স্মৃতির অশ্রুমালা

বোকা মানুষ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, শনিবার, ০৩:৪৮:০৪অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৮ মন্তব্য

আমার দাদা ডাঃ রহিমদাদ ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার আর দাদী আমাতুন্নবী খানম ছিলেন স্কুলশিক্ষিকা! দাদাকে ডাকতাম ‘দাদুভাই’ আর দাদীকে, ‘দাদু’। দাদুভাইয়ের চেম্বার ছিল চট্টগ্রামের চন্দনপুরার সিরাজুদ্দৌলা রোডে। আমার জন্মের পর সে চেম্বার আমি দেখিনি। তবে পাড়ার এবং পরিবারের মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি ডাক্তারিতে তাঁর ভালই পসার ছিল! কিন্তু তাঁর বেশি মনোযোগ ছিল গরীব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধ দেয়াতে! যে কারনে দিনশেষে আয় বলতে তেমন কিছুই থাকতোনা! যা থাকতো, সেটা নতুন ওষুধ কেনার পেছনেই খরচ হয়ে যেত! ফলে দাদুর শিক্ষকতার আয়ে বাবা, কাকু আর ফুফু অনেক সংগ্রাম করে বড় হয়েছেন! এর পর বাবা ক্লাশ টেন এ থাকতেই চলে যান পাকিস্তান বিমান বাহিনী পরিচালিত লোয়ারটোপা স্কুলে, সেখান থেকে এয়ারফোর্সে যোগ দিয়ে রেডিও এবং রেফ্রিজারেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্পেশালাইজ করেন। এয়ারফোর্সে যোগ দিয়ে সংসার চালানোতে দাদুভাই, দাদুকে সমর্থন যোগান! তারপর বাবা এয়ারফোর্স ছেড়ে চাকরিতে যোগ দেন! এর পরে কাকু ইঞ্জিনিয়ারিং আর ফুফু ডাক্তারি পাশ করেন!

ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে ফেললাম। যে কারনে এ লেখা, সেটা বলি। দাদুভাই আমাকে প্রচন্ড আদর করতেন! আমাকে গোসল করানো, স্কুলের জামা জুতো পরিয়ে দেয়া, এমনকি আমার ময়লা কাপড়গুলোও তিনি নিজে ধুয়ে দিতেন! বিদেশ থেকে বাবা বা ফুফু যেসব চকোলেট বা খেলনা আনতেন, তার অর্ধেকই দাদুভাই আমার জন্য রেখে দিয়ে বাকি অর্ধেক অন্য ভাইবোনদের মধ্যে ভাগ করে দিতেন! দাদুভাইয়ের একটা ঘটনা এখনও আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমার তখন ৬/৭ বছর বয়স। দাদুভাই বাইরে থেকে এসে দেরিতে দুপুরের খাওয়া খেতে বসেছেন! তরকারী অতিরিক্ত ছিল, কিন্তু ভাত একজনের পরিমানই ছিল। তো দাদুভাই মাত্র হাতটা ধুয়ে চেয়ারে বসেছেন, এমন সময় বাইরে থেকে আওয়াজ এল “অ মা, কিছু খাইতে দাও না, খুব খিদা লাগসে…!” শুনেই প্লেটে নেয়া ভাত ছেড়ে দাদুভাই উঠে গেলেন। আমার মা কে ডেকে বললেন, “ও বৌ, জামশেদকে (আমাদের গৃহকর্মী) দিয়ে ওই লোকটাকে সামনের ঘরে বসিয়ে ভাতগুলা তরকারী সহ খেতে দিতে বলো! আমাকে পরে ভাত রেঁধে দিও, তখন খাবো!”

দাদুভাই মারা গেছেন ১৯৭৯ সালে। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে আজতক আমি দাদুভাইয়ের রুমটাতেই থাকি! আজ তাঁর রুমে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে তাকে খুব মনে পড়ছে! উপরের ঘটনাটা মনে পড়ছে ভীষন আর খুব মিস করছি তাঁর স্নেহকে! দাদুভাই ছিলেন প্রচন্ড রাগী, প্রচন্ড আবেগপ্রবন, প্রবল অভিমানী আর পরোপকারী। আমার কেন যেন মনে হয়, দাদুভাইয়ের জেনেটিক প্রভাবটাই আমার উপর সবচেয়ে বেশি!

আল্লাহ্ তাঁকে জান্নাতের অপার শান্তিতে রাখুন!

৬১১জন ৬১০জন
0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