টি.এস. এলিয়টের লেখা একটি প্রবন্ধ হলো “ট্রেডিশন এন্ড দ্যা ইন্ডিভিজ্যুয়াল ট্যালেন্ট”।বইটিতে বলা হয়েছে একজন লেখকের কি কি গুনাবলী থাকা উচিত। অনেকেই হয়ত কষ্ট করে বইটি পড়বেন না, বা আপনাদের পড়া হয় নি। ইংরেজি বইটি যাদের পড়া হয়নি তাঁদের জন্য কিছু মূলভাব তুলে দিলাম। যারা নব্য কবি তাঁরা হয়ত এখান থেকে কিছু জ্ঞান অর্জন করে আমাদের বাংলা সাহিত্যকে প্রভাবিত করতে পারেন।
.
১.তিনি প্রথমেই দৃষ্টিপাত করেন ঐতিহ্য সম্পর্কে। ঐতিহ্য শব্দটাকে ইংরেজি সাহিত্যে সাধারনত নেতিবাচক ভাবে ব্যবহার করা হয়। তবে একজন কবিকে তার সাহিত্যের ঐতিহ্য সম্পর্কে ভাল ধারনা রাখতে হবে।
২. নব্য কবিকে পূর্ববর্তী যত কবি আছেন তাঁদের কবিতা পড়তে হবে। কিন্তু তাঁরা যা লিখে গেছেন সেটাকেই তাঁদের মত করে উপস্থাপন করলে চলবে না। বরং তাঁদের সবার কবিতা পড়ার পর নব্য কবি তাঁর নিজস্ব মেধা দিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করবেন, যা আগে কোন কবি করেন নি। যেমন: ভালবাসা এমন একটি বিষয় যা নিয়ে যুগে যুগে কবি সাহিত্যিকরা লিখে গেছেন। কিন্তু তাতে কি? এলিয়ট ভালবাসাকে প্রকাশ করেছেন সম্পূর্ণ নতুনভাবে তাঁর “দ্যা ওয়েস্ট ল্যান্ড” কবিতায়। প্রকাশ ভঙ্গিতেও রয়েছে নতুনত্ব, খন্ড খন্ড আকারে তিনি আধুনিক বহুগামী প্রেমকে এঁকেছেন।
৩. নব্য কবি পুরুনো বিষয়কেই তুলে ধরবেন কিন্তু সেটা হবে তাঁর সমসাময়িক চিন্তা ভাবনা সমৃদ্ধ। প্রেম আগেও ছিল। এখনো আছে। কিন্তু এলিয়ট দেখিয়েছেন তাঁর সময়কার প্রেমকে যা শুধু শরীরের ক্ষুধা মেটাতো, এতে মনের কোন সংযুক্তি ছিল না।
৪. আমরা একজন নতুন কবির কবিতা পড়ার আগেই তাঁকে অন্যদের থেকে পৃথক করে ফেলি। আগেই ধরে নেই তিনি কত বড় কবি! যা লিখবেন তাই ভাল হবে। কিন্তু এলিয়টের মতে এটা ঠিক না। তিনি বলেন কবিতা পড়ার পূর্বেই কবির সম্পর্কে কোন ভাল মন্দ ধারনা করা যাবে না। কার কবিতা সেটা না ভেবে আগে কবিতাটাই পড়া উচিত। তারপর সেটার ভাল মন্দ বিচার করে কবির বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে।
৫. কোন কবির ১ টা কবিতা ভাল মানেই তাঁর সব কবিতা ভাল হবে, এমন ভাবাটাই ভুল। কবিকে দিয়ে নয় বরং কবিতা কেমন তার ওপরেই কবিতার ভাল মন্দ বিচার করতে হবে। তাতে করে একেক কবির একেক কবিতা আপনার কাছে ভাল লাগবে।
৬. আপনি কবিতা লিখতে চাইলে আপনাকে আগে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে হবে। শুধু নিজের কথা নয় বরং পুরো মানবজাতির মনের কথা আপনাকে কবিতায় ফুটিয়ে তুলতে হবে। কিন্তু নিজেকে অতিক্রম করাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। সেটা করতে হলে অন্যান্য অনেক কবির কবিতা পড়তে হবে। তাহলেই আপনার ভেতরে নতুন ধারনার সঞ্চার হবে।অতপর এই নতুন ধারনাকে আপনার ভেতরের নিজস্বতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলবেন।
৭.আগের কবিদের লেখাকেই কাটছাট করে নিজের মত করে চালিয়ে দিলে কবি হওয়া যায় না। সেই কবিই সবথেকে সফল যিনি নিজের এবং নিজের সৃষ্টির মধ্যে দূরত্ব স্থাপন করতে পারেন। অর্থাৎ নিজের লেখাতে নিজের অনুভূতিকে প্রকাশ না করে বরং অন্যের অনুভূতিকে বুঝতে পেরে তা প্রকাশ করেন।
৮. কবিকে আগের যুগ সম্বন্ধে জানতে হবে এবং আগের যুগের সাথে বর্তমানে কতটুকু পার্থক্য সেই সমসাময়িকতাটা ফুটিয়ে তুলতে হবে। সেইসাথে আপনার কবিতায় নতুনত্ব থাকতে হবে। যেমন : পূর্বে অনেক কবিই সন্ধ্যার বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু এলিয়ট দেখিয়েছেন হলুদ রঙের তুষার সন্ধ্যে। মানুষের মনের অশুদ্ধতায় প্রকৃতিও নোংরা, হলদেটে হয়ে গেছে।
৯. কবিদের কল্পনাশক্তি থাকতে হবে প্রখর। যেমন : কীটস তাঁর কবিতায় নাইট্যাঙ্গেল পাখির এমন গুন বর্ণনা করেছেন,যা সত্যিকার অর্থে পাখিটির নেই। মিলটন “প্যারাডাইস লস্ট” এ দোযখের বর্ণনা দিয়েছেন,কিন্তু তিনি কখনো দোযখ দেখেন নি। পুরোনো গ্রন্থ থেকে তিনি বিষয়টা নিলেও প্রকাশ করেছেন তাঁর নিজজস্ব ভঙ্গিতে, কারও অণুকরনে নয়।
১০. এলিয়টের মতে খারাপ কবির লক্ষণ হল, তিনি সেই বিষয়টাতে বেশি জোর দেন,যেখানে দেবার কথা নয়। আর সেটাতে জোর দেন না, যেটাতে দেবার কথা।
.
