ক্লাস করে বাসায় ফিরছিলাম। কিছুক্ষন পর মনে হইলো কেউ একজন আমাকে ফলো করছে। তাও আবার একটা মেয়ে!
যে দিন কাল পড়ছে বিপদ আপদ শুধু আমার চারপাশে ঘুরে। এ মেয়ে আমাকে ফলো করছে কেন? কি কারন হতে পারে। দেখে ভদ্র মনে হচ্ছে! আরে ধুর! ভদ্র হলে আবার আমাকে ফলো করবে কেন! ভদ্র মেয়েরা তো কাউকে ফলো করে না। নিশ্চয়ই এর কোন মতলব আছে। দেখা যাবে একটু পর দৌঁড়ে মেয়েটা আমার কাছে এসে বলবে…..
-এই যে শুনুন! আপনাকে আমার বয়ফ্রেন্ডের মতো লাগছে। আপনি কি আমার বয়ফ্রেন্ডের জমজ ভাই?
-আমি বলবো আপনার মাথা ঠিক আছে?আর মেয়েটা রাগে কটমট করতে করতে ব্যাগ থেকে একটা ছুরি বের করে বলবে, ” ওই! শালা কি আছে বের কর ” …
বিপদ আসার আগেই এখান থেকে কেটে যাওয়া দর্কার।আমি দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম। মেয়েটা প্রায় দৌঁড় দিলো আমার দিকে। আমারও কি দৌঁড় দেয়া উচিৎ! কিছু বুঝে উঠার আগেই মেয়েটা আমার কাছে এসে বললো…
– এই যে হ্যালো! আপনি কি ভয় পাচ্ছেন নাকি??
-কেন! আমি ভয় পাবো কেন! আমি তো চোর, গুন্ডা না, আর আপনিও তো পুলিশ বা বাঘ ভাল্লুক না।
-ছিন্তাইকারীনি হতে তো পারি।
-মানে? আমার কাছে কোন টাকা পয়সা নাই। দেখছেন না হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছি।
-হি হি হি! আরে। আমি মজা করলাম। আপনি ভয় পেয়েছেন তবে নিজের বুদ্ধি দিয়ে সেটা ঢাকতে চাইছেন।
-আপনার হাসি সুন্দর। আমার কাছে কি চান?
-চাই বেশি কিছু না। আমার বাদাম খেতে ইচ্ছা করছে। আমি বাদাম কিনবো, আপনি বাদাম ছিঁলে আমাকে খাওয়াবেন।
-ইয়ার্কি করেন! আমি কেন আপনাকে বাদাম ছিঁলে খাওয়াবো! আপনি একা একা খান। আমার এতো টাইম নেই।
-ইয়ার্কি না। আপনাকে আমার ভালো লেগেছে। কিছু সময় কাটাতে চাচ্ছি। দেখি প্রেম হয়ে যায় কিনা।
-কি অদ্ভুত! আপনার ভালো লাগলেই হবে নাকি! আপনাকে আমার ভালোলাগছে না। বিউটিপার্লার থেকে সাজুগুজু করে আসলেই কেউ সুন্দরী হয়ে যায় না।
-আরে আপনি এত ভ্যাদা কেন! আমি সাজুগুজু করি নাই। আমি এমনই। চাইলে ছুঁয়ে দেখতে পারেন। কোন আটা ময়দা পাবেন না।
-আমি মেয়েটার গালে একটা হালকাগুতা দিলাম। কিছুই হলো না। আমি বলিলাম আঠালো আটা ময়দা লাগাইছো! এজন্যই উঠে না।
-মেয়েটা খিল খিল করে হেসে দিলো। সে হাসি দেখে আমার বুকে চিন চিন ব্যথা অনুভব হইলো। মেয়েটা বললো! তাই! আচ্ছা! আমার ব্যাগটা ধরেন। বেগে পানি আছে। আমি মুখ ধুঁয়ে নিচ্ছি।
– হু! আমি ব্যাগ ধরি আর তুমি চিৎকার দিয়া বলো আমি ছিন্তাইকারী! তারপর…
-উফ! থামেন তো! এতো সন্দেহ করলে হয় কি করে! ধরুন তো!
মেয়েটা মুখ ধুঁয়ে নিলো। তবে চেহারা এবার আরো সুন্দর হয়ে গেল! কি অদ্ভুত! এমনও হয় নাকি!
আমি মেয়েটাকে বাদাম ছিঁলে তার হাতে দিচ্ছি। আর সে খাচ্ছে। কিছুক্ষন পর বললো ” হাতে দিচ্ছো কেন! খাইয়ে দাও ”
-আমি কি তোমার স্বামী নাকি বয়ফ্রেন্ড!
-তুমি আমার সব।
নাহ্! এবার টেনশন হচ্ছে! আমি নিশ্চয়ই কোন কঠিন বিপদে পড়তে যাচ্ছি। মেয়েটা কি চাচ্ছে আসলে! ভাবতে ভাবতে ভাবতে কয়েকজন লোক এলো। তাদের দেখে মনে হইলো এরা মানুষ মোটাতাজা করন বড়ি খেয়ে এসেছে। একেকজন এককেটা “বিগশো” টাইপ। সাথে তিনজন মহিলা।
তারা এসে খুব বিনয়ের সাথে বললো “ভাইয়া আপনি কে?
-আমি জহির। আপনারা কে?
-জ্বী! আমরা নিপার পরিবারের লোকজন।
-নীপা কে?
-সেকি! আপনি যার সাথে বসে আছেন সেই তো নীপা।
আমি নীপার দিকে তাকালাম। নীপার হাসিমাখা মুখটা শুকনা হয়ে গেল। নীপা যেন তাদের দেখে ভয় পেল!
আমি বলিলাম ….
-তা আপনারা এখানে কেন?
-আসলে নীপা মানসিক ভারসাম্যহীন তো। বাসা থেকে বের হয়ে গেছিলো। আপনাকে ধন্যবাদ ওর খেয়াল রাখার জন্য।
নীপাকে তারা নিয়ে যাচ্ছে আর আমি চেয়ে আছি। মেয়েটাকে সবেমাত্র ভালোলেগে উঠেছিলো আর এখন ভালালাগা অদ্ভুত একটা হাহাকারে রূপ নিচ্ছে 🙁
৩২টি মন্তব্য
ইঞ্জা
মনটা কেমন যেন বিষাদ হয়ে উঠলো, এমনো কি হয়? 🙁
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
দুঃখিত!
জ্বরের ধরছিলো! তাই রিপলাই লেট এ দিচ্ছি!
আমাদের চারপাশে অনেক কিছুই হয়! সব কি আর আমরা জানতে পারি !
শামীম আনোয়ার আল- বেপারী
সত্যি এমন ক্ষণিকের ভালো লাগাটা মনের মাজে ভালোবাসা হয়ে যায়, যা শুদু বুকের মাজে চিন কইরা ওঠে। না পারাযায় বলতে, না কিছু করতে, দূরবীনের গেলাস এ চোখ আটকে যায়।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
সরি ফর লেট রিপলাই।
চমৎকার কথা বলছেন! কিছু কিছু ভালোলাগা হৃদমাজারে জমে যায়! জমে জমে চিন চিন ব্যথা ধরায়।
শামীম
দেরি হইছে তাতে কোনো দুঃখ নেই , ভালো হয়ে উঠেছেন তাতেই আনন্দ।
মোঃ মজিবর রহমান
চিন! চিন!
চিন চিন নেবেন
প্রেমে পরবেন
বাদাম ছিলে খাওয়াবেন
মনে গাথবেন।
এই ভাই শেষে কষ্ট দেন কেন?
আমারে বুঝি কষ্ট দিতে ভাল লাগফে।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
জ্বরের জন্য পরে জবাব দিচ্ছি।
দুঃখিত।
চিন চিন ব্যথা!
খামখেয়ালীপনা!
কিছু কিছু ব্যথা আপনা আপনিই জমে যায়!
আমাদের হাত থাকে না।
কষ্ট না থাকলে যে আনন্দটা বোঝা মুশকিল হয়ে যায়!
