আমার বন্ধুটি সাত বছর আগে এদেশে এসেছে। নানান ব্যস্ততায় দেশে যাওয়া হয়নি। আসার দু’বছর পর তাঁর বাবা মারা যায়। মা’য়ের সাথে যোগাযোগ প্রায় প্রতিদিনই ভাইবার, স্কাইপির এই যুগে। মনখারাপ করা হাহাকার নেই। মায়ের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা অনেকদিন থেকেই। বুঝতে দেয়নি মেয়েকে। মা’য়েরা চিরকাল কষ্ট আড়ালে রাখে। আর যে পারে না ! অবশেষে মেয়েকে দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে। মেয়ে তার জমিয়ে রাখা বাৎসরিক ছুটির সাথে অনেক অনুরোধে আরও এক সপ্তাহ বেশি ছুটি পায় জব থেকে। টিকেট কাটে। তিন সপ্তাহের ছুটিতে দেশে যাচ্ছে ! পৃথিবীর তীব্রতম উচ্ছ্বাস তাঁর চোখে মুখে। পৃথিবীর সবচাইতে শান্তির জায়গা মায়ের বুকে ফিরবার আয়োজন তাঁর। আমার মা নেই, তাই তাঁর আনন্দে আনন্দিত হই। উচ্ছ্বসিত হই। ভেতরে প্রলয় বইতে থাকে। সেই প্রলয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে আমার কষ্ট লুকানো মা’য়ের হাসিমাখা মুখখানা আস্তে আস্তে মিলিয়ে যেতে দেখি…
এদিকে আমার বন্ধুটির বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে দেশে যাবার প্রস্তুতি। অন্যদিকে দেশে তাঁর মায়ের বিরামহীন প্রস্তুতি। মেয়ের পছন্দের আচার, নারকেলের চিড়া আরও কতো কি বানিয়েছে। মেয়ের রুমটি ক’দিন ধরে ঝাড়-মোছ করে ঝকঝকে করেছে। অসুস্থ শরীরে খাটা-খাটুনি একটু বেশিই হয়েছে বোধ হয় !
গত সপ্তাহে তাঁর মায়ের মৃত্যু সংবাদ আসে ! শতাব্দীর বেদনা বুকে চেপে আজ আমার বন্ধুটি দেশে যাচ্ছে। শতাব্দীর দীর্ঘতম পথ পাড়ি দিয়ে এক ভূখণ্ড থেকে অন্য ভূখণ্ডে। থরে থরে সাজানো আচার, নারকেলের চিড়া, পছন্দের খাবার, সাজানো গোছানো প্রিয় রুম… হুম সাত বছর আগে ফেলে আসা শূন্য সেই রুম__ সবই কালের সাক্ষী হয়ে অপেক্ষায়। জানি, আমার বন্ধুটি অনেক ক্ষুদার্থ থাকবে, কিন্তু গলা দিয়ে খাবার নামবে না। অনেক ক্লান্তি থাকবে, কিন্তু সেই রুমটিতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারবে না। নির্ঘুম রাত পেরিয়ে ভোর হবে। আযান হবে। তবুও না… তবুও না…। যেমনটি আমার হয়েছিলো।
মা’য়েরা জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত কষ্ট লুকায়। বুঝতে দেয় না__ তাঁর যে সময় ঘনিয়ে এলো …
৩২টি মন্তব্য
প্রহেলিকা
এমনি লেখা পড়তে গিয়ে চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো, খুব খারাপ লাগছে।
রিমি রুম্মান
আমার বন্ধুটির জন্য আমারও খারাপ লাগছে যা বর্ণনাতীত ।
নীলাঞ্জনা নীলা
সত্যি চোখে পানি চলে এলো।দেশে থাকা মা এর কথা মনে এলো। মা ভালোবাসি অনেক তোমায়।
রিমি রুম্মান
যাদের মা আছেন, তাঁরা মা’কে বেশি সময় দিন। দূরে থাকলে ফোনে কথা বলুন। একটা সময় মা’ য়েরা বড় বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে পরেন।
খসড়া
হৃদয় ছোঁয়া লেখা।
রিমি রুম্মান
শুভকামনা জানবেন। ভাল থাকুন সবসময়।
স্বপ্ন
খুবই কষ্টের লেখা আপু।
রিমি রুম্মান
ঘটনাটি সত্যিই হৃদয়বিদারক। আমি শুধু তুলে ধরেছি লেখায়। ভাল থাকুন।
শুন্য শুন্যালয়
আপনার বন্ধুটি এক কস্ট বয়ে বেড়াবে সারাজীবন। অনেক অসহায় বোধ করছি। এই প্রবাসে সন্তানদের এই দুঃখ বোঝবার জন্য শুধু যে মা-ই সম্বল।
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন। ভাল থাকুন দূরদেশে ।
শাহানা আফরিন স্বর্ণা
মা কে কখনো হারাতে চাই না।
রিমি রুম্মান
এমন চাওয়া আমারও ছিল। ভাল থাকুন মা’কে নিয়ে।
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
Mon bhar kore deya lekha.
