১৯৭১ এর কিছু বীভৎসতা:
১। ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানিদের ধারাবাহিক ধর্ষণ উন্মত্ততার সঙ্গে মধ্য এপ্রিল থেকে যুক্ত হতে শুরু করে এদেশীয় দোসর রাজাকার, শান্তি কমিটি, আল বদর ও আল শামস্ বাহিনীর সদস্যরা। এরা বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের ধরে আনার পাশাপাশি ধর্ষকে অংশনিয়েছে। প্রত্যেকটি ক্যান্টনমেন্ট, পুলিশ ব্যারাক, স্থায়ী সেনা বাঙ্কার ছাড়াও বিভিন্ন স্কুল কলেজ, সরকারি ভবন ধর্ষণের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
২ । একাত্তরে পুরো ৯ মাস পাকিস্তানি সৈন্যরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ঘটনাস্থলে, কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বাঙালি নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে দিনের পর দিন আটকে রেখে ধর্ষণের যে ঘটনা ঘটিয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা গণধর্ষণ। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির পুরুষ সদস্য, স্বামীদের হত্যা করার পর নারীদের উপর ধর্ষণ নির্যাতন চালাতো পাকিস্তানী সৈন্যরা। ৯ থেকে শুরু করে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা কেউই পাকিস্তানী সৈন্য বা তাদের দোসরদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।
৩ । কোনো কোনো মেয়েকে পাকসেনারা এক রাতে ৮০ বারও ধর্ষণ করেছে। এক একটি গণধর্ষণে ৮/১০থেকে শুরু করে ১০০ জন পাকসেনাও অংশ নিয়েছে।
৪। একাত্তরের ভয়াবহ ধর্ষণ সম্পর্কে একমাত্র জবানবন্দি দানকারী সাহসী ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী তার সাক্ষাত্কারে (একাত্তরের দুঃসহ স্মৃতি, সম্পাদনা শাহরিয়ার কবির) জানান, “রাতে ফিদাইর (উচ্চ পদস্থ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা) চিঠি নিয়ে ক্যাপ্টেন সুলতান, লে. কোরবান আর বেঙ্গল ট্রেডার্সের অবাঙালি মালিক ইউসুফ এরা আমাকে যশোরে নিয়ে যেত। যাওয়ার পথে গাড়ির ভেতরে তারা আমাকে ধর্ষণ করেছে। নির্মম, নৃশংস নির্যাতনেরপর এক পর্যায়ে আমার বোধশক্তি লোপ পায়। ২৮ ঘন্টা সঙ্গাহীন ছিলাম”।
৫। পাকিস্তানি সৈন্যদের ধর্ষণের বীভত্সতার ধরণ সম্পর্কে পুনর্বাসন সংস্থায় ধর্ষিতাদের নিবন্ধীকরণ ও দেখাশোনার সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী মালেকা খান – ” সংস্থায় আসা ধর্ষিত নারীদের প্রায় সবারই ছিল ক্ষত-বিক্ষত যৌনাঙ্গ। বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ছিড়ে ফেলা রক্তাক্ত যোনিপথ, দাঁত দিয়ে ছিড়ে ফেলা স্তন, বেয়োনেট দিয়ে কেটে ফেলা স্তন-উরু এবং পশ্চাত্দেশে ছুরির আঘাত নিয়ে নারীরা পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসতো। ”
৬ । উন্মত্ত পাঞ্জাবি সেনারা নিরীহ বাঙালী মেয়েদের শুধুমাত্র ধর্ষণ করেই ছেড়ে দেয় নাই, অনেক পশু ছোটছোট বালিকাদের ওপর পাশবিকঅত্যাচার করে ওদের অসার রক্তাক্ত দেহ বাইরে এনে দুজনে দুপা দুদিকে টেনে ধরে চড়চড়িয়ে ছিঁড়ে ফেলে ছিল। পদস্থ সামরিক অফিসাররা সেই সকল মেয়েদেরওপর সম্মিলিত ধর্ষণ করতে করতে হঠাৎ একদিন তাকে ধরে ছুরি দিয়ে তার স্তন কেটে, পাছার মাংস কেটে, যোনি ও গুহ্যদ্বারের মধ্যে সম্পূর্ণ ছুরি চালিয়ে দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ওরা আনন্দ উপভোগ করতো ।
