ক্ষুদে ভাঙ্গারি ব্যাবসায়ীর নিকট হতে ভাঙ্গরি মাল ক্রয় করেন ঢাকা ইসলামপুরের এক ব্যাবসায়ী মবিন চৌধুরী।তার ধন সম্পদের কোন অভাব নেই।বাপ দাদাদের সম্পতি ছাড়াও নিজে ভাঙ্গারি ব্যাবসা করে ঢাকা শহরে গড়ে তুলেছেন।বিশাল বিশাল বেশ কয়েকটি ফ্লাট বাড়ী ।নিজে থাকার জন্য তৈরী করেছেন এক অপূর্ব নজর কাড়া দু’তলা বাড়ী।প্রত্যহ রুটিন মাফিক আজও সে ব্যাবসার খোজেঁ এখানে এসে প্রথমেই নীচে পড়ে থাকা সুন্দর সেই ডায়রীটি তার চোখেঁ পড়ে।ভাঙ্গারি প্রথম ব্যাবসায়ী সাহেবকে দেখে সালাম দিয়ে চেয়ারটি এগিয়ে দিলেন বসার জন্য।
-না না আমি বসব না একটু তাড়া আছে….ব্যাবসার কি অবস্থা বলেন।
-এই তো চলছে…মাল দু একদিন পর ডেলিভারী দিবো।এবার অনেক মাল হবে।
মবিন চৌধুরী ডায়রীটি হাতে নিয়ে প্রথম পেইজটি খুললেন।চমৎকার হাতের লেখাগুলো।গোল গোল অক্ষরে যেন পাকা হাতের লেখা যে কাউকে আকৃষ্ট করবে লেখাগুলো পড়তে তা থেকে সেও বাদ যাননি লেখার উপর চোখ বুলিয়ে পড়লেন প্রথম কয়েকটি লাইন।
-বাহ্ চমৎকার!…“জীবনকে জীবনের মতো চলতে দিলে জীবনের সরল রেখাগুলো মাঝে মাঝে বক্রাকার ভাবে প্রবাহিত হয় তাতে জীবনের কিছু সূখের ঘরে আগুন লাগে,তা না করে জীবনের চলায় এ্যাক্টিভ থাকতে হয় যাতে সরল গরলের দিকে নজর দিতে না পারে”
––কিছু কিছু মুহুর্ত জীবন চলার বাকী পথ দেখিয়ে দেয়”।
চমৎকার সব বাক্যগুলো।কার ডায়রী এটি?
-জানি না,ঐ এক জন দিয়ে মালের সাথে দিয়ে গেল।
-তাহলে এটা আমি নিতে পারি?
-সমস্যা নেই…নিয়ে যান।
মঈনুলের আজ জনম দিন তবে তার এ জন্ম দিনের কথা আজকাল কার যুগের মতো আনুষ্ঠিক ভাবে পালন করেন না কেননা তার এ জন্ম দিনটি ছিল তার স্কুলের হেড মাষ্টার আজিজুর রহমান স্যারের দেয়া।এস এস সি পরীক্ষায় ফরম ফিলাপের সময় সম্ভবতঃ আরো অনেকের জীবনে ঘটেছে এমন ঘটনার ইতিহাস। সেই সময় মাষ্টার মঁহাশয়রা সাধারনতঃ সরকারি চাকুরীর মেয়াদের কথা চিন্তা করে দু এক বছর কমিয়ে দেন অথচ সে সময় যতই যোগ্যতা থাক সরকারী চাকুরী পাওয়া ছিল সোনার হরিণ পাওয়ার মতো।
এমন একটি শুভ দিনে তাকে ডায়রীটি খোজাঁর জন্য আবারও যাওয়া দরকার সেখানে।মন স্থির মত নিজেকে প্রস্তত করে চলে এলেন সেই বর্ষাদের এলাকায়।লোক মুখে খবর নিতে নিতে সে বর্ষাদের বাড়ীতেই চলে এলেন।এলেনতো আবার তাদের দরজায় কড়া নাড়া শুরু করলেন।দু তিন বার কড়া নাড়ার পর দরজা খুললেন বর্ষা নিজেই…বর্ষাকে এবার নতুন করে দেখছেন মঈনুল।বেশ কয় দিনে ‘ও আরো ফর্সা একটু মোটাও হয়েছে।বেশ মানিয়েছে তাকে আজ, সে আকাশীঁ পাইড়ের নীল শাড়ীতে যেনো নীল নয়না লজ্জাবতী।
-কি ব্যাপার এ ভাবে চেয়ে আছেন কেনো?…আমিই বর্ষা।
-না মানে,তোমার অনেক উন্নতি হয়েছেতো..।
কিছুটা মুচকি হাসিতেই সারলেন ধন্যবাদের কাজটি।
-তা জনাব বাহিরে দাড়িয়ে কথা বলবেন নাকি ভিতরে আসবেন।
-তুমি বললে আসব।
-আমিতো ডাকিনি তবে এলেন কেনো?
