প্রথমা –
যখন হঠাৎ পুরোনো কাটা দাগটায় আঙুল পড়ে,
আলগোছে ছুঁয়ে যাই আর ভাবি কতোটা ব্যথা পেয়েছিলাম সেদিন
কিছুতেই মনে পড়লো না সেই ব্যথার কারণ।
অথচ দিব্যি মনে আছে আগুণ জ্বালিয়ে পুড়িয়েছি্লাম অনর্থক কিছু সময়
তাতে আঙুল তো পোড়েইনি,
এমনকি শরীরের কোথাও কোনো জ্বলুনীও হয়নি
শুধু প্যারালাইসড মনের ভেতর যে ক্ষত, সেসব মনে থেকে গেছে আজও।
দ্বিতীয়া –
যদি চলে যাও, খোলামকুচি স্মৃতিসমেত কিছু বিস্মৃতিও রেখে দেবো
কারণ জানতে চাও?
মানুষ তো অপাংক্তেয় জিনিসও রেখে দেয় ষ্টোররুমে।
তৃতীয়া –
বিপরীত নাগরিক জীবনের বৃত্তে বন্দী আবেগীয় আতিথেয়তা
একদিকে বৈকালিক আবেগ, অন্যদিকে বৈষয়িক দিন
কি করে একে অন্যকে স্পর্শ করে শুনবে?
মাথার ওপর ওই যে আকাশ।
চতুর্থী –
ইচ্ছে ছিলো তোমাকে দেখাবো কঙ্কাবতীর অন্দরমহল
তালা খুলেও রেখে দিয়েছিলাম
সোনার কাঠি, রূপোর কাঠি বদলে দিয়ে জেগে থেকে অপেক্ষায়ও ছিলো সে
আর তুমি কিনা রাজবাড়ীর দেউড়ি থেকেই ফিরে এলে!
পঞ্চমী –
জানো একা একা অপেক্ষাতে কি ক্ষতি হয়!
ওয়ান-ওয়ে পথে ফিরে আসা যায়,
তবে অনেক ঘুরে-ফিরে
ততোক্ষণে রোদ-বৃষ্টিতে পথের মানচিত্র বদলেও যায়, জানো?
হ্যামিল্টন, কানাডা
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ইং।
২৪টি মন্তব্য
অনিকেত নন্দিনী
অনেকক্ষণ ভেবেও মন্তব্যে লেখার মত কিছু খুঁজে পেলামনা। 🙁
পদচিহ্নের পাশে ছোট নকশাদার চিহ্নগুলি কিসের?
নীলাঞ্জনা নীলা
নন্দিনীদি আসলে লেখাগুলো হঠাৎ করে মাথায় চলে এলো। পূর্ণকাব্য লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। তাই অণু হিসেবেই রেখে দিলাম। তবে প্রথমটি আমার আঙুলের কাটা দাগ। দ্বিতীয়টি অবহেলা, তৃতীয়টি মিলন, চতুর্থটি ফিরে আসা, আর পঞ্চমটি ফিরিয়ে দেয়া মানে প্রত্যাখ্যান।
ওহ পদচিহ্নের পাশে ছোট্ট ছোট্ট নুড়ি-পাথর। কি যে সুন্দর না আটলান্টিকের ওই সৈকতটা, দেখলে মন ভরে যায়।
ভালো থাকুন দিদি।
অনিকেত নন্দিনী
নীলাদি, লেখাটা নিঃসন্দেহে সুন্দর, আমি অসুন্দরই কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাইনি। 🙁
মাঝেমাঝে মাথাটা এত্ত বেশি ফাঁকা লাগে যে বলার মতো কিছুই খুঁজে পাইনা।
পদচিহ্নের পাশের ওই নকশাকাটা ছাপ দেখে মনে হয় কেউ বুঝি লাঠি ভর করে হেঁটে গেছে, ওটা লাঠির মাথার নকশার ছাপ।
নীলাঞ্জনা নীলা
হতে পারে নন্দিনীদি। তবে ওই বিচে লাঠি নিয়ে যাওয়া যায়না। মনে হচ্ছে কুকুরের পায়ের ছাপ।
পাথুরে বিচ তো, ওখানে ভর করে চলা মানুষরা চলতে পারেনা।
দিদি আসলে মাথা ফাঁকা নয়, অক্ষররা বিশ্রাম চায়। তাই অনেক সময় কিছুই বলা যায়না।
এমনটি সবার মধ্যেই হয়। বুঝেছেন? তখন আমি কি করি জানেন? গান শুনি। 🙂
ভালো থাকুন সবসময়। -{@
আবু খায়ের আনিছ
পঞ্চমী পর্যন্ত রইল, তাহলে বাকী আরো কিছু আছে যা পাব।
জানি, সব কিছুই মুছে যায়, কিন্তু স্বৃতি সে তো রয়ে যায়।
নীলাঞ্জনা নীলা
আনিছ ভাইয়া না আর কিছু বাকী নেই। এতোটুকুই।
এই পাঁচটা লিখতেই আমার অবস্থা শেষ। ^:^
আপনাকে জানাচ্ছি শুভ মহালয়ার শুভেচ্ছা। পূজো দেখতে যাবেন নাকি সামনের সপ্তাহে?
আবু খায়ের আনিছ
অবশ্যই যাব, ভার্সিটির সামনেই হয়, আর প্রতিবার যাওয়া হয়। শুভেচ্ছা তোমাকে দিদি ভাই।
নীলাঞ্জনা নীলা
আনিছ ভাইয়া ইস এবার আমার যাওয়া হবেনা পূজোতে।
এখন তো সেভাবে হাঁটতে পারিনা। হয়তো একদিন যেতে পারি, নয়তো না।
দেখি কি হয়!
শারদ শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন।
মিষ্টি জিন
“মানুষতো অপাংক্তেয় জিনিষ ও রেখে দেয় ষ্টোররুমে” অসাধারন আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
মজাই লাগে কিছু মানুষকে ষ্টোররুমে রাখতে। 😀
তাই না মিষ্টি আপু?
শুভ মহালয়ার শুভেচ্ছা তোমাকে। -{@
মিষ্টি জিন
ঠীক তাই.
থাকুক ষ্টোর রুমে। :D)
তোমাকেও মহালয়ার শুভেচছা সোনা আপু। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
মিষ্টি আপু ষ্টোররুম যেদিন পরিষ্কার করা হয়, দেখা যায় অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস। তখন কিন্তু আমরা সেসব ডাষ্টবিনে ফেলে দেই। 😀 তখন মনে হয় ধুত্তোর এসব কেন যে রেখেছিলাম! তাই না?
শারদ শুভেচ্ছা। -{@
ছাইরাছ হেলাল
বাহ, ভিন্নরকম লেখা!
এমন করে আগে লিখেছেন বলে মনে পড়ে না,
ওয়ান ওয়েতে যাওয়া যায়, আসা আর হয়না,
রাজবাড়ীর সোনার কাঠি আর রূপার কাঠির রদবদল স্বপ্নেই থেকে যায়।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভিন্নরকম বুঝি?
আপনার মতো কই পারি লিখতে কুবিরাজ ভাই! 🙁
এই হ্যামিল্টন শহরকে ওয়ানওয়ে শহর বলে। একটা রাস্তা মিস করলে অনেক ঘুরে ঘুরে আসতে হয়।
বুঝলেন গো কুবিরাজ ভাই?
ওহ শুভ মহালয়ার শুভেচ্ছা আপনাকে। পূজোতে আমন্ত্রণ রইলো।
মৌনতা রিতু
নীলা আপু অসম্ভব ভাল লেগেছে। কঙ্কাবতীর অন্দরমহল মন ছুঁয়েছে। পূজার শুভেচ্ছা নিও। পূজা দেখতে প্রতিবারই যাওয়া হয়। এবারও দাওয়াত আছে। যাব।
ভাল থেকো ভালবাসা নিও।
নীলাঞ্জনা নীলা
মৌনতা আপু কঙ্কাবতীর অন্দরমহলের ইন্টেরিওর ডেকোরেশন কে করেছে জানো? ওই যে রাক্ষস-দৈত্য উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো, সে। 😀 আজকাল দৈত্য-রাক্ষসরাও ইন্টেরিওর ডেকোরেশনে বেশ ভালোই দেখছি। :D)
ইস আমার হিংসে হচ্ছে, পূজোতে এবার যাওয়া হবে কিনা কে জানে!
তুমিও ভালো থেকো।
প্রহেলিকা
একটু সময় নিয়েই আসব পরে এই লেখায় কথা দিলাম। এখন এজন্য এলাম যে, নবমীকে বাদ দেয়া যাবে না কোনোভাবেই।
নীলাঞ্জনা নীলা
নবমী আসবে কিনা জানিনা। তবে এই লেখায় আপনি আবার আসবেন, সেটার জন্য অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু। 🙂
ইঞ্জা
অনুকাব্য গুলো সব অসাধারণ হয়েছে আপু। 😀
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাই জেনে আমি খুবই খুশী হলাম। 🙂
শারদ শুভেচ্ছা ভাইয়া।
ইঞ্জা
এই সেরেছে নিজের পায়ে নিজেই কুড়ল মেরেছি। ;(
শারদীয় শুভেচ্ছা, শুভ মহালয়া।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাই গো আমরা সবসময় নিজের পায়েই কুড়াল মারি কিন্তু। 😀
তারপর সবাই আসে কাঁটা গায়ে নুণ ছেটাতে। \|/
শুন্য শুন্যালয়
প্রত্যেকটি অনুকবিতা এক একটি গল্প হতে পারে। তুমি এতো ভালো কেমন করে লেখো?
সময় বুঝি আগুনে পোড়ে? সিগারেট খেতে নাকি? 🙂 প্যারালাইজড মনে ক্ষতগুলো জোড়ালো হয়না, ক্ষতগুলো বিষাক্ত আর্সেনিকের মত মাইক্রো মাইক্রো করে ছড়ায়।
স্টোররুমে প্রয়োজন হলে যাই, কিন্তু বিস্মৃতি সে বড় অবাধ্য যখন তখন যেখানে সেখানে এসে হামলে পড়ে, বুভূক্ষু, বর্তমান খেয়ে ফেলে সব।
আকাশ যেন মাথার চাদর, বিছানায় গড়াগড়ি করে চাদরের নীচে লুকিয়ে পড়া।
দেউড়ি তে আরেক কংকাবতী ছিলো মনে হয় 🙂
মানচিত্র তো বদলেই যাবে একদিন, দুইদিন কিংবা কএক মূহুর্ত পরে।
অনেকদিন পরে ফিরেছি বলে কিনা জানিনা, আমি যেন অনেকদিন পরে তোমার এমন লেখা পড়লাম। প্রত্যেকটি চমৎকার। প্রিয় প্রিয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
গল্পটা না হয় তুমি-ই লিখে ফেলো। আজকাল ধৈর্য নেই গল্প লেখার।
ভালো লিখি নাকি তিলোত্তমা? তোমার চোখের পাওয়ার ঠিক আছে তো? আর মাথার স্ক্রু টাইট? :p 😀
সময়ই তো আগুণে পোড়ে গো তিলোত্তমা। একেকটি স্মৃতি কোনোটা পোড়ায় আর কোনো কোনোগুলো আনন্দে ভাসায়। এটা অবশ্য মানলাম প্যারালাইজড মন তো অবশ থাকে।
তিলোত্তমা আমি আবার ষ্টোররুমের জিনিস রেখে দিয়ে আবার ফেলে দেই। প্রথমে রাখার কারণ ফেলতে খারাপ লাগে। তারপর ষ্টোর যখন গুছাতে যাই, তখন কি পরিমাণ গার্বেজের ব্যাগে জমা হয় ভাবতেই পারবেনা। 😀
ছুঁয়ে দিতে পারছো না? এই দেখো হাত বাড়ালেই আমি ওই দূরের মায়ায় গাল বুলোতে পারি
আমার কাছে মেঘ যখনই আসে,
তখনই বৃষ্টির নিমন্ত্রণ পাই
বৃষ্টি মানেই আকাশ আমার এবং তোমার।
দিব্যি স্পর্শ করতে পারি দূরত্ত্ব তখন নিঃশ্বাসে এসে ঠেকে। —————-আকাশ আমার কাছে এমনই গো তিলোত্তমা। তোমার এই “আকাশ যেন মাথার চাদর, বিছানায় গড়াগড়ি করে চাদরের নীচে লুকিয়ে পড়া” কথাটি লিখিয়ে নিলো এ কয়টি লাইন এখুনি।
তাইতো মাথায় আসেনি! ঠিক বলেছো দেউড়িতে আরেক কঙ্কাবতী ছিলো নিশ্চিত। এসব রাজকুমারদের চরিত্র কি কখনো বদলেছে?
তিলোত্তমা মনের মানচিত্র বদলে গেলে ভয়ঙ্কর বিপদ। সম্পর্কের বারোটা বাজে, তাই না?
আসলে তুমি এতোদিন আসোনি, তাই ভালো লেগেছে। আমি তো সেই একই আগডুম-বাগডুমই লিখি। 😀
শারদ শুভেচ্ছা তিলোত্তমা। -{@