15965541_1399705860061191_8569384357053245147_nরাত জাগার অভ্যাসটি মঈনুলের সেই পুরনো।যখন থেকে বুঝতে শিখেছে সে শিক্ষিত হচ্ছেন তখন হতেই তার রাত জাগার অভ্যাসটির সৃষ্টি হয়।বলা যায় পরিচিত অপরিচিত যারাই তাকে চিনেন তাদের পর্যায়ক্রম নিমন্ত্রণে তার এ রাত জাগা।আর সব চেয়ে বড় কথা হলো রং তুলির স্পর্শের খেলার মজা রাতেই জমে।তাই যখনি কারো বিয়ের আলপনা আকাঁর দাওয়াত পেতো তখনি  সে ছুটে যেতো।সে দিনও হলো তাই হলো এক ব্যাক্তির আমন্ত্রণে ছুটে গেল  অচেনা এক বাড়ীতে।

দু’তলা বাড়ী,বিয়ের আয়োজনে সমগ্র বাড়ীটি লাইটিংয়ে সাজানো।অতিথি আসছেন যাচ্ছেন,এই আসা যাওয়া অতিথীদের মাঝে হঠাৎ এক মেয়ে তার সামনে এসে দাড়ায়।সে তখনো নিমন্ত্রিত বাড়ীর নিমন্ত্রকারীর নিকট হাজিরা দিতে পারেননি।আমন্ত্রিত অতিথীদের নিমন্ত্রিত বাড়ীতে ঢুকবার একটি রাস্তা।রাস্তাটির দুপাশেই বিশাল বিশাল মাছ চাষের খামার।দুটি খামারের মাঝ খান দিয়ে যাতায়াতের এই রাস্তাটি এতো সরু যে এক জন অনায়াসে এবং দু’জন যাতায়াতের বেলায় খুব সাবধানে নতুবা পাশেই খামার জলে পরে যাবার ভয় আছে।
-কি ব্যাপার আপনি এখানে?
-জি মানে এই বাড়ীতে আলাপনা করতে এসেছি।
-তাতো আপনাকে দেখেই বুঝেছি।
ওদের মিনিট খানেক সময় কথা বলাতে রাস্তার দু পাশে আগত লোকজনের জ্যাম সৃষ্টি হয়।বিষয়টি বুঝতে পেরে ওরা রাস্তাটি অতিক্রম করে বাড়ীর ভিতরে চলে গেল।মঈনুল তার সাথে আসা বন্ধুকে নিয়ে চলে গেলেন বাড়ীর ভিতরে।নিমন্ত্রণকারী ব্যাক্তিটি হাতে একটি ছবি নিয়ে তার কাছে এলেন।
-আপনি এসেছেন খুব খুশি হয়েছি…বাড়ী চিনতে কোন সমস্যা হয়নিতো?
-না,
-ঠিক আছে,চলেন আপনাকে কোথায় কোথা্য় আলপনা করতে হবে তা দেখিয়ে দিচ্ছি।
বিশাল আলীশানঁ বাড়ী।বাড়ীটি দু’তলা হলেও বাহির থেকে ভিতরের বিভিন্ন কাঠের কাজগুলো ছিলো চমৎকার।এ দিক সে দিক সব দিক দেখানো শেষ পর্যায় হঠাৎ মঈনুলের চোখে পড়ে খুবই পরিচিত একটি মুখ।দেখার ক্ষণ এতোই স্বপ্ল ছিলো যে কনফার্ম হতে পারেনি আসলেই এই সেই মেয়ে একদা যে ছিলো তার খুবই পরিচিত যার কাছে আছে তার এক অমুল্য ধন এক রং তুলির ডায়রি।এরই মধ্যে অন্দর মহলের ডাকে নিমন্ত্রিত লোকটি ভিতরে চলে গেলেন।
আরো একটু কনফার্ম হওয়ার অপেক্ষায় তার কাজ শুরু করলেন।ছবি আকাঁ কিংবা আলপনাঁ আকাঁ এ সবের প্রতি আগ্রহের ভাব ছেলেদের চেয়ে সাধারণতঃ মেয়েদেরই একটু বেশী থাকে।তাইতো আকাঁ আকিঁ শুরু করতে না করতেই এক দল দুষ্ট মেয়ে এসে ঠায় দাড়িয়ে কেউ কেউ উকিঁঝুকি মারছেন।মঈনুলের আবার একটু ঘোড়া রোগ আছে,আকাঁ আকিরঁ সময় লোকজন ভির জমালে তার আকাঁ আকিতেঁ তুলি যেনো চলতে চায় না।তাই ওদের তাড়াতে হবে,মনে মনে নিমন্ত্রিত ব্যাক্তিটির আগমনের ইচ্ছে ব্যাক্ত করতেই ঠিক তখনি সে হাজির।
-কি ব্যাপার এখানে এতো ভির কেনো?যাও….যাও তোমরা অন্য রুমে যাও,…. ওদের কাজ করতে দাও।
মেয়েগুলো চলে গেলে নিজেকে একটু হালকা লাগল।রুমে অন্য কেউ নেই বলে মঈনুল নিমন্ত্রিত ব্যাক্তির কাছে এখানে সিগারেট ধরানো যাবে কি না তার অনুমতি চাইলেন।
-সিগারেট চলবে?
-অবশ্যই…আব্দুলটা চা সিগারেট দিয়ে যায়নি?
আশ পাশ দেখে সে ক্ষ্যাপে গেলো ওদের বাড়ীর এক চাকর আব্দুলের উপর।সে তার পাশেই ছিলেন।
-এই তোকে না সেই কখন বলেছি এখানে চা সিগারেট দিতে।
আব্দুল এখনো কোন কথা বললেন না।
