প্রায় আট বছর আগের ছেঁড়া ডায়েরীখানি খুলে বসেছি। সবুজ মলাটের পেটমোটা ডায়েরীটায় পাঁচমিশালী ধরনের লেখা। অনেক বায়না করার পর ভাইয়া এটা দিয়েছিল। তখন আমি চতুর্থ শ্রেণীতে। দীর্ঘ পাঁচ বছর লিখেছি একই ডায়েরীতে। লেখাগুলো অত সুস্পষ্ট সাবলীল নয়। শৈশব, কৈশোরের বেশ কিছু অনুভূতি, মুহূর্ত, আত্মকথন, টুকরো কবিতা, বেশ কিছু ছড়া লেখা রয়েছে এতে।
ডায়েরীর পাতার ভাঁজে তিনটে শুকনো গোলাপও রয়েছে। কেউ দিয়ছিল নাকি আমিই রেখেছি মনে পড়ছে না।
প্রত্যেকটি পাতায়, প্রতিটি কথায় কতই না সারল্যমাখা আবেগ আনন্দ, অভিমান ছিল। একদম প্রথম কবিতাটি দাদুকে নিয়ে লেখা। শৈশবটা দাদুর কাছে গ্রামে কেটেছে বলে দাদুর প্রতি টানটা একটু বেশিই ছিল হয়তো। গ্রাম ছেড়ে এসে শহুরে জীবনের সাথে অভ্যস্ত হওয়ার নিদারুন কষ্টের কথাও লেখা রয়েছে।
কাঁচা হাতে একটা শিশু উপন্যাসের মত লেখারও চেষ্টা করেছি। নাম ‘নিতাই টোকাই’। সেটাও শেষ অবধি শেষ করা হয়নি। পুরো ডায়েরী জুড়েই আমার কৈশোরের স্বপ্নপুরুষ ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজাকে নিয়ে নানান কল্পনা জল্পনা।
কাউকে না বলা কিছু কথা, নাম উহ্য রেখে কারো প্রতি লুকিয়ে রাখা গোপন অনুভূতি, একটু একটু করে বেড়ে ওঠার আস্বাদ, ভালো লাগার কিছু মুহূর্ত, প্রথম চুলে বিনুনী করতে শেখার আনন্দ, বন্ধুদের সাথে ঝগড়া, ক’টা প্রিয় গান, কত সংকল্প, কত পণ, পরীক্ষাকে নির্বিচারে গালাগাল; কোনোটিই বাদ নেই।
তবে সবই টুকরো টুকরো, বিচ্ছিন্ন, অগোছালো, অস্পষ্ট আকারের লেখা যেন কোনো প্রসঙ্গ ছাড়াই হঠাৎ শুরু হল, আবার হুট করেই ইতি টেনে দিলাম; যা আমি ছাড়া অন্য যে কারোর পক্ষেই বোঝা অসম্ভব। শুধুমাত্র আমার কাছেই এর প্রতিটি অক্ষরই চেনা, অতি আপন। পড়ামাত্রই সেই একেকটি সময়ের স্পষ্ট সরল দৃশ্যপট চোখের সামনে ঝকঝক করে ভেসে ওঠে।
এখনকার ধ্যান-ধারনা, চিন্তা-ভাবনা, আবেগ-অনুভূতির সাথে তখন ছিল বিস্তর ফারাক। মাঝে মাঝে মিলিয়ে দেখি চারপাশের সংকীর্ণ পরিসর কিভাবে প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে, সরলতা জটিলতায় পরিণত হচ্ছে। এরই নাম হয়তো বড় হওয়া, ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা।
২৮টি মন্তব্য
অলিভার
শুধুমাত্র আমার কাছেই এর প্রতিটি অক্ষরই চেনা, অতি আপন। পড়ামাত্রই সেই একেকটি সময়ের স্পষ্ট সরল দৃশ্যপট চোখের সামনে ঝকঝক করে ভেসে ওঠে।
