যে জেলার তাঁর জীবন বাঁচিয়েছিলেন, সেই জেলারকে বঙ্গবন্ধু কখনো ভোলেননি। ১৯৭৪ সালের জুন মাসে ভূট্টো সাহেব যখন ঢাকায় আসেন, বঙ্গবন্ধু ঐ জেলারকে তাঁর ব্যক্তিগত অতিথি হিসেবে দাওয়াত করেছিলেন।
দেশের জনগনকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও সেনা ছাউনির তলে বসে ক্ষমতা দখলের কুচিন্তায় বঙ্গবন্ধুর নামে তারা কুৎসা রটাতে শুরু করে এই বলে যে, বঙ্গবন্ধু দেশকে দেশকে ভারতের সাহায্যে একটা হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু দেশকে বহিঃশক্তির আক্রমন ও দেশকে গড়ার লক্ষ্যে ভারত পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায়, ভারতের সংগে পঁচিশ বছর মেয়াদি এক মৈত্রী ও পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তারা ভুলে যান পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরনের কথা। দেশ ভাগের পরে তৎকালীন সরকার থেকে শুরু করে সামান্য বিহারিরা যে আচরন করত তা ছিল আর্য যুগে ব্রাহ্মণদের সাথে ক্ষত্রিয়দের সাথে তুলনা করার মতো। যে বাংগালী একটা সর্বাত্মক জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল, মানুষ আশা করেছিল সব বৈষম্য দূর হবে এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি থাকবে না। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসন ব্যবস্থায় কলকাঠি নেড়েছে মূলত পাঞ্জাবের সামরিক বেসামরিক আমলা আর পুঁজিপতিরা। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালীদের তারা উপনিবেশ মনে করত। শাসন ও শোষণের জন্য তারা ধর্মকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করেছে। এদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা সহজিয়া ভাব আছে, তারা ধর্মপ্রাণ কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। মূলত এ কারণে তাদের রাজনীতিতে ধর্মের বন্ধন ছিঁড়ে গেছিল। তার জায়গায় বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের উত্থান হয়েছিল। এর নিট ফল হল বাংলাদেশ নামের একটি নতুন রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ দিতে হয়েছে।
কিন্তু এত মানুষের প্রাণের বিনিময়ে সদ্য যুদ্ধ বিদ্ধস্ত একটি স্বাধীন দেশে এইসব ধর্মের গুরুরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিল। তারা দেশ গড়ার থেকেও মত্ত ছিলেন ধর্ম নিয়ে।
১৯৭২ সালে ১৪ই এপ্রিল ভাসানীর সভাপতিত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির একটা সভা হয় টাঙ্গাইলের সন্তোষে। দলের সংগঠকদের এই সভায় এক প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, “সংবিধান হবে ধর্ম নিরপেক্ষ, গণতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক। যা ছিল এই যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু ১৯৭২ সালে ৮ই অক্টোবর ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় তিনি সংবিধান তৈরিতে একটি দাবি তোলেন। তিনি বলেন,”কোরআন সুন্নাহ, ওয়াজিব, শরিয়ত ও হাদিসের খেলাপ করে কোনো শাসনতন্ত্র মুসলমানের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া যাবে না। যদি তা হয়, তবে মুসলমানগণ একবিন্দু রক্ত থাকতে তা মেনে নেবে না।” একেই বলে উল্টোযাত্রা। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটি সমান্তরাল ধারা চালু হলো আবার।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন উদার ক্ষমাশীল একজন মানুষ। যার প্রমা্ণ তিনি যুদ্ধোত্তর সমাজে “রি-এন্টিগ্রেশন”-এর একটি ধারা চালু করেছিলেন। এখন বর্তমানে এই কনসেপ্টটা আন্তার্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। বঙ্গবন্ধু দূরদর্শী রাজনীতিবিদ ছিলেন। কিন্তু যাদের তিনি ক্ষমা করেছিলেন তারা তার প্রতিদান দেননি। বরং বার বার ষড়যন্ত্র করেছে। আর তাঁর আশেপাশে থাকা ক্ষমতা লোভী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী চাটুকারের বঙ্গবন্ধুকে জনগন থেকে আলাদা করে ফেলেছিল। যার জের আমরা এখনো টানছি।
