অহম-পিউ-রিনী-তিরি কথোপকথন :
তিরি – হ্যা রে রিনী, বাসায় চলে আয়।ঠিক আছে কাজ গুছিয়েই আসিস।দারুণ খবর আছে।
অহম – এই নে কফি।
তিরি – ওরে কি লক্ষ্মী ছেলে!
অহম – হয়েছে তেল কম দে।রিনীকে আসতে বলেছিস কেন?
তিরি – তোর কি?
অহম – আমার আবার কি?
তিরি – তাহলে চুপ করে থাক।
অহম – তুই কি বুঝছিস খুব ঝগড়াটে হয়ে গেছিস? কেমন রূক্ষ্ণ-উগ্রতা তোর মধ্যে এসেছে। আমার ফুলটুসীটা ভাবছে ওর সেই আহ্লাদী-মিষ্টি-কোমল মনের মা কোথায় গেলো?
তিরি – তুই বলছিস এ কথা? বলবিই তো।আমার বদল তোদের নিতে কষ্ট হয়।তোদেরটা যে নিয়ে চলছি? একা একা তর্ক হয়না রে অহম।একা একা ভালোবেসে আজীবন পার করে দেয়া যায়, কিন্তু ঝগড়া-তর্ক একা হয়না।ঠিক আছে মানা করে দিচ্ছি রিনীকে আসতে।
অহম – স্যরি রে মা অন্যায় হয়েছে, ক্ষমা করো হে মাতে:! কথাগুলো সত্যি ঠিক বলেছিস। ভাবছি আজ আমি রান্না করবো। রিনীও আসছে।
তিরি – কার জন্যে রে?শুধু আমি আর রিনীর জন্যে?
অহম – না। পিউ আসবে তো, নিজের রন্ধনশৈলী দেখাতে হবে।
তিরি – উফ যা ভাগ। তুই এতো শয়তান রে ছাগল।
অহম – আহ কতোদিন পর নিজের আসল নামটা শুনলাম। তা পিউ এ নাম জানে তো?
তিরি – দেখ ফাজলামী কিন্তু একটু বেশী হচ্ছে। ওকে এসব জানাবো, তোর কি মাথার ঠিক আছে?
রিনী – কার মাথা ঠিক নেই?
অহম – চোরনীদের পাল্লা ভারী হলো এবার।
রিনী – তিরি – দেখ অহম…
অহম – একজন একজন করে বলুন মা জননীরা। একই সাথে ডাবল গিয়ার স্টার্ট করলে যে এক্সিডেন্ট হবে।শোন ফাজলামী না,আমার রান্না খেয়ে দেখ মন্দ লাগবে না।রিনী গুড়িয়াটাকে রেখে এলি কেন?নিয়ে এলেই পারতি!
রিনী – কি করে আনবো?স্কুল আছে না?
তিরি – ধ্যৎ, একদিন স্কুল না গেলে এমন কি?বেশী সিরিয়াস তুই।কিছুই করলি না এতো সিরিয়াসলি লেখাপড়া করে।আর ফাঁকি কতো রকমের ও কি কি তার সবটুকু বুঝিয়ে এখন একেবারে উঁচু আসনে বসে আম আর আঠি দুটোই চিবুচ্ছে।
অহম – আমার কথা বলছিস?দেখ যদি আমি ঝাড়ুদার হতাম,খুশী হতি?শুধু তোদের দয়া করতেই তো এই চাকরীতে এলাম।
রিনী-তিরি – দয়া মানে?
অহম – আবার একই সাথে?নাহ তোদের কেমিষ্ট্রি দারুণ।তোদের বরদের অবস্থা ভেবে কষ্টই হয়।
পিউ – তিরি আপু…বাসায় আছো?
অহম – ওই যে এলেন।বাবারে পলায়ন করি।শোন বলিস রান্নায় ব্যস্ত।
তিরি – পিউ এই যে এসো ডাইনিং রুমে।
পিউ – দরোজা খোলা দেখলাম।ওহ রিনী আপুও যে!কখন এলেন?
রিনী – এইতো বেশীক্ষণ না।
তিরি – রিনী লিভিং রুমে বিছানার পাশে টেবিলে আমার ঔষধটা আনবি?আর পিউ কিচেন থেকে নরমাল জল দেবে এনে?
রিনী – এই কিসের ঔষধ?মিথ্যে বললি কেন?
তিরি – আরে ঔষধ না বললে জল চাইতাম কি করে?দেখ তো ওই হাই’তেই কি থেমে আছে?নাকি দু’/একটা শব্দ ব্যয় হয়েছে?দুটাই মধ্যযুগের।হাসিস না রিনী।
রিনী – একটা কথা কিন্তু ঠিক,অহম আর কারো প্রেমে পড়তে পারবে না।ওই মেয়েটা এভাবে কেন যে করলো?
তিরি – ঠিক করেছে।সবগুলো পুরুষ শুধু মেয়েদের সাথে চিটিং করে,একটা তো ধাক্কা খাক।
রিনী – আরে ও আমাদের বন্ধু।তুই কেমন জানি হয়ে গেছিস!
তিরি – সত্যি বললে এমনই লাগে রে।
রিনী – তুই বদলে যাসনা।দাঁড়া দেখি।জল আনতে গিয়ে এতোক্ষণ যখন, তখন তো আনন্দেরই খবর।
অহম – আরে আপনি?কখন এলেন?
পিউ – এইতো।তিরি আপু ঔষধ খাবে,জল নিতে এলাম।
অহম – এখন ঔষধ!ওর সব ঔষধ তো খাওয়া হয়ে গেছে।হাহাহাহাহাহাহাহাহা…বুঝেছি।
পিউ – কি বুঝেছেন?
অহম – আমাদের যেনো দেখা হয়,কথা হয়।তাই এই জল।বুঝলেন কি পাগলদের সাথে আছি?
পিউ – আপনাদের বন্ধুত্ত্বটা অদ্ভূত,একেবারে অন্যরকম।
অহম – অন্যরকম বলতে?
পিউ – মানে এমন সচরাচর দেখা যায়না।আসলে আমি এ জীবনে এই প্রথমই দেখলাম কিনা।
অহম – বন্ধুত্ত্ব অন্যরকম হয় কিনা জানিনা।আসলে আমাদের যখন প্রথম দেখা হয়,বেশ শত্রুপক্ষ ছিলাম দুজনে।সে যাক।শুনুন জল নিয়ে যান,নয়তো আপনার অবস্থা কি যে করবে দুজনে মিলে।সত্যি বলছি,হাসবেন না।চেনেন না তো এ দুজন যখন এক হয়,সৃষ্টিকর্তাও ভয় পায়।
পিউ – তাই বুঝি?আচ্ছা দেখি কি হয়।যাচ্ছি।ওহ জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গেছি কিচেনে কি করছেন?
অহম – আজ রান্না করবো।খেয়ে যাবেন।মনে হয়না খারাপ লাগবে।ওভাবে মুখ করে রেখেছেন কেন?ভয় নেই,নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।আর শুনুন হাসি ছাড়া আপনাকে মানায় না।
ক্রমশ প্রকাশ্য
হ্যামিল্টন, কানাডা
১৩ জুন, ২০১৫ ইং।
উত্তর এবং প্রত্যুত্তর : তিরি এবং অহম : বিংশ ভাগ
২৬টি মন্তব্য
স্বপ্ন নীলা
দারুন উপস্থান — কথোপকথন যে এত সুন্দর হয় তা আপনার লেখা না পড়লে বুঝতাম নারে আপু,
’সবগুলো পুরুষ শুধু মেয়েদের সাথে চিটিং করে,একটা তো ধাক্কা খাক’——–অসাধারণ
নীলাঞ্জনা নীলা
ধন্যবাদ স্বপ্ন নীলা। 🙂 -{@
অনিকেত নন্দিনী
“একা একা ভালোবেসে আজীবন পার করে দেয়া যায়, কিন্তু ঝগড়া-তর্ক একা হয়না” খুব সত্যি কথা।
নীলাঞ্জনা নীলা
কথাটা একদিন আমি বন্ধু আসরে বলেছিলাম।সকলে গ্রহণ করেছিলো। 🙂
জিসান শা ইকরাম
কিভাবে একা একা সব চরিত্রকে একসাথে কথা বলাও ভাবতে অবাক লাগে।
পরবর্তি পর্ব দ্রুত চাই।
এই পর্ব টা আরো বড় হলে ভালোই হতো– হঠাত শেষ হয়ে গেলো।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা কিভাবে কথা বলাই বোঝো না? এটাই তো জাদু গো নানা। (3 🙂
নুসরাত মৌরিন
বাহ, তিরি অহমের গল্প নতুন মোড় পেল।ভাল্লাগছে পড়তে…।
নীলাঞ্জনা নীলা
চেষ্টা করছি যাতে একঘেঁয়ে না হয়ে যায় তিরি আর অহম। ধন্যবাদ। 🙂
লীলাবতী
উফ! কেন এই পর্ব সমাপ্ত করে দিলেন?আরো একটু বড় হলো না কেন?
নীলাঞ্জনা নীলা
কি করবো? বাসে বসে লিখি, নয়তো বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। ঠিক আছে পরের পর্ব বড়ো হবে। খুশী? 😀
খেয়ালী মেয়ে
পড়তে কিযে ভালো লাগছিলো….
কি সুন্দর!!! সাবলীল কথোপকথন….
কত্তো সুন্দর করে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন আপু-দারুন (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
অসংখ্য ধন্যবাদ খেয়ালী মেয়ে। 🙂 -{@
মেহেরী তাজ
নতুন মোড়??! ভালো লাগলো….
নীলাঞ্জনা নীলা
আস্তে আস্তে আরোও চমক আসবে আশায় আছি…ধন্যবাদ 🙂
আশা জাগানিয়া
এমন স্থানে এসে শেষ করে দিলেন?পরের পর্ব দিন দিদি,পড়ার জন্য অস্থির হয়ে আছি।
নীলাঞ্জনা নীলা
খুব তাড়াতাড়ি দিচ্ছি…একটুখানি সবুর করা কি যায়?
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ক্রমশ অহম তিরির ঘটনাগুলো উজ্জল হচ্ছে এ পর্বটা বেশ ভাল লাগল দিদি।
নীলাঞ্জনা নীলা
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ব্লগার সজীব
অহম তিরি কি ভবিষ্যতেও এমন থাকতে পারবে?ভয় হচ্ছে ওদের বন্ধুত্ব চলে না যায়।
নীলাঞ্জনা নীলা
বন্ধুত্ত্ব কখনো যায়না।যতোটুকু জানি।স্বার্থপর সম্পর্কগুলো থাকেনা, চলে যায়।
শুন্য শুন্যালয়
ওহ হো, হাসি ছাড়া আপনাকে মানায় না। 😉
বেশ এগুচ্ছে। এবার গতি একটা হবেই হবে। আমিও চাই যদি শেষ না হতো এই কথোপকথন।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি অহমের উপর যে বিশ্বাস রাখতে পারিনা?
ঠিক আছে খুব তাড়াতাড়ি পরের পর্ব দিচ্ছি। 🙂
শুন্য শুন্যালয়
আমিতো আপনাকে নিয়েই এখন চিন্তায় আছি আপু। এক্স-ফাইলসের মতো কি যে লুকিয়ে রেখেছেন মনে !!! অপেক্ষা অপেক্ষা…
নীলাঞ্জনা নীলা
“মনে রয়ে গেলো মনেরই কথা…
মনে করি দুটি কথা ব’লে যাই,
কেন মুখের পানে চেয়ে চলে যাই।”—আমার বুড়োর গানখানি মনে পড়ে গেলো এমন মন্তব্যে। -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ভালো লাগছে চরিত্রগুলোর কথোপকথন। সাবলীল!
বন্ধুত্ব অনেক সুন্দর অমলিন একটা সম্পর্ক।
নীলাঞ্জনা নীলা
একমাত্র নির্ভেজাল এবং নিঃস্বার্থ সম্পর্ক যে বন্ধুত্ত্ব। তাইতো। -{@