অপর্না সেনের গয়নার বাক্স চলচ্চিত্রে শ্রীজিত এর কথায় শিল্পী রূপান্তর গাওয়া গানটি মাঝে মাঝেই কানে বেজে ওঠে। চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র সোমলতাকে নিবেদিত গোলাপের পাপড়িতে মোড়ানো কবিতা সমুহ এককথায় অনবদ্য। সোমলতার লাজুক প্রেমিক যিনি কোনোদিন বলতে পারেননি তাঁর ভালোবাসার বাসার কথা, প্রতিদিন একটি করে গোলাপ রেখে গিয়েছেন সোমলতার দরজায়।
আসুন এখানে ক্লিক করে কবিতা/গানটি শুনি আর লেখা পড়ি।

সোমলতাকে –
সীমন্তিনী, তোমায় ডেকে পাইনি সাড়া
দুয়ার ঘিরে ছিলো হাজার কাঁটার বেড়া
কেনো তবে বনের পথে সীমন্তিনী
কেনো তবে এই কুয়াশায় সীমন্তিনী
একলা এলে পথ হারালে –
বনের পথে কেনো আমায় পথ ভোলালে… সীমন্তিনী।

সীমন্তিনী, এখন তোমার চোখের আঁচে
দু’টি ভুরুর মধ্যিখানে গনগনে লাল সিঁদুর আঁচে
উড়ে পুড়ে খাক হলো সব রাত্রিদিবস
সীমন্তিনী –
প্রিয় কাফের তোমার প্রেমে আজও বিবশ।

সোমলতা – কুয়াশাবৃতা…
নদীর ওপারে ঘন কুয়াশায়,কুয়াশার ফুল কুড়াতে এলে
মাঝখানে আজ বহমান পানি, রচে ব্যবধান
রচে ব্যবধান তোমার আমার, রচে ব্যবধান দুই বাংলার
তাই কি এলে?
ওপারের মেয়ে সব কাজ ফেলে তাই কি এলে?
কুয়াশার সেতু বাঁধবে বলে তাই কি এলে?

রেলগাড়ি ওই চলে গেলো শোনো রাত্রি চিড়ে
কথা ডুবে গেলো অতল তিমিরে
অপলক তুমি চেয়ে আছো মুখে অপরিচিতা
কুয়াশায় গড়া অলীক মানবী – কুয়াশাবৃতা
ভেঙ্গে ভেঙ্গে যায় কুয়াশার সেতু, উঠেছে হাওয়া
মুহূর্ত জাল ছিড়ে চলে গেলে কল্প কায়া
পাগল হাওয়া – রক্তে জোয়ার হলো দূর্বার তোমাকে চাওয়া

কাফের তোমাকে ভালোবাসলাম বলে
ছায়া মরে গেলো, তারা নিভে গেলো
সাগর উঠলো জ্বলে
মহাকাশ জুড়ে উল্কা বৃষ্টি, শিহরিত হলো সকল সৃষ্টি
পাহাড় পরলো টলে
এ দুঃসময়, ঘোর প্রলয় – কেবল তোমাকে ভালোবাসলাম বলে।

কাফের তোমাকে ভালোবাসলাম বলে
অকাল বোধনে বসন্ত এলো
কৃষ্ণচূড়া অবনত হলো ফুলে
চরাচর জুড়ে এলো হাওয়া উত্তাল
নাচে ধমনীতে শোণিতের স্রোতে
উত্তাল মহাকাল
কাফের তোমাকে ভালোবাসলাম বলে।