– ‘সারা ঘর লেপি আই
দুয়ারত আই আছাড় খঅন”। মানে হলোঃ সমস্ত ঘর লেপে দরজায় এসে আছাড় খাওয়া।
অর্থাৎ, এত বছর ধরে তিল তিল যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে এত লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগ এক নিমিষেই ধূলিস্যাৎ হয়ে গেল।
বঙ্গবন্ধু দেশ গড়তে চেয়েছিলেন ধর্মণিরপেক্ষ ভাবে। তিনি গণপরিষদে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বলেছিলেন,” ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাই না। আমার আপত্তি হলো, এই যে ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না”।
বছরের পর বছর আমরা দেখেছি ধর্মের নামে বেঈমানি, ধর্মের নামে শোষন, খুন, ব্যভিচার।বঙ্গবন্ধু একটি জাতীয় রাষ্ট্রের স্থপতি হতে পেরেছিলেন কিন্তু তিনি জানতেন, জনমন বা মনস্তত্ব রাতারাতি বদলানো যায় না। তাই পদে পদে তিনি প্রমাণ দেখিয়েছেন বাংলার জনগনকে। তিনি ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন,’ইসলামি ফাউন্ডেশন’।
পৃথিবীতে ভিল সিদ্ধান্ত নেন না এমন মানুষ বিরল। আমরা যাকে উপরে উঠতে দেখতে চাই, ভালবাসি, তার ভুলগুলো শুধরে দিয়ে তার হাত ছেড়ে না দিয়ে বলি,” এগিয়ে চল”। কারণ তার হাত ধরেই আমারা পথ চলতে চাই। কখনো যদি হোঁচট খায়, শুধু তাকে ধরে রাখব কিন্তু এখানেও চাটুকারেরা আষ্টেপৃষ্টে ধরে। বর্তমানে সেই প্রেক্ষাপটের শুধু দিক পাল্টেছে। চাটুকারেরা সমালোচনা কারীদের বর্তমানে আঙ্গুল তুলে বলছে,” তোমরা জামাত শিবির, তোমরা রাজাকার”। তাই সভ্য সমাজের এখন অনেকেই হয়ে যায় স্পিকটি নট। গত দুবছর আগে আমি পহেলা বৈশাখে পান্তা ভাতের সাথে ইলিশ খাওয়াকে নিয়ে ফেসবুকে একটা পোষ্ট দিছিলাম। তো সেই পোষ্ট দেওয়াতে অনেকেই আমাকে সরাসরি জামাতি মনোভাব বলে তিরস্কার করে। বাধ্য হয়ে সেই পোস্টটি ডিলেট করি। আসলে সমাজটা হল, “হুজুর বলিল চমৎকার,চামচা বলিল, চমৎকার সে তো হতেই হবে যে হুজুরের মতে অমত কার!” গতকালও একটা পোস্টে এই মন্তব্য শুনলাম। তাই এই লেখার ফাঁকে এইটুকু অংশ দিতে বাধ্য হলাম।
যাই হোক, দেশটাকে অস্থিতিশীল করতে এই চাটুকারেরা উঠেপড়ে লেগেছে। মহাভারতে কৃষ্ণ-কংস উপাখ্যান আম অনেকেই জানি,”তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে”।
এই অংশের কিছু লেখা প্রথম আলোর কলাম থেকে এবং বাংলাদেশ রক্তের ঋন বইটি থেকে নেওয়া হয়েছে।
চলবে,,,,,,,,
আমি সেই প্রথম থেকে, আমার এই ছোট লুমিয়া ফোন থেকে পোষ্ট গুলি লিখি, তাই অনেক বানান অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়। আমি জানি বানান ভুল দেখলে রাগ লাগে। আমারো রাগ হয় । তাই সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
১৭টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
চমৎকার ধারাবাহিক বর্ননা।চামচাদের জন্য মানুষ অমানুষের রূপ নেয় আর ভালো লোকেরা বিপদে পড়ে।চলুক (y)
মৌনতা রিতু
ধন্যবাদ ভাই। চেষ্টা করব। এমন সাহস দিয়েন।
তেলাপোকা রোমেন
আমি সেই প্রথম থেকে, আমার এই ছোট লুমিয়া ফোন থেকে পোষ্টগুলি লিখি, তাই অনেক বানান অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়। আমি জানি বানান ভুল দেখলে রাগ লাগে। আমারএ রাগ হয় । তাই সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
বানান এর চেয়ে পোষ্টের গুরুত্ব বেশী। আমি সামুতে টানা তিনবছর মোবাইল দিয়ে লিখেছি। বাংলা টেক্সট লেখা যেতোনা তখন আমার ফোনে। ইংরাজী লিখে নেট থেকে বাংলায় টেক্সট কনভার্ট করে নিতাম তখন। প্যারাময় ছিল 🙂
মৌনতা রিতু
ধন্যবাদ ভাই, শুভকামনা জানবেন।
ছাইরাছ হেলাল
কই, তেমন বানান ভুল তো চোখে পড়ে না,
এসব না ভেবে লিখতে থাকুন,
একটি কঠিন বিষয় নিয়ে লিখছেন এটাই অনেক পাওয়া।
মৌনতা রিতু
হ, শশুরবাড়ি, বাপের বাড়ির লোক সব একজোট হইছে।
এমন এক মাথামোটাকে এতো সাহস দিচ্ছে।
ধন্যবাদ ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
অবশ্য মাথা মোটা না হলে এত্ত পড়াশোনা এত্ত পরিশ্রম
কেমনে করে!!