সবশেষে কবিকে নিজের আমিত্বের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে সার্বজনীন হতে হবে। তাঁর লেখায় থাকতে হবে পূর্বের কবিদের থেকে ভিন্নতা এবং নতুনত্ব। নিজস্ব আবেগের উর্ধে উঠে তাঁকে ভাবতে হবে। এবং লেখার বিষয় বস্তু হবে আকর্ষণীয়।
Tradition and the Individual Talent
by…. Thomas Stearns Eliot
থেকে নেয়া সার্মর্ম।
আমার সাধ্যমত অনুবাদ করার চেষ্টা করলাম। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।
২০টি মন্তব্য
ইঞ্জা
বাহ, খুব ভালো পোষ্ট, আমার কাজে লাগবে এই লেখাটা। 😀
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ। -{@
ইঞ্জা
-{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
যুগান্তকারী পোষ্ট অনুবাদটা যেহেতু আপনিই করেছেন।বুঝতে পারলাম কবি বা লেখক হওয়া কত কঠিন।পরীক্ষার মাঝেও আপনি সোনেলায় ।শুভ কামনা বোন। -{@
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন। অনেক কঠিন কাজ এটি।
শুভকামনা।
নীহারিকা
ভাগ্যিস কবিতা বুঝি না, তাই কবি হবার চান্সও নেই। এত কিছু মনেও রাখতে পারতাম না।
নীরা সাদীয়া
শুভকামনা। (3
জিসান শা ইকরাম
এত কিছু গ্রহন করে কবি হতে হবে!
আমাকে দিয়ে কবিতা হবেনা একারনেই,
নিজকে ছাড়িয়ে যাওয়া খুবই কঠিন, খুব কম মানুষই এটা পারেন।
যারা কবিতা লিখবেন এবং লেখেন তাদের জন্য এই লেখাটি খুবই মূল্যবান।
নীরা সাদীয়া
সত্যি খুব কঠিন। শুভকামনা রইল।
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর একটি পোষ্ট কবিদের জন্য খুব প্রয়োজন। আমার ভাল লেগেছে প্রিয়তে নিলাম।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ। -{@
মিষ্টি জিন
বাববাহ, বাচলাম :D)
কবিতা লিখতে এত নিয়ম? আমি কবিতা লিখতেও পারিনা তাই এসব মানামানির ধারেকাছেও নাই।
কবিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। 😀
নীরা সাদীয়া
^:^ কবিরা তো মাথার চুল ছিঁড়বে। হাহাহা:
শুভকামনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
চমৎকার একটি পোষ্ট!
কবিতা লিখতে গেলে এতোকিছু জানতে হবে! 😮 ^:^ ;(
নীরা সাদীয়া
;? জানতে হবে বৈকি! হাহাহা
শুভকামনা। -{@
মৌনতা রিতু
এতো নিয়ম মেনে কবিতা লিখতে হয়! ভাগ্যভালো কবিতা লিখি না। একান্ত অনুভূতি বলেই চালিয়ে দেই।
ভাল পোষ্ট। কবিরা এবার চুল ছিড়ুক।
নীরা সাদীয়া
^:^ তাতো ছিঁড়বেই। কবিতা লেখা কি এতই সহজ?
😀 শুভকামনা -{@
আবু খায়ের আনিছ
ফেইজবুকের লেখা হুবহু কপি করলেও কিছু বিষয় খেয়াল করা উচিৎ, যেমন এখানে কেউ কারো লিষ্টে থাকে না, সবাই নিজের আইডিতে স্বতন্ত্র।
কেউ বইটি পড়বে কিনা সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়, এখানে মন্তব্য করার রাইট কারো নেই, সর্বোচ্চ বলা যেতে পারে বইটি পড়ে দেখতে পারেন।
আরেকটা বিষয় উল্লেখ করেছেন, ইংরেজী, অনেক পাঠক আছে যারা ইংরেজী বই পড়ে।
বুক রিভিউ দিয়েছেন এটা ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।
শুন্য শুন্যালয়
একবার দুই কবির কবিতা ব্যাকরণ নিয়ে কথাবার্তা শুনে সেদিনই পণ করেছি, এর থেকে মাউন্ট এভারেস্ট যাওয়া ভালো, তবুও কবিতা? কাভি নেহি।
ভালো লাগলো যদিও কবিদের কথাগুলো জেনে। যারা লেখালেখি করতে চায় সেটা কবিতা, গল্প, উপন্যাস বা যেই বিষয়ই হোক না কেন, সেই বিষয়টা সম্পর্কে অবশ্যই জ্ঞান এবং ধারনা থাকা উচিৎ কিন্তু এতো সময় কই বলো?
ভালো পোস্ট।
নীরা সাদীয়া
^:^ হাহাহা, সেরকমই অবস্থা!
শুভকামনা রইল।