এ প্রশ্নের কোন উত্তর বলতে নেই তাহলে নিজেকে তাচ্ছিল্য করছি রেগে যাবে বর্ষা, ডায়রীর খোজঁ পেতে তার চেয়ে ভাল তার সাথে ভাব জমানো।ভিতরে প্রবেশ করে সোফায় বসলেন তারা।
-এই আর কি,…তুমি কেমন আছো দেখতে এলাম।
-তাই…
-তোমাদের কাজের বোয়াকে একটু ডাক দিবে।
-বুঝছি,আমি আপনাকে দেখেই বুঝেছি ডায়রীর খোজেঁ এসেছেন।বুয়া এই বুয়া…..।অপর প্রান্ত হতে ভেসে এলো শব্দ আসছি….।আমার মনে হয় ডায়রীটি এ এলাকার আশে পাশে কোন ভাঙ্গারি দোকানেই আছে।এর মধ্যে বুয়া এলেন।ভেজাঁ হাত পড়নের কাপড়ে মুছতে মুছতে বললেন।
-কি আফা আমারে ডাকছেন?
-হ্যা তুমি জানো তোমার ছেলে ডায়রীটি দিয়ে,সত্যিই গাট্টা খেয়েছে?।
-হায়!হায়! আফা কন কি!আমার পোলার ডায়রিয়া অলো কহন?
-এই হয়েছে তোকে নিয়ে জ্বালা বলি এক উত্তর দিলি আরেক…..তোমার ছেলে এখন কোথায়?
-জি আফা, বাড়ীতে।
-এখন তুমি এ সাহেবকে নিয়ে তোমার ছেলের সাথে দেখা করিয়ে দিবে।ঠিক আছে।
-আচ্ছা আফা।
ইঁশারায় বাই বাই খোদা হাফেজ আবার হবে দেখা।হাটছেন অপেক্ষাকৃত নিন্মাঞ্চল দিয়ে যেখানে বুয়াদের মতো মানুষদের বসবাস।নোংরা দুগন্ধময় এলাকা।ঘর গুলো কেমন ছোট ছোট যেন এক বস্তিতে এসে ঢুকেছেন মঈনুল।বুয়ার ঘরের নিকট গিয়ে তাকে ঘরের ভিতরে ঢুকতে না বলে ভিতর থেকে চেয়ার টেনে এনে তাকে বাহিরে একটি সরু যাতায়াতের পথেই বসতে দিলেন তৎক্ষনাত সে ছেলেকে ডেকে কাছে আনলেন।
-এই যে এইডাই আমার একখান পুলা।
ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে ওর পড়নের নেংটিতে গুজে দিলেন পঞ্চাশ টাকার একটি নোট।ছেলে তা দেখে বেজায় খুশি।তার চঞ্চল মনে প্রশ্ন আসে।
-তুমি কি আমাগো মেহমান?