রিমি রুম্মান
মা’কে ভালোবাসেন বলেই আপনার মনটা ভার হয়েছে লেখাটি পড়ে। ভাল থাকুন।
স্বপ্ন নীলা
হৃদয় ছুঁয়ে গেল লেখাটা— শেষের দিকে এসে মনটা ভারী হয়ে এল—মার কথা মনে পড়ছে—
রিমি রুম্মান
আমারও মাকে মনে পরছে। কত দিন মায়ের সাথে দেখা নেই, কথা নেই, স্পর্শ নেই !
ছাইরাছ হেলাল
কত কঠিন এ বাস্তবতা।
ঘটনা তুলে ধরার অসাধারণ ক্ষমতা আপনার লেখনীতে।
রিমি রুম্মান
এমন মন্তব্যে আরও লিখতে উৎসাহিত হই। শুভকামনা রইলো।
নুসরাত মৌরিন
মা-ই তো পৃথিবী।
মা নেই-এমন এক ভূবনে তার এই ফেরা আমাদেরও কাঁদায়। 🙁
রিমি রুম্মান
আমি জানি, সে ফেরা তাঁর জন্য কতটা দুঃসহ হবে। এমন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি যে আমাকেও দাঁড়াতে হয়েছে।
জিসান শা ইকরাম
মায়েরা এমনই
সচরাচর চোখে দেখা এমন ঘটনাকে অত্যন্ত সুন্দর ভাবে উপস্থাপনে আপনি অত্যন্ত দক্ষ।
শুভ কামনা।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন আপনিও।
ব্লগার সজীব
প্রবাসীর কান্না,কত কষ্টের এক বর্ণনা। (y)
রিমি রুম্মান
জীবন জীবিকার তাগিদে আমরা সবাই-ই মোটামুটি মা থেকে দূরে অবস্থান করছি। যারা মায়ের সাথেই আছেন এখনও, বলা যায় তাঁরা অনেক ভাগ্যবান।
খেয়ালী মেয়ে
পৃথিবীর সবচাইতে শান্তির জায়গা মায়ের বুকে ফিরবার আয়োজন তাঁর (y)
মা তার অন্য জগতে যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক….
রিমি রুম্মান
আমীন …
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
মা মা ই তার তুলনা অন্য কারোতে হয় না আর মেয়েদের জন্য মা হন গাইড -{@ সুন্দর অনুভূতি।
রিমি রুম্মান
অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা জানবেন।
প্রজন্ম ৭১
কেমন এক বোবা কান্নায় আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম আপু।
রিমি রুম্মান
আমার মা নেই। বাবাও নেই। কারো মা’য়ের চলে যাওয়া আমাকেও কাঁদায় অগোচরে।
ছারপোকা
চাঁপা কষ্টগুলা ছুঁয়ে গেলো ।
চোখের কোনে এক ফোঁটা অশ্রু চিকচিক করছে খুব ।
দেশে ফেরার শেষ ইচ্ছে টা কেড়ে নিলো বাস্তবতা ।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন। দোয়া রইলো ।