
আবুল আর মফিজ দু’জনে রাস্তার পাশে টং দোকান হতে সিগারেট কিনে মনের সুখে টানছিলেন।আবুলের প্যান্টের পকেটে রাখা মোবাইলের রিং টোনটি বেজেই চলছিলো যেন তার খেয়ালই নেই।মফিজ মনে করিয়ে দিল।
-কিরে! কি ভাবছিস? তোরতো রিং টোন বাজছে।
আবুল পকেট হতে তড়িগড়ি করে মোবাইলটা বের করতে গিয়ে হাত হতে ফসকে পড়ে যেতে তা ধরতে গিয়ে আরো দূরে আছঁরে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলের বারোটা বেজে গেল।পাকা রাস্তায় মোবাইলের পার্টস গুলো সংগ্রহ করে হতাশায় ও ভাবনায় পড়লেন।তা দেখে মফিজ এর রসিকতা।
-কিরে মনে হচ্ছে মোবাইলটা তোর গার্লফ্রেন্ড দিয়েছিলো!
আবুল অবাক হল।
-তুই জানলি কি করে!
-জানি, জানি আমি তোর মুখের ওমন করুন ভঙ্গি দেখেই বুঝে ফেলেছি।
-হরে দোস্ত! এটাতো আমার মোবাইল ভাঙ্গে নাই, সঙ্গে প্রেমটাও বুঝি ভেঙ্গে গেল।
-মানে?
মোবাইলের টুকরোগুলো হাতে নিয়ে তার কাছে এলেন।
-মানেটা তুই বুঝবি না।
-একটু হিন্স দে…দেখি বলতে পারি কিনা।
-আমার গার্লফ্রেন্ড কলেজের টিচার…।
বাকীটা তাকে আর বলতে হলো না গড়গড় করে মফিজই বলে দিল আর আবুল তা আবালের মতন দাড়িয়ে দাড়িয়ে হা করে শুনলেন।
-অনেক কষ্ট করে দশ মাইল হেটে হেটে টিউশনি করে টাকা রোজগার করে সেই কষ্টায়িত টাকায় তোকে এই মোবাইলটা কিনে দিয়েছিলো, তাইতো?
-হুম!
-তা এখন কি করতে হবে তাও আমি বলে দেই।
-হুম।
-এখন সেইম একটি মোবাইল কিনতে হবে যাতে মাননীয় প্রেমিকা বুঝতে না পারেন তার অপদার্থ প্রেমিকা পদার্থ আর হতে পারল না।
-দেখ তুই কিন্তু আমাকে অপমান করছিস !
-হুম, এও বলে দেই এই অপমানের জন্য আমাকেই তুই এই মোবাইলটা কিনে দিতে বলবি, তাইতো?
-দিলেতো ভালই হয়।জানিসতো হাড়কিপটে বাবার দেয়া এ চাকুরীটা পেটে ভাতে তাই আমার পকেটটা একদম খালি।
-হুম, তবে বিয়ে করলে বউয়ের খরচা তিনি দিবেন।
-তুই জানলি কি করে!
-হয়েছে হয়েছে…এবার চল মার্কেটে যাই।আরেকটা সিগারেট খাবি নাকি?
-হুম, বড় টেনসনে আছি।
টং দোকান হতে দুজনে আরো দুটো সিগারেট জ্বালিয়ে একটি রিক্সা ডাক দিলো।
-এই রিক্সা…যাবে নাকি?
-কই যাইবান মামা?
-ঐঐতো, বসুন্ধরায়।
-যাবো মামা,উঠেন।
-কত?
-আপনাগো লগে কওন লাগব!উঠেন যা দেয়ার দিয়েন।
দু’জনে রিক্সায় উঠল।রিক্সা চলছে তার আপণ গতিতে।আর দুজনে কথা বলছেন।
-হ্যারে তোর কি ঐ মোবাইলটাই লাগবো নাকি আরেকটু কমদামী হলেও চলবে।
-নারে ঐটাই লাগব।
-কেন?
-আরে বুঝসনা কেন এহন ফেইসবুকিং যুগ, ভাল একটা মোবাইল না হলে কি চলে! তাছাড়া গার্লফ্রেন্ড কি কইবো?