-হ্যা,তুমি খুশি।
-হ অনেক খুশি…তয় কিছু খাইতে দিতে পারুম না..আমরাতো অনেক গরীব তাই।
-আরে বোকা ধনী গরিব কারো কপালে লেখা থাকে না।আমরা সবাই মানুষ।আচ্ছা কিছু দিন আগে তোমার মা যেখানে কাজ করেন সেখানে গিয়েছিলে?গিয়ে কি করেছিলে?
-হ গিয়া মায় একটা খাতা দিল ওটা দিয়ে আমি গাট্টা মিডাই খেয়েছি।
-কোথা হতে বলতে পারবে?
-হ…চলেন আমার লগে।
তারা হেটে হেটে চলে গেলেন এক ভাঙ্গারির দোকানে।ছেলেটির টার্গেট মিস হয়নি সে যেই ভাঙ্গারি লোককে ডায়রীটি দিয়েছিল তারা সবাই এই একটি দোকানে জমা দেন বা বিক্রি করেন।ভাঙ্গারি ব্যাবসায়ীকে বলার সাথে হ্যা উত্তর আসাতে মঈনুল ভাঙ্গারি লোকটির নিকট পানি চাইলেন।
-ভাইজান একটু জল হবে?
-হ্যা অবশ্যই।
বলে একটি পানির বোতল এগিয়ে দিলেন।সে তা একটু একটু করে পান করছেন আর কথা বলছেন।
-তাহলে ডায়রীটি একটু দেখান।
-কি করে দেখাবো বলেন!এইতো কিছু ক্ষণ আগে আমার এক বড় ব্যাবসায়ী ভাই এসে তা নিয়ে গেলেন।
-বলেন কি!সে থাকে কোথায়?
-সে তো ঢাকায় থাকেন।
-ওহ্ সিট।ঠিকানা দিতে পারবেন?
-হ্যা…
-দিন প্লিজ।
ভাঙ্গারি ব্যাবসায়ী একটি কাগজে ঠিকানাটি লিখে দিলেন।
-এই নিন তার ঠিকানা…আমি এও লিখে দিয়েছি আপনি আমার খুবই পরিচিত।
-ঠিক আছে…ধন্যবাদ।
আকাশেঁ আজ রৌদ্রের বৃষ্টি এই প্রখর রৌদ্র আবার মেঘে ঢাকা যেন শান্ত শীতল দুপুর।প্রচুর ক্ষিদে লেগেছে এখন আর হাটা যাবে না সোজা বাসায় চলে যাবেন।তারপর কাল সকালেই ঠিকানা মোতাবেক বাড়ী খোজাঁ শুরু করবেন।
মবিন চৌধুরী বেড রুমে প্রবেশ করে দ্রুত ডায়রীটি বেডের উপর ছুড়ে ফেলে ওয়াস রুমে ঢুকলেন।দক্ষিনা জানালার দক্ষিনা বাতাসে ডায়রীর পাতা গুলো সামনে পিছনে উড়ছে।দুর থেকেই বুঝা যাচ্ছে ডায়রীতে গোলাকার হাতের লেখা আর স্কেচ গুলো।এর মধ্যে বেশ কিছু রৌদ্রে শুকানো কাপড় নিয়ে রুমে ঢুকেন মবিন চৌধুরীর স্ত্রী বিউটি।বেডের পাশেই আলনায়ঁ সে কাপড় গুলো সাজিঁয়ে রাখছেন।কাপড় গুছানো অবস্থায় এক বার তার দৃষ্টি পড়ে বাতাসে উড়ন্ত পাতার ডায়রীটির উপর।প্রথমে খুব আপন মনে হলেও পরক্ষণে আবারো সে শাড়ী ভাজঁ করায় ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।
ডায়রীর পাতাগুলো বাতাসে এলোমেলো ভাবে উড়তে উড়তে হঠাৎ পাতার এক স্থান হতে উড়ে একটি ময়ূরের পাখ গিয়ে পড়ল তার পায়ের সাথে,আশ্চর্য হয়ে সে পাখটি হাতে নিলেন,তার চোখে পড়ে পাখের রং ধনুর মাঝ খানে মার্কারের কালিতে লেখা M লেখাটি উপর,.. মনে হলো এ যেনো তার জনম জনমের পরিচিত।ডায়রীটির কাছে গিয়ে সে তা হাতে নিয়ে দ্রুত একের পর এক পৃষ্টা উল্টাচ্ছেন।সব সব সব যেনো তার অতি আপনেরও আপন,ভাবছেন..সেই লেখা সেই স্কেচ এখানে এলো কি করে এ তো তার অতীত সময়ের কিছু নষ্টালিজা।
