ইটালিতে অনেকবার আসা যাওয়া হয়েছে আমার, কখনো দুর্ভোগে পড়িনি, কিন্তু ২০০০ সালের ভ্রমন আমার আজীবন মনে থাকবে, আমার ট্রাভেল এজেন্টের অবহেলার কারণেই দুর্ভোগটা কপালে জুটল।
আমি ইতালি যাবো কাজে, কাজ মানে পিয়াজিও ভেসপার পার্টসের অর্ডার দেওয়া হয়েছে, বেশ বড় কন্সাইনমেন্ট, সাপ্লাইয়ার ব্যাটা ধরে বসলো, আমাকে সে দেখবে, যে এতো বড় কন্সাইনমেন্টের অর্ডার দেয় বারবার, তাকে দেখার ইচ্ছে হয়েছে, দিলো ইনভিটেশন পাঠিয়ে, ওর সম্মানেই ইতালির মিলান যাবো, আমার ইমিডিয়েট ভাইটা ধরে বসলো, সেও যাবে।
দুজনের জন্য কাগজপত্র রেডি করে ঢাকাস্থ ইটালিয়ান এম্বেসিতে চলে গেলাম, বিজনেস ভিসার লাইন না থাকায় প্রবেশ করতে সময় লাগলো না, সব কাগজপত্র দেখে ভিসা অফিসার বেঁকে বসলো, সে আমাকে ভিসা দেবে কিন্তু ভাইকে না।
আমি বললাম, ও আমার বিজনেস চালায়, ওর যেতেই হবে।
অফিসার বলে, তুমি যাও, তুমি গেলে চলবে।
আমিও নাছোড়বান্দা, রাগ করে চলে আসলাম ভিসা না নিয়ে, চট্টগ্রাম ফিরে গিয়ে রেগেমেগে কল দিলাম সাপ্লাইয়ারকে, খুলে বললাম সব।
সে এক ঘণ্টা পর কল দিলো, বললো ভাইকে নিয়ে এক সপ্তাহ পর যেতে এম্বেসিতে, সে কথা বলেছে ওদের সাথে।
গেলাম আবার এম্বেসিতে এক সপ্তাহ পর, ভিসা অফিসার আবার ইটালিতে কল দিলো, কনফার্ম হলো, এরপর দিলো ভিসা দুজনকেই।
টিকেট কাটলাম কেএলএমের, ঢাকা থেকে থাইল্যান্ড সাত ঘন্টা পর কেএলএমের ইটালির মিলান ফ্লাইট, ফ্লাইটটি মাঝে এমস্টারডাম আমাদের নামিয়ে দেবে, সেখান থেকে অন্য ফ্লাইটে মিলান যাবে।
ভাবলাম সেঞ্জেন ভিসা আছে, সুযোগে না হয় একটু ঘুরলাম এমস্টারডাম, আসার পথে দিল্লি স্টে হবে প্রায় চৌদ্দ ঘন্টা, ট্রাভেল এজেন্সিকে বললাম, এতো ঘন্টা স্টে, তাহলে কি হোটেল দেবে এয়ারলাইন্স?
হাঁ হাঁ অবশ্যই দেবে, ট্রাভেল এজেন্ট ব্যাটা সোজা মিথ্যা বলে দিলো।
কয়েকদিন পর চেপে বসলাম থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে দুই ভাই, থাইল্যান্ড ল্যান্ড করার পর এয়ারপোর্টে দুজনে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে ক্ষিদে লাগলে দুজনে একটা রেস্টুরেন্ট বাছাই করে খেয়ে নিলাম হাল্কা কিছু খাবার এরপর আবার ঘুরাঘুরি, আমাদের এমস্টারডাম ফ্লাইটের সময় হয়ে গেলে, চেকিং সেরে আবার ফ্লাইটে চড়ে বসলাম, লম্বা জার্নি তাই ফ্লাইটে বিশেষ খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা আছে, ফ্লাইট উড়াল দেওয়ার কিছুক্ষণ পরে সুন্দরী এয়ার হোস্ট এসে সুরেলা সুরে জিজ্ঞেস করলো, স্যার আপনারা কি কিছু পান করিবেন, একটা করে কার্ড ধরিয়ে দিলো, যেখানে বিভিন্ন ড্রিংকের বর্ণনা দেওয়া আছে, আমি বললাম, আমাকে স্ক্রু ডাইভার দাও (ভদকা সাথে অরেঞ্জ জুস), এয়ার হোষ্ট মেয়েটা আমার পাশে বসা ভাইকে জিজ্ঞেস করলে, ভাই আমার লজ্জায় মাথা নত, বড় ভাইয়ের সামনে ড্রিংক্স?
