পা দুটো তার কখনো কখনো পাশের পা দুটোর দিকে বেঁকে যাচ্ছে। দিগভ্রান্ত হয়ে হাটছে বলে বেশির ভাগ সময়ই মনটা আটকে যাচ্ছে ঘড়ির কাটার বিপরীতে । বিপরীত লিঙ্গের পদযুগলের মৃদু সংঘর্ষে সম্বিত ফিরে পাওয়া মাত্রই আনাড়ি অভিনেতার মতো পদযুগলদ্বয়ের মালিকেরা পদযুগলদ্বয়কে বিপরীতদিকে চালাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
ব্যাবধান তো বাড়েই সেটাকে কমাবার জন্য। সে ধর্ম মেনেই মৃদু আলিঙ্গন করে উর্ধবাহুযুগল, কখনোবা আঙ্গুলের পৃষ্ট। এভাবেই ব্যাবধান বাড়া কমাবার খেলা খেলতে খেলতেই সময় আর পথ দুটোই সামনের দিকে গড়াতে থাকে।
নীরবতা ভাঙ্গে নারীকন্ঠ –
-এভাবে আর কতো?
এমন পরিবেশের সাথে বেমানান মোটা স্বরটা শুধু একটা শব্দই বলতে পারে –
” অ্যাঁ? ”
আবার সেই চিরায়ত পথচলা, সাথে সাথে নিষ্ঠুর নীরবতা…
কিছুকাল পর পর মুখ চাওয়া চাওয়ি করে তারা যেনো একে অপরের মনেরভাব বুঝে নিয়ে নীরবতাকে বৈধতাদানের খেলায় নেমেছে, কিন্তু সেখানে বাধ সাজে কিছু দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস।
এবারে মোটা স্বরটা নীরবতাকে গলা টিপে বলে –
– “ভালোবাসি ! ”
– ” কথাটা কি হাস্যকর শুনাচ্ছে না? ”
– “তবুও ভালোবাসি ! ”
– ” এক সময় আমিও তো বাসতাম । অনেক বেশিই বাসতাম। ”
– ” এখন? ”
– ” ভালোবাসার অনুমতি নেই যে ! ”
আবার নেমে আসে শশ্মানের নিষ্ঠুর পথচলা। সেই মৃদু স্পর্শ, সেই নটরাজদের নারকীয় অভিনয় – সব মিলিয়ে দুটো মস্তিষ্কই আজ বিকল হবার জোগাড়…
পদযুগলদ্বয়ের গতি কমে আসে। সামনেই একটা আঁখড়া। এক জোড়া চোখ সেখানে নিথর হয়ে পড়ে আছে, বাকি জোড়াটা বোধহয় ঝাপসা হয়ে বুজে আসতে চাচ্ছে। কিন্তু এখন তো চোখযুগলের সেই অধিকার নেই, সমাজ সে অধিকার শৈশবের পর থেকেই কেড়ে নিয়েছে।
হঠাৎ কোমল হাতটাকে খসখসে হাতটা চেপে ধরে, কিছুটা ঝাকুনিও দেয় হয়তোবা ! নাটুকে ভাবে সেখানে দাগ বসে না গেলেও কিছুটা লালচে হয়ে যাবার তো কথা। সেই ঝাকুনির রেশ কাটার আগেই বাজখাই স্বরটা বলে –
– ” আর না হয় ভালো নাই বা বাসলে, একবার তো আমার ভেতরের পশুটাকে খাবার দিতে পারো ! ”
খুব কর্কশ আর গালির মতো শুনায় একথা লম্বা চুলে ঢাকা রিং পড়া কানযুগলে। যদিও এটাই প্রথম নয়। এর আগেও অজস্রবার লোমশ বুকের নিচে নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছিলো সে। মানুষটা ধ্রুব থাকলেও, মানুষটার অনুভূতিগুলো বদলেছে। ভালোবাসাটাও ঐ চার দেয়ালের মাঝে বন্দি হয়ে গিয়েছিলো। আজ তো ভালবাসার মুক্তির দিন। আজ তো তাই দ্বিধা করবার কোনো মানেই হয় না।
সময় দৌড়ে দৌড়ে মিনিটের কাটাটাকে তিনবার চক্কর দিয়ে এনেছে। পাখিগুলো সহস্রবার ঢাল পরির্বতন করে নিয়েছে, গাছ থেকে ঝরে গিয়েছে অনেক পাতা, আর দুটি শরীরে জন্ম নিয়েছে শত সহস্র লবনাক্ত পানি দানা।
বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে বসে এক নারীদেহ। দেহটাকে আরো ঘেন্না করার উপলক্ষ্য পেয়ে গেছে সে।
নিজেকে তার পুতুল মনে হয়। এতোদিন এই মনে হওয়াটা তাকে কুঁকড়ে কুঁকড়ে মরেছে, কিন্তু আজ তাকে হালকা করে দিয়েছে। ভালোবাসার বোবাকান্নার ষোলআনা আজ সে পূরন করে ফেলেছে।
আর ভালোবাসার মানুষটিকে ভেবে কেঁদে রাত কাটাতে হবে না। সেই মানুষটি , যে কিনা তার ভালোবাসার জন্য বেছে নিলো কোমল মনের বদলে কোমল মাংসল দেহটাকে। আজ থেকে মিছেমিছি আর ভাবতে হবে না দুনিয়ার একপ্রান্তে কেও একজন তাকে ভালোবাসে, তার প্রতিক্ষায় আছে।
নারীদেহটা কাল থেকে অন্য কারো হয়ে যাবে, কিন্তু মনটা হয়তোবা পড়েই থাকবে।
আবার পথচলা শুরু হবে…….
