আমার দাদা ডাঃ রহিমদাদ ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার আর দাদী আমাতুন্নবী খানম ছিলেন স্কুলশিক্ষিকা! দাদাকে ডাকতাম ‘দাদুভাই’ আর দাদীকে, ‘দাদু’। দাদুভাইয়ের চেম্বার ছিল চট্টগ্রামের চন্দনপুরার সিরাজুদ্দৌলা রোডে। আমার জন্মের পর সে চেম্বার আমি দেখিনি। তবে পাড়ার এবং পরিবারের মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি ডাক্তারিতে তাঁর ভালই পসার ছিল! কিন্তু তাঁর বেশি মনোযোগ ছিল গরীব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধ দেয়াতে! যে কারনে দিনশেষে আয় বলতে তেমন কিছুই থাকতোনা! যা থাকতো, সেটা নতুন ওষুধ কেনার পেছনেই খরচ হয়ে যেত! ফলে দাদুর শিক্ষকতার আয়ে বাবা, কাকু আর ফুফু অনেক সংগ্রাম করে বড় হয়েছেন! এর পর বাবা ক্লাশ টেন এ থাকতেই চলে যান পাকিস্তান বিমান বাহিনী পরিচালিত লোয়ারটোপা স্কুলে, সেখান থেকে এয়ারফোর্সে যোগ দিয়ে রেডিও এবং রেফ্রিজারেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্পেশালাইজ করেন। এয়ারফোর্সে যোগ দিয়ে সংসার চালানোতে দাদুভাই, দাদুকে সমর্থন যোগান! তারপর বাবা এয়ারফোর্স ছেড়ে চাকরিতে যোগ দেন! এর পরে কাকু ইঞ্জিনিয়ারিং আর ফুফু ডাক্তারি পাশ করেন!
ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে ফেললাম। যে কারনে এ লেখা, সেটা বলি। দাদুভাই আমাকে প্রচন্ড আদর করতেন! আমাকে গোসল করানো, স্কুলের জামা জুতো পরিয়ে দেয়া, এমনকি আমার ময়লা কাপড়গুলোও তিনি নিজে ধুয়ে দিতেন! বিদেশ থেকে বাবা বা ফুফু যেসব চকোলেট বা খেলনা আনতেন, তার অর্ধেকই দাদুভাই আমার জন্য রেখে দিয়ে বাকি অর্ধেক অন্য ভাইবোনদের মধ্যে ভাগ করে দিতেন! দাদুভাইয়ের একটা ঘটনা এখনও আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমার তখন ৬/৭ বছর বয়স। দাদুভাই বাইরে থেকে এসে দেরিতে দুপুরের খাওয়া খেতে বসেছেন! তরকারী অতিরিক্ত ছিল, কিন্তু ভাত একজনের পরিমানই ছিল। তো দাদুভাই মাত্র হাতটা ধুয়ে চেয়ারে বসেছেন, এমন সময় বাইরে থেকে আওয়াজ এল “অ মা, কিছু খাইতে দাও না, খুব খিদা লাগসে…!” শুনেই প্লেটে নেয়া ভাত ছেড়ে দাদুভাই উঠে গেলেন। আমার মা কে ডেকে বললেন, “ও বৌ, জামশেদকে (আমাদের গৃহকর্মী) দিয়ে ওই লোকটাকে সামনের ঘরে বসিয়ে ভাতগুলা তরকারী সহ খেতে দিতে বলো! আমাকে পরে ভাত রেঁধে দিও, তখন খাবো!”
দাদুভাই মারা গেছেন ১৯৭৯ সালে। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে আজতক আমি দাদুভাইয়ের রুমটাতেই থাকি! আজ তাঁর রুমে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে তাকে খুব মনে পড়ছে! উপরের ঘটনাটা মনে পড়ছে ভীষন আর খুব মিস করছি তাঁর স্নেহকে! দাদুভাই ছিলেন প্রচন্ড রাগী, প্রচন্ড আবেগপ্রবন, প্রবল অভিমানী আর পরোপকারী। আমার কেন যেন মনে হয়, দাদুভাইয়ের জেনেটিক প্রভাবটাই আমার উপর সবচেয়ে বেশি!
