১৫ আগষ্ট নিয়ে কিছু কথা ।
এই দিনেই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল বাংলার সূর্য সন্তান, বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডের স্বাধীনতার রূপকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে ।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না । কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমাকে অনুপ্রাণীত করে । তাঁর ৭ ই মার্চের ভাষণে আমার রক্তের প্রতিটি কনিকা আন্দোলিত হয় ।
অনেকে অনেক ভাবে বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করেছেন । আমি তাঁদের সবাইকে বলব আপনারা আগে ৭ মার্চের মত একটা ভাষণ দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করুন তাঁরপর আপনার সাথে কথা বলা যাবে ।
বঙ্গবন্ধু কোন রাজনৈতিক দলের সম্পত্তি নয় । তিনি বাঙালীর গর্ব । সবচেয়ে অবাক লাগে যখন এমন একটা দিনে দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দলীয় নেত্রী মিথ্যা জন্মদিন পালন করেন । রাজনীতি মানুষকে কতটা অন্ধ মনুষ্যত্বহীন করে তুলতে পারে এটা তারই প্রমান ।
একজন মৃত মানুষের সাথে কিসের শত্রুতা !!!!
এই অস্থির মানুষিকতার বৃত্ত থেকে যতদিন বাংলাদেশের রাজনীতি বের হতে না পারবে ততদিন দেশে শান্তি আসবে না ।
যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান,
ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’
একটি সত্যি ঘটনা এবং বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে কিছু ঐতিহাসিক বানী
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিদেশের মাটিতে একদিন ইয়োরোপের কোন এক এয়ারপোর্টে শেখ হাসিনা যখন সেদেশের ইমিগ্রেশন অফিসারের মুখোমুখি হলেন তখন শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেখে ইমিগ্রেশন অফিসার ঘ্রিনাভরে শেখ হাসিনাকে বলতে লাগলেন – “তুমি বাংলাদেশের মানুষ? তোমরা বড় অকৃতজ্ঞ জাতি। যে মানুষটা তোমাদের মুক্তি এনে দিলেন, স্বাধীনতা এনে দিলেন আর তাকেই তোমরা হত্যা করলে?” এ কথা শুনে সেই এয়ারপোর্টেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন মুজিব কন্যা। শেখ হাসিনাকে তো তখন কেউ চিনতো না। তাই ইমিগ্রেশন অফিসারও বুঝতে পারেননি যার সাথে তিনি কথা বলছেন তিনিই হলেন সেই মহানায়কের এতিম কন্যা।
“শেখ মুজিব ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন, গান্ধী এবং দ্যা ভ্যালেরার থেকেও মহান নেতা।” — বৃটিশ লর্ড ফেন্যার ব্রোকওয়ে।
“আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও নির্ভীকতা হিমালয়ের মতো। এভাবেই তার মাধ্যমে আমি হিমালয়কে দেখেছি।” — ফিদেল ক্যাস্ট্রো।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমরা আমাদের নিজ জাতির পিতাকে ঠিক ভাবে চিনিনা, কিন্তু বর্হিবিশ্ব সেই অমিত তেজী মানুষকে ঠিকই চিনেছিল। আমরা ফিদেল, চে, মাও নিয়ে গবেষণা করি কিন্তু নিজ জাতির পিতা সম্পর্কে দুই পৃষ্ঠা পড়তে আমাদের মান সম্মানে লাগে।
নিজ সমাজ, ইতিহাস ভুলে আমরা টি-শার্টে চে’, বব মার্লি, জনলেনন
এঁকে আমরা “কুল” সাজার চেষ্টা করি, কিন্তু ভুলে যাই আমাদেরই পরম মমতাময়ী হিমাদ্রীকে।
বঙ্গবন্ধু এই জাতির জন্য কী করেছিলেন বিশ্ব নেতৃত্ব এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বঙ্গবন্ধু বিষয়ে উক্তিগুলোই তাঁর জ্বলন্ত সাক্ষী-
বিশ্বের প্রভাবশালী মিডিয়া বঙ্গবন্ধুকে বর্ণনা করেন এভাবে- ‘তিনি এমন এক বিশাল ব্যক্তিত্ব যার সামনে সহসা মাথা নুয়ে আসে।’
“মুজিব হত্যার পর বাঙালীদের আর বিশ্বাস করা যায় না,যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে।” — নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট।
“শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে,আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।” — ফিদেল কাস্ট্রো।
“আপোষহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ঠ্য।” — ইয়াসির আরাফাত।
“শেখ মুজিব নিহত হবার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন।তার অনন্যসাধারন সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগনের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।” — ইন্দিরা গান্ধী।
“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতীষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর।” — সাদ্দাম হোসেন।
“শেখ মুজিবুর রহমান ভিয়েতনামী জনগনকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।” — কেনেথা কাউণ্ডা।
“বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডে বাঙলাদেশই শুধু এতিম হয় নি বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।” — জেমসলামন্ড, ইংলিশ এম পি।
“আওয়ামিলীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মত তেজী এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বুছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না।” — হেনরি কিসিঞ্জার।
“তোমরা আমার প্রিয়বন্ধু মুজিবকে হত্যা করলে! আমারই দেয়া ট্যাংক ব্যাবহার করে! আমি নিজেকেই অভিশাপ দিচ্ছি, কেন আমি তোমাদের ট্যাংক দিয়েছিলাম?”
— আনোয়ার সাদাত (মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট)।
“শেখ মুজিবকে চতুর্দশ লুই ইয়ের সাথে তুলনা করা যায়। জনগন তার কাছে এত প্রিয় ছিল যে লুই ইয়ের মত তিনি এ দাবী করতেই পারেন আমি ই রাষ্ট্র।” — পশ্চিম জার্মানী পত্রিকা।
“শেখ মুজিব নিহত হলেন তার নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে অথচ তাকে হত্যা করতে পাকিস্তানীরা সংকোচবোধ করেছে।” — বিবিসি-১৫ আগস্ট ১৯৭৫।
প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের মতে, ‘শেখ মুজিব ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব।’
ফিনান্সিয়াল টাইমস বলেছে, ‘মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনই জন্ম নিতনা।’
ভারতীয় বেতার ‘আকাশ বানী’ ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট তাদের সংবাদ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বলে, ‘যিশু মারা গেছেন। এখন লক্ষ লক্ষ লোক ক্রস ধারণ করে তাকে স্মরণ করছে। মূলত একদিন মুজিবই হবেন যিশুর মতো।’
একই দিনে লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকান্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’
নিউজ উইকে বঙ্গবন্ধুকে আখ্যা দেওয়া হয়, “পয়েট অফ পলিটিক্স বলে”।
জাপানী মুক্তি ফুকিউরা আজও বাঙালি দেখলে বলে বেড়ান, “তুমি বাংলার লোক? আমি কিন্তু তোমাদের জয় বাংলা দেখেছি। শেখ মুজিব দেখেছি। জানো এশিয়ায় তোমাদের শেখ মুজিবের মতো সিংহ হৃদয়বান নেতার জন্ম হবে না বহুকাল।”
৪টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
যে দেশের পাখিরা গান গায় বঙ্গবন্ধুর নামে
যে দেশের বাতশে মিশে আছে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠ
সে দেশে কার সাধ্য বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার ?
সঞ্জয় কুমার
যথার্থ ই বলেছেন ।
শুন্য শুন্যালয়
আপনি সেদিন এক পোস্টে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণে বাঙালী হুজুগে যুদ্ধে নেমেছিল, সেদিন আমার খারাপ লেগেছে খুব, যদিও মন্তব্য করার সুযোগ দেননি। স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন, অর্জন করাটাও ছিলো কঠিন। একটি অর্জনের জন্য একজন শেখ মুজিবর রহমানই যথেস্ট ছিল।
পোস্টটি ভালো লাগলো বেশ। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এমন পোস্টের জন্য।
সঞ্জয় কুমার
আপনাকে ও অশেষ ধন্যবাদ ।