আমি বললাম, তুই যাচ্ছিস বিদেশে, যেখানে পানির দাম ড্রিংক্সের চাইতে বেশি, বাকিটা তোর ইচ্ছে।
লজ্জা ভেঙ্গে ভাই নিলো চিলড বিয়ার।
ঘন্টা খানেক পরে সেই ললনা এলেন (এয়ার হোস্ট), এসেই আবার কার্ড দিয়ে গেলেন, খাবারের মেনু, তা দেখে দুজনে দুই পদের খাবারের অর্ডার দিয়ে দিলাম, আমি নিলাম বিফ আর ভাই নিলো ফিস।
সুন্দরী ললনা এইবার জিজ্ঞেস করলো, স্যার সাথে কোনো পানিয় চলবে।
আমি বললাম আমাকে লাল আর ওকে সাদা ওয়াইন দাও আর তাতেই ললনার চোখ কথা বললো, যেন বলছে “ব্যাটা পার মাতাল মনে হয়”?
আমিও চোখ দিয়ে বুঝাতে না পেরে মনের সাথে সংযোগ ঘটাতে চাইলাম, মনে মনে বললাম, হে ললনা, তুমি যদি আমার মতো বছরে তিনবার, চারবার বিদেশ সফর করতে, ইটালিতে দীর্ঘ দুই বছর থাকতে, তাহলে নিশ্চয় তোমার চোখের ঐ প্রশ্ন রেখে যেতেনা।
রাতের ডিনার সার্ভ হলো, প্লেইন ভর্তি বেশিরভাগ বাংলাদেশি, কিছু আছে থাইল্যান্ড সহ অন্যান্য দেশের মানুষ, সবাই খেতে ব্যস্ত আর এয়ার হোস্টরা ব্যস্ত সবার সেবায়।
খাওয়া দাওয়া শেষে এলো চা কফি, আমরা দুজনেই কফি খেয়ে টয়লেটে গিয়ে হাল্কা হয়ে আসলাম, সেইবার প্রথম ধুয়া টানা নিষিদ্ধ করা হয়েছে প্রথম, আমি উশখুশ করছি, কিন্তু উপায় নেই গোলাম হোসেন বলে নিজেকে নিবৃত্ত করলাম, দিলাম দুজনেই ঘুম।
সুন্দরী ললনাদের বিচরণে ঘুম ভাঙ্গলো, উনারা জানালার শেড হাল্কা তুলে দিতে বলছে সবাইকে, সবাই ব্রাশ নিয়ে (ফ্লাইটেই দেওয়া ছিলো) দৌড়াচ্ছে টয়লেটের উদ্দেশ্যে, সুযোগ বুঝে আমিও গেলাম, ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখি ছোট ভাই দাঁড়িয়ে আছে, তাকে প্রবেশ করতে দিয়ে আমি সিটে ফিরলাম, বাইরে সূর্য আলো ছড়াচ্ছে বাইরে, এয়ার হোস্ট আবার কার্ড দিয়ে গেলো ব্রেকফাস্ট মেনু, ইতিমধ্যে ভাই এসে গেছে, দুজনে চয়েজ করে ব্রেকফাস্ট অর্ডার দিলাম, সার্ভ করার পর পেট পুরে খেলাম।
চলবে…….
১৯টি মন্তব্য
নীহারিকা
এ দেখি শশুড়বাড়ির খাওন। খাইতেই আছেন, খাইতেই আছেন। যাক, শুরু হলো তাহলে। 🙂
ইঞ্জা
দাদী, দূরের পথে ভ্রমন মানেই খাওয়া দাওয়া, এই দূরের পথেই মজা বেশি (যারা আমার মতো পেটুক টাইপেদের জন্য)।
হাঁ দাদী, শুরু করিলাম। 😀
মিষ্টি জিন
এক্কেবারে টয়লেটের কথাও লিখছেন , যাক ভ্রমন কাহিনিতো কিছুই বাদ দেয়া যাবে না। :D)
ঢাকা টু থাইল্যান্ড সাতঘন্টা ? ঠিক বুঝলাম না।
আচ্ছা চলুক রোম যাত্রা।
ইঞ্জা
পার্টনার আবার ভালো করে পড়ে দেখুন, আমি বলেছি ঢাকা টু থাইল্যান্ড, সাত ঘন্টা পর কেএলএমের ফ্লাইট, মানে হলো থাইল্যান্ড এয়ারপোর্টে ৭ ঘন্টার বিরতি। :p
ছাইরাছ হেলাল
.অবশেষে আমরা ভ্রমণ কাহিনী পেলাম, যার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।
হেভি খাওয়া দাওয়া, আসলে ভ্রমণে এটি একটি আনন্দের অংশ,
ইটালির অপেক্ষায় থাকলাম। সাথে দুর্ভোগ,
ইঞ্জা
ভাইজান, দীর্ঘ ফ্লাইটে কিন্তু এই খাওয়া দাওয়াই চলে, মানুষকে না খাওয়ালে তো বিরক্ত হয়ে যাবে, আর এইসব ফ্লাইটের খাবার গুলো, অন্যান্য ছোট ফ্লাইটের জার্নি থেকে উন্নত হয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া জার্নি উইথ খাওয়া-দাওয়া এবং পান করার শুরুটা বেশ। আচ্ছা স্ক্রু ড্রাইভারের পরে পঁচা আঙ্গুরের রস খাইয়া আউলাইয়া যান নাই? আগে তো পঁচা আঙ্গুর, তারপরে না স্ক্রু ড্রাইভার।
যাক দুর্ভোগ কতোটা হয় দেখে নেই। তাড়াতাড়ি দেবেন কিন্তু। 🙂
ইঞ্জা
আপু সাধারণত যে কোন দীর্ঘ ফ্লাইটে খাবারের সাথে ওয়াইন দেওয়া হয় যার এলকোহলের মাত্রা এমন হয়না যে আউলাইয়া যাবো, আরেকটি কথা বলি আপু, আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য ভেসপা কোম্পানি থেকে ডিলার হিসাবে স্কলারশিপ পেয়েছিলাম, যার দরুন আমি দুই বছর ইটালিতে ছিলাম, এছাড়া জীবনে অনেক দেশ ঘুরেছি, দেশে পান না করলেও ব্যবসার খাতিরে আমি অনেক ড্রিংক করেছি, কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমি দেসগে ড্রিংক করিনা।
ইঞ্জা
দেশে★
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া পার্টিতে আমি ড্রিঙ্ক করি। ভালো লাগে। তবে একা বাসায় করিনা। আমার প্রিয় হলো ভদকা। ওয়াইন খেলে এসিড হয়, তাই শতহস্ত দূরে থাকি।
আমার একজন বন্ধু ও বার-এ কাজ করতো। ওর কাছেই শুনেছি ৫-১৫%-এর পর যতো ইচ্ছে হাই %-এ যাওয়া যায়। কিন্তু একেবারে উপর থেকে ৫/১০-এ আসা যায়না। তাতে হ্যাংওভার হয়। 😀
ইঞ্জা
ঠিক আপু, নিজের লিমিটে চলাটাই বেটার, না হয় হ্যাংওভার হলেই বিপদ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বিদেশ ভ্রমণ অজানাকে যায় জানা লিখতে থাকুন আমরা জানতে থাকি -{@
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, পাশে থাকবেন।
শুন্য শুন্যালয়
দুর্ভোগ কই এই পর্বে তো ভোগই ভোগ 🙂
ভ্রমণ কাহিনী আমার অনেক পছন্দের বিষয়। ব্লগে ভ্রমণ কাহিনীর নেশা লেগেছে সবার, খুবই খুশি হয়েছি। দেখি আর কী কী ড্রিংক্স আসে এরপর :p
ইঞ্জা
আপু দুর্ভোগ তো দেরি আছে, খাওয়া দাওয়ার পালা তো দীর্ঘ পথের ফ্লাইটে থাকেই যা আপনি ভালো করেই জানেন।
ধন্যবাদ আপু, পাশে থাকবেন। 🙂
মৌনতা রিতু
স্ক্রু ড্রাইভার ড্রিংক এর নাম!
সুন্দরি ললনা তো দেখছি খুবই খেয়াল রাখছিল ভাইজু।
পাসপোর্ট অফিসে এমন ভোগান্তি সবাইকেই পেতে হয়। ফোনের গুতানি ছাড়া কোথাও মনে হয় কাজই হয় না।
চলুক,
ইঞ্জা
আপু ভিসা অফিসের ভোগান্তি তো জানা আছে সবার কিন্তু আসল ভোগান্তিটা জানবেন সব শেষে।
জিসান শা ইকরাম
খাওয়া দাওয়া, ড্রিংক্স পর্ব পড়লাম 🙂
দুর্ভোগ কখন আরম্ভ হবে ভাই ?
একটি ছোট পরামর্শঃ
শিরোনামের সাথে ইতালি ভ্রমণ জুড়ে দিলে ভাল হয়,
গুগল সার্চে দেশ ভ্রমন একটি জনপ্রিয় সার্চ। প্রচুর মানুষ ভ্রমন কাহিনী পড়ে।
‘ ভ্রমনে দুর্ভোগঃ ইতালি ভ্রমন- ১ ‘ এমন শিরোনাম দেয়া যায়।
ইঞ্জা
ভাইজান দুর্ভোগটা হয় আসার পথে, তাই একটু অপেক্ষা করতে হবে, আর আপনার পরামর্শ মেনে নিয়ে শিরোনাম ঠিক করে দিলাম।