
আমার মোসলমানি হইছিল ১৯৯২ সালে। আমার আর আমার তিন চাচাতো ভাইয়ের একসাথে। তখন এই অঞ্চলে ট্রাডিশন ছিল যে কারো মোসলমানি হইলে আত্মিয়রা সেই বাড়িতে পিঠা পাঠাবে। এজন্য অনেকে একমাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নিত। বিশেষ করে কাঠাল পাতার পিঠা। পরিস্কার কাঠাল পাতার উপর হাল্কা তেল মেখে সেমি লিকুইড চাউলের গুড়া একটা প্লাস্টিকের কোণ এ ভরে মেহেদি দেয়ার মত করে নকশা করতো। তারপর রোদে শুকাতো কয়েকদিন। ডেলিভারির দিন নগদে ভেজে “চাংগারি ” (বাশের বড় আলু টানার পাত্র) ভরে নানা রকম পিঠা দিয়ে সাজিয়ে পাঠানো হত। শুধু পিঠা না, সাথে কয়েক রকমের মোয়াও থাকতো। আমার মোসলমানিতে ৫০ চাংগারি পিঠা আর ৩০ মণ মিষ্টি পেয়েছিলাম। আমাদের কাঠের ঘরের সিলিং এর উপরের পুরোটা পিঠায় ভরে গেছিল। পাড়া প্রতিবেশিদের বিতরণ করে, আগত মেহমানদের আপ্যায়ন করে, পোলাপান ভাতের বদলে সারাদিনই পিঠা খেয়ে সেগুলো শেষ করতে এক মাসের বেশি লাগছিল। পাটিসাপটা, ঠক পিঠা, পুলি পিঠা, মালপোয়া, বিবিখানা, রাজদৌলা, নকশি পিঠা, পয়সা পিঠা, সাগুদানার পিঠা, জালফেস পিঠা, মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া, কাউনের মোয়া, নারিকেলের নাড়ু ইত্যাদী!
আজ এত বছর পর সেই স্মৃতি রোমন্থন করলাম ছবির এই পিঠাগুলো দেখে। আমার ছেলের মোসলমানি উপলক্ষ্যে মাওই (ছোট বোনের শ্বাশুড়ি) এগুলো বানিয়ে এনেছে। কত্তরকমের পিঠা যে!!!
বিগত অনেক বছর যাবত পিঠা দেয়ার রেওয়াজ উঠে গেছে প্রায়। কেউ আর পিঠা বানানোর ঝামেলায় যেতে চায় না। চিপস, বিস্কুট, চানাচুর, কেক ইত্যাদী পোলাপানের পছন্দের বেকারী আইটেম অনেক পরিমানে নিয়ে আসে। আমাদের বাসায় এখন চিপস, বিস্কুট, চানাচুর, নুডুলস ভর্তি!!!
বিক্রম্পুর মুন্সিগঞ্জের এই সংস্কৃতিটা আমার খুব ভাল লাগে। ♥
২৬টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
হেইল্লাইগাইতো বিক্রমপুরে বিয়া করছিলাম কিন্তু …..যাকগে সুখের দিনে দুঃখের কতা কইয়া লাভ নাই।ব্লগে শিপু ভাই আইয়া পড়ছে।খুব ভাল লাগছে।আমাগো ভাতিজা পার্লিনের জন্য রইল শুভ কামনা।
প্রথম মন্তব্য দিলাম আবারো আসছি….প্রোোফাইলে ছবিডা দিয়া দিয়েন।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ প্রিয় মমি ভাই।
আপনার দুঃখের ইতিহাস শুন্তে চাই!!! 😁
মনির হোসেন মমি
হা হা হা
না ভাই,
শশুড়বাড়ী অলওয়েজ জিন্দাবাদ।
নিতাই বাবু
মনির দাদা, আমিও কিন্তু বিক্রমপুইরা জামাই! তাহলে তো আপনিও ওই সম্পর্কিত কিছু একটা।মনে রাইখেন দাদা!
মনির হোসেন মমি
হুম,
ভায়রা ভাই।
জিসান শা ইকরাম
ত্রিশ মন মিষ্টি! শুনে টাসকি খেয়ে গেলাম।
কাঠাল পাতার এমন পিঠা খেয়েছি আমি। মুসলমানিতে এমন প্রস্তুতির কথা প্রথম শুনলাম। সুন্দর একটি রেওয়াজ।
পার্লিন বড় হয়ে গেছে! অনেক ভালোবাসা ওর জন্য ♥♥
শিপু ভাই
একেকজন ১০কেজি/১৫ কেজি করে মিস্টি আনতো। পিঠা বানানোর ঝামেলায় যেতে চাইতো না তারা।
ধন্যবাদ মামা
দোয়ায় রাখবেন
মাসুদ চয়ন
ইতিহাস,ঐতিহ্য-জীবনের গল্প
শিপু ভাই
ধন্যবাদ
নিতাই বাবু
কালের বিবর্তনে আগেকার সামাজিক, ধর্মীয়, ঘরোয়া রীতিনীতি সবই উলট-পালট হতে গেছে। এখন সুন্নতে খাৎনা খরচাদি করে থাকে বড়সড় একমিনিট সেন্টার ভাড়া নিয়ে। এমনি, নাক ফোঁড়ানো অনুষ্ঠানাদিও। সামনে আরও অনেককিছুই দেখতে পাবো মনে হয়।
শিপু ভাই
সময়ের সাথে রীতিনীতি বদলাবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এই পরিবর্তনটা পজিটিভ হওয়া কাম্য
তৌহিদ
পুরোনো ঐতিহ্য কালের গর্ভে হাড়িয়ে যাচ্ছে। সময়ের বড্ড অভাব আমাদের। ঝামেলা এড়িয়ে যাবার জন্য এসব সংস্কৃতি থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছি নিজেরাই।
শুভকামনা জানবেন।
শিপু ভাই
আন্তরিকতা মায়া মমতাও কমে যাচ্ছে আমাদের
ছাইরাছ হেলাল
পিজা পাস্তার যুগে এগুলো গল্পের মত মনে হয়।
সেই সব দিনে ফিরে যেতে পারলে ভালই হতো।
পারলিনের জন্য দোয়া অনেক।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ মামা 💖
আরজু মুক্তা
আমাদের ওখানে এটার রেওয়াজ নেই। অবাক হলাম।শো অফ মনে হলো।
শিপু ভাই
এটা উৎসব। শো অফ না। আনন্দ।
শত শত বছর ধরে চলছে এটা
শাহরিন
আমার বাড়ী মুন্সিগঞ্জ কিন্তু আমি এগুলো জানতামই না। আগে ছেলেদের খৎনা হওয়ার সময় নাকি ছেলের মায়েদের দিয়ে অনেক কিছু করানো হতো। আমার ভাইয়ের বেলায় মা ও করেছেন। তার অনেক কষ্ট হয়েছিল। তাই ভালো কিছু সব সময় স্বাগতম কিন্তু কুসংস্কার এর জন্য অতীতের সব কিছু পছন্দ নয় আমার।
ভালো রীতিনীতি ভালো থাকুক আজীবন।
শিপু ভাই
এত এত আনন্দের জন্য এটুকু কষ্ট মানা যায়
হাফেজ আহমেদ রাশেদ
এমন রেওয়াজ এই প্রথম শুনলাম,,তবে ত্রিশ মন মিষ্ট শুনে,ব্লগে মিষ্টির দোকান খুলার ইচ্ছে হচ্ছে,, যদি কেউ,,,,,,,
শিপু ভাই
১২০০ কেজি মিস্টি!!!
খুব বেশি না। এক দিনে তো আর না। ৮/১০ দিন ধরে এনেছে। মজার বিষয় হল- যারা মিস্টি আনতো তাদেরকেও কিছু মিষ্টি দিয়ে দেয়া হত তাদের বাড়ির জন্য
সাবিনা ইয়াসমিন
বিক্রমপুরে সুন্নতে খাৎনা বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। একটা বিয়ের উৎসবের চেয়ে এই উৎসব কোনো অংশেই কম না। এক বাড়িতে মুসলমানী হওয়ার মানেই হলো এক সপ্তাহ ধরে ঐ বাড়ি দিনে-রাতে সমান জম-জমাট থাকা। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশি সহ মুসাফির আর ভিক্ষুকরা পর্যন্ত দাওয়াত পায়। সেই এক সপ্তাহ কেউ খালি হাতে আসা-যাওয়া করেনা।
আমার গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে, নিজের ভাইয়ের সুন্নতে খাৎনায় মিষ্টি, মোয়া, খই, দৈ, পিঠা দিয়ে বাড়ি ভরে গিয়েছিলো। আমার কাজ ছিলো, বাড়িতে যেই আসবে তাকে ঐগুলো বাটি ভরে দিবো আর অনুষ্ঠানে আসার জন্যে দাওয়াত করবো। ছোট ছিলাম, মনের আনন্দে সেসব করেছি।
অনেকদিন পর এলেন, আর এত পিচ্চি একটা লেখা দিলেন? খাৎনার সময় কেমন লেগেছিলো, তাও ঠিকমতো লিখলেন না !! পরেরবার বড় না হলেও মাঝারি লেখা দিবেন।
ভালো, থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
★ ঠগ পিঠা কাকে বলে? ওটা দেখতে / খেতে কেমন?
শিপু ভাই
ঠগ পিঠা – চাউলের গুড়ি দিয়ে রুটি বানিয়ে স্কয়ার, রেক্টেংগুলার, ডাইস, সার্কেল শেপে কেটে তেলে ভাজা হয়। বালিশের মত ফুলে ওঠে। মুচমুচে জিনিসটা। ভেতরে ফক্কা। টেস্টলেস।
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রোফাইল পিক এড করুন প্লিজ 😊
শিপু ভাই
পিক ছিল। এখন নাই কেন বুঝতেছি না
জিসান শা ইকরাম
সোনেলা নতুন ভাবে আপডট করার ফলে পুর্বের প্রপিক মুছে গিয়েছে।
সোনেলা এখন অনেক ফার্স্ট এবং কালারফুল।