
আজমির শরীফ (৫ম পর্ব)
পরদিন সকাল সাতটার সময় ব্রেকফাস্ট করে হোটেল চেকআউট করে নিলাম, কারণ আজ ঘুরে ফিরে দেখে দিল্লি ফিরে যাবো।
ড্রাইভার বললো, এইখানকার সব ঘুরে দেখতে হলে আরও দুইদিন আপনার থাকা উচিত ছিলো, এরপরেও আমি চেষ্টা করবো কিছু হলেও যেন আপনি দেখতে পারেন, এইখানে এক ফোর্ট (দূর্গ) আছে, চলুন ওখান থেকেই আপনি অনেক কিছু দেখতে পারবেন।
আমরা রওনা হলাম ফোর্ট দেখার জন্য।
আমরা ফোর্ট দেখার জন্য পাহাড়ি পথ ধরে এগুলাম, এক সময় আঁকা বাঁকা পথে উপরের দিকে উঠতে লাগলাম।
উপরে উঠছি তো উঠছি, পাহাড়ের পথ যেন শেষ হয়না, নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি অনেক উপরে উঠে এসেছি, দূর থেকে ফোর্ট দেখা যায়, রাজা মান সিং এই ফোর্ট নির্মান করেছিলেন।
ফোর্টের মেইন গেইটের সামনে গাড়ী থেকে নেমে অবাক হলাম, প্রচুর বানর ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আমি ভিতরের দিকে এগুলাম, বড় রাস্তা গিয়ে উঠেছে উপরের দিকে, খানিকটা উপরে উঠে এলে দেখলাম পথের দুই পাশে বেশ কয়েকটা পানির আঁধার, এখন পানি না থাকলেও এক সময় এইখানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হতো যা পরবর্তীতে শহরের বাড়ি বাড়ি পানির সাপ্লাই হতো।
এরপর দূর্গের উপরের দিকে এগুলাম, বিরাট দূর্গের এপাশ ওপাশ পর্যন্ত হাঁটা পথ আছে, যেখানে এক সময় সৈন্যরা দাঁপিয়ে বেড়াতো, তীর ধনুক দিয়ে যুদ্ধ করতো, এক জায়গায় দেখলাম বিশাল এক কামান, এতো বিশাল কামান আমি আগে দেখিনি, এইটিকে নাড়াচাড়া করার জন্য সয়ংক্রীয় ব্যবস্থা আছে, কারণ একে শুধু হাতে নাড়াচাড়া করা অসম্ভবই।
দূর্গের উপর থেকেই বাইরের দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম, অনেক দূরে হলেও পরিস্কার দেখা যায়, এ বড় হ্রদ এবং এর মাঝে বড় এক রাজবাড়ী।
ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম ওটা কি?
ড্রাইভার বললো, ঐটা জলমহাল।
দেখতে খুবই সুন্দর, প্রাকৃতিক হ্রদের মধ্যে অবস্থিত জলমহলটি সত্যি দেখার মত, শহর থেকে ৭ কিমি দূরে অবস্থিত।
এক সময় রাজাদের গ্রীষ্মকালীন অবকাশের স্থান ছিল এটি, হ্রদটির নাম মানসাগর।
জলমহালটি সত্যিকার দেখার মতো, উপরে একতলা দেখা গেলেও এইটি পাঁচতলা, বাকি অংশ পানির নিচে নিমোজ্জিত হয়ে আছে, এই হ্রদে ঘুরার জন্য খুব সুন্দর সুন্দর নৌকা আছে, কিন্তু আপনি এই জলমহালে যেতে পারবেননা, বাইরে থেকেই দেখতে পারবেন।
এর একটু দূরেই রয়েছে মানসিং দুর্গ, যেখানে আমি আছি, সপ্তদশ শতকে নির্মিত এই দুর্গের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য রয়েছে কয়েক মাইল দীর্ঘ চওড়া পরিখা।
এই জায়গার নাম অম্বর যা পূর্বে রাজস্থানের রাজধানী ছিল এবং জয়পুর থেকে ১১ কিমি দূরে অবস্থিত। মানসিংস দুর্গের সিঁড়ি দিয়েই ঢুকে দেখা যাবে কালীমন্দির।
অম্বর রাজপ্রাসাদের কাছেই রয়েছে একটি মসজিদ। এটির নাম অম্বর মসজিদ, সম্রাট আকবর এটি নির্মাণ করেন।
অল্প কিছু সময় ঘুরে ঘুরে সব দেখছি, ড্রাইভার তাড়া দিলো, বললো, জনাব চলুন সময় হয়ে গেছে ফেরার, যদি এখন রওনা না দিই, তবে সন্ধ্যা হয়ে যাবে আর সন্ধ্যাতেই প্রচন্ড ট্রাফিক হবে দিল্লির প্রবেশ মুখে।
আমিও ওর সাথে দ্রুত ফিরে এলাম গাড়ীতে, মনে মনে বললাম, জয়পুর আমি একদিন অনেক সময় নিয়ে আসবো তোমার প্রেমে মগ্ন হতে, তোমার রূপসূধা পান করতে, বিদায়।
সমাপ্ত।
ছবিঃ গুগল।
৩৬টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
পড়ছি আর অবাক হচ্ছি। মোঘল আমলে স্থাপনা আসলেই মুগ্ধ করার মতোই। এত বছর আগে পানির মাঝ খানে একটি জলমহল তৈরি করা সাধারন ব্যাপার নয়। বেশির ভাগ অংশ পানিতে নিমজ্জিত রেখে স্থাপনা তৈরির কৌশল তখনকার ইঞ্জিনিয়াররা কিভাবে করেছিলো তা বিস্ময়কর!