আল্লাহ্ তাঁকে জান্নাতের অপার শান্তিতে রাখুন!
১৮টি মন্তব্য
লীলাবতী
আল্লাহ্ আপনার দাদু ভাইকে জান্নাতের অপার শান্তিতে রাখুন!আপনিও দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠুন।
বোকা মানুষ
ধন্যবাদ! আমার বার বার মনে হচ্ছিল আজ দাদুভাই বেঁচে থাকলে পরো বাড়ি অস্থির করে ফেলতেন আমার দেখভালের জন্য! অথচ এখন, দু’দিন টানা অসুস্থ- বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা-মা আর বোন দুটা ছাড়া আর কেউ খবরই নিলোনা! যারা খবর নেয়নি, তাদের মধ্যে এমনও রক্ত সম্পর্কিত মানুষ আছেন, যাদের আজকের উন্নতির পেছনে আমার বাবার শ্রম ঘাম মিশে আছে! সম্পর্কগুলো বড় ঠুনকো হয়ে যাচ্ছে আজকাল! 🙁
মেহেরী তাজ
আপনার দাদুভাইয়ের আত্মার শান্তি আর আপনার সুস্থতা কামনা করছি।
বোকা মানুষ
ধন্যবাদ! কবুল হোক আপনার প্রার্থনা!
অরুনি মায়া
নিজের যত্ন নিন। দাদু ভাই খুশি হবেন। উনি যেখানেই আছেন।আপনাকে অসুস্থ দেখেলে উনার আত্মা কষ্ট পাবে। উনি একজন প্রকৃত মানব সেবী ছিলেন। আধুনিক ডাক্তার দের মত ব্যাবসায়ী ছিলেন না,,,,,,
বোকা মানুষ
ধন্যবাদ আপনাকে!
নীলাঞ্জনা নীলা
আপনার দাদুভাইয়ের আত্মা শান্তি পাক। আর আমার ডাঃ মেশো(খালু) উনিও এমন ছিলেন।
যাক নিজের খেয়াল নিন, সুস্থ হয়ে উঠুন।
বোকা মানুষ
আপনার ডাঃ মেসো আর আমার দাদুভাইদের মত ভাল মানুষরা ছিলেন/ আছেন বলেই আজও পৃথিবীটা টিকে আছে! অসুস্থ অবস্থায় মন দুর্বল হয়ে পড়ে, একটু ভরসা চায়! তাই আজ দাদুভাইয়ের কথা প্রবলভাবে মনে পড়ছিল!
নীলাঞ্জনা নীলা
সুস্থতা কাম্য। -{@
বোকা মানুষ
ধন্যবাদ!
সিকদার
আল্লাহ্ আপনার দাদু ভাইকে জান্নাতে রাখুক!আপনার সুস্থতা কামনা করছি।
বোকা মানুষ
আমীন!
অলিভার
আপনার দাদুর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। মহৎ হৃদয়ের এমন ব্যক্তি অবশ্যই আল্লাহ্ জান্নাতবাসী করবেন 🙂
দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন, শুভ কামনা আপনার জন্যে
বোকা মানুষ
আমার দাদুভাইয়ের জন্য দোয়া এবং আমার সুস্থতা কামনা করার জন্য ধন্যবাদ!
অরণ্য
আপনার দাদুভাইয়ের আত্মার শান্তি কামনা করছি। আপনিও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।
ঈদ মোবারক।
বোকা মানুষ
ধন্যবাদ এবং ঈদ মুবারক!
ব্লগার সজীব
আপনার দাদুর আত্মা ভালো থাকুক।
বোকা মানুষ
সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ।