ইশ্বরের পাহাড় (শেষ পর্ব)

তৌহিদুল ইসলাম ১ জানুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ০৩:০১:০৯অপরাহ্ন ভ্রমণ ১৮ মন্তব্য

ইশ্বরের পাহাড় (২য় পর্ব)

বড় পাথরটা আরো ছোট ছোট পাথর সাথে নিয়ে তীরের বেগে নীচের দিকে ছুটে চলছে। ঐ যে মমব্রুকে দেখা যাচ্ছে ! পাথরের গতিপথের ঠিক নীচেই সে দাঁড়িয়ে আছে এ কথা মনে হতেই আমার হাত পা হীম হয়ে গেলো।

মমব্রু! মনব্রু! চিৎকার করে ডাকলাম। কিন্তু পাথর গড়িয়ে পড়ার শব্দে আমার আওয়াজ তার কান পর্যন্ত পৌঁছালোনা সেটা তার হাত নাড়ানো দেখেই বুঝতে পারলাম। ইশারায় কি যেন বলছে! সেও দেখতে পেয়েছে পাথরগুলো তার দিকেই ছুটে যাচ্ছে! তবে কি ইশ্বর তার বাবার মত তাকেও বুকে টেনে নিতে চলেছে! আমার দম বন্ধ হয়ে উঠছে।

মমব্রু পাহাড়ের সন্তান। এখানকার সমস্ত বিপদআপদ তার চেনা। কখন কি করতে হবে তা সে ভালো জানে। তারপরেও বিপদ কি কখনো কাউকে ছেড়ে কথা বলে?

দুপাশে লাঠিতে একটা মোটা কাপড় বেঁধে স্ট্রেচারের মতন বানিয়ে তাতে মমব্রুকে শুইয়ে আমরা ছুটে চলেছি। সাথে গাঁয়ের আরো দু’জন। মমব্রুর মা চিনিপ্রু শোকে প্রলাপ বকছে আর বুক চাপড়িয়ে আমাদের সাথে দ্রুত হাঁটছে।

আমরা পাহাড় থেকে তখন দ্রুত নীচে নেমে আসি। সবার আগে নেমেছি আমি। মামা বারবার সাবধান করছিলেন পিছন থেকে, কিন্তু আমার একবারও মনে হয়নি পাথরে পড়ে আমারো পা ভাঙতে পারে! আমার শুধু বার বার মনে হচ্ছিলো নীচে মমব্রু বেঁচে আছেতো!

নীচে নামতেই মমব্রুর নীথর দেহ পড়ে থাকতে দেখলাম। দু এক জায়গায় থেঁতলে গেছে। মাথা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। মাথার নীচের মাটি রক্তে ভিজে উঠছে। আমার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি নিজের হাতটা দিলাম তাকে। সে আঙুলগুলো জড়িয়ে ধরে বললো – আত্তি!

লিপন ভাই দ্রত মমব্রুর মাথায় নিজের শার্ট খুলে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। মামা তাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে ছুটতে লাগলেন। পিছে পিছে আমি। সে বেঁচে আছে, তবে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। এক দুপুর লেগে যাবে সেই আর্মি ক্যাম্পে পৌছতে! পাহাড় থেকে পাথর গড়িয়ে পড়ার শব্দ শুনতে পেয়েই মমব্রু উপরের দিকে তাকিয়েছিলো। কিন্তু সরে যাবার খুব বেশী সময় পায়নি। চট করে পাহাড়ের গায়ে শুয়ে পড়েছিলো বলেই রক্ষা পেয়েছে। তিন চারটা মাঝারি পাথর তার শরীরে আঘাত করে। ইস! যদি বড় পাথরটা মাথায় পড়তো! আমি আর ভাবতে পারলাম না!

আমরা ছুটছি হাঁসফাঁস করে। আর কিছুদুর গেলেই আর্মি ক্যাম্প। সেখানে ডাক্তার আছে, চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আছে। তাদের গাড়িও আছে। প্রয়োজনে হয়তো তাদের সাহায্য নিয়ে ব্যবহার করা যাবে, যদি হাসপাতেলে যেতে হয়। আমি আর খারাপ কিছু ভাবতে চাইনা।

আমি মমব্রুর রক্তমাখা মায়াবী মুখের দিকে তাকালাম। আমরা দ্রুত হাঁটছি, মমব্রু একটু চোখ খুলে ইশারায় আমাকে কাছে ডাকলো। আমি তার পাশে আসতেই সে আমার আঙুলগুলোকে নিজের হাতের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবার চোখ বন্ধ করলো। বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছে। আমি কানটা তার মুখের কাছে নিয়ে শুনতে পেলাম- আত্তি আত্তি ; আব্বাজী! আব্বাজী! আমার চোখ ভিজে উঠছে।
(সমাপ্ত)

এটি একটি কাল্পনিক গল্পকাহিনী। লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

ছবিঃ সংগৃহীত

৬৮৪জন ৬৮৪জন
0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