ছেলেবেলার বিজয়দিবস ।
ছেলেবেলার স্মৃতিময় সময়টা সবচেয়ে বেশী নষ্টালজিক । সুযোগ পেলেই সবাই একবার ঘুরে আসতে চায় স্বর্ণালী অতীতে ।
ছেলেবেলায় বিজয়দিবসে আমাদের কয়েকদিন আগে থেকেই বিভিন্ন প্লান থাকত তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাতে ফুল চুরি করা । কোন কোন বাড়ি থেকে রাতে ফুল চুরি হবে সেটা আগেই সিলেক্ট করা থাকত । যদিও অত্যধিক সাহসের কারণে আমি এসব ঝুঁকিপূর্ণ মিশনে অংশগ্রহণ করতাম না । কারণ ফুল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ার সম্ভাবনা ও অত্যধিক । আমাদের বীর চোরেরা অনেকবারই হাতেনাতে ধরা পড়েছেন । তবুও কথায় আছে না পরাজয়ে ডরে না বীর । এতে তাঁরা মোটেও বিচলিত নন বরং পরের বার দ্বিগুণ উৎসাহে তাঁরা এই মহৎ কাজে ঝাপিয়ে পড়তেন ।
এরপর বহুকষ্টে অর্জিত ফুল নিয়ে আমরা খালি পায়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে রওনা হতাম । স্কুলে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হত । এরমাঝে বিজয় দিবসের শহীদের উদ্দেশ্যে দোয়া আদায় করার জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান হত । হিন্দু মুসলিম একসাথে দোয়া করতাম (তখন হিন্দু মুসলিম বোধ এত প্রকট ছিল না) মূল উদ্দেশ্য হল অনুষ্ঠান শেষে তবারক দেয়া হবে ওখানে আরেক দফা শয়তানি করতে হবে । সবার জন্য একটা করে বা একবার তবারক বরাদ্দ থাকলেও আমাদের টার্গেট কিভাবে ফাঁকি দিয়ে একাধিক বার নেয়া যায় । যে যার সাধ্যমত তবারক সংগ্রহের পর হিসাব হত কে কতবার বেশী নিতে পেরেছে । এই অংশে যে বেশীবার নিতে পেরেছে সেই জয়ী ।
বিকালে স্কুলের খেলার পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান হত । আর আমরা বিকাল থেকে আয়োজন করতাম বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশেষ পার্টির । পার্টিতে বিশেষ আকর্ষণ হল পার্টি শেষে আমাদের রাত্রিকালীন সমাপনী মিশন । মিশনের প্রধান টার্গেট হল এলাকার নারকেল গাছের ডাব । এখানেও আমাদের বীরেরা অসামান্য দক্ষতা এবং নিপুনতার সাথে গাছ থেকে ডাব গায়েব করে দিতেন । মজার ব্যাপার হল চুরি করার সময় আমাদের গাছও বাদ পড়ত না । আমি বলতাম যা করিস সাবধানে, বাবা যেন টের না পায় । সেক্ষেত্রে আমরা একটা বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগ করতাম । ডাবের উপরের অংশে ছোট্টো একটা ছিদ্র করে পেপসির নল ঢুকিয়ে ডাবের পানি সাবাড় করা হত । বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ডাবের ভিতর টা ফাঁকা ।
ছেলেবেলার সেই সেই সব দিন গুলো অনেক বেশী মিস করি । মাঝেমাঝে স্মৃতির ডায়েরি খুলে হারিয়ে যাই ফেলে আসা সেই সব দিন গুলিতে ।
সবাই কে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ।
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না-
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
কান্নাহাসির বাঁধন তারা সইল না-
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।।
আমার প্রাণের গানের ভাষা
শিখবে তারা ছিল আশা-
উড়ে গেল, সকল কথা কইল না-
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।।
স্বপন দেখি, যেন তারা কার আশে
ফেরে আমার ভাঙা খাঁচার চার পাশে-
