
আমরা প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। স্বপ্ন আশা যোগায়, স্বপ্ন মানুষকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়। আমাদের মনের ইচ্ছেরা প্রতিমুহূর্তে ডানা মেলে স্বপ্নাকাশে। অনেক সময় আনন্দে বিহ্বল হয়ে আমরা উচ্ছাস করি। তেমনি নিজের অনেক ইচ্ছে পূরণ না হলে ব্যথাতুর মন নিয়ে হতাশায় ডুবে যাই। কারন স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকা আমাদের সকলের।
তবে স্বপ্ন এবং ইচ্ছের মাঝে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। আমাদের ইচ্ছেগুলো অসীম; যার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। আমি স্বপ্ন দেখি বাস্তবতার নিরিখে, নিজের সামর্থ্য স্বকীয়তা বিচার-বিশ্লেষণ করে। তা না হলে স্বপ্নেরা ইচ্ছে বন্দি হয়েই থেকে যাবে নিজের মন খাঁচায়। মুক্ত আকাশে ডানা মেলে আর কোনদিনও উড়তে পারবে না।
স্বপ্ন দেখার এই বিষয়টিকে আমি গভীর ভাবনায় নিতে শুরু করি ২০১৬ সালের পর থেকে। মেধাবী ছাত্র হিসেবে স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি’তে আমার কদর ছিল সহপাঠী, শিক্ষক সবার কাছে। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম আকাশচুম্বী সব কল্পনার।
২০০৬ সালে শিক্ষা জীবন শেষ করে যখন করপোরেট জগতে পা রাখি, একেকটা করে দিন গত হতে থাকে আর আমার স্বপ্নগুলো কাঁচের মত চুরচুর করে ভাঙ্গতে থাকে। বিষাদে বিতৃষ্ণায় আত্মবিশ্বাস জলাঞ্জলি দিতে দিতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় আমার। স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দেই একসময়; ভাবনায় আসে জীবন চলুক তার নিজের গতিতে।
এরপর দীর্ঘ এক যুগ পার হয়ে যায় নতুন কোন স্বপ্ন আমি দেখিনি, আসলে সাহসে কুলিয়ে পেরে উঠতে পারিনি। জীবনে চলতে গেলে প্রিয়জনদের উৎসাহ আমরা সবাই পাই কিন্তু যেকোনো স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে হয় নিজেকেই। আমার জীবনে দেখা ছোট্ট একটি ঘটনা আবারো আমাকে স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করেছে এবং তখনই আমি বুঝতে শিখেছি স্বপ্ন এবং ইচ্ছের সেই সূক্ষ্ম পার্থক্য।
আমার স্বপ্ন পতনের দিনগুলির মাঝেই একদিন আব্বা ইন্তেকাল করেন। এক কোরবানি ঈদে এপেক্সের একজোড়া নতুন স্যান্ডেল কেনার স্বপ্ন নিয়ে বাজারে গিয়ে নিরাশ হতে হয় শুধুমাত্র স্বপ্নকে সামর্থের সাথে মিলাতে না পারার কারনে। রাগে-দুঃখে মন খারাপ করা একজন অপরাজিত সৈনিকের মত জীবনের কাছে যখন আমার মাথা হেট হয়ে গিয়েছিল সেদিন আমাকে কেউ একজন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন স্বপ্ন ও বাস্তবতার আকাশপাতাল পার্থক্য।
একজন পা হারানো মানুষের আক্ষেপ বেদনা দেখিয়ে তিনি বলেছিলেন- আমার তো তবুও পা আছে কিন্তু যে মানুষটি দুর্ঘটনায় নিজের দুই পা’ই হারিয়েছেন তিনি তার পায়ে এপেক্সতো দূরের কথা সাধারন একজোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল পড়ার স্বপ্নও দেখতে পারছেন না। এই জগতে অন্তত তার চেয়ে আমি অনেক সুখী।
সেদিনই আমি জেনেছি ইচ্ছেগুলোকে কিভাবে স্বপ্নের সাথে আলাদা করে পার্থক্য করতে হয়। এরপর কত বছর মাস দিন পেরিয়ে গিয়েছে, স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার ব্যর্থতা আর আমাকে আক্রান্ত করতে পারেনি। সে কারণেই জীবনের আক্ষেপ কষ্ট হতাশা এসব আমাকে এখন আর মনোকষ্টে আচ্ছন্ন করে রাখতে পারে না।
স্বপ্ন পূরণ না হলে কখনো হতাশ হবেন না। একটু সময় নিয়ে ভাবুন, নিজের ইচ্ছে ও দক্ষতার সামর্থকে বিশ্লেষণ করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান। আকাশকুসুম কল্পনারস আহরণ থেকে বিরত থাকুন, একদিন সফলতা আসবেই।
[ছবি- নেট থেকে নেয়া]
১৬টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
ভারতের এ পি জে আব্দুল কালামের উক্তি মতে,” স্বপ্ন তাই নয় যা তুমি ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন তাই যা তোমাকে ঘুমাতে দেয়না” সামথিং এরকম কোনো উক্তি করে গেছেন। মানুষ স্বপ্নকে কেটে ছেঁটে খাটো করতে বাধ্য হয় নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী