সুরের মাঝে কি জাদু আছে কে জানে? কেউ সুরের এই যাদুর মোহে পড়ে হারিয়ে যায় আজানায়। আবার কেউ কেউ কেউ নিজেকে খুঁজে পায় এই সুরের মাঝেই। সেই অনাদিকালের শুরু থেকে মানুষ সুরের মুর্ছনায় হারাতে শিখেছিল। লক্ষ কোটি বছর পরেও সেই হারিয়ে যাবার আগ্রহে মানুষ সুরের পেছনে অন্ধের মত ছুটে বেড়ায়।
কি অসম্ভব ক্ষমতা এই সুরের! হ্যামিলনের ইঁদুর থেকে শুরু করে বাচ্চারাও দল বেঁধে হারিয়ে গেছে এই সুরের মোহনীয় লাইন ধরে। আজ অব্দি কেউ আর তাদের খুঁজে পায়নি। না কোন নগরে, না কোন বন্দরে। তারা যেন সুরের মতই সুরের মাঝে হারিয়ে গেছে, মিশে গেছে বাতাসে।
ক্ষমতা, লোভ, লালসা -এই সবই হার মেনেছে এই সুরের সামনে। আহংকার, আত্মগরিমা, দাম্ভিকতা – সবই ধুলিসাৎ হয়েছে এই সুরের কারণে। যে মন কোন বাঁধনে জড়ায় না, সেই মনও কোন না কোন এক গলিতে অখ্যাত কোন রেস্তোরায় বেঁজে যাওয়া কোন এক নাম না জানা বাদ্যযন্ত্রের টুং টাং শব্দতে নিজের পাথরসম হৃদয়টাকে বেঁধেছে। হয়তো স্বীকার করেনি কোন কালে, তবুও সেই সুর কখনো কানে ভেসে আসলে তাতে নিজের তৃষ্ণা মিটিয়েছে খুব সর্ন্তপণে।
উল্লাস, আনন্দ, বিজয় – এই সবই প্রকাশ পেয়েছে সুরে। কৃতজ্ঞতা, মহানুভবতা, দয়া – এরাও নিজেদের প্রকাশ আর প্রচার ঘটিয়েছে এই সুরের পথে হেটে। প্রতিটা শোক কিংবা প্রতিটা আনন্দের উল্লাস সুরের এই অলিগলির পথ ধরে অন্ধকার পথের কোণ থেকে উঠে গেছে রাজপ্রাসাদে। কখনো শোকের অশ্রু ঝড়িয়ে আবার কখনো আনন্দ অশ্রু বিসর্জনের মাধ্যমে মনের গহীন থেকে ভাব গুলিকে প্রকাশ করিয়েছে জনসমুদ্রে।
সুরের এই মাদকতা কাউকেই ছেড়ে কথা বলেনি। মোয়াজ্জিনের আজান থেকে শুরু করে কোরআনের তেলাওয়ালে রয়েছে তার উপস্থিতি। মন্দিরের ঘন্টা থেকে পুজার মন্ত্র পাঠের পড়তে পড়তে রয়েছে তার অবস্থান। গির্জার ঘন্টা থেকে শুরু করে সান্তাক্লোজের স্লেজ গাড়িতে রয়েছে তার বিস্তৃতি।
কেউ তার কন্ঠে ধারণ করেছে সুর আর কেউ তা নিয়ে এসেছে তাদের হাতের আঙ্গুলে। কেউ কথার পর কথাকে সাজিয়ে গেছে সুরে, আর কেউ কেউ সেতারার তার ধরে গুঞ্জন তুলতে তুলতে সৃষ্টি করেছে ঝড়। আর তাদের সেই ঝড়ে, সৃষ্টির গহীন তলে মানুষ বিভোর হয়ে হারিয়েছিল, হারাচ্ছে আর হারাতেই থাকবে নিজেকে।
এই সুরের ভেলায় চড়ে কত ভালোবাসার গল্প পার করেছে কত শত নীল নদ। শত শত বেহালার তারে প্রকাশ ঘটেছে ছড়িয়েছে বেদনার গল্প। একতারার কম্পনে সৃষ্ট সুরে প্রকাশ পেয়েছে হাজারো মূল্যবোধ। দোতারার সুর ছড়িয়েছে কত কাব্যকথা। পিয়ানো গুলো শব্দের কম্পনে শত শত মানুষের অস্তিত্বকে নাড়িয়ে গেছে। আর গিটারের তার গুলো আপন উন্মাদনার সুর ছড়িয়ে ছিটিয়ে উন্মত্ততায় আগুন জ্বালিয়েছে যুব হৃদয় গুলিতে। শত অবজ্ঞাতেও কেউ মুক্তি পায়নি এই সুরের কবল থেকে।
কত হঠকারী সুরের এই চিৎকারে নিজের কুৎসিত কর্মকে সংবরণ করেছে। কত যালিমের মনে এই সুর সৃষ্টি করেছে ভয়। কত মুক্তিকামী মানুষের মনে সাহস যুগিয়েছে এই সুর। কত ভীত সম্প্রদায়কে আগ্রগামী করে দিয়েছে সে সময়-অসময়ে। কত রাজত্বের সৃষ্টি হয়েছে এই সুরের সিড়ি বেঁয়ে, আবার কত রাজত্ব ধ্বংস হয়ে বালিতে মিশে গেছে এই সুরের তেজস্বীয়তার সামনে। কত পরিচয় লুটেছে এই সুরে আর কত পরিচয় গড়েছে এই সুরের শেষে। সুরের এই অবদানের হিসেব কখনো বলে কয়ে শেষ করার নয়।
এইসব সুর ভেসে চলুক মানুষের মনে, ভাসিয়ে নিয়ে যাক মানুষকে তেপান্তরে। যুগ যুগান্তরের সুর এগিয়ে চলুক তার আপন গতিতে। ধ্বংসে, সৃষ্টে আর ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখুক সবাইকে….
পরিশেষে সুরের যাদুতে ঘেরা একটি পরিবেশনা..
১৮টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সুরের রয়েছে অসীম ক্ষমতা,
যা কেহ উপেক্ষা করতে পারেনা।
অনেক দিন পরে লিখলেন,
সোনেলা আপনার লেখা মিস করে।
শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
ভিডিওর সুরের যাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম।
অলিভার
ধন্যবাদ @জিসান ভাই,
আপনাদের এমন অনুপ্রেরণা আর উৎসাহ না পেলে হয়তো অনেক আগেই হারিয়ে যেতাম।
জিসান শা ইকরাম
আমাদের সোনেলার নতুন ভার্সন ইউজার ফ্রেন্ডলি করার জন্য আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত চাই।
অলিভার
মতামত দিতে গিয়ে অনেক লম্বা একটা ‘চাহিদা’ পূরণের লিস্ট তৈরি করে ফেলেছি। আর সেটাই জানিয়ে এসেছি ব্লগ আপডেট পোষ্টের মন্তব্যে। ভয় হচ্ছে, ব্লগের নিয়ন্ত্রক না আবার রেগে গিয়ে আমার ব্লগ একাউন্টটাই বাজেয়াপ্ত ঘোষনা করে 😛😂😂
মনির হোসেন মমি
সূর
যে কোন মানুষকে থমকে দেয়,ভাবিয়ে তুলে ।সূরের জাদুতে বিশ্ব নাচে নাচে মানবকুল।খুব ভাল একটি লেখা।ভাল থাকবেন।
অলিভার
হ্যা, সুরের এক অন্য রকম ক্ষমতা রয়েছে।
সময় নিয়ে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ 🙂
মাহমুদ আল মেহেদী
সুরের মূর্ছনার মত মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিলেন ।
অলিভার
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর একটি লেখা অলিভার ভাই, পরম যাদুতে লেখা, অনেক কিছু স্বরনীয় হয়ে গেল।
আপনার সুন্দর লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
অলিভার
অনুপ্রেরণা দেবার জন্যে ধন্যবাদ @মজিবর রহমান ভাইয়া।
সময় পেলেই নতুন লেখা নিয়ে হাজির হয়ে যাবো 😊
মোঃ মজিবর রহমান
অপেক্ষায় রইলাম।
শুন্য শুন্যালয়
এইযে ইরেগুলারলি ইরেগুলার, কেমন আছেন? যা একটা সুরের ভিডিও দিলেন, শুনতে শুনতেই তো লেখার সুযোগ পাচ্ছিনা। কী সুন্দর!
আপনার প্রতিটি লেখা পড়েই মনে হয়, এমন করে কেন ভাবতে পারিনা। আসলে সুর ছাড়া জীবন তো কেউ ভাবেনা, তাই লেখেও না হয়তো আলাদা করে। সুর হচ্ছে অক্সিজেন।
সুন্দর একটা লেখা।
অলিভার
‘ইরেগুলারলি ইরেগুলার’ কথাটাও আমার জন্যে কম হয়ে গেছে। আমাকে আসলে বলা প্রয়োজন “((ইরেগুলার)*(ইরেগুলার))^ইরেগুলার”। কিন্তু তারপরও আমার ইরেগুলারিটির পরিমাপ করা যাবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যাবে।
আলহামদুলিল্লাহ্, ভালো আছি। আশা করি আপনিও ভালো আছেন, ভালো সময় পার করছেন।
একটা লিখা কতটুকু ভালো বা মন্দ অথবা আমি কতটা ভালো বা মন্দ লিখছি তা নির্ভর করে পাঠকের উপর। এই যেমন আপনি চমৎকার ভাবে লেখাটার প্রশংসা করলেন, তার মানে যে কোন ব্যাপারকে আপনি চমৎকার ভাবে পজিটিভলি নিতে পারেন। 😊
আর লেখা নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে চাই না। আপনাদের উৎসাহ পেয়েই এমন ‘হিজিবিজি’ নিয়ে হাজির হয়ে যাই সময়-অসময়। আপনারা এমন মন্তব্য করতে থাকলে ‘লাই’ পেয়ে এমন বস্তাপঁচা লেখা নিয়ে আবারও হাজির হয়েই যাবো 😄😄
শুন্য শুন্যালয়
আমি শুধু প্রশংসাই করতে পারিনা, বস্তাপঁচা লেখাকে বস্তাপঁচা বলতেও পারি, তাদেরকে, যাদেরকে বলে কাজ হবে। লিখেই দেখুন। 🙂
অলিভার
আশা করছি খুব দ্রুতই বস্তাপঁচা কিছু নিয়ে উপস্থিত হবো 😁
সাবিনা ইয়াসমিন
মানুষের জীবনটা শুরুই হয় সুর দিয়ে, হ্যা কান্নাটাও একটা সুর। জন্মলগ্নে বলা প্রথম ভাষাটাই প্রকাশিত হয় সুর দিয়ে, পরবর্তিতে সুরের সাথে যোগ হয় স্বর, শুরু হয় নব নব অনুভব- অনুভুতির। সুর আর জীবন ওতপ্রেত ভাবো জড়িত। কেউ স্বীকার করে কেউ করে না।
আপনার লেখা এই প্রথম পড়লাম। ভালো লেগেছে পড়ে। নিয়মিত পড়ার অপেক্ষা থাকবে। ভালো থাকুন, শুভ কামনা।
অলিভার
“কান্নাটাও একটা সুর” -কত গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ, অথচ পুরোটাই বাদ দিয়ে গিয়েছি।
এই জন্যেই এখানে আসা। যতটা না নিজের কথা বলা হয়, তারচেয়ে শেখা যায় আরও বেশি। চিন্তা করবার খোরাক জুটে এখানে।
লিখাটা আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমার নিজেরও ভালো অনুভূতি হচ্ছে।
সময় নিয়ে এমন চমৎকার মন্তব্য করার জন্যে ধন্যবাদ 🌸