মোপাইল ও জম্বি

ছাইরাছ হেলাল ১০ মার্চ ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ০৬:০২:৪৬পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৫২ মন্তব্য

মোনডা ভালো না, সুকানি হালার লগে বাজ্জে, ওঝা ধইরা লাডি চালানের ব্যবস্থা করতে হপে, হেইডা না পারলেও পেত্নী চালানের মাফ নেই, এইবার খাইছি তোরে!!

রাতের খাবার সেরে গুটিকয়েক যাত্রী বিড়ি ফুঁকছে আর প্রশস্ত বারান্দায় পায়চারী করছে ফুরফুরে মেজাজে নদীর মৃদুমন্দ বাতাসে, একজন সহজেই নজর কাড়েন, ইনি একজন জম্বি টাইপ, খোঁচা ছাগলদাড়ি, প্রচণ্ড ভুঁড়ি বাগিয়ে প্যাঁক প্যাঁক করে হাঁটছেন গলগলানো চিমনি হয়ে, লুঙ্গিটি বুকের কাছে বাঁধা।

সুবাস ছড়িয়ে পাশে আসন গ্রহণ করলেন, সভয়ে মনে মনে আনন্দিত হলেও মুখে ভাবে সপ্তমী,
দেখি, আপনার মোবাইলটি দেন তো।
অপ্রস্তুত হয়েও কুণ্ঠিত ভাবে মোবাইলটি তার হাতে তুলে দিলাম।
ওয়াও, নকিয়া ১১০০!! দারুণ একটি ফোন, আমারও ছিল, কত যে কাঁচাপাকা আম পেড়েছি এটি দিয়ে,
শুরু করে দিলেন টেপাটিপি, বিরতিহীন, ভয় পেলাম সবেধন নীলমণিটি অক্কা পাবে নাতো!!
উহ আর সহ্য হচ্ছে না, চিলের মত ছোঁ মেরে ফোনটি নিয়ে নিলাম,
আপনার গুলো যত খুশি যেমন খুশি টিপুন, আমারটি না।
এবারে হেসে দিয়ে বললেন, টিপলে কিছুই হয় না, বরং ফোন তাতে ভাল থাকে, ফাংশন গুলো চালু থাকে,
হঠাৎ বললেন, লুক লুক সুকানি, বারান্দার দিকে তাকান,
সুকানি না, সুকানির অ্যাসিস্ট্যান্ট,
ঐ একই কথা দেখুন দেখুন…………………………

লঞ্চের প্রশস্ত পথ এমুড়া-ওমুড়া ফাঁকা, এদিকে জম্বিটি হল্কা চালে এখনো গতিশীল, অন্য মাথায় লম্বাটে লিকলিকে আর একটি লোক, হাঁটাহাঁটি করছে, তবে একে অপরকে অতিক্রম করার সময় বিড়বিড় করে একে অন্যকে কী যেন বলছে, এভাবে কয়েকবার পরস্পরকে অতিক্রম করলো। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে ক্রমান্বয়ে বোঝা যাচ্ছে। অঙ্গভঙ্গী বলছে সে কথোপকথন কোন পড়ন কথা নয়, লিকলিকেটিকে নেশারু মনে হচ্ছে, গাঞ্জুটি না মদারু না অন্য কিছু তা বোঝা যাচ্ছে না, নেশারুটিকে হঠাৎ বেশ বেশি গতিশীল মনে হচ্ছে, দুপাশে কনুই মেলা দ্রুত এগিয়ে আসছে, সংঘর্ষ অনিবার্য, এদিকে জম্বিটি লুঙ্গি কাছা দেয়ার বিফল চেষ্টা করে লুঙ্গিটি হাঁটু অব্দি গুটিয়ে নিয়েছে, যুদ্ধংদেহী ভাব নিয়ে নব্বই সিক্কা ঘুষির জন্য মুঠি পাকিয়ে তৈরি। ছুটে আসছে টিংটিংয়ে-টি, এদিকে প্রস্তুত জম্বি, জম্বির হাতের নাগালের সামান্য বাইরে এসেই নেশারুটি দাঁড়িয়ে গেল, এখন এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে, যেন কিচ্ছুটি হচ্ছে না, হবেও না, হয়ও নি। হঠাৎ উল্টোমুখী হয়ে ভোঁ-দৌড়, এদিকে জম্বির চিৎকার, ঐ হালার পো হালা, ধাউড়, আয় আয়, ডরাইলি ক্যা??
শূন্যে ঘুষি ছুঁড়ছেন!! মুখে নিশুকুটুমম্বিতার তুমুল তুবড়ি!!!!

কেবিনের লোকজন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে,
হাসি চেপে রাখতে গিয়ে হেঁচকি উঠে গেছে। চোখমুখ অন্ধকার, সম্বিৎ ফিরে পেলাম একটি শিশুর ডাকে, আংকেল পানি খেয়ে নিন।
পানি খেয়ে শান্তি ও স্বস্তি পেলাম, কোথাও কেউ নেই, সুনসান নীরব নীরবতা, রাতের গভীরে নদীর বুকে।

৫৮৮জন ৫৮৮জন
0 Shares

৫২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