আমার বিশ্বাস করতে হবে, আবার আশ্রয় খুঁজতে হবে কিন্তু আর কখনো হয়তোবা ভালোবাসতে হবে না।
কপালে এখনো বিন্দু বিন্দু ঘাম। এগিয়ে যেতে থাকে ঘড়ির কাটাটা। সবাই প্রতারনা করে, কিন্তু ঘড়িটা না।
৬টি মন্তব্য
প্রহেলিকা
এক কথায় অসাধারন বলা চলে। কিছু ছোট ছোট কথা এবং তার গাঁথুনি আর সেই সাথে গল্পের- আকুতি , পরিণয় এবং ব্যথার অনুপ্রবেশ গল্পকে নিয়ে গেছে বেশ উঁচু স্থানে। ভালোলাগা জানবেন, বিবিধ ক্যাটাগরিতে গল্পছায়া অনেক ভাল হয়েছে।
**নারীদেহটা কাল থেকে অন্য কারো হয়ে যাবে, কিন্তু মনটা হয়তোবা পড়েই থাকবে।**
মন আসলে এমনি ঠিক যেন বরফের মত আগুনের সামনে বলেন আর পানিতে চুবানো বলেন গলে যায় সে অনায়াসে। মনের পরিবর্তনটা শুধু একমাত্র মনই করতে পারে। বুঝিনা এতকিছু আমি আবার। ভাল থাকুন লিখুন অবিরাম। -{@
হিপনোটক্সিক ইরেকটাস
লেখাটা যখন শুরু করেছিলাম আসলে ঠিক কি লিখতে চাইতেছিলাম নিজের অজানা ছিলো। পরিধি বাড়ার সাথে সাথে গল্পের রূপ নিলেও কখনো হয়তোবা বাস্তবতাকে গল্প বলতে না পারার অপারগতা কিংবা অজানা গন্ত্যবের কারনে এটাকে বিবিধ ক্যাটাগরিতে রেখেছি।
আপনি যেমন আমার কিংবা পুরো জগতের কাছে অপরিচিতা কিন্তু ধ্রুব, ঠিক তেমনি মন, মানুষ আর ভালোবাসা ক্ষেত্রবিশেষে অপরিচিত হলেও এদের অস্তিত্ব চিরন্তন এবং ধ্রুব।
তবুও ভালোবাসি সেই মনটাকে…..
শুন্য শুন্যালয়
কথাগুলো মনে হয় আসলেই সত্য… এই একটি আকর্ষণেই কি মানুষ তার ভালোবাসার মানুষ কে ভেবে কেঁদে রাত কাটায়?
লেখাটি বেশ গুছিয়ে লেখা, ভালো লেগেছে … শুভকামনা
হিপনোটক্সিক ইরেকটাস
ধন্যবাদ আপনাকে , শুন্য শুন্যালয়
লীলাবতী
খুব ভালো লেগেছে। শরীর ভালোবাসা নয়। এটা অনেকেই বুঝেনা।
হিপনোটক্সিক ইরেকটাস
যারা বুঝে না তাদের না হয় বুঝানো যায় কিন্তু যারা বুঝেও না বুঝার ভান করে আক্ষেপটা তাদেরকে নিয়েই ।