আরে সাজু ভাই যে। আজ এতো সকালে? কি মনে করে? মতিন মিয়া, বিয়া সাদি তো করিনি,কি আর করবো বলেন? ভালো লাগছিলো না বাসায় একা একা। আর এমনিও আজ ছুটির দিন মতিন মিয়া। তাই সকাল সকাল চলে আসলাম। আপনার সাথে আজ অনেক্ক্ষণ আড্ডা দিবো তাই। আচ্ছা বসেন। সাজু ভাই আমারও একটা পরিবার আছে। আমারও বাবা মা আছে। আমারও আপনাদের মতোই সবাই আছে। আমি ছিলাম সেই পরিবারের বড় ছেলে। সবার নয়নের মনি। কিন্তু আজ আমি এখানে কেন জানেন? আমি নাকি সবসময় ভাবি,আমি নাকি অদ্ভুত ধরনের, আমি নাকি মানুষটা পাগল পাগল,আমি নাকি একটা গল্পের চরিত্র, আমার মাঝে নাকি স্বাভাবিক মানুষের মতো স্বাভাবিকতা নাই। তাই তারা সবাই আজ আমাকে দূরে পাঠিয়ে দিছে।
—
সাজু ভাই জানেন আমারও একটা ভালোবাসার মানুষ ছিলো। আমার নিরবতা নাকি তার মন ছুয়ে যেতো। আমার ভাবনা গুলো নাকি তার অসম্ভব ভালো লাগতো। আমার ভাবনা গুলো নাকি সে নিজের করে নিয়েছিলো। আমার ভাবুক চেহারা নাকি তাকে সপ্নেও তাড়া করে। আমিও তাকে আমার ভাবনার মতোই ভালবাসতাম। তাকে নিয়ে অনেক ভাবতাম। কিন্তু কিছুদিন পর আমাকেই বলে, তুমি এতো চুপচাপ কেন? হাসতে পারো না? তোমার কি রোগ আছে নাকি? তোমার মাঝে কি কোন আনন্দ নাই? তুমি এতো নিরস কেন? অথচ কিছুদিন আগেই আমার ভাবনা গুলো তার ভালো লাগা ছিলো। আমার ভাবনাগুলো আরও অসহায় হয়ে পরলো।
—
এরপর সব ছাড়ে বিয়ে করলাম। আমার বউটা অনেক সুন্দর ছিলো সাজু ভাই। অমায়িক তার চেহারা, চোখ ফেরানো যায় না। আমি তাকে বলছিলাম আমি একটু ভাবুক,তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো? সে বলেছিলো তুমি আর যাই হও না কেন তুমি মানুষ হিসেবে অনেক ভালো। তাই আমি তোমাকে ছেড়ে কখনো যাবো না। আমার ভাবনা আর আমার সংসার ভালোই চলছিলো। কিন্তু কিছুদিন পর সে কি বলে আমাকে জানেন? সে বলে,একটা স্বাভাবিক মানুষ এতো ভাববে কেন? একজন ভালো মানুষের তো ভাবনা থাকার কথা না। নিশ্চয়ই আপনি খারাপ ভালো সব ভাবেন। আপনাকে আমি ভালো মনে করছিলাম কিন্তু আপনার মনটা আপনার ভাবনা গুলোর মতোই কালো। সেও আমাকে ছেড়ে চলে যায়।
—
জানেন সাজু ভাই আমার দুইটা বাচ্চাও ছিলো। অনেককিছুর পর ঠিক হয় একটা বাচ্চা আমার কাছে থাকবে আরেকটা আমার বউ এর কাছে। সব ঠিক ঠাক চলছিলো। হঠাৎ একদিন আমার ছেলে আমাকে বললো, বাবা আমি আম্মুর কাছে যাবো। আমি বললাম কেন? ও বললো তোমার কাছে ভালো লাগেনা। তুমি আমাকে ভালো রাখতে পারোনা। আমার খেলার সাথী নেই। আমি তাই আমার মায়ের কাছে যাবো। তুমি আমাকে মায়ের কাছে রেখে আসো। আমি কিছু বলতে চেয়েও পারিনা। তারপর দিন তাকে তার মায়ের কাছে রেখে আসি আমি।
—
আসলে সাজু ভাই আমার ভাবনার জন্য আমাকে সবাই ছেড়ে গেলো। কিন্তু কেউ একবারও বুজলো না আমি কি ভাবি। আমি তো তাদেরকে নিয়েই ভাবি। আমার ভাবনা গুলো তো তাদেরকে ঘিরেই ছিলো। তাহলে কাছের মানুষদের নিয়ে ভাবা কি ভুল সাজু ভাই?