নীলাঞ্জনা নীলা
বাঙালিদের একটা বাজে স্বভাব হলো, “কান নিয়েছে চিলে।” আর সেই চিলের পেছনেই দৌঁড়ায়।
বাংলাদেশকে ভারত নিয়ে যাবে এটা আমি শুনছি যখন রাজনীতি সম্পর্কীয় খবর বোঝা শিখছি। তারপর এও শুনলাম আমেরিকা আমাদের দেশকে নিয়ে যাবে। আমার এক নানা বলেছিলেন বাংলাদেশকে ফ্রী দিলেও কেউ নেবেনা। উনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। জানতে চেয়েছিলাম কেন কেউ নেবেনা নানা? উনি বলেছিলেন, “বাঙালীর মতো ঝামেলাপূর্ণ মানুষকে আল্লাহও ঠিক করতে পারেনি, আর করবে মানুষ?” উনি অনেক কষ্ট নিয়ে এ পৃথিবী থেকে চলে গিয়েছিলেন। উনার মুখে এ কথাটাও শুনেছিলাম শেখ মুজিব যদি বেঁচে থাকতেন দেশটা আজ অন্যরকম হতো।
চলুক আপু।
মৌনতা রিতু
হা হা হা, সত্যি বাঙ্গালীকে কেন সবাই এতো ভয় পায়!
ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
বাঙালী বলে এক, করে আরেক। এসব মানুষকে ভয় কে পাবে না বলুন? 😀
রিমি রুম্মান
আগের দু’টো পর্ব মিস করেছি। সময় পেলেই পড়ে ফেলব। কত কষ্ট করেই না আমরা এক একটি লেখা লিখি সবাই। আমার মনে হয় লেখাটি সকলে দেখে, কিন্তু এর পিছনের প্যরাময় গল্পটুকু পিছনেই পড়ে রয়… তাই না ?
মৌনতা রিতু
ধন্যবাদ রিমি আপু। ভাল থেকো।
শুন্য শুন্যালয়
আপু এইকারনেই আপনার মন খারাপ দেখছি দুদিন ধরে? ওসবে মন খারাপ করতে আছে? জবাব দিয়ে দেবেন সাথে সাথেই তাহলেই মন ভালো হয়ে যাবে।
আপু ভারত আছে বলেই এখনো মুখে তুফান ঝড়ানোর লোক আছে দেশে, পাকির পক্ষে না বলতে পারি, ভারতের বিপক্ষে বলি এই হচ্ছে তাদের ধারনা।
একটা সদ্য নতুন দেশ চালানো কত কঠিন ছিলো, তা কী কেউ তখন বোঝবার চেষ্টা করেছে? 🙁
মৌনতা রিতু
সত্যি মানুষ যে কেন এতো রুক্ষ হয় !
মন একটু খারাপ তো হবেই । বাদ দাও।
কেমন আছ ?
শুন্য শুন্যালয়
আমি আজকে ভালো নাই, মন খারাপ। মন খারাপের কারন খুঁজে পাচ্ছিনা। 🙁
মৌনতা রিতু
চলো, ঘুরে আসি। সবাই বলে, আমি নাকি আড্ডার মধ্যমনি। কিছুতেই তোমার মন খারাপ হতো দিব না।
মেহেরী তাজ
ভাবী আমরা স্বার্থপর জাতি। তা না হলে জাতীর পিতার হত্যাকারীদের বিচার হতে ৩৫ বছর লেগে যায়?
মোবাইলে ব্লগ লেখা খুব কষ্টকর ভাবী আমি জানি!