
কৈশোরের তালশাস বা প্রচন্ড ঝড়ে আমগাছের নিচে দাড়িয়ে আম কুড়ানোর মত ভয়ঙ্কর আনন্দ যাদের জীবনে নেই তাদের জীবনটা মেশিনের মতই নিরস ও নিরানন্দ। দশ্যিপনার বয়সটি ছিল বাঙ্গালী নদীর অবয়বে, ভয়াল করতোয়া পাড়ি দেওয়া। আবার টিএন্ডটির সামনে তৎকালীন নয়ার পুকুর নামে পরিচিত, আজকের শেরপুরের সবচেয়ে বড় নর্দমাটিতে ঝাপাঝাপি ছিল নিত্যদিনকার। পিতার চোখরাঙ্গানী সত্তেও বতর্মান আহলে হাদিস মসজিদের সামনের পুকুরটি বর্ষায় টুইটুম্বর হওয়ায়, নেমে পড়েছি কোন ভয়কে পাত্তা না দিয়ে। তীব্র আনন্দ সুখ যখন মনের গহীন পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। ঠিক তখন চিৎকার চেঁচাচেচি কানে আসল। তখন পিতার ঠিকরে বের হয়ে আসা চোখ আর বাঁশের তেড়াবেকা কঞ্চি আমার চোখ ছোট করে দিল। লাল চোখ ডলে ডলে স্বপ্ন না সত্য, পিতাই কিনা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি। ওদিকে কঞ্চি ছেড়ে ভেঙ্গে পড়া মসজিদের ওজুর জন্য কুয়োর বাঁশ মাঝপুকুরে ফেলছেন আমাকে নাগাল পাওয়ার জন্য। তৎসময়ে মসজিদের ওজুর পানি কুয়োর থেকে তোলা হত। কারন তখন টিউবওয়েলের মত যন্ত্র সচরাচর ব্যবহার হত না।সেই কুয়োর পানি তোলার বাঁশটি আমার জন্যই কিনা, ভেঙ্গে পড়েছে কিছুদিন হল। পিতার নাগাল পাবার প্রান্তান্তর চেষ্টা আমার সাতহাত জিহবা বের হবার জোগাড়। যে পাশে ওঠার চেষ্টা করছি, সে পাশেই বাবাজি হাজির। শেষে কোন এক ফাঁকে ভোদৌড় কিন্তু পিঠটা বাঁচাতে পারলাম না। বাঁশ ফেলে ঐ যে ত্যাড়াব্যাকা কঞ্চিটা ততক্ষনে হস্তগত করে ফেলেছেন। শেষে কঞ্চির আঘাতটা যে পিঠে লাগল তার ক্ষত আজও বর্তমান। বত্রিশ বছরের ক্ষত আজও বয়ে বেড়াই পিতার ভালবাসার চিহ্ন হিসাবে। মাঝে মাঝে সে ক্ষতটা পরম মমতায় স্পর্শ করি। এর যে সুখানুভুতি অন্যকে বোঝানোর মত নয়। ডি জে হাইস্কুলের নব্বই পূর্ববর্তী আগের অনেক শিক্ষক আমারও শিক্ষক, পিতারও শিক্ষক। যে কারনে সকল কর্মের বিস্তারিত বর্ণনা, সংবাদ বাহক ছাড়াই সংবাদ পরিবেশনের কাজটি সম্পাদত হত, সুনিপুন ভাবে। ততসময়ে বাড়ী লাগোয়া দুজন শিক্ষক (শ্রদ্ধেয় আব্দুল হামিদ ও শ্রদ্ধেয় কোরবান আলী) আমাদের কাছে ভয়ঙ্কর মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল। তাঁরা কখনও মুখে ভৎসর্না করত না।
চলবে –
১০টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
স্বাগতম সোনেলায়।
আপনার লেখা পড়ে স্মৃতি কাতর হয়ে গেলাম ভাই,
নিজের কৈশরকেই যেন দেখলাম।