৭ । প্রতিদিন রাজারবাগ পুলিশলাইনের ব্যারাক থেকে এবং হেডকোয়ার্টার অফিসে ওপর তলা থেকে বহু ধর্ষিত মেয়ের ক্ষত-বিক্ষতবিকৃত লাশ ওরা পায়ে রশি বেধে নিয়ে যায় এবং সেই জায়গায় রাজধানী থেকে ধরে আনা নতুন মেয়েদের চুলের সঙ্গে বেধে ধর্ষণ আরম্ভ করে দেয়।
৮। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পরও পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙ্কারে আটকে রেখে নির্বিচারে ধর্ষণ করেছে বাঙালী নারীদের। বিচারপতি কে এম সোবহান প্রত্যক্ষ দর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘ ১৮ ডিসেম্বর মিরপুরে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া একজনকেখুঁজতে গিয়ে দেখি মাটির নিচে বাঙ্কার থেকে ২৩ জন সম্পূর্ণ উলঙ্গ, মাথা কামানো নারীকে ট্রাকে করেনিয়ে যাচ্ছে পাক আর্মিরা।’
৯ । পুরোপুরি পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত পাক আর্মিদের ধর্ষণ-উত্তর অন্যান্য শারীরিক নির্যাতনের ফলে বেশ কিছু মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, কাউকে কাউকে পাকসেনারা নিজেরাই হত্যা করেছে; আবার অনেকেই নিরুদ্দিষ্ট হয়ে গেছে। যুদ্ধের পর পর ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে উদ্বাস্তুর মতো ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে বেশ কিছু নারীকে। তাদের ড্রেসআপ এবং চলাফেরা থেকেআমরা অনেকেই নিশ্চিত জানতাম ওরা যুদ্ধের শিকারএবং ওদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
১০। এক কর্মকর্তার স্ত্রী তিনি (২৫ বছর বয়স) ছিলেন এক সরকারী কর্মকর্তার স্ত্রী। তাঁর তিন ছেলেমেয়ে ছিল। আর্মিরা প্রথমে তাঁর স্বামীকে নিয়ে যায়, আর প্রায় অর্ধ মৃত অবস্থায় ফেরত দেয়। তারপর অন্য একদল আর্মি আসে সকাল ৮-৯ টার দিকে। আর তাঁকে রেপ করে তাঁর স্বামী সন্তানদের সামনে। তারপর আরো একদল আর্মি আসে দুপুর ২.৩০ টার দিকে আর তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। এক ব্যাংকারে আটকে রেখে তাঁকে বারবার রেপ করে প্রতি রাতে তিনি অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত। তিন মাস পরে যখন তিনি ফিরে আসেন, তিনি ছিলেন প্রেগন্যান্ট। গ্রামের মানুষজন তাঁকে সহানুভুতি জানায় কিন্তু তাঁর স্বামী তাঁকে ফেরত নিতে অস্বীকার করে। গ্রামের মানুষ জোর করায় তাঁর স্বামী আত্মহত্যা করে।
উপরের সব কিছু জেনেছি আমি আমার ফেইসবুক বন্ধু Succed Boy Jabed এর এই পোস্ট থেকে ।
এই যে নৃশংসতা , বীভৎসতা এসব হয়েছে আমার বা আপনার বোন , মা , ভাগ্নি , ভাতিজি , মামি , খালা বা স্বজনদের সাথে। মানুষের মন কত হিংস্র বা নিচু হলে – এই সব অত্যাচার , বীভৎসতায় অংশগ্রহণকারী পশুদেরকে বাঁচানোর জন্য আন্দোলন হয় ! কতটা বিকৃত মন মানসিকতা থাকলে এইসব অপরাধ সংগঠনকারী জানোয়ারদের সাথে বন্ধুত্ব হয় ?
ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনি। কাউকে ক্ষমা করবেও না ।
মীরজাফর বিশ্বাসঘাতকতা করে মসনদে বসেছিল সত্যি – কিন্তু মীরজাফর নামটি এখন বিশ্বাসঘাতক শব্দে ব্যবহৃত হয়।
খন্দকার মোস্তাক আহমেদকে মানুষ মীরজাফর হিসেবেই দেখে – আর শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে রেখেছে জেলখানায় নিহত জাতীয় চার নেতাকে।
১৯টি মন্তব্য
লীলাবতী
গা শিউরে উঠে এসব অত্যাচারের কাহিনী শুনলে । এই সব নরপশুদের ক্ষমা নাই। এদের বিচার চাই আমরা।
জিসান শা ইকরাম
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।
চিনতে হবে এদের বর্তমান সহযোগীদের।
ibrahim khalil khan
aamio akmot,
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ ইব্রাহীম খলিল ভাই।
প্রজন্ম ৭১
ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনি , এদেরকেও করবে না।
জিসান শা ইকরাম
ক্ষমা করবে না ,
এদের নাম লেখা হয়ে থাকবে রাজাকারদের সহযোগী হিসেবে।
শিশির কনা
পড়তে পড়তে আতংক অনুভব করছি জিসান ভাই। এদের বিচার সময়ের দাবী।
জিসান শা ইকরাম
এদের বিচার সময়ের দাবী ,
যারাই এদের বাঁচাতে আসবে , তারাও একই অপরাধে অপরাধী হবে ।
শিশির কনা
ভেবেছিলাম ডিসেম্বরে বিচারের রায় হবে , তা আর হচ্ছে না মনে হয়।
আমান উল্লাহ খান জাবেদ
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে, এদের কোন ক্ষমা নাই। কারন এরা ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত সাথে বেইমানী করেছে।
জিসান শা ইকরাম
” যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে, এদের কোন ক্ষমা নাই। কারন এরা ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত সাথে বেইমানী করেছে।” —– অবশ্যই বিচার করতে হবে।
যতদিন একজন দেশপ্রেমিক বাঙালী জীবিত থাকবে , এই দাবী উচ্চারিত হবে।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
অচেনা
মীরজাফর বিশ্বাসঘাতকতা করে মসনদে বসেছিল সত্যি – কিন্তু মীরজাফর নামটি এখন বিশ্বাসঘাতক শব্দে ব্যবহৃত হয়।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা , যেমন রাজাকার শব্দটি ব্যবহৃত হয় ঘৃণা হিসেবে।
জবরুল আলম সুমন
পড়তে গিয়ে বার বার শিউরে উঠলাম… ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনি। কাউকে ক্ষমা করবেও না । এদের বিচার হবেই হবে, এদের বিচার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
জিসান শা ইকরাম
ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনি। কাউকে ক্ষমা করবেও না । এদের বিচার হবেই হবে,—— অবশ্যই এদের বিচার করতে হবে।
নীলাঞ্জনা নীলা
এদের ক্ষমা নেই। ঘৃণা থাকবে এদের প্রতি জন্ম থেকে জন্মান্তর ।
জিসান শা ইকরাম
এদের ক্ষমা নেই। ঘৃণা থাকবে এদের প্রতি জন্ম থেকে জন্মান্তর ।— ক্ষমার প্রশ্নই ওঠেনা ।
নীহারিকা
বোধশক্তিহীন জাতী আমরা, তাই এদের রক্ষা করার জন্য আন্দোলন করি আমরা
জিসান শা ইকরাম
” বোধশক্তিহীন জাতী আমরা, তাই এদের রক্ষা করার জন্য আন্দোলন করি আমরা ”
ঠিক বলেছেন ।