অভিমানের বৃষ্টির স্রোতে ভিজিয়েছে আমাদের। প্রকৃতি নিরবে কত কেঁদেছে। তবুও তুমি এলে না। এলে তবে যখন তােমার বাবার মাথার অর্ধেক চুল পেকে সাদা হয়ে গেছে। এই বুড়াে বাবাকে পছন্দ হবে তাে তােমার, দুষ্টু মেয়ে ? সােহিনী-হাসনাতের নবজাতক মেয়েটি তার বাবার কথায় তাল মিলিয়ে তার ছােট্ট হাত দুটি বাবার দিকে প্রসারিত করে কি যেন একটা বলতে চাইছে বারবার . . . . . . . . . . .
২১টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
দুঃখিত আগের দু’পর্ব পড়া হয়নি, পড়ে নেয়ার চেষ্টা নেব অবশ্যই।
গল্পের শেষটি আশাবাদীতা দিয়ে শেষ করেছেন, সেটি মন্দ লাগেনি,
দীর্ঘ কাঙ্খিত শিশুটি সব দুঃশ্চিন্তা কাটিয়ে প্রাণের কাছে ধরা দেবে মা-বাবা এমনটি-ই কামনা করে।
লিখুন, লিখুন এবং লিখতে থাকুন।
মুক্তা মৃণালিনী
একদম সঠিক বলেছেন দাদা। দীর্ঘ কাঙ্খিত শিশুটি সব দুঃশ্চিন্তা কাটিয়ে প্রাণের কাছে ধরা দেবে মা-বাবা এমনটি-ই কামনা করে। অশেষ ধন্যবাদ ও শুকরিয়া দাদা।
মোহাম্মদ দিদার
বেশ ভালো লাগলো।
মুক্তা মৃণালিনী
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া…
জিসান শা ইকরাম
গল্পের সুন্দর সমাপ্তি ভালো লাগে আমার। তা,এই হচ্ছে কৃষ্ণচূড়ার হাতছানি? 😉 আমি তো আরো ভাবছিলাম কোথায় নিয়ে যাও গল্প।
ভালো লেগেছে সিরিজ গল্প।
চাকমা চেহারার নার্সকে মাইর দেয়া দর্কার ছিলো।
নিয়মিত লেখো ছোট আপু।
মুক্তা মৃণালিনী
হাহা দারুন বলেছ দাদা। চাকমা চেহারার নার্সটার ব্যাপারে। অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা তোমাকে,,,,
চাটিগাঁ থেকে বাহার
সুন্দরের ফুলঝুরি!
চারিদিকে এতো সুন্দর, এতো ভালোবাসা আছে এখন?
প্রাণ জুড়ে যাবার মতো সম্পর্ক দেখিয়েছেন গল্পে।
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ ও শুকরিয়া ভাইয়া,,,
সুরাইয়া পারভিন
গল্পের শেষটা দারুণ
একজন কৃষ্ণচূড়ার হাতছানি অনেকটা সুখের আর শান্তির হয়।
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ আপু। গল্পের প্রথম থেকে শেষটা এত ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্যে আবারও অনেক অনেক ধন্যবা,,,,
নিতাই বাবু
আপনার লেখা গল্পের শুরু থেকে শেষপর্যন্তই দারুণ মিল। পড়ে মুগ্ধ হলাম। এমন গল্প আরও চাই। পাবোও বলে আশা রাখি।
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ দাদা। চেষ্টা করব এরকম আরো সুন্দর সিরিজ গল্প আপনাদের উপহার দেয়ার জন্যে,,,
ইঞ্জা
মনটা ভরে গেলো, মাকে হারিয়ে নিজ ঔরসের সন্তানকে মা হিসাবে ফিরে পাওয়া যেন সব কিছুই আনন্দে ভরে যাওয়া।
আমার বাবা ইন্তেকাল করার প্রায় দুই বছর পর প্রথম সন্তান হওয়ার পর একি অনুভূতি হয়েছিলো আমার।
লেখাটি অসাধারণ, সুনির্মিত।
Just amazing.
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ ও শুকরিয়া ভাইয়া…
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা আপু
মনির হোসেন মমি
অনেক সাধনার ফল। খুব ভাল ভাবেই গল্পের শেষ টানলেন। আরো চাই এমন হৃদয় ছোয়াঁ গল্প।
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ ভাইয়া।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধারাবাহিক গল্পটি এতো তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলে? পালাচ্ছো নাতো? ব্লগে নিয়মিত না পেলে কিন্তু খুঁজতে বের হবো।
আরো অনেক লেখো, ভালো থেকো সকলের স্নেহ-ভালোবাসায়। ❤❤
মুক্তা মৃণালিনী
না আপু পালাচ্ছি না। নিয়মিত লিখব। আী তোমাদের ভালবাসাও নিব….
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর একটি গল্প উপহার দিলেন সোনেলায়। আরো লেখা চাই। মা মা মা
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ ভাই। লেখা অবশ্যই দিব।