আশ্চর্য এবং ভয় দুটোই তার মনে বাসা বাধে।এতো বছর পর এভাবে পুরনো স্মৃতি কাছে আসবে ভাবতেও পারছেন না সে।সেই লেখা সেই ডায়রী সেই ভালবাসার স্মৃতি একটুও বদলায়নি শুধু বদলে গিয়েছিল কোন এক ঝড়ে দুজনের পথের গতি।
১৮টি মন্তব্য
নাসির সারওয়ার
বাহ, বেশ সতেজ লেখাতো! সুন্দর ভাবেই শেষ টানলেন। পাঠক ভেবে নিক তারপর কি হলো। বেশ ভালো লাগলো।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বিশেষ ধন্যবাদ প্রথম মন্তব্যের জন্য।পাঠকতো অগ্রীম ভাবেই তবে কখনো কখনো পাঠক ভাবনার উল্টোও ঘটে।ধন্যবাদ। -{@
ছাইরাছ হেলাল
এবারে বেশ গোছানো হয়েছে, দেখি ডায়েরি থেকে আস্তে আস্তে কী বের হয়ে আসে।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ ভাইয়া।আসবে তবে কোন মণি মুক্ত নয়।কিছু আবেগ কিছুটা ভালবসার অনুভুতি। -{@
শুন্য শুন্যালয়
আরে বাবা কী নাটকীয়তা!! কোথা থেকে কোথায় ঘুরে ঠিক নায়িকার হাতে পড়লো। এইবার ঘরে আগুন না লাগলেই হয়। 🙂 ডায়েরীর সাথে ডায়রিয়া? হি হি ভালই বলেছে। দেখি কী হয়।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ আপু কি হয় কে জানে তবে অপেক্ষা -{@
মৌনতা রিতু
ডায়রী খুঁজতে এতো পেরেশান হলো। যদিও খোঁজ পেলো তাও গেলো।
ময়ূরের পাখনা উড়ে গেলো পায়ের কাছে, দৃশ্যটা চোখে ভাসছে। খুবই সুন্দর এক গোছানো গল্প। এমন কিছু ডায়রীর পাতা না উল্টানোই ভাল।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
হা হা হা হাসালেন
এমন কিছু ডায়রীর পাতা না উল্টানোই ভাল।
ধন্যবাদ।সাথেই থাকুন আসছে কিছু চমক -{@
নীহারিকা জান্নাত
কি বিপদ!
কোথাকার ডায়রি কোথায় গেলো।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ ।ডায়রীর পা আছে মনে হচ্ছে।
ইঞ্জা
অসাধারণ ভাবে শেষ টানলেন মমি ভাই, খুব ভালো লাগলো, শেষের বিষয়টা অনেকটা আমার লেখার স্টাইলের। (y)
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
গল্পতো কেবল শুরু -{@ তাইতো বলি গুরু হ্যান্ডসাম বয়। -{@
ইঞ্জা
(3 (3
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই দারুণ লিখছেন কিন্তু।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
রোমান্টিক গল্প এই প্রথম।ধন্যবাদ ভাল থাকবেন। -{@
রিফাত নওরিন
গল্পটা এবার জমে উঠেছে বেশ…এক কথায় দারুন !!
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ আপু। -{@
শিপু ভাই
দারুন সাবলিল লেখা! নাটকিয়তাটা বেশ উপভোগ করলাম।
চলুক…