-অ আচ্ছা,তাইলে ফেইসবুকও তুই চালাস।তা ফেইসবুকিং টুকিং না করলে কি হয় না?
-এই হলো তোদের সমস্যা ! আচ্ছা ফেইসবুক কী কোন ক্ষতি করছে তোদের? আরে ফেইসবুকের মতন সামাজিক যোগা যোগের মাধ্যমেতো ঐ সব রূপপুরের বালিশ কাহিনীর ভাইরাল হয়ে এখন কর্ম কর্তাগো অবস্থা কাহিল হয়..এ ছড়াও খাদ্যে ভেঁজাল সহ বিভিন্ন ইস্যুতো এখন ফেইসবুকের কল্যায়ণে সহজেই জানতে পারে যেমন জনগণ তেমনি সরকারও।এখন সরকারী দায়ীত্ব প্রাপ্ত সব শালারা সাবধান হইয়া যাইতেছে।
তাদের কথার মাঝে রিক্সাওয়ালাও কথা ঢুকিয়ে দিল।
-হ ভাইজান, মামা হাছাই কইছে…এইতো আমার ফেইসবুকেও দেখলাম কত কত খাদ্য যে আদালত বাদ করছে!আচ্ছা মামা খাবারের যে অবস্থা হুনলাম হগল খাবারেই খালি ভেঁজাল আর ভেঁজাল!তাইলেতো আমাগো খাওন দাওন কি বন্ধ কইরা দিতে অইব নাকি।
-তোরও ফেইবুকও আছে নাকি!।মফিজ বললেন।
-হ, মামা, ঐতো পাড়ার ঐ ছলিমুদ্দিরে দিয়া বানাইছিলাম।কি করমু বউ যে চালায়।হেতির লগে দিনে একবার চাটিং না করলে হেতি আমারে সন্দেহ করে।
-হুম!এই এই এখানেই রাখ।
রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া চুকিয়ে শপিং কমপ্লেক্সে এর দিকে যাবেন ঠিক সেই সময় আবার রিক্সাওয়ালার আবদার।লুঙ্গির গিট্টু হতে মোবাইলটা বের করল সে।
-মামা মামা, একটু দাড়ান।এই একটা সেলফি তুলে নেই।নইলে বউ আমারে বিশ্বাস করবো না,আমি কই কই গেছিলাম।
কি আর করা অবাক হয়ে তারা উভয় রিক্সাওয়ালার সাথে একটি সেলফি তুললেন।
ঈদের মার্কেট প্রচুর ভীড়।পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যাটাই বেশী।পুরুষরা যতটা সংকচে না যাতায়াত করেন তার চেয়ে বেশী বুক ফুলিয়ে দল বেধে নারীরা হাটেন।দেশের মার্কেটগুলোতে গেলে বুঝা যায় এদেশে নারীদের স্বাধীনতা কতটা বিস্তৃত।এটা একটা স্বাধীন দেশের জন্য শুভ লক্ষণ তবুও কিছু নষ্ট পুরুষতো আছেই যারা সুযোগ পেলেই নারীদের উত্তেক্ত করে থাকেন।তেমনি একজনকে চোখে পড়ল মফিজের।তাকে পিছন হতে কলারে ধরে টেনে অন্যত্র নিয়ে এসে আচ্ছা মতন কথার ধোলাই দিয়ে ছেড়ে দিলেন।
এরপর আবারো হাটছেন,গন্তব্য বসুন্ধরা সপিং কমপ্লেক্স।খুব সাবধানে হাটছেন আবুল মিয়া।সংকচে হাটতে গিয়ে কখনো কখনো হঠাৎ থেমে গিয়ে আবার হাটেন।এর মধ্যে আবুলের চোখ পড়ল একটি মেয়ের টি শার্টে যেখানে লেখা আছে “গা’ ঘেষে দাড়াবেন না”।আবুলের মন মানছে না একটা প্রশ্ন মফিজকে করেই বসল।
-আচ্ছা!আমরা পুরুষরা কি এতোই খারাপ!
-মানে?
-ঐ যে দেখ টি শার্টে কি লেখা।
-তাতে তোর সমস্যা কি?
