এবারে আসল ঘটনায় আসা যাক ।
2015 সালের প্রথম দিকে একটা মোবাইল সেট কিনেছিলাম । কিছুদিন পরেই হঠাৎ ই ডিসপ্লে নষ্ট । কাস্টমার কেয়ারে দিয়ে আসলাম । এরপর শুধুই অপেক্ষা দিন যায় ,সপ্তাহ যায় , মাস যায় আমার মোবাইল আর ঘরে ফেরে না । হেল্প লাইনে ফোন দিলে তারা বারবার ডেট দেয় আবার সময় চেয়ে নেয় । এইভাবেই চলছে । তারপর ……… একদিন ………..
মেজাজ সেদিন চরমে আছে । ফোন দিলাম কাস্টমার কেয়ারে । আজ ওদের একদিন আর আমার যে কয়দিন লাগে ! প্রথমেই সালাম দিয়ে মুখস্হ বুলি বলতে লাগল ।
আমি বললাম ভাই আপনাকে বিশেষভাবে জানিয়ে রাখি । আপনার এবং আমার এখনকার সমস্ত কথা রেকর্ড করা হচ্ছে । আপনাকে এবং আপনার কোম্পানি কে এই কথাবার্তার জবাবদিহী করতে হবে । এবং আমি মনেকরলে প্রয়োজন বোধে বিশেষক্ষেত্রে এই সম্পূর্ণ অডিও টি ফেসবুক , ইউটিউবে জনস্বার্থে আপলোড করা হতে পার । অতএব যা বলবেন সাবধানে । (এতক্ষণে ওনার অবস্থা হালুয়া টাইট হয়ে গেছে ধরে নিচ্ছি )
আমার এই হ্যান্ড সেট টা গত এক মাস যাবত আপনাদের সার্ভিস সেন্টারে পড়ে আছে । বিভিন্ন মনগড়া অজুহাতে আপনারা আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করছেন মাত্র । আমার কষ্টে উপার্জিত টাকায় কেনা মোবাইল আমি কেন আপ�নাদের সার্ভিস সেন্টারে ফেলে রাখব ?
আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত স্যার আপনার এই সমস্যাটির জন্য । আমি দেখতে পারছি আপনি এই সমস্যার জন্য অনেকবার ফোন করেছেন । আমাদের অয়্যার হাউজে আপনার সেটের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল না থাকায় একটু সময় লাগছে ।আমরা অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব আপনার হ্যান্ডসেট টি ডেলিভারি দেয়ার চেষ্টা করব ।
আচ্ছা ঠিক আছে । আপনি স্বীকার করেই নিয়েছেন আমি অনেকবার সমস্যা টির জন্য আপনাদের ফোন করেছি । কিন্তু কাজ হয়নি । অর্থাৎ আপনারা গ্রাহকদের সমস্যার তেমন মূল্যায়ন করেন না ।আপনাদের এই মডেলের সেট এখন বাজারে আছে আপনারা ইচ্ছে করলেই নতুন হ্যান্ডসেটের পার্টস আমার টা তে লাগিয়ে দিতে পারেন । আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি
ধরুন আপনাদের একটা সেটের মূল্য পনের হাজার টাকা । আমি আপনাদের বললাম ভাই বিশ্বাস করুন আমার কয়েক লাখ টাকার সম্পদ আছে । আমি বড় চাকুরী করি এই মাসে একটু পারিবারিক সমস্যায় আছি । আমি আপনাদের ঐ পনের হাজার টাকার বদলে দু হাজার টাকা কম দিব । বিশ্বাস করুন আর মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই আপনাদের টাকা পরিশোধ করে দিব । এইজন্য আমি আপনাদের কাছে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত । যত দ্রুত সম্ভব আমি আপনাদের টাকা অবশ্যই পরিশোধ করব ।
এই শর্তে আপনি আমাকে একটা সেট দিতে পারবেন ?
দুঃখিত স্যার । সেক্ষেত্রে আপনাকে কয়েকদিন অপেক্ষা করে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেই মোবাইল হ্যান্ড সেট টি নিতে হবে ।
তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো
আপনি বা আপনারা আমার ব্যাক্তিগত সমস্যা দেখবেন না । আপনারা সেটা দেখতে বাধ্য নন । তাই তো ?
তাহলে আমি কেন আপনার স্বার্থে , নিজের সমস্যা বাদ দিয়ে আপনাদের সমস্যা দেখব ?
টাকা দিয়ে সেট তো আর আপনাদের কাছে ফেলে রাখার জন্য কিনি নি ?
প্রতিবার আপনারা সময় দেন । এবারে আমি সময় দিচ্ছি । দুই দিনের মধ্যে কোন সঠিক সমাধান না আসলে এই অডিও টা ইন্টারনেটে পেয়ে যাবেন । যা আপনার এবং আপনাদের কোম্পানির জন্য খুব একটা শুভ হবে না । ভুলে যাবেন না আপনি প্রথমেই আপনার পরিচয় দিয়েছেন । মানুষ ঠকানোর এই ব্যাবসা বাদ দিন ।
কিচ্ছুক্ষণ নিরবতা …….
