মাহবুবুল আলম
আসলে দলনিরপেক্ষ বলতে কেউ নেই
বাঙলাদেশের প্রেক্ষিতে দলনিরপেক্ষ বলতে কোনো ব্যক্তি-বিশেষ আছে কি? এ কথার উত্তরটি একথায়ই দিয়ে দেয়া যায়; যে দল নিরপেক্ষ বলতে আমাদের দেশে এমন কোন মানুষ নেই। আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষ কোন না কোন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী। দেশের প্রতিটি মানুষই আমাদের বিভক্ত রাজনৈতিক মতাদর্শ বা দর্শনে বিশ্বাস করে এবং নির্বাচন এলে দলবেধে কোনো না কোন রাজনৈতিক দলকে ভোট দেয়। যেহেতু নির্বাচক মন্ডলী ভোট দেয় সেহেতু তখন আর তারা নিরপেক্ষ থাকেন না। নির্বাচকমন্ডলী কেউ আওয়ামী লীগ কেউ বিএনপি বা অন্যরা কেউ কেউ জাতীয়পার্টি-জামায়াত বা কমিনিষ্টপার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ভোট দেয়ার কারণে তাদের নিরপেক্ষতা হারান।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে যে ৩০ এর অধিক রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত এর মধ্যে দু’একটি ছাড়া বাকি দলগুলোর কর্মী-সমর্থক তেমন নেই। তবুও আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, তাও প্রায় শতাধিক। দলের সংখ্যা বিচার না করেও বলা যায় এদেশের নির্বাচন পাগল মানুষ নির্বাচন এলেই কোন না কোন দলের পক্ষে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে হিসেবে বাংলাদেশে নিরপেক্ষ কোন মানুষ নেই বললেই চলে।
কিন্তু আমাদের দেশের একদল লোক আছে নিজেদেরকে নিরপেক্ষ লোক দাবি করে মধ্যরাতের টকশো দাবড়িয়ে বেড়ান। তেনারা আবার নিজেদেরকে সুশীল সমাজের লোক বলে পরিচিয় দিয়ে গর্ববোধ করেন। কিন্তু আমি মনে করি তারাও কোন না কোন পক্ষের লোক। নিরপেক্ষতার দাবিদার এসব ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী এখন দেশের সচেতন নাররিকদের কাছে, সুবিধাবাদী বা মতলববাজ ব্যক্তি হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। তারা সব সময়ই গাছেরটা ও মাটিরটা ও খেতে চান। এরা অনেকেই বিভিন্ন এনজিও বা মানবাধিকার সংগঠনের আড়ালে এক ধরনের রাজনীতি করে বেড়াচ্ছেন। তাদের কোন জনসমর্থন নেই বলে নির্বাচনে দাঁড়াতে ভয় পান। যদিও বা কেউ নির্বাচনে দাঁড়ান তাদের জামানত পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়। তাই তারা সবসময়ই চেষ্টায় থাকে দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থাকে পূঁজি করে স্বার্থ হাসিলের। তাদের পাত্তা দেয়না বলে নির্বাচিত সরকারের সময়ে অস্বস্তিবোধ করে; এবং অসাংবিধানিক সরকারকে ক্ষমতায় আনতে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের গায়ে সমপরিমান বিষ্টা লেপন করে স্বার্থ সিদ্ধির কাজে মেতে ওঠে।
ওদের প্রধানশক্তি সাম্রাজ্যবাদী লুটেরা শক্তি যারা সব সময়ই বাংলাদেশকে গোলামের অধিক গোলাম ও ফকিরের অধিক ফকির করে রাখার চেষ্টা করে বেড়ায় আর এতে ইন্দন দেয় সেই তথাকথিত দলনিরপেক্ষ বা সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা। তাদের সাথে হাত মিলিয়ে আমাদের দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে, অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ বিক্রি করার পথ তৈরী করে। ওইসব দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের মধ্যে যেমন আছেন আইএসআইয়ের এজেন্ট তেমনি আছে সিআইয়ের এজেন্টও। তাই নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচন বানচাল করে অসাংবিধানিক সরকারের হর্তাকর্তা বিধাতা সেজে রাজনীতিবিদদের শায়েস্তা করতে তৎপর থাকে। যেটা আমরা দেখেছি ১/১১ সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। সে সময় এদের অনেকেই অসাংবিধানিক সরকারের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে ৯০ দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ২ বৎসর টেনে নিয়ে গেছেন। এবং রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদসহ সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষকে হেনস্থা করেছেন। কাজেই আামার মতে সুশীল সমাজও একটি পক্ষ এবং সুবিধাবাদী মতলববাজ পক্ষ।
এখানে একটি কথা বলা উচিত ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনের দাবিকে উপেক্ষা করে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন,‘শিশু ও পাগল ছাড়া’ কেউ নিরপেক্ষ নয়। তিনি যে তখন কত সত্যকথাটি বলেছিলেন, তা নিয়ে সমালোচনা হলেও দেশের বর্তমান টালমাটাল পরিস্থিতিতে তথাকথিত নিরপেক্ষ বা সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের কর্মকান্ডে উপলব্দি করছি যে, সেই মন্তব্যটি কত নির্দোষ ছিল। যদিও এখন বিরোধী দলীয় নেত্র আবার শিশু ও পাগল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের অধিনে নির্বাচন দাবি করে আন্দোলন করছেন। কিন্তু বাংলাদেশে চার চারটি নির্বাচন সেই! নিরপেক্ষা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে হলেও নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপি উভয় দলই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করেছে। আর সালসা মার্কা নির্বাচনতো তত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষার কফিনে শেষ পেড়েকটি মেরে দিয়ে গেছেন। আর তিন উদ্দিনের নির্বাচন নিয়ে তো বিএনপির অভিযোগ এখনো বহাল আছে।
তাই সব শেষে বলতে চাই, দেশের সব রাজনৈতিক দল মিলে একত্রে বসে এমন একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করুন যাতে নির্বাচন এলেই তথাকথিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে আর অশান্তি সৃষ্টি না হয়। আন্দোলন সংগ্রামের নামে কোনো মানুষের প্রাণহানী না ঘটে। কোন মায়ের বুক খালী না হয়।
১০টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
অশান্তি এদেশের রাজনীতির মুল মন্ত্র…কেউই এটা বন্ধ করবে না…
এমডি. মাহবুবুল আলম
চলুন আমরা সবাই রাস্তায় নামি। এভাবে একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ চলতে পারে না।
ব্লগার সজীব
ভালো লিখেছেন । একমত আপনার সাথে । আপনি শিরোনাম দিতে ভুলে গিয়েছেন । শিরোয়াম ব্যতীত এত ভালো একটি লেখা কেমন জানি দেখাচ্ছে ।
এমডি. মাহবুবুল আলম
যেদিন প্রথম সোনেমা ব্লগে যোগদান করেছিলাম সেদিন তাড়াহুড়া করতে যেয়ে এমনটি হয়েছে। শিরোনাম না লিখে প্রকাশ করে ফেলেছিলাম। তবে শিরোনামটি মূল টেক্সটে আছে। ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য। (y)
নীলকন্ঠ জয়
কিছু তথ্য অজানা ছিলো। অনেক তথ্যবহুল গোছানো একটী লেখা। দলনিরপেক্ষ বলতে কিছু নেই। (y)
এমডি. মাহবুবুল আলম
আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় স্বাগতম -{@
অনেক ভালো লেগেছে আপনার গোছানো লেখাটি ।
আপনি গুণী জন।
আপনার কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।
সোনেলাকে সমৃদ্ধ করুন আপনার লেখনি দিয়ে , এই আশা করছি ।
শুভকামনা ।
এমডি. মাহবুবুল আলম
আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
খসড়া
ধন্যবাদ। কিন্তু আমজনতা চেচাক, মরুক, পুড়ুক তাতে কি? এগুলিতো মরবার জন্যই।
এমডি. মাহবুবুল আলম
তাই বলে কি আমরা প্রতিবাদহীন পড়ে পড়ে মা’র খাব?