সময়টাকে ধরে রাখা যায় না সত্যি, কিন্তু ঐ সময়ের যে স্মৃতি তা এইসব ডায়েরিতেই আটকা পড়ে যায় এভাবেই। দুটো লাইন, কিন্তু হাজার লাইনের গল্প মনে করিয়ে দেয়। চমৎকৃত হতে হয় সেই সব অনুভূতি গুলো দেখে কিংবা এতদিন পর মনে করে।
সাবরিনা
হুম সময় পেলে পড়ার চেষ্টা করি। স্মৃতিগুলো তাজা থাকে।
ইমন
অলিভার এই কথা গুলা আমি বলতাম। তুমি বলে দিলা
ইমন 😛
ব্লগার সজীব
ডায়েরী লেখা একটি সুন্দর অভ্যাস।অনেক বছর পরে ডায়েরীর পাতার মাঝে শুকনো গোলাপ,একট অন্য রকমের অনুভুতি।ডায়েরী প্রকাশ করে দিন আপু।আমরা জানি কেমন ছিলেন ঐ সময়ে আপনি।
সোনেলায় স্বাগতম।
সাবরিনা
ধন্যবাদ আপনাকে। প্রকাশ করবার মত মূল্যবান কিছু নেই এতে। তবে যা আছে সেটুকুনই আমার সম্পদ।
স্বপ্ন নীলা
নীচের প্যারাতে এসে থমকে গেলাম — এমনই হয়রে আপু, আমার কাছে মনে হয় আগের ধ্যান ধারণার সাথে বর্তমানের ধ্যান ধারণার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই –
শুভকামনা রইল
সাবরিনা
এগিয়ে তো যাচ্ছি, যেতেই হয় আপু। শুধু মাঝে মাঝে একটু ফিরে দেখা, পুরনোর মাঝে নুতনের অস্তিত্ব খুঁজে ফেরা।
অরণ্য
আপনার ডায়েরীটা খুব রিসোর্সফুল মনে হচ্ছে। ক্লাস ফোর থেকে লেখা – বেশ। ডায়েরী টা আমাদেরকে দেখানো যায় না? আপনার সেই তিনটি গোলাপ?
সাবরিনা
হা হা হা রিসোর্সফুল কিনা জানি না। তবে পাঁচ মিশালী হওয়ায় জমজমাট বলতে পারেন। দেখাবো অবশ্যই।
স্বপ্ন
সোনেলা দেখি ডায়েরী ময় হয়ে গেলো। অরণ্য ভাইয়া,আপনি, মৌরিন আপু ডায়েরীর কথা লিখছেন। আমিও লিখবো নাকি? 🙂
কত স্মৃতি ডায়েরীতে। এক মুহুর্তে নিয়ে যায় আমাদের সোনালী দেই দিন গুলোতে।
ভাল লেগেছে আপু।
সাবরিনা
লিখে ফেলুন। ফেলে আসা দিনের ছেঁড়া পাতার গল্প পড়তে একদম মন্দ লাগে না।
খেয়ালী মেয়ে
ভালো লাগলো লেখাটা–
বেশ গুছানো লেখা–
সাবরিনা
ধন্যবাদ।
লীলাবতী
ছোট লেখাটি অত্যন্ত ভালো লেগেছে আপু।আমাদের সোনেলায় স্বাগতম আপনাকে।বুঝতে পারছি লেখায় আপনি অত্যন্ত ধনী।আমরা এখানে অনেকেই আছি লেখার মানে গরীব।আমাদের দু একজনে লেখা পড়বেন আপু,এতে গরীব হতে মধ্যবিত্ত এরপর ধনী লেখক হতে উৎসাহ পেতাম 🙂
প্রহেলিকা
খোলস থেকে বেরিয়ে এসে সেই খোলসের দিকে ফিরে তাকানোর অবসর অনেকের হয় না। আপনার বেলায় অবশ্যই ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম এজন্য বললাম কারণ ফিরে যদি নাই তাকাতেন তাহলে ডায়েরীর নির্বাকচিত্র তুলে ধরতে পারতেন না।
আঁতেল উক্তি, অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যাও, কিন্তু অতীতকে ভুলে গেলে যে, বর্তমানে নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে আবিষ্কার করা যাবে না, তা আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্ক কিছুটা ধারণ করতে পেরেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
লেখার হাত নিয়ে কিছুই বলার নেই, ”আপনি ভালো লিখেছেন” বললে হয়তো আপনার দক্ষতাকে অসম্মান করা হবে। পড়তে চাই ছড়া, কবিতা অথবা অসম্পূর্ণ উপন্যাস। শুকিয়ে যাওয়া গোলাপের কথা না জানালেও হবে।
স্বাগতম আপনাকে। পড়ুন, লিখুন মন খুলে। এই ব্লগে সবাই খুব ভালো লিখেন (আমি বাদে) এবং যারা আছেন তারা অত্যন্ত আন্তরিক। সহব্লগার হিসেবে উনারা সবাই অতুলনীয়।
শুভ কামনা ভালো থাকুন সতত।
সাবরিনা
প্রহেলিকাকে পেলাম তাহলে। ভালো লাগছে এই ভেবে যে বাকি সবার জন্য না হোক, অন্তত আমার জন্য তো একবার এলেন।
ধন্যবাদ দেবার সম্পর্ক অতিক্রম করেছি বলেই মনে হয়।
সাবরিনা
এভাবে বলবেন না। আমার নিতান্তই কাঁচা হাত, সে তুলনায় আপনারা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। আপনাদের লেখা তো অবশ্যই পড়ব, নইলে শিখব কেমন করে?!
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বেশ ভাল লাগল ডায়রীর সারাংশ পড়ে।লিখতে থাকুন।
সাবরিনা
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
জিসান শা ইকরাম
স্বাগতম সোনেলায়।
প্রহেলিকার মন্তব্যের পরে আর কিছু বলার থাকেনা অবশ্য।
শুভ কামনা
শুভ ব্লগিং।
সাবরিনা
ধন্যবাদ। পাশে থাকবেন সব সময়।
মেহেরী তাজ
পাঁচ বছর একই ডায়েরী লিখেছেন শুনে খুব উৎসাহ বোধ করছি। সোনেলা নামক এই ডায়েরি টা তাহলে একজন ধৈর্যশীল, যত্নবান ও নতুন লেখিকা পেলো দেখে ভালো লাগছে। সোনেলা পরিবারে স্বাগতম।
সাবরিনা
ধন্যবাদ আপনাকে। আপনাদের আন্তরিকতা দেখে ভালো লাগছে।
শুন্য শুন্যালয়
ডায়েরীর পুরনো গন্ধটার সুবাস ছড়িয়ে দিয়েছেন লেখায়। পৃষ্ঠায় লেগে থাকা শুকনো গোলাপের দাগ, আহ।
মাশরাফি কে নিয়ে কি জল্পনা কল্পনা করতেন? ঠিক জায়গায় চোখ পরেছে। বলুন বলুন।
ও হ্যাঁ আপনাকে সোনেলা পরিবারে স্বাগতম জানাচ্ছি। -{@
সাবরিনা
হা হা হা একদম ঠিক জায়গায়। ধন্যবাদ আপনাকে।
ইমন
সাব্রিনা
নস্টালজিক করে দিলেন। বহুদিন ধরে পুড়নো ডায়েরি ঘাটা হয়না। দেখি ঘাঁটবো সময় করে। ধন্যবাদ আপনাকে। 😀
সাবরিনা
অনুভূতিগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন ইমন।
রাইসুল জজ্
ডায়রী লেখার অভ্যাস এখনো করে উঠতে পারি নি । তাই ডায়রী নিয়ে কোন মজার অনুভুতি নাই ।