পরিণতি।

মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন ২১ অক্টোবর ২০১৬, শুক্রবার, ১২:১৪:২৩পূর্বাহ্ন গল্প ১৭ মন্তব্য

– ওই তুই হিমু?
– মশকরা করেন? আমার দাঁড়ি মোছ দেখেও আমাকে মেয়ে মনে হচ্ছে?
– আরে এ হিমু সে হিমু না। হুমায়ূন আহমেদের হিমু তুই?
– ধুর মেয়া! প্যাঁচাল করেন কেন! আমি কোন হিমু টিমু না।
– স্যার হারামজাদা পল্টি নিতাছে।
– আপনি পুলিশ নাকি পতিতাপাড়ার দালাল!! মুখের ভাষা এমন কেন!!

‘ওকে যেতে দাও। পুলিশের বড় কর্মকর্তার কথা শুনতে দেরি সিহাবের হাঁটা শুরু হতে দেরি হয় নি। আজ সকাল থেকেই সে এদিক সেদিক হেঁটে বেড়াচ্ছে। বাসায় তার সুন্দরী বউ। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে।

জগতে শুধু রহস্য। সিহাবের সাথে মেয়েটার পরিচয় হয়েছিলো এক সন্ধ্যায়। আকাশে সুন্দর একটা চাঁদ ছিলো। চাঁদের আলোয় ভিজতে ভিজতে সিহাব একটা ফুচকা দোকানের সামনে এসে লুবনাকে দেখতে পায়। মেয়েটা বিশাল হা করে একটা ফুচকা মুখে ঢুকিয়ে অন্য ফুচকায় টক ঢুকিয়ে মুখের সামনে নিয়ে আসছে। একটা ফুচকা খেতে তার পাঁচ সেকেন্ড সময় লাগছে। পরে জানতে পারে তখন লুবনা বাজিতে ফুচকা খাচ্ছিলো।

তারপর ফলো করা। ফেসবুক আইডি নেয়া। কথা বলা। লুবনার চঞ্চলতা, দূরন্তপনা সব সিহাবকে মুগ্ধ করে। একদিন ঘটা করে ভালোবাসার প্রস্তাবও দিয়ে দেয় সিহাব। লুবনাও রাজি হয়ে যায়। সিহাব দেখতে খারাপ না। তাছাড়া ভালো একটা চাকরিও করে। দিন যেয়ে, মাস যেয়ে, বছর পেরুলো। ভালোবাসার গভীরতাও বৃদ্ধি পেল। একদিন সিহাব বললো
– লুবনা…
– বলো শুনছি তো।
– বিয়ে করবো?
– চলো।
– সবাইকে জানাতে হবে না?
– বিয়ে কি সবাইকে করবে?
– আরে ধুর! একটা ফর্মালিটি আছে না। সবাই আসবে। খাবে।
– না। এতকিছুর দর্কার নেই। কাজী অফিসে বিয়ে করবো।
– কি বলো! তা হয় নাকি! বন্ধু বান্ধব লাগবে না?
– না। তাহলে বিয়ে করবো না।

সিহাব একটা ধাক্কার মতো খায়। এটা কেমন কথা। বিয়ে করবো কেউ জানবে না কেন!!
– তুমি কি সিরিয়াস?
– হুম।

সিহাব একটু ভাবলো। তারপর রাজি হয়ে গেল। যাওয়ার পথে দুইজনকে নিয়ে গেল সাক্ষী হিসেবে। বিয়ে করলো। বাসায় নিয়ে গেল বউকে। সিহাব একা থাকে শহরে। লুবনা থাকতো তার মামির কাছে। মামি খুব একটা ভালো মানুষ না। লুবনাকে দুচোখে দেখতে পারতো না। তাই কাউকে জানানোর প্রয়োজন মনে করে নি।

সিহাব এসে একটা চা দোকানে বসলো। রাত প্রায় ১১ টা। দোকানের সামনেই একটা পাগল শুয়ে আছে। শরীরে কাপড় নেই। মাথা ভরা চুল কিন্তু ক্লিনশেভ করা। কি অদ্ভুত পাগল! সিহাব চায়ে চুমুক দিয়ে ভাবছে লুবনা ফ্যানের সাথে ঝুলে গেল কেন!
– মামা খবর শুনছেন?
– কি?
– ঐযে দূরে একটা বিল্ডিং দেখতাছেন না? ঐখানে এতটা ঘটনা ঘটছে।
– কি ঘটনা?
– একটা লাশ পাওয়া গেছে ফ্যানের সাথে ঝুলানো। বাড়িওয়ালাকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। যতদূর জানছি লাশটা একটা মহিলার। সবাই বলাবলি করতাছিল জামাই নাকি খুব অত্যাচার করতো। তারপর জামাই নাকি মেরে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিয়েছিলো। ভোরে নাকি দরজা খোলা রাইখা পালায়া গেছে।
– কি অদ্ভুত! জামাই কেন এমন কাজ করবে!
– কে জানে মামা! হয়তো জামাই খারাপ নয়তো বউ খারাপ।
– তাই বলে বউ মেরে ফেলবে!
– সেটাইতো মামা। জানোয়ার ছিলো হয়তো!

সিহাব চায়ের বিল দিয়ে হেঁটে চলছে আর ভাবছে। ” আমি এতো জানোয়ার হলাম কি করে? কিভাবে আমি লুবনার মাথা থেতলে দিয়েছি হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে! কিভাবে এতটা পশু হয়ে গেলাম। ও না হয় অন্য একটা লোকের সাথে রাত কাটিয়েছে। হোক না সেটা আমার বাসায়! খাক না ধরা হাতে নাতে! আমি কিভাবে পারলাম লুবনাকে মেরে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিতে! আমি মানুষ না। আমি জানোয়ার হা হা হা।” হাসতে হাসতে সিহাব রাস্তার ফুটপাতে শুয়ে পড়লো। পাগলের মতো। বড্ড অদ্ভুত পাগল।

ভালোবাসে কেউ পাগল হয়, কেউ সাহেব হয়। একটা পরিণতি কিন্তু থাকে ভালোবাসার। ভালো কিংবা খারাপ। আর এই দুটি জিনিস নির্ভর করে মনের উপর। কোন মন মানসিকতার মানুষটা জুটলো আপনার কপালে।

৬১৮জন ৬১৮জন
0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