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ভাইজান,
শুভ কামনা 🌹🌹
ইঞ্জা
সত্যি তাই আপু, আমার দুঃখ রয়ে গেছে কেন আরও সময় নিয়ে যায়নি, ইনশা আল্লাহ একদিন আবার যাবো।
জিসান শা ইকরাম
একদিনের ভ্রমনে আপনি যা দেখলেন, তাতে আপনিও তৃপ্ত হতে পারলেন না,
পাঠকরাও তৃপ্ত হবেন না।
জলমহলটির ছবিটি অনেক সুন্দর, পানির মধ্যে এমন এক স্থাপত্য ভাবাই যায় না।
সমাপ্ত কেন লিখলেন? দিল্লীতে নিয়ে যাবেন না আমাদের?
ইঞ্জা
সত্যি তাই ভাইজান, এক অতৃপ্তি রয়ে গেছে মনে, জলমহাল এক আশ্চর্য জায়গা, পাঁচ তলা পানির নিচে, কি সেই ইঞ্জিনিয়ারিং ছিলো তাদের যে পানির নিচে এতগুলো তলা বানালো?
ভাইজান, দিল্লি শহরে গিয়েছিলাম ব্যবসার উদ্দেশ্যে, স্বাভাবিক ভাবে তেমন ঘুরা হয়নি, এক সময় প্রচুর হাটতে পারতাম, এখন হাটাহাটি আমার অনেক কমে গেছে শারিরীক কারণে, নাহলে অনেক কিছুই করতে পারতাম, দোয়া রাখবেন।
নিতাই বাবু
আহ্! দারুণ তথ্যবহুল ভ্রমণকাহিনী দাদা। আপনার লেখা পোস্ট পড়ে মন চায় পাখি হয়ে উড়ে গিয়ে দেখি। কিন্তু তা তো আর হচ্ছে না, দাদা। তবুও আপনার সুলেখিত লেখনী পড়ে কল্পনায় ঘুরে আসি। এটা কি পর্ব চলবে? যদি পর্ব বা সিরিজ হয়, তো সাথে আছি দাদা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ দাদা, কিছুটা হলেও ভ্রমণের আনন্দ আমার লেখাতে পেয়েছেন জেনে খুশি হলাম।
এই পর্ব এইখানেই সমাপ্ত করেছি দাদা, আগামীতে অন্য ভ্রমণ নিয়ে লিখবো। 😊
নিতাই বাবু
শুভকামনা সবসময়
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অবিরত দাদা।
মোঃ মজিবর রহমান
যা দেখলাম ওখন আধুনিক যুগেও মনে হই এর মত টিক্সই ও সুন্দর হবেনা। প্রকৃতির সাথে মিশে সৌন্দ্ররজ্য বাড়িয়েছে। মুগদ্ধ নয়নে দেখার স্রিস্টি।
আপনার লেখায় দেখলাম জানলাম।
ইঞ্জা
আনন্দিত হলাম ভাই, সামান্য হলেও ভ্রমণের মজা পেলেন এই অনেক, ধন্যবাদ। 😊
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যা। ভ্রন ভাল লাগে আর সেটা চাক্রির সুবাদে হলে আরো ভাল। ভাল থাকুন
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা ভাই
মোহাম্মদ দিদার
কখোনো নিজে গিয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়তো হবেনা।
আপনার লেখা পরতে পরতে মনে হয় কল্পনায় ঘুরে আসলাম।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, ভ্রমণ কাহিনী পড়ার মজাটায় এইখানে, হয়ত আপনার ঐ জায়গাটা ভ্রমণ করতে নাই পারলেন কিন্তু ভ্রমণের স্বাদ নিতে পারেন ভ্রমণ কাহিনী থেকে।
ছাইরাছ হেলাল
ভাবতে অবাক লাগে কী করে এমন স্থাপনা সেই সময়ে তৈরি করা সম্ভব
হয়েছিল, লেখা পড়ে আমাদের-ই আফসোস হচ্ছে কেন আপনি সময় নিয়ে
গেলেন না।
ইঞ্জা
সত্যি ভাইজান, এই আফসোস আমার রয়ে গেছে।
ওদ্বে তখনকার ইঞ্জিনিয়ারিংকে আসলে হেলাফেলা করার নয় ভাইজান, ওরা জানতো বলেই এইসব কার্যকলাপ করতে পেরেছে।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
ছবিসহ বর্ণনা খুব ভালো লেগেছে। সমাপ্ত দেখে খারাপ লাগলো!