মোঃ মজিবর রহমান
তাই, সত্যি।
-{@
জিসান শা ইকরাম
এমন ঘটনায় হাহাকার, চিনচিনে ব্যথা অনুভুত হওয়াই স্বাভাবিক,
খুব ভাল একটি ছোট গল্প পড়লাম,
ছোট গল্প এমনই হওয়া উচিৎ।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
সরি ভাই for late reply
কিছু হাহাকার চিন চিন ব্যথা দিবেই। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হইলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
ব্যাপারনা, ব্যস্ততা সবারই থাকে।
মিষ্টি জিন
মিষ্টি এবং মন কেমন করা সুন্দর একটা ছোট গল্প .. ভাল লেগেছে..
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
মিষ্টি জিন! অদ্ভুত সুন্দর নিক!
ধন্যবাদ আপনাকে!
ভালো থাকবেন।
লীলাবতী
বিচ্ছেদ আছে গল্পে। তবে খুবই কিউট একটি গল্প পড়লাম।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
হুম।
বিচ্ছেদ, জোড়া লাগানো!
এধরনের গল্প খুব একটা আসে না আমার।
খুবই কম আসে।
ধন্যবাদ লীলাবতী।
জ্বর ছিলো তাই লেট হলো রিপলাই দিতে।
লীলাবতী
আম্মু অসুস্থ্য ছিলেন,তাই ব্লগে না আসায় লেট হলো আপনার জবাব পড়তে :).
আবু খায়ের আনিছ
আহারে! শেষ পর্যন্ত এই ছিল নায়ক এর কপালে। লেখক এর দয়া মায়া কিছু নেই নাকি? লেখক ভাই, একটু মায়া দয়া প্রদর্শন করুন। 😀
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
নিজের জগত মায়াহীন তাই মায়াহীনতা চলে আসে! তবে আপনি যখন বললেন এরপর থেকে যথেষ্ঠ মায়া দয়া প্রদর্শন করা হইবে।
আবু খায়ের আনিছ
😀
ছাইরাছ হেলাল
ছোট গল্প ছোটই হয়,
ভাল লাগল পড়ে,
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
হুম!
ছোট গল্প ছোট হয়!
তবে ব্যথাগুলা বড় বড়।
ধন্যবাদ হেলাল ভাই।
ব্লগার সজীব
সমাপ্তির টার্নিং অসাধারন ভাইয়া।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
অসাধারন মন্তব্য করছেন। একদম চিন চিন ব্যথার জায়গায়।
ধন্যবাদ সজীব ভাইই।
ভালো থাকবেন।
মৌনতা রিতু
আহারে! কল্পনা জমে উঠেছিল। কেন এত তাড়াতাড়ি নিপার পরিবারের আগমন ! চমৎকার এক খান ছোটগল্প। মাঝে মাঝে এমন দু একজন ফলো করুক। চলুক বাদাম ছিলে দেওয়া।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
হা হা হাহা!
একজনের ব্যথাই সারে না! আবার আরো!
তবে বাদাম ছিঁলে খাওয়ানো যায়!
জ্বরের কারনে লেট রিপলাই দিলাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
চমৎকার একটি গল্প। (y)
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
ধন্যবাদ নীলাপু।
ভালো থাকবেন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বিরহেই ভালবাসার প্রকৃত রূপ পাওয়া যায়।সুন্দর গল্প -{@
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
ঠিক বলেছেন।
বিরহ ছাড়া ভালোবাসা নিরুপন করা যায় না।
ভালো থাকবেন।
শুন্য শুন্যালয়
আপনি দারুন গল্পকার 🙂 লেখকের সাথে নীপার কিন্তু ভালোই মানাতো, দুইজনই মেন্টাল, নইলে সত্যি সত্যি বাদাম ছিলে খাওয়াচ্ছিল? 🙂 হাসি, কিংবা মন খারাপ করিয়ে দেয়া সবতেই দেখি পন্ডিত আপনি। ভাল্লাগছে গল্পটা।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
আপনাকে ধন্যবাদ।
তবে গল্পে কিন্তু আমি নেই।
আছে আরেকজন……
শুন্য শুন্যালয়
আমিতো লেখকের কথা বলছিলাম, যে আমি আমি করে বলছিলো, আপনাকে বলিনাই। আপনি সুস্থ 🙂