
গতকাল বিকেল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছিলো রংপুরে। ঘুণাক্ষরেও যদি জানতাম গভীর রাতে এক কোমর পানিতে তলিয়ে যাবো তাহলে ঘুমানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে ঘুমাতাম। কিন্তু হায়! বিপদ কি আর বলে কয়ে আসে! গতকাল অনুধাবন করেছি সমুদ্রতীরবর্তী স্থানের মানুষ প্রবল ঘুর্ণিঝড় বৃষ্টিতে কি নিদারুণ দুর্ভোগে রাত অতিক্রান্ত করে।
রাত ন’টার দিকে প্রচন্ড মেঘের গর্জনে বিদ্যুৎচমকের সাথে বারংবার বাজ পড়তে থাকে। বিদ্যুৎ চলে যায়। রাস্তার গাছপালা মটমট করে ভেঙে যাবার শব্দে মনে কু ডাক দিতে থাকে। ভয়ে বাসায় আমরা সবাই এক ঘরে জড়ো হই। মেঘের গর্জন যেন বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলো। ঘরবাড়ি গমগম শব্দে ঝাঁকুনি দিচ্ছিলো। মনে হলো আজই জীবনের শেষ রাত।
আনুমানিক ভোর চারটার দিকে উঠোন উপচে ঘরে পানি ঢোকা শুরু হয় অনেকের। দেখতে দেখতেই বিছানা ছুঁইছুঁই অবস্থা! সে সময় সৃষ্টিকর্তাকে প্রাণভয়ে ডাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা আমাদের।
টানা ১৪ ঘণ্টার বৃষ্টিতে পুরো রংপুর শহর অচল হয়ে পানিতে সয়লাব নগরীর ঘর-বাড়ি, অলি-গলি, রাস্তা-ঘাট, খেলার মাঠ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও কবরস্থান। গতরাতে ১’শ বছরের রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি দেখেছে রংপুরবাসী।
সারা রাত অবিরাম বর্ষণ শেষে রোববার সকালে বৃষ্টি থামে। ড্রেনের মাধ্যমে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় সব এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানি ঢুকে পড়ে ঘর-বাড়িতে। শ্যামাসুন্দরী খালে পানি বৃদ্ধির কারণে নগরীর ছোট নুরপুর কবরস্থানেও পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে কবরের উপরে ভাসছে বর্ষার পানি।
মুষলধারে অবিরাম বৃষ্টির কারণে নগরীর বেশিরভাগ এলাকাগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পানির উচ্চতা বেশি থাকায় অনেকে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিলেন। রংপুর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স সকাল ৬টা থেকে স্পিডবোটের মাধ্যমে মুলাটোল, পাকার মাথা ও পালপাড়াসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি মানুষদের জন্য উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে।
অবিরাম বর্ষণ রংপুরে ১’শ বছরের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। সেপ্টেম্বর মাসে গড়ে প্রতি বছর ২২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। তবে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুরে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৩৩ মিলিমিটার। ফলে এ বৃষ্টিপাত অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ করেছে বলছে আবহাওয়া অফিস।
রংপুর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স এবং বিদ্যুৎ বিভাগের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হচ্ছে। অবশ্যই তাদের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা সবাই।
মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নতজানু হয়ে কৃতজ্ঞতা জানাই এখনো সুস্থ আছি, ভালো আছি এবং বেঁচে আছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সকল বালামুসিবত থেকে হেফাজত করুন।
[তথ্যসূত্র ও ছবি – দৈনিক সমকাল ও অনলাইন মাধ্যম]
২৮টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আল্লাহ আমাদের এই মহা দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণে রাখুন এই কামনা করি।
সাবধানে থাকবেন, এমনিতেই করোনা ভয় বিদ্যমান।
তৌহিদ
আল্লাহ সহায়, দোয়া রাখবেন ভাই। পানি নেমে যাচ্ছে এখন।
শুভকামনা রইলো।
রেজওয়ানা কবির
আব্বুর কাছে ফোনে রংপুরের এই অবস্থা শুনে খুব খারাপ লেগেছে।সত্যি মানুষের খুব দুরাবস্থা।আল্লাহ সবাইকে হেফাযত করুক এই কামনা।আর আপনি রংপুরের জেনে খুব ভালো লাগল।এলাকার একটা টান💓💓
তৌহিদ
বৃষ্টির পানির জলাবদ্ধতা একেবারে নাকাল করে দিয়েছে আমাদের। এখন পানি নেমে যাচ্ছে।
ভালো থাকুন আপু।
মোঃ মজিবর রহমান
আমার বন্ধুর বাসা ধাপে, তার বাসায়ও পানি, আবার মুনশিপাড়া তাও ডুবে গেছে। আল্লাহ কে ডাকা ছাড়া কোন পথ নায়। আল্লাহর রহমত হলে সেই পথ দেখাবে। আল্লাহ তুমি সবাইকে ভাল রাখ। আমিন।
তৌহিদ
আল্লাহ সহায়, দোয়া রাখবেন ভাই। পানি নেমে যাচ্ছে এখন।
শুভকামনা রইলো।
খাদিজাতুল কুবরা
আমাদের ও দিকে ও বন্যা হয় প্রায় প্রতিবছর। বন্যায় কি দুর্বিষহ দুর্ভোগ তা ভুক্তভোগী ছাড়া আন্দাজ করা সম্ভব নয়। তারপর ও দোয়া করছি আল্লাহ পাক পানি বন্দি মানুষদের ধৈর্য দিক কষ্ট লাঘব করে দিক।
সাবধানে থাকবেন ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।
তৌহিদ
একেবারে চরম বাজে অবস্থা ছিল এবারে। বন্যার মত থৈ থৈ পানি চারপাশে।
দোয়া রাখবেন আপু।
খাদিজাতুল কুবরা
নিশ্চয়ই দোয়া করি ।
আল্লাহ সহায় হোন।
সাবিনা ইয়াসমিন
২০২০ সালটাই রেকর্ড করার। একটার পর একটা রেকর্ড করে যাচ্ছে। মহামারী, জ্ঞানী গুণীদের অকাল মৃত্যু, রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, প্রাকৃতিক দূর্যোগ সবকিছুর জন্যেই চির স্বরণীয় হয়ে রবে ২০২০।
মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন এবার আমাদের অসহায়দের প্রতি একটু করুণা করেন।
ভালো থাকুন ভাই, সাবধানে থাকুন।
শুভ কামনা 🌹🌹
তৌহিদ
আল্লাহ সহায়। বৃষ্টির পানির জলাবদ্ধতা একেবারে নাকাল করে দিয়েছে আমাদের। এখন পানি নেমে যাচ্ছে।
ভালো থাকুন আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এই সালটা সবদিক দিয়েই যেন দূর্যোগের ঘনঘটা। আর ভালো লাগে না । প্রথম আলোতে দেখলাম সত্তর বছরের মধ্যে রেকর্ড গড়েছে রংপুরের বৃষ্টি।ঢাকায় তেমন বৃষ্টি হচ্ছে না কিন্তু ঢাকার বাইরে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে। ঈশ্বর সবার মঙ্গল করুন। ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগকে ধন্যবাদ। সাবধানে থাকুন শুভকামনা রইলো
তৌহিদ
সকলের আপ্রাণ চেষ্টায় প্রাণ ফিরে আসছে শহরে। কি যে নাকাল অবস্থা ছিলো!
আপনারাও ভালো থাকুন এটাই প্রার্থণা।
সুরাইয়া পারভীন
বিষ সাল যেনো বিষাক্ত হয়েই এলো মানুষের জীবনে। একটার পর একটা দুর্যোগ লেগেই আছে। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের হেফাজত করুন। আমীন
তৌহিদ
আল্লাহ একমাত্র রক্ষাকারী। আপনিও ভালো থাকুন এটাই প্রার্থণা।
শুভকামনা রইলো।
রেহানা বীথি
এ বছর শুরুই হয়েছে দুর্যোগ দিয়ে। আল্লাহ্ পাক হেফাজত করুন সবাইকে।
তৌহিদ
আল্লাহ একমাত্র রক্ষাকারী। আপনিও ভালো থাকুন এটাই প্রার্থণা।
শুভকামনা রইলো।
আলমগীর সরকার লিটন
হায় আল্লাহ কি বললেন ত বৃষ্টি এত বন্যা আল্লাহ তারাতারি ভাল করে দাও
তৌহিদ
আল্লাহ সহায়। ভালো থাকুন ভাই।
ইঞ্জা
দুঃখজনক ভাই, ৪৪৩ মি.লি বৃষ্টি মানে সে এক ভয়াবহ অবস্থা, বুঝতে পারছি কি নিদারুণ কষ্টে ছিলেন আপনারা।
আল্লাহ রহমানুর রহিম নিশ্চয় আপনাদেরকে রক্ষা করবেন ভাই, আল্লাহ ভরসা।
তৌহিদ
আল্লাহ একমাত্র রক্ষাকারী। আপনিও ভালো থাকুন ভাই এটাই প্রার্থণা। এখন পানি নেমে যাচ্ছে।
শুভকামনা জানবেন।
ইঞ্জা
আলহামদুলিল্লাহ
রোকসানা খন্দকার রুকু
এমন হবার জন্য আমরাই দায়ী।শ্যামাসুন্দরী খাল সংস্কার হল অনেক কষ্টে। তারপরও জনগনের হুঁশ হয়না। সমস্ত ময়লা পলিথিন ফেলে খালের মুখ বন্ধ। পানি যেতে পারেনা।
আমাদের সচেতনতা জরুরি।
শুভ কামনা ভাই। সাবধানে থাকবেন।
তৌহিদ
আমাদের প্রত্যেকের সচেতনতা জরুরি। না হলে বিপদ আরো বাড়বে।
ভালো থাকুন আপু।
আরজু মুক্তা
মহাসাক্ষী!
কখনোই এমন দেখেনি!
আল্লাহ রক্ষাকর্তা।
তৌহিদ
স্বাক্ষী রইলাম সবাই। আল্লাহ রক্ষাকারী। ভালো থাকুন আপু।
সুপায়ন বড়ুয়া
শত বছরের রেকড করা বৃষ্টিতে টই টুম্বর রংপুর বাসী
সমবেদনা জানানোর ভাষা জানা নেই।
ঝর বৃষ্টি বন্যার সাথে যাদের বসবাস তাদের কথা আলাদা
রেকড করা সবকিছুতে আনন্দ আর দুর্ভোগ বহে আনে।
এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পান এই কামনাই করি।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
এখন পানি নেমে যাচ্ছে দাদা। তবে এই জলাবদ্ধতার জন্য আমরারাই দায়ী। ড্রেন, খাল বিল সব ময়লায় ভরে গিয়েছে। সচেতন না হলে সামনে আরো বিপদ।
শুভকামনা রইলো দাদা।