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, হয়ত এইটা এইখানে শেষ হলেও, অন্য কোন ভ্রমণে নিশ্চয় দেকগা হবে।
ইঞ্জা
দেখা★
মনির হোসেন মমি
পড়লাম ভাইজান। জলমহলে প্রবেশ না করার কারন কি জানেন। পুরো লেখা পড়ে অবাক হলাম আগের রাজা বাদশারা কতই না বিলাসী ছিলেন। খুব ভাল লাগল।
ইঞ্জা
জলমহালে কি কারণে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তা জানা নেই ভাই, আর ওরা বিলাসি জীবনযাপন করার কারণ ছিলো ওদের অঢেল সম্পদ।
মনির হোসেন মমি
হুম এক সময়কার মুসলিম আধিপত্য বিশ্ব বিলাসীতায় আজ নির্বাসীত। ধন্যবাদ ভাইজান।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা ভাই
আরজু মুক্তা
ছবিগুলো ভাবালো। এখনও এতো সুন্দর!!
ইঞ্জা
জ্বি আপু, এগুলো হলো বিশ্বের নামকরা হেরিটেজ শহর, স্বাভাবিক ভাবেই সরকার এইসবকে ঘষে মেজে রাখে। 😊
তৌহিদ
দাদা, ভ্রমণ গল্প সমাপ্তি টানলেন কেন? মনটা আকুপাকু করছে আরো পড়ার জন্য। মোঘলদের স্থাপত্যশৈলী দেখার মত। বিস্মিত হতে হয়। আপনার এই ভ্রমণ গল্পে অনেক কিছু জেনেছি, শিক্ষণীয় বেশ কিছু তথ্য ছিলো যা আমাদের সবার জ্ঞানকে বৃদ্ধি করেছে বলেই আমার বিশ্বাস।
পরের গল্প কবে আসছে দাদা?
ইঞ্জা
যতটুকু ভ্রমণ করেছি এই জায়গাতে, ততটুকুই দিলাম ভাই, এইসব বিশ্ব হেরিটেজ এখনো বিস্ময় হয়ে রয়েছে সারা বিশ্বে, দেখার মতই বলে প্রচুর মানুষ যায় ঐসব দেখতে।
ধন্যবাদ ভাই, যদিও আমাকে কখনোই ইতিহাস টানেনা, কিন্তু এইসব দেখে আমি ওদের প্রেমে পড়ে গিয়েছি।
ধন্যবাদ ভাই।
তৌহিদ
আসলেও দারুণ লিখেছেন এই ধারাবাহিক লেখাটি দাদা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই 😍
রেজওয়ান
অজানা অনেক কিছুই জানলাম রাজা মান সিং সম্পর্কে। জলমহলটি অসাধারণ ভাইহান😎😇
ইঞ্জা
হা এ খুবই সুন্দর এক জলমহাল।
কামাল উদ্দিন
জলে ডুবে থাকা প্রাসাদগুলোতে কি যাওয়া যায়? প্রাসাদের ভেতরে কি জল ঢুকে নাকি ওটার ভেতর জলদের প্রবেশ নিষেধ?
ঐতিহাসিক এমন পোষ্টগুলো দেখলে ইচ্ছে করে এখনি ঘর ছেড়ে পালাই।
ইঞ্জা
প্রাসাদের কাছাকাছি যাওয়া যায় নৌকাতে করে কিন্তু ভিতরে যাওয়া নিষেধ আছে।
আগেই বলেছি এই প্রাসাদের বড় একটি অংশ পানির নিচে আছে, কিন্তু এর বিষয়ে বিশেষ কিছু জানা নেই আমার।
কামাল উদ্দিন
[ছবি মুছে ফেলা হয়েছে]
কামাল উদ্দিন
[ছবি মুছে ফেলা হয়েছে]
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই