মেয়েটাকে চিনতাম অনেকদিন যাবত। শ্যামলামতন মিষ্টি দেখতে একটা মেয়ে,নাম নিশী।আমার সহপাঠী ছিল। খুব ঘুরে বেড়াতে ভালবাসত মেয়েটি,কিংবা বলা চলে বাস্তবতা থেকে বোধহয় পালিয়ে বেড়াত।কেননা তার পরিবারে কোন সুখ,শান্তি ছিল না। নিশীর বাবা অনেক নামকরা ব্যাবসায়ী,মা গৃহিণী। এক এক করে তার ভাইবোনের সংখ্যা নয়েতে গিয়ে থামল।সবাই আঁড়চোখে তাকাতো ওদের পরিবারের দিকে,কেননা আজকালকার যুগে কারো এত বেশি ছেলে মেয়ে থাকে না। শুধু কি তাই? তার মা ছিলেন প্রতিবন্ধী, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, যদিও সাধারনভাবে দেখে তা বোঝা যেত না। খুব সুন্দর, লম্বা, ফর্সা একজন মহিলা, যাকে অল্প সময় দেখে নিছক সুন্দরী ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। যাই হোক, মা অসুস্থ থাকলে একটি পরিবারের যা হাল হয় আরকি। আটটি মেয়ে ও একটি ছেলের মাঝে নিশিই বড়। তার কাঁধেই থাকত ছোট ভাইবোনগুলোকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব। সংসারে রোজ মায়ের সাথে বাবার, ভাইয়ের সাথে বোনের, বোনের সাথে বোনের ঝামেলা অশান্তি লেগেই থাকত। মায়ের আদর কোনদিনও পায়নি তারা,যেহেতু তাদের মা বোঝেনই না স্বামী কি,সন্তান কি! রান্না বান্না থেকে বেড়ে ওঠা সবই হত ছোটা বুয়ার হাতে। এসব থেকে পালিয়ে বাঁচতেই নিশী সর্বদা বাহিরে বাহিরে ঘুরে বেড়ায়। এলাকায় তার নামে টিটকারী কেটে অনেকেই বলতো, “পাড়া বেড়ানী মেয়ে”। এভাবেই বেড়ে উঠছিল নিশীথ অাঁধারের বুকে এক শ্যামল কণ্যা নিশী।……
নিশী যত বড় হয়, তার সাথে সাথে বেড়ে ওঠে একটি দেহ। শিশু থেকে শরীর হয়ে উঠতে লাগল সে নিজের অজান্তেই। এসব দিকে এই বয়সে খেয়াল রাখার কথা তার নয়, তার মায়ের। কিন্তু যার মা নিজের খেয়ালই রাখতে পারেন না,তিনি মেয়ের কি খেয়াল রাখবেন,কি করে কাক শকুনের গল্প বলবেন তার কণ্যাশিশুকে? তাই অযতনে বেখেয়ালে বেড়ে উঠতে থাকে মেয়েটি।চারপাশে কতজনের কত গুঞ্জন তাকে নিয়ে,অথচ একটু ভাল পরামর্শ দেবার মত কেউ নেই। এতসব নিত্য অপ্রয়োজনীয় অশান্তি নিয়ে যখন দিনাতিপাত করতে লাগল মেয়েটি, এমন সময় কোথা থেকে যেন উড়ে এল এক রোমিও,বলল, “ভালবাসি” তখন নিশীকে আর পায় কে? মা,বাবা, ছোট ছোট ভাইবোনকে যে ভালবাসে,কিন্তু তাকে কেউ জড়িয়ে ধরে না,পরম মমতায় আগলে রাখে না কপালে চুমু খেয়ে বলে না “আমার লক্ষী মেয়ে,আমার মা”…… সেই মেয়েটিকে নাকি কেউ ভালবাসে! এত যেন উত্তপ্ত মরুর বুকে এক ফোঁটা শিশির! কে আসল কে নকল বোঝার বয়স হয়নি তার, সে শুধু জানে সেও একটু ভালবাসা চায়,চায় একটু দরদভরা গলার স্বর। কতইবা আর বয়স, তের কি চৌদ্দ, এটুকু মেয়ে আর কিইবা বোঝে?
টনির মুখে এ কথা শুনে সেদিন আর চুপ থাকতে পারেনি নিশী। পাড়ার বখাটে টনির প্রেমে হাবুডুবু খেতে লাগল যেন। বাবা সারাদিন অফিস করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন।তাই সে কি করল,কোথায় গেল না গেল সেসব দেখার মত আর কেউ রইল না। এ সুযোগে রোজ চলে টনির সাথে গ্যারেজের ভেতর আড্ডা। একটু ধরা,একটু ছোঁয়া, টনির লালসা,নিশীর অজ্ঞতা…..এরই নাম ভালবাসা! এভাবেই দিন চলতে লাগল। কিছুদির পর তাদের আটতলা ফ্ল্যাটের চারতলার ভাড়াটিয়া সাজুও বলে দিল “লাভ ইউ জান!” একজনের ভালবাসাতেই টইটম্বুর অবস্হা, এর মাঝে আরেকজন! মন্দ হয় না ব্যপারটা! সাজুও সাড়া পেল। ধীরে ধীরে টনির লালসার শিকাড় গিয়ে ধরা দিল সাজুর খাঁচায়। টনি কি তা সহজে মেনে নেবে? তাই রোজ শুরু হল স্কুলে যাওয়া আসার পথে নানা হুমকি ধামকি!কিছুদিন যায়, আবার নিশীর দরজায় টোকা দেয় নতুন একজোড়া কামুক চোখ। এমন করে চলতে থাকে দিন,জোড়ায় জোড়ায় বাড়তে থাকে চোখের সংখ্যা। তাদের ভালবাসায় ভরপুর নব্য কিশোরীর রঙিন দুনিয়া। এটা সেটা উপহার আসতে থাকে, বাবার টাকায় বাড়তে থাকে বিলাসিতা আর সাজসজ্জা।
ছাত্রী হিসেবে নিশী বরাবরই ছিল মেধাবী।কিন্তু এত অঢেল পয়সা,বিলাসিতা আর এত পুরুষের আসা যাওয়া কিছুতেই তার মনটাকে স্থির থাকতে দেয়না। তাকে ঘিরে ধরে নানা অস্থিরতা, পরিবারে জট পাকায় কত অসহ্য যন্ত্রণা। তবু নিশী বেঁচে থাকে বাবার আদরে আর প্রেমিকদের ভালবাসায়।
একবার এক মে মাসের কথা। আমরা তখন সবে নবম শ্রেনিতে উঠেছি। ইংরেজি,অংক সহ বিজ্ঞানের সকল বিষয়ই আমাদের কাছে খুব শক্ত লাগছিল। তাই আমরা ইংরেজি পড়তে গেলাম বদরুল আলম স্যারের কাছে,তিনি একজন অধ্যাপক,তবে নবম শ্রেনির ছাত্র-ছাত্রী ও পড়ান। তিনি বয়সে যুবক,সদ্য একটি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেছেন। আমরা চারজন পড়তে যাই যার মাঝে নিশীও ছিল।
চলবে…..
নীরা সাদীয়া
৮.০৪.১৭
২০টি মন্তব্য
ইঞ্জা
খুব খুশি হয়েছি আপু। :c
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার কথাটা রাখলাম।তাই ব্লগেও গল্পটা দিলাম। যদিও ব্লগে আসার মত এখন আর সময় পাচ্ছি না। তবে ব্লগটাকে মিস করি।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, আমি গর্ভিত আপনি এই ব্লগে লেখেন আর এই ব্লগই আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ ভাইয়া, আমাকে এ ব্লগের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। -{@
নীহারিকা
দেখা যাক কি হয়।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ দিদি। আশা করি সাথেই থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
নিশীর কপালে যে দুঃখ আছে তা বেশ বুঝতে পারছি।
এত সন্তান আজকালকার দিনে কল্পনাও করা যায় না,
কিশোর বয়সে সঠিক পরিচর্যার অভাবে নিশী এমন হয়ে যাচ্ছে।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
গল্প লেখায় তোমার হাত বেশ পাকা।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ দাদা। ভাল বলেছেন। আশা করছি পরবর্তীতে আপনাকে পাশেই পাবো। -{@
আবু খায়ের আনিছ
সাধারণত কোন লেখা আগে ফেইজবুকে প্রকাশ হলে সেই গল্প ব্লগে আগ্রহ ধরে রাখতে পারে না, আর পাঠক প্রিয়তাও পায় না। আপনার কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ বেশি সেটা আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে, তবে আমি সবাইকে আগে ব্লগে প্রকাশ করতে উৎসাহিত করি এবং আমার মনে হয় ব্লগও সেটা করবে।
আপনার এই গল্পটা আমি পড়েছি আগেই। ধন্যবাদ
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ আপনাকে। গল্পটা আমি মূলত ফেইসবুকেই লিখেছিলাম। ইঞ্জাভাইয়ের অনুরোধে ব্লগেও দিলাম।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার কথাটা রাখলাম।তাই ব্লগেও গল্পটা দিলাম। যদিও ব্লগে আসার মত এখন আর সময় পাচ্ছি না। তবে ব্লগটাকে মিস করি।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
যাই লিখেন এ ব্লগটাকেও সঙ্গে রাইখেন।ফেবুকে লিখে কপি করে ব্লগে দিবেন এ আর এমন কঠিন কি।গল্পের শুরুটা ভাল লাগল।চলুক -{@
নীরা সাদীয়া
তা ঠিক বলেছেন। কিন্তু বাস্তব জীবনটা এত জটিল আর কঠিন যে অনেক সময় তার সাথে সমন্বয় করে ব্লগে আসা হয়ে ওঠেনা। তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুখিত। শুভকামনা।
শুন্য শুন্যালয়
আমি লেখাটা দেখেছি ফেসবুকে তবে পড়ার সময় করতে পারিনি। সত্যি বলতে ফেসবুকে বড় লেখা পড়ার ধৈর্য হয়না আমার। তবে ব্লগের সব লেখা মন দিয়ে পড়ি। তোমার যেখানে মন চাইবে সেখানেই দেবে লেখা, সমস্যা দেখিনা। ফেসবুকে পড়ে কতোজন এটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। এতো সুন্দর লেখা, কতো ভাবনা, প্লট সাজানো, সেটা সবাই পড়ুক তাই ই চাই।
এই পর্বে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মনে হয়েছে মেয়েটির বাবাকে, যে কিনা সব জেনেও এতোগুলো ছেলেমেয়ের জন্ম দিয়েছে অথচ তাদের মানুষ করবার চেষ্টাও করেন নি।
অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের।
নীরা সাদীয়া
আসলে ব্লগে টাইপ করতে গেলে একটু প্রবলেম হয়। ফেইসবুকে টাইপ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তবে সেখানে পুরোটা ধৈর্য্য নিয়ে পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করার মত পাঠকের অভাব তাও সত্যি। কিন্তু বাস্তব জীনটা এত ব্যাস্ততায় কাটে যে ব্লগে এসে আলাদাভাবে সবার লেখা পড়া ও কমেন্ট করা, নিজের লেখা পোস্ট করা ইত্যাদির সময় হয়ে ওঠে না। তার জন্য আমি দুখিত।
নিশীর বাবারও এতগুলো সন্তানের জন্মদান করার আগে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। তবে ঐ যে, কোন মানুষই ভুলের উর্ধে নয়। তাই হয়েছে।
ধন্যবাদ আপি।
নীলাঞ্জনা নীলা
বেশ একটা গল্প শুরু করেছেন। ফেসবুকে দেখেছি, কিন্তু পড়া হয়নি।
নিশীর জন্য বেশি কষ্ট লাগছে আমার। ও বুঝতে পারছে না, যে ওকে সবাই ব্যবহার করছে।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু।
নীরা সাদীয়া
আপি, আপনি আমার অনেক বড় হবেন। আমাকে আপনি বলবেন না, তুমি কিংবা তুই করে বলবেন।
হ্যাঁ, নিশী বুঝতে পারছে না যে, এটা ভালবাসা নয়। তাকে অন্যেরা ব্যবহার করছে। যাই হোক, পরবর্তীতে কি হয় দেখাই যাক।
শুভকামনা রইল। (3
নীলাঞ্জনা নীলা
ঠিক আছে নীরা, তুমি করেই বলবো তোমাকে।
অনেক ভালো থেকো।
মৌনতা রিতু
চমৎকার এক গল্প শুরু করেছো। সত্যিই বাস্তব এই চিত্রগুলো। ওই উঠতি বয়সটা আসলেও ভয়ংকর।
এরা এসবকে ভালবাসা মনে করে যা একদম এক মোহো ছাড়া কিছুই না।
ধরা খায় এসব মেয়েরা অহরহ। আমি এই চিত্রগুলো খুব কাছ থেকে উপলব্দী করি। পরে যখন গ্যারেজ ঘরের ওই আড্ডাগুলো বাবার চোখের সামনে প্রেমিক ছেলেটখ তুলে ধরে, বাবা তখন গগন ফাটানো চিৎকার করে।
ভাল লিখছো সোনা। শুভকামনা রইলো। -{@
নীরা সাদীয়া
অনেক ধন্যবাদ আপি। খুব ভাল থাকবেন। শুভ সকাল।