-আমরা পুরুষরা কি অপমানীত হচ্ছি না?
এরই মধ্যে ওরা মার্কেটের প্রবেশ গেইটে এসে গেল।
-ওসব অন্য দিন বলবোনে, এবার চল মোবাইল দোকানে যাওয়া যাক।
ওরে সর্বোনাশ! এ যেন এখানেও গরুর হাট বসেছে।কোন মতন ভীড় ঢেলে একটি দোকানে গিয়ে দাড়ালেন তারা।এটা সেটা বেশ কয়েকটা মোবাইল দেখার পর অবশেষে পেলেন তার ভেঙ্গে যাওয়া মোবাইলের মতন একটি আইফোন।সব ঠিক ঠাক আছে কি না দেখলেন।দাম জিজ্ঞাসা করতে আবুল আতৎকে উঠলেন।
-কিরে ভাই! এতো দাম কেন? কয় মাস আগেওতো একটা কিনলাম! এই কয় মাসে পাচ ছয় হাজার টাকা বাইড়া গেল?
দোকানদার খুব ব্যাস্ততার সূরে বললেন।
-কি যে কননা ভাই, এ দেশে এক মিনিটের ভরসা নাই আপনি আসছেন পাচ ছয় মাসের আগের দাম লইয়া।কোন দিন কি শুনছেন এ দেশে কোন জিনিসের দাম বাড়লে আর কমছে ?
-হরে ভাই ঠিক কইছেন, ওয়াল্ড গ্রিনীজ সংস্থা জানতে পারলে এই বিষয়টা তাদের রেকর্ডে যায়গা করে নিতেন।তা ভাই একটু কমটম হবে নাকি ?
-আছেতো! হবে না কেন? আরো কমেও আছে, তবে মেইড ইন জিঞ্জিরা।দিবো নাকি?
মফিজ দেখলেন আবুলরে মোবাইলের দাম ফয়সালা করার চান্স দিতে থাকলে দিন পেরিয়ে যাবে তবুও বাবার মতন ওর কিপটামীরও শেষ হবে না।তাই মফিজ আবুলরে ইশারায় থামিয়ে দোকানদারের সাথে দাম ফয়সালা এবং দাম পরিশোধ করেন।দোকানদার মোবাইলে সিম ঢুকিয়ে সব কিছু ওকে করে দিলেন।মফিজ মোবাইলটা আবুলের হাতে দিয়ে বলল।
-নে এবার।
আবুল নতুন মোবাইলটা হাতে নেয়ার সাথে সাথে একটি কল আসে।আবুল আননোন নাম্বার দেখে কলটি ধরতে দেরী করছেন।আশে পাশে ভীড়ে মানুষের চেচামেচীতে অস্থির মফিজের মন মানষিকতা।
-কি রে কল ধরিসনা কেন?
-কি জানি কে আবার ফোন করল।মাত্রতো সিমটা লাগাইলাম….।
কল রিসিভ করতে ফোনের অর প্রান্ত হতে কর্কস কণ্ঠে গালাগাল শুরু হয়ে গেল।এতো বিকট শব্দে গালাগালি করছে যে, যেন মোবাইলটার বারোটা আবারো বাজবেন।আবুল কান হতে একটু দূরত্ব রেখে কথাগুলো শুনে যাচ্ছেন।কথা শেষে অবশেষে আবুলের দশা কাহিল।তা দেখে মফিজ জিজ্ঞাসা করল।
-কিরে কি হইছে?কে ফোন করেছিলো?
-কেডায় আবার আমারে গাইল্লাতে পারেতো একজনই-শ্রদ্ধেয় বাবা আমার।
-কি কইলো আংকেলে?
-কি আর কইবো!চাকুরীটা বুঝি গেলো এবার।
-মানে?
-সেই যে তোরে লাইভে রেখে সিগারেট খেতে বাহিরে এসেছিলাম আর তো লাইভে ফিরে যাবার মনে ছিলো না তাই টিভি চ্যালেনটিও এতোক্ষণ ঐ অবস্থাই ছিলো।পরে বাবা খবর পেয়ে দর্শকদের যান্ত্রীক ত্রুটির কথা বলে কোন মতে লাইভের কাজের শেষ রক্ষা করলেন।এখন ভাবছি বাসায় গিয়ে বাবাকে কি জবাব দিমু!