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।।
এত বেদন হয় কি ফাঁকি।
ওরা কি সব ছায়ার পাখি।
আকাশ-পারে কিছুই কি গো বইল না-
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।।
১৮টি মন্তব্য
ব্লগার সজীব
ছেলেবেলার বিজয় দিবসে যে আবেগ ছিলো,এখন তা খুঁজে পাইনা।ভালো লিখেছেন।
সঞ্জয় কুমার
ধন্যবাদ সজিব ভাই । বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ।
লীলাবতী
বিজয় দিবসে স্মৃতি রোমন্থন, ভালো লেগেছে খুব। বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
সঞ্জয় কুমার
আপনাকে ও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা । ভাল থাকবেন ।
সাইদ মিলটন
মনে পরে প্রিয় স্বদেশ –
মনে পরে মনে পরে,
মনে পরে কুয়াশার ভোর
মনে পরে ষোলই ডিসেম্বর
আমাদের গ্রামের রাস্তার রিক্সার আসা যাওয়া , অবধারিত প্রতিটি রিক্সার হ্যান্ডেলে ছোট্ট একটা পতাকা , আমার দেশের পতাকা। আরও পরে যখন তেজগায় থাকি – বিজয় দিবস প্যারেড … রাষ্ট্রপতির সামনে এলে সব পতাকা ভূমি সমান্তরাল সব রেজিমেন্টাল পতাকা বাহিনীর পতাকা – পুরো মাঠে মাথা উচু করে আছে একটাই পতাকা … আমার দেশের পতাকা। তারও পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে দেখা বিজয় দিবসের ছুটি, আমারও ছুটি। ঢাকার নিম্ন আয়ের মানুষেরা বেড়াতে বেরোয় পায়ে হেটে … এয়ারপোর্ট রোড ধরে দল বেধে উজ্জ্বল হাসি হেসে যাচ্ছে প্রায় তরুণী আর প্রায় পুরুষেরা – বেশভুষা বলে দেয় অধিকাংশই পোষাক শ্রমিক কিন্ত আমি মুগ্ধ চোখেই তাদের দেখি… প্রত্যেকের হাতে পতাকা … আমার দেশের পতাকা।
আজ শুধুই দীর্ঘশ্বাস……… মনে পরে আর মনে পরে
আমি আমার দেশের পতাকা মিস করছি –
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা সবাইকে।
সঞ্জয় কুমার
সুন্দর একটা কমেন্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । কবিতা টা ও ভালো লেগেছে ।
প্রহেলিকা
ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন বেশ নস্টালজিক করে তুলে মাঝে মাঝে, তখন ঠিক এই গানটির কথাই মনে পড়ে। মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানবেন।
সঞ্জয় কুমার
ধন্যবাদ বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা । খুব ইচ্ছে করে সেই ছেলেবেলায় ফিরে যেতে ।
জিসান শা ইকরাম
বিজয় মাসের উপযোগী পোষ্ট দেয়ায় ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা।
সঞ্জয় কুমার
ধন্যবাদ মামা ভালো থাকবেন ।
শুন্য শুন্যালয়
এ শুধুই যন্ত্রণা!!! আমার ছেলে বলে কবে আমি বড় হবো? আর আমি বলি যদি আবার কোনদিন ছোট হয়ে যেতে পারতাম!!! হায় ছোটবেলা ….
সঞ্জয় কুমার
আবার যদি ছোট হতে পারতাম । প্রায় সবারই এমন ইচ্ছা আছে । ছেলেবেলা কে সত্যিই খুব মিস করি । বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা । ভাল থাকবেন ।
স্বপ্ন নীলা
ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল —
সঞ্জয় কুমার
ধন্যবাদ আপু । ভালো থাকবেন ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
কারো কোন দোষ নাই ভাই সবই
ডিজিটাল
বাংলা লিং ধরে দ্রুত পরিবর্তন। -{@
সঞ্জয় কুমার
হুম ।
নুসরাত মৌরিন
সবার পিচ্চিবেলায় এত মিল!! কি অদ্ভুত!! 😀
সঞ্জয় কুমার
আপনারা ও আমাদের মত শয়তানি করতেন ।