জ্বী স্যার আপনার সমস্যাটার জন্য আমি স্পেশাল ভাবে আমাদের হেড অফিসে এক্ষুনি একটা রিপোর্ট দিয়ে দিচ্ছি ।
এরপর
একদিন পরেই । ওদের অফিস থেকে ফোন এল আপনার হ্যান্ড সেট টি রিপ্লেস অপশন আসছে । আপনি আজ অথবা কাল এসে নতুন একটা সেট নিয়ে যাবেন । ধন্যবাদ ।
ওরা পুরনো সেটের বদলে আমার সেটের আপডেট ভার্সন দিয়েছিল যার মূল্য ছিল আগের টার থেক অন্তত এক হাজার টাকা বেশী । ক্যামেরা ও 13 MP । সেটা দিয়েই এখন ছবি তুলি ।
আসলে সিস্টেম টাই এমন হয় বাঁশ দিন নয়তো খান ।এখন ঠিক করুন আপনি কোনটা করবেন । সিদ্ধান্ত আপনার বুদ্ধি আমার ।
সঙ্গত কারনে মোবাইল কোম্পানির নাম উল্লেখ করলাম না । কারণ তারা আমার কথা রেখেছিলো ।
২১টি মন্তব্য
ইকবাল কবীর
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একদম খাটি কথা। ভাল লাগল লিখাটি পড়ে, সিস্টেমটা শিখে রাখলাম, ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে। 😀 😀 😀
সঞ্জয় কুমার
ধন্যবাদ । আপনাদের কিছুটা কাজে আসলেই লেখাটি সার্থক
জিসান শা ইকরাম
বাঁশ বিষয়ক এই পোষ্ট তো মনে গেঁথে গেলো
এই বুদ্ধি মস্তিস্কে সুপার গ্লু দিয়ে লাগিয়ে রাখলাম, কামে দিবে 🙂
হ্যাঁ সিষ্টেমটাই এমন,
তবে বাঁশ দেয়ার মজাই আলাদা 😀
সঞ্জয় কুমার
উপায় নেই । হয় দিতে হবে নয় খেতে হবে ।
জিসান শা ইকরাম
খেতে কে চায়? দেয়াই উত্তম।
ব্লগার সজীব
সাবলীল উপস্থাপনায় বাঁশ প্রদান কাহিনী চমৎকার লেগেছে। দারুন আইডিয়া পেলাম দাদা 🙂 ধন্যবাদ।
সঞ্জয় কুমার
উপায় নেই । বুনো ওলের সাথে বাঘা তেঁতুল না হলে ঠিক জমে না ।
লীলাবতী
বাব্বাহ আপনার মাথায় তো অনেক বুদ্ধি 🙂 বাঁশ দেয়ার সিস্টেমটা অভিনব। কথা রেকর্ড করার ভয় দেখিয়ে কর্ম সম্পাদন। তবে আপনার মত এমন করে কেউ পারবে কিনা সন্দেহ আছে। পোষ্ট টা দারুন হয়েছে (y)
সঞ্জয় কুমার
কথা আসলেই রেকর্ড করেছিলাম ।
প্রচণ্ড বিরক্ত হয়েছিলাম ওদের উপর ।
খসড়া
কি বলব, খুব মেজাজ খারাপ অবস্থায় আছি। এই ভাবেই প্রতারণা করে যাচ্ছে ব্যাংকগুলিও।
সঞ্জয় কুমার
তাই নাকি ঘটনা খুলে বলেন তো । দেখি কোন বুদ্ধি বের করা যায় কি না
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ব্রাবো ব্রাদার!!! এই না হলে হয়? মজা পেলাম।
আমি একটা থিওরিতে বিশ্বাস করি এবং মেনেও চলি। তাহলো “যে যেমন, তার সাথে তেমন।”
সঞ্জয় কুমার
একদম তাই । (y)
মোঃ মজিবর রহমান
সঞ্জয় দা, এবার আমি বলি বাঁশ কাকে বলে।
আমার ওয়াল্টন ফ্রিজ নস্ট হল দিলাম ফোন। দিনটি ছিল মংগলবার। কাল পাঠাব বুধবার এল না। বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে ফ্রিজ সারার লোক আসেনি। আমি ফোন দিলাম আগামি দুইদিন বন্ধ বলে আগামি রবিবার, আমার মাথায় নষ্ট শালায় কয় কি আমার যা আছে ফ্রিজে নষ্ট হবে। তখন বাসায় ছিলে নেট কানেকশন। কোম্পানির ওয়েব সাইটে ঠুকে কমপ্লেন অপশনে মাথা গরম করে ৫ বা ৬ টা মেসেজ। পরে উত্তর আর দিয়েন লক পাঠেবে।
সঙ্গে সংগেই মিরপুরের রুপ পুর ওয়ালটন অফিস থেকে ফোন ভাই আপনার বাসার ঠিকানা বলেন ফ্রিজ মেরামতের লোক যাবে।
১০০% ঘাটি হালাল মেডিসিন কাজ হল।
সঞ্জয় কুমার
ওদের এভাবেই দেয়া উচিত
মোঃ মজিবর রহমান
(y)
আর্বনীল
দাদা আপনার মনে হয় ওয়ারেন্টি ছিল… তাই দিছে…… আমার মাত্র তিনটা দিনের জন্য … তিনটা দিন আগে গেলেই আমিও বাশ দিতে পারতাম…
সঞ্জয় কুমার
হুম । এটা ঠিক । ওয়ারেন্টি শেষ হলে একটু সমস্যা
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আসলে সিস্টেম টাই এমন হয় বাঁশ দিন নয়তো খান (y)
সঞ্জয় কুমার
পরবর্তীতে আসছি নতুন ঘটনা নিয়ে
নীলাঞ্জনা নীলা
বাঁশ দিয়েছেন, খুবই খুশী হলাম।