—
আপনি বলেন না আমি সবসময় চুপচাপ থাকে কি করি। আগে আমি তাদের নিয়ে ভাবতাম। আর এখন আমার ভাবনা গুলো অপেক্ষায় পরিনত হয়েছে। তাই এখন আমি সবসময় অপেক্ষা করি। হয়তো একদিন তারা আসে বলবে মতিন মিয়া তোমার ভাবনা গুলোতে আমাদের একটু জায়গা দিবা কি?
*ভাবনা গুলোই আমার ভাবনাকে কেড়ে নিয়েছে*
—
চোখের এক কোনা কেন জানি ভেজা ভেজা লাগছে আমার। মতিন মিয়া আজ উঠি আরেকদিন আসবো।
চলবে—-
১৭টি মন্তব্য
ইঞ্জা
মন ছোঁয়া লেখা, আমি প্রথম পর্ব থেকে আবার পড়ে নেবো, নাহলে গল্পের মূল বিষয়বস্তু বুঝতে কষ্ট হবে, লিখে যান ভাই।
রাফি আরাফাত
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই!
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা অফুরান। 😊
রোবায়দা নাসরীন
ভালো লাগলো। আগের পর্বগুলো পড়বো। মানুষ বেতিক্রম স্বভাব দেখে মুগ্ধ হয় কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে ভালোবাসে।
রাফি আরাফাত
আপনার কথাটা ভালো লাগলো! ধন্যবাদ
শুন্য শুন্যালয়
এইতো এইবার ভালো ছেলের মতো টাইমলি পোস্ট দিছেন। আগে আমারে দিয়া কষ্ট করাইয়া খসড়ায় নেয়াইছেন দুইবার। এরপর দুস্টামি করলে সোজা নাগাসাকি পাঠায় দেব। আমি কড়া ম্যাডাম, হাতে বেত থাকে, সবাই জানে।
আচ্ছা লেখা নিয়ে বলি। সেদিন না আপনাকে বললাম, কিছু রহস্য থাকতে হয়, সব ভাংতে হয় না, তবুওতো উন্মোচন করলেন। তবে অপেক্ষাও একটি বড় রহস্যময় শব্দ, যার রহস্য কারো পক্ষেই ভেদ করা সম্ভব নয়।
আমি কিন্তু সাজুকেই মতিন মিয়া ভাবছিলাম, আরেক সত্বার মতো।
লেখার হাত ভালো আপনার। কিপ কন্টিনিউ।
রাফি আরাফাত
ধন্যবাদ! সামনে আরও বড় কোন রহস্য আছে।
তৌহিদ
এই মতিন মিয়াকে কিন্তু আমার পছন্দ হয়েছে। প্রথম পর্ব থেকে পড়ছি আর ভাবছি। আমাদের সবার ভিতরেই প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে লুকিয়ে থাকে একজন করে মতিন মিয়া।
ভালো লিখছেন ভাই। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
রাফি আরাফাত
ধন্যবাদ ভাই!
শামীম চৌধুরী
জানি শেষটাতেই মতিন মিয়ার রহস্য উম্মোচিত হবে। পর্বগুলি ভালই লাগছে। চালিয়ে যান। পরের লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম ভাই।
আপনার জন্য শুভ কামনা।
রাফি আরাফাত
আন্তরিক ভাবে অনুপ্রাণিত!
জিসান শা ইকরাম
চমৎকার লেখেন আপনি, পাঠককে ধরে রাখতে পারেন লেখায়।
লেখুন নিয়মিত এবং অন্য লেখকদের লেখা পড়ুন।
শুভ কামনা।
রাফি আরাফাত
বিশ্বাস করেন ভাই,সবার লেখার হাত,শব্দশৈলী দেখে আমি মুগ্ধ। ধন্যবাদ সোনেলা পরিবারকে!
আরজু মুক্তা
মনে হচ্ছে আমার ছায়াতে মতিন মিয়া!
রাফি আরাফাত
সবার মাঝেই বেচে থাকতে চায় মতিন মিয়া। ধন্যবাদ
মাহমুদ আল মেহেদী
চমৎকার লেখা। লিখুন নিয়মিত।
রাফি আরাফাত
ধন্যবাদ!