চলচ্চিত্র সম্পর্কে সামান্য কিছু লেখার অপচেষ্টাঃ
একটি গয়নার বাক্সকে কেন্দ্র করে তিন প্রজন্মের তিনজন নারীর কথাই আসলে চলচ্চিত্রে প্রাধান্য পেয়েছে। পিসি মা হলেন প্রথম প্রজন্ম। কঙ্কণা সেন শর্মা হলেন দ্বিতীয় প্রজন্ম। আর কঙ্কণার মেয়ে শ্রাবন্তীকে হচ্ছে তৃতীয় প্রজন্ম।
মেয়েদের সীমাবদ্ধতা, হিন্দু মহিলাদের অক্ষমতা এদের উপর সামাজিক এবং পারিবারিক উপেক্ষা, পুরুষরা যা পারেন , মহিলারা তা পারেন না এমন মানসিকতা, ক্ষয়িষ্ণু অভিজাত পরিবারের অন্তর মহলের কিছু কুৎসিত দিক, পারিবারিক ঐতিহ্য ভেঙ্গে বসে বসে দিন যাপনের পরিবর্তে ব্যবসা করার প্রতি ঘৃণা ইত্যাদি অনেক বিষয় চলে এসেছে চলচ্চিত্রে।
পিসিমার প্রতি ভয়, শ্রদ্ধা ভালোবাসা এবং আস্থা সব কিছুই খুব নিখুত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কঙ্কণা। তাঁর কিছুটা তোতলিয়ে কথা অসাধারন।
পিসিমার চরিত্রে মৌসুমী অসাধারন অভিনয় করেছেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে পিসিমা বিধবা হন। বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত ৫০০ ভরি গয়না পিসি মা যক্ষের ধনের মত আগলে রাখেন। পিসিমা মৃত্যু বরন করার সাথে সাথে এই গয়নার বাক্স ভুত হয়ে দিয়ে যান কঙ্কণাকে। পিসিমাকে শুধু কঙ্কণা দেখতে পান। ভুত পিসিমার দৌরাত্ম্যে  কঙ্কণার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যায়। পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়। একবার ধমক দেন আবার ভালোবেসে গল্প করেন কঙ্কণার সাথে একান্ত আপন জনের মত। এই সম্পর্কটি খুব ভালো লেগেছে আমার কাছে। একটি আস্থা, ভালোবাসা এবং স্নেহ শ্রদ্ধার সম্পর্ককে দেখানো হয়েছে আসলে।

চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে পুরুষদের তুলনায় নারীরা কতটা অসহায়। সারাজীবন সহবাস হীন পিসি মা কে গয়না নিয়ে সন্তষ্ট থাকতে হয়েছে। বিধবা হবার সাথে সাথে চুল কেটে, সাজসজ্জা হীন হয়ে থাকতে হয় মেয়েদের। পুরুষদের এসবে সমস্যা নেই। স্ত্রী মারা গেলে সে আর একটি বিয়ে করতে পারে। ইচ্ছে করলেই সে স্ত্রী ব্যতীত পতিতার সাথে যা খুশি তাই করতে পারে। নারীরা এক্ষেত্রে ইচ্ছা হীন জড় পদার্থের মত জীবন যাপনে বাধ্য।

অপর্না সেন জানেন কিভাবে শিল্পীদের কাছ থেকে অভিনয় আদায় করে নিতে হন। সবাই ভালো অভিনয় করেছেন। ইচ্ছে করলে চলচ্চিত্রটি দেখতে পারেন আপনি। ভালোই লাগবে সব কিছু মিলিয়ে। বিশেষ করে মৌসুমীর অভিনয় দেখার জন্য হলেও ছবিটি দেখুন।
কাহিনী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর উপন্যাস ‘ গয়নার বাক্স ‘

চলচ্চিত্রটি এখানে দেখুন বা ডাউনলোড করুন- ডেইলী মোশন লিংক

টরেন্ট ডাউনলোড লিংক

অঃকঃ শুধু মাত্র গান/কবিতা শুনতে বসেছিলাম এবং এটিই পোষ্ট করতে চেয়েছিলাম। তারপরে ‘ কান টানলে মাথা আসে ‘ এ কথা প্রমান করার জন্যই যেন গয়নার বাক্স সম্পর্কে কিছু লেখা হলো ।

 

৮১৪৬জন ৭৯৯৬জন
0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