যদিও বাবার দেয়া কোন স্মৃতি চিনহ নেই পিঠে, তারপরেও অনেক শাসনের সৃতি আছে।
লেখুন এখানে আরো, অন্যর লেখাও পড়ুন,
শুভ কামনা।
মামুন চৌধুরী
আমি ব্লগে লিখতে যাওয়া একে বারে নতুন মানুষ । কি লিখেছি খাদ্য না অখাদ্য বুঝতে পারছি না। তবে আপনাদের গঠনমুলক সমালোচনার কারনে কেমন জানি একটু একটু কবি নয়, লেখক ভাবতে শুরু করেছি। আপনার প্রতি ভালবাসা ও শুভকামনা রইল।
ছাইরাছ হেলাল
স্মৃতিকাতরতা দেখতে ভালই লাগে,
লিখুন ও পড়ুন নিয়মিত;
মামুন চৌধুরী
ছাইরাল হেলাল
প্রথমে শুভ কামনা আপনার জন্য। ভাই আমি নতুন মানুষ, আপনাদের সাথে পথ চলা শুরু করেছি । হয়ত পা মেলাতে পারব না। তবে আপনাদের পরামর্শ পথ চলার পাথেয় হবে। সেটিই আমার অনেক বড় পাওয়া। ভাল থাকবেন।
নীরা সাদীয়া
“যে পাশেই ওঠার চেষ্টা করেছি, সে পাশেই বাবা হাজির।” খুব মজা পেলাম আপনার শৈশবের স্মৃতিচারণ পড়ে। সোনেলায় লিখুন নিয়মিত। শুভ কামনা রইলো।
মামুন চৌধুরী
আমি একটা মানুষ, সে কিনা মানুষকে মজা দিতে পারে, এই সুখানুভুতি নিয়ে আপনাদের পাশাপাশি চলতে পারি। শুভ কামনা থাকল আপনার জন্য ভাল থাকবেন।
মেহেরী তাজ
সোনেলায় স্বাগতম আপনাকে।
শেরপুর? উত্তরবঙ্গ? যদিও ছবিটা বলছে তাই।
স্মৃতিচারন পড়ে ভালো লাগছে। নিয়মিত লিখুন আমরা পড়বো…
প্রহেলিকা
শৈশব পেরিয়ে আসার পর তা খুব দোলা দেয়। দোলা আরও বেশি তখন দেয় যখন স্মৃতিচারণ পড়ি।
বেশ লিখেছেন, লিখুন নিয়মিত।
শুভ কামনা!
সাবিনা ইয়াসমিন
কৈশোরের স্মৃতি সব সময়েই মধুর হয়। ছোটো বেলায় যে থাকতো শাষন ভয়ে আতংকিত ,ঠিক সেই পরিনত বয়সে এসে স্মৃতি হাতড়ে খুঁজে বের করে শাষনের ভাঁজে লুকানো মমতা। মা-বাবাই সবার প্রথম শিক্ষক এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতিটি মানুষের জন্যেই এটা সত্যি।
সোনেলায় স্বাগতম মামুন। লিখুন, পড়ুন। লিখবেন মনের আনন্দে। পড়বেন শেখার জন্যে। এখানে সিনিয়র অনেক লেখক আছেন যাদের লেখা পড়লে ভালো লাগার পাশাপাশি নিজের লেখাটিকেও আরো সুন্দর করার নিয়ম জানতে পারবেন।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা রইলো 🌹
রিতু জাহান
সোনেলায় স্বাগতম আপনাকে।
আমাদের দাদাবাড়িতে ওজুর জন্য একটা আলাদা পুকুর ছিলো। ও পুকুরে গোসল কাপড় ধোয়া টোটালে নিষেধ ছিলো। আমি সে সব মানতাম না। নেমে পড়তাম। ছিঁড়া দাদা,(ছোটো দাদা) কুঞ্চি নিয়ে পুকুরের চারপাশ দৌড়াতো।
মানুষের শৈশব নির্মল ও নির্মোহ। বেশ ভালো লাগলো পড়ে।
চলুক।