-কি রে আব্দুল তুই কি শুনতে পাছ না? দুত্তরি আমিওতো পাগল ওকে তো কোন অর্ডার করতে হলে ওর কানের কাছে গিয়ে জোরে জোরে বলতে হয় নতুবা ও শুনতে বা বুঝতে পারে না।আমারই ভুল হয়েছে।
সে এগিয়ে যাবেন তার চাকরের নিকট অমনি মঈনুল বাধা দিলো।
-থাক,এখন নয় পরে আনলেও হবে….।
-ও আচ্ছা…ঠিক আছে কিছু মনে করবেন না বিয়ে বাড়ীতো,অনেক ব্যাস্ততায় আছি।এক মাত্র ছোট বোন আমার অনেক আদরের।তার চলে যাওয়া আমার মন বিমুর্ষ হয়ে আছে।এখন কাজের কথায় আসি…ছোট বোনের সুন্দর একটি বিয়ে সাজেরঁ ছবি একেঁ দিবেন যা ঐ গায়ে হলুদের মঞ্চে লাগাবেন।
-ঠিক আছে ওর কোন ছবি আছে?
-হ্যা আমি ছবি নিয়েই এসেছি।
লোকটি পকেট থেকে একটি ছবি বের করে মঈনুলকে দিলেন।সে ছবিটি হাতে নিয়ে একটু অবাক হলেন।যা ভেবেছিলেন তাই।যাক বাচা গেলো দীর্ঘ সাত আট বছর পর হলেও হারিয়ে যাওয়া তার সেই অমুল্য ধন “রং তুলির ডায়রীটি” ফিরে পাবেন।এবার লক্ষ্য তার সাথে কথা বলা।ছবিটি হাতে নিয়ে সে নাড়া চাড়া করছেন।
-কি ব্যাপার শিল্পী..।
-মঈনুল,
-ও হ্যা,মঈনুল আপনার কি ছবি দেখে আকতেঁ কোন সমস্যা হবে।নাকি বোনকে পাঠিয়ে দেবো?
-তা হলেতো ভালোই হয়।তবে এখন নয় প্রথমে আলপনার কাজ শেষ করি তারপর অন্য কাজে হাত দিবো।
-ঠিক আছে আমি বোনকে বলে রাখবো আপনি যখন ডাকবেন সে যেনো আসে।
-আপনি নয় তুমি আমি আপনার অনেক ছোট।
-ঐ হলো আর কি তাহলে ঠিক আছে আমি একটু ঐ দিকটায় যাই… তোমরা কাজ করো।
15871677_1399705816727862_4510487194623525439_nপেকেট থেকে হাতের অঙ্গুলি দ্বয়ের চাপে রাখা সিগারেটটি মুখে নিয়ে দিয়াশলায়ে জ্বালিয়ে এক টানে ধোয়ারঁ কুন্ডলী বানিয়ে রং মিশ্রনে কালার ম্যাচিংয়ে ব্যাস্ত মঈনুল।পুরনো স্মৃতি ডায়রীটি তেমন কোন মহা মুল্যবান বস্তু নয় তথাপি ডায়রীটি মঈনুলের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে যা তার এক সময়ের টিনএজের কথা বলে।
“আতা গাছে  তুতা পাখি
ডামি গাছে মৌ”
অথবা,
যাও পাখি বলো তারে সে যেনো ভুলেনা মোরে” এমন সব গ্রাম্য প্রবাদ আর কিছু পোর্ট্রেট এর স্কেচ ছাড়া একজন চিত্র শিল্পীর কি বা থাকতে পারে একটি ডায়রীর পাতায়ঁ পাতায়ঁ তবে কিছুতো একটা ছিলো হয়তো নতুবা মঈনুল ডায়রিটি হাতে পেতে এতো অস্থির কেনো।
সে একাই টেনসনে এ কয়েক মিনিটেই সিগারেট পাচটি শেষ করে ফেললেন।সাথে আসা বন্ধুটিকে পাঠিয়েছিলেন সেই কখন একটি বিশেষ অঞ্চলে,যেখানে যে কেহ যেতে নিষেধ যাকে ফেন্সি রাজ্য বলে।বন্ধুটি ফিরে আসেন ফিলিংসের একশ ভাগ পরিপূর্ণ মঈনুলের ব্রেন এখন।খুবই দক্ষতার সহিত দ্রুত ফ্রি স্টাইলে আলপনা আকছেঁন।তার আকাঁ কোন আলপনাই দ্বিতীয় বার হুবহু আকতেঁ সে নিজেও পারেন না কারন সে কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেননি দারিদ্রতা সে ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়িয়ে ছিল যতটুকুই পারেন তা তার গড গিফটেড আর ঢাকা চারুকলায় ভর্তি পরীক্ষায় তিন মাস ট্রেনিংয়ে।চারুকলায় অনার্স সর্বো প্রথম ব্যাচ ছিলো, ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় থাকার পরও অপ্রসন্ন ভাগ্য তার দারিদ্রতার কাছে পরাজিত হয়।এ রকম বহু দিক তার মনকে বিষিয়ে রাখে সর্বোক্ষণ তাইতো কষ্টের তুষের আগুন থেকে নিজেকে একটু হালকা রাখতে নেশার মতো বদ অভ্যাসগুলো তার নিত্য সঙ্গী হয়ে যায়।

চলবে।

ছবি:ফেবু বন্ধু
চিত্র শিল্পী রবিণ

৭৩৩জন ৭৩৬জন
0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