ঠিক সেই সময় পিছন থেকে হঠাৎ ক্যামেরা ম্যানের উপস্থিতি।
-চিন্তার কিছুই নাই স্যার..সব লাইভ হইয়া গেছে।
ক্যামেরাম্যানকে দেখে আবুল অবাক হয়ে বলল।
-তুমি ক্যামনে এতোক্ষণ কৈ আছিলা?
-আপনারা যখন বের হলেন আমিও বাহিরে বের হই সাথে এই ছোট ভিডিও ক্যামেরাটা নিয়ে।ভাবছিলাম আপনাদের লাইভে বাহিরের কিছু দৃ্শ্য দেখাবো।কিন্তু গোপনে আপনাদের ফলো করে এই পর্যন্ত আসতে হবে ভাবিনি।তবে বেশ কিছু দৃশ্য যেমন ঐযে মেয়ে উত্তেক্ত করা, রিক্সাওয়ালার ফেইসবুকিং ইত্যাদি দৃশ্যগুলো আমাদের চ্যানেলের জন্য আনকমন।
-সাবাস!এইতো বাপের বেটা…তুমি বাচালে আমায়।
-জি স্যার..ঈদের বেতন বোনাসটা একটু আগেই দিয়েন।
তথ্য ও ছবিঃ অনলাইন
১৬টি মন্তব্য
তৌহিদ
আপনার এই ধারাবাহিকটি আমার খুব পছন্দের ভাই। লেখা আর গল্পের তালে তালে সমাজের পরিবারের কিছু বাস্তব সমস্যাকে চিহ্নিত করেছেন যার ভুক্তভোগী আমরা সবাই। কথায় কথায় লাইভ, ভিডিও, চ্যাটিং যেন অপরিহার্য! কিন্তু এসব অপ্রয়োজনীয়। আর খাদ্যে ভেজালতো নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার এখন। যেন এগুলোই স্বাভাবিক। আসল খাবার খেলে এখন পেট খারাপ হয়।
ভালো লিখেছেন ভাই।
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ ভাইটি।সত্যিই খাবার নিয়ে আমরা খুব টেনসনে আছি।
তৌহিদ
হ্যা ভাই, সবাই ভেজাল খাবার বিক্রি করে নিজের লাভ গুনছে।
ছাইরাছ হেলাল
মজার ছলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এভাবে তুলে ধরা দারুন এক ব্যাপার ।
পড়তেও ভালই লাগে।
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
গল্পের মধ্যে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আসাতে আপনার জুড়ি নেই সোনেলায় মনির ভাই।
নিয়মিত এমন লেখা চাই।
শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি
হুম নিয়মিত চেষ্টা চলবে।ধন্যবাদ।
শামীম চৌধুরী
বাহ দারুন।
মমি ভাই. মফিজের কাহিনী শেষ হবে কবে?
অপেক্ষায় রইলাম বাকিটুকুর জন্য।
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ ভাইয়া শেষ কবে তা এ মুহুর্তে বলতে পারছি না।তবে যতদিন সম্ভব চলবে।
শামীম চৌধুরী
চলুক। ভালই তো লাগছে।
রাফি আরাফাত
আগের দুইটা পড়ি নি আমি। মন্তব্যটা বাকি দুইটা পড়েই জানাবো। ধন্যবাদ
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ প্রিয় ভাইটি।আবার আসবেন।
নিতাই বাবু
আগের পর্ব দুটো পড়া হয়নি দাদা। সময় করে পড়ে নিবো ভাবছি। ভালো লাগলো দাদা। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
মনির হোসেন মমি
হুম ধন্যবাদ।না পড়লেও সমস্যা নেই এর এক এক পর্ব এক এক পর্বেই শেষ।তবে প্রতিটি পর্বেই চমক আছে।
আরজু মুক্তা
বা হ বা!! পুরা বংলাদেশ তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ
ভালো লাগলো
মনির হোসেন মমি
আপনাকেও ধন্যবাদ।