১৯০১ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্টানকে যথাক্রমে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে অবদানের জন্য নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়ে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞান,পদার্থবিজ্ঞান, ও রসায়নের গবেষণায় সাফল্যের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল পুরষ্কার।এমন মর্যাদাকর পুরষ্কার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যাঁর সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ ও সম্পদে তিনি হচ্ছেন আলফ্রেড নোবেল।
১৮৯৫ সালে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের করে যাওয়া একটি উইলের মর্মানুসারে নোবেল পুরস্কার প্রচলন করা হয়।তার মৃত্যুর পূর্বেই উইলের মাধ্যমে এ পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা করে যান।অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রদান শুরু হয়েছে ১৯৬৯ সালে। নোবেল পুরস্কারকে এসব ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তদের ইংরেজিতে নোবেল লরিয়েট বলা হয়।
তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :আলফ্রেড নোবেল ১৮৩৩ সালের ২১ অক্টোবর সুইডেনের স্টক হোমে একটি প্রকৌশল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সে একা ধারে রসায়নবিদ, প্রকৌশলী ও একজন উদ্ভাবক ছিলেন।১৮৯৪ সালে তিনি একটি লোহা ও ইস্পাত কারখানা ক্রয় করেন,যা পরবর্তী সময়ে একটি অন্যতম অস্ত্র তৈরির কারখানায় পরিণত করেন।তিনি ব্যালাস্টিক উদ্ভাবন করেন,যা বিশ্ব ব্যাপী ধোঁয়াহীন সামরিক বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।তার ৩৫৫টি উদ্ভাবনের মাধ্যমে জীবদ্দশায় তিনি প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হন যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ডিনামাইট।
একটি ফরাসি পত্রিকায় ১৮৮৮সালে সে তার ভাইয়ের পরিবর্তে নিজের মৃত্যু সংবাদ দেখে বিস্মিত হন, ‘এ মার্চেন্ট অব ডেথ হু ডেড’ নামে তা প্রকাশিত হয়েছিল।যেহেতু নোবেলের ভাই লুড ভিগ মারা যায়,এ নিবন্ধটি তাকে ভাবিয়ে তোলে এবং খুব সহজেই বুঝতে পারেন যে ইতিহাসে সে কি ভাবে স্মরণীয় হতে পারবেন।যা তাকে তার উইলটি পরিবর্তন করতে অনুপ্রাণিত করে।১০ ডিসেম্বর ১৮৯৬ সালে আলফ্রেড নোবেল তার নিজ গ্রাম স্যান রিমো, ইতালিতে মৃত্যুবরণ করেন। সেই সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
নোবেল তার জীবদ্দশায় অনেক গুলো উইল লিখে গিয়েছিলেন যা শেষটা লেখা হয়েছিল তার মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগে ২৭ নভেম্বর ১৮৯৫ সালে প্যারিসে অবস্থিত সুইডিশ-নরওয়ে ক্লাবে।বিস্ময় ছড়িয়ে দিতে, নোবেল তার সর্ব শেষ উইলে উল্লেখ করেন যে, তার সব সম্পদ পুরস্কার আকারে দেয়া হবে…..যারা পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে বৃহত্তর মানবতার স্বার্থে কাজ করবেন তাদেরকে।সে তার মোট সম্পদের (৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা) ৯৪ শতাংশ এই পাঁচটি পুরস্কারের জন্য উইল করেন।২৬ এপ্রিল ১৮৯৭ সালের আগ পর্যন্ত সন্দেহ প্রবণতার জন্য নরওয়ে থেকে এ উইল অনুমোদন করা হয়নি। নোবেলের উইলের সমন্বয়কারী রগনার সোলম্যান ও রুড লফ লিলজেকুইস্ট নোবেল ফাউন্ডেশন তৈরি করেন।যাদের কাজ হলো তার সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ ও নোবেল পুরস্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
নোবেলের উইল অনুমোদন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নোবেল পুরস্কার প্রদানের জন্য নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি নামক একটি সংস্থা তৈরি করা হয় ১৮৯৭ সালে।দ্রুতই নোবেল পুরস্কার দেয়ার অন্য সংস্থা গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।৭ই জুন ক্যারোলিংস্কা ইন্সটিটিউট, ৯ই জুন সুইডিশ একাডেমি এবং ১১ই জুন রাজকীয় সুয়েডীয় বিজ্ঞান একাডেমি নোবেল ফাউন্ডেশন কীভাবে নোবেল পুরস্কার দেবেন তার একটি নীতিমালা তৈরী করেন এবং ১৯০০সালে নোবেল ফাউন্ডেশন নতুন ভাবে একটি বিধি তৈরি করে যা রাজা অস্কার কর্তৃক জারি করা হয়।১৯০৫ সালে সুইডেন ও নরওয়ের মধ্যে বন্ধন বিলুপ্ত হয়।এই ছিলো মোটা মোটি নোবেল পুরস্কার প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ঘটনা।

সাহিত্যে যিনি নোবেল পুরষ্কার পাবেন তাঁর পাঠক প্রিয়তা ঐ সময়ে হঠাৎ করেই বেড়ে যেতো।বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে সহায়তার জন্য যারাই নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাবেন তারা বা তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার সাথে সাথে  গুরুত্ব ও মর্যাদা বেড়ে যাবে অনেকগুণ।অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতাও বেড়ে যাবে।অবশ্য সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার যাঁরাই পান তাঁদের নিয়েও অনেক সময় নানা রকম বিতর্কও তৈরি হয়। তবে সেই বিতর্কে নোবেল পুরষ্কারের মর্যাদা একটুও কমে না,বরং আরো বেড়ে যায়।

রসায়নে নোবেল পেলেন তিন জন 2016
‘মলিকিউলার মেশিন’ নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ রসায়নে নোবেল পেলেন তিন জন।
(y) ফ্রান্সের জ‌্যঁ পিয়েরে সোভাজ,
(y) যুক্তরাজ‌্যের ফ্রেজার স্টুডার্ট
(y) এবং নেদারল‌্যান্ডসের বার্নার্ড এল. ফেরিঙ্গার নাম ঘোষণা করেন রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স।
তাঁরা তিন জন পেয়েছেন নয় লক্ষ ত্রিশ হাজার মার্কিন ডলার (আট মিলিয়ন ক্রোনার)।খবর:রয়্যাল সুইডিশ আকাদেমি অব সায়েন্সেস।
‘এনার্জি’ প্রয়োগের ফলে নিয়ন্ত্রিত ‘মুভমেন্টের’ মাধ্যমে অণুর ‘ডিজাইন ও সিন্থেসিস’ নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ এলো এ নোবেল পুরস্কারের মাধ্যমে।বিজ্ঞান শাখায় শেষ পুরস্কার ঘোষণা হয় রসায়নের ক্ষেত্রেই।মেডিসিনে নোবেল পেয়েছেন জাপানের জীব বিজ্ঞানী।পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পেয়েছেন জন্ম সূত্রে ব্রিটিশ তিন পদার্থ বিদ।

আমরা গর্বিব যে এমন একটি সন্মীত ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন আমাদের বাংলাদেশের এক সন্তান।দরিদ্র মোচনে ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তাকারী গ্রামীন ব্যাংকের প্রতিষ্টাতা ড.মোহাম্মদ ইউনুসকে বিশ্ব নোভেল প্রাইজ সংস্থা এ সম্মানীত পুরস্কারটি প্রদান করেন।
নীচে উইকিপিয়ার শুরু থেকে ২০১৫ পর্যন্ত নোবেল প্রাইজ প্রদানের একটি লিষ্টের লিংকগুলো দেয়া হলো যেখানেই ক্লিক করবেন সেখানেই সে সম্পর্কে পাবেন উইকিপিয়ার বিস্তারিত তথ্য ।

২০১৬ সালের অন্যান্য বিভাগেও নোবেল পুরস্কার ঘোষনা করা হয় যা নিয়ে অন্য একটি পোষ্ট দিবো।ধন্যবাদ সবাইকে।
কৃতজ্ঞতায়:
উইকিপিয়া এবং অনলাইন পত্রিকা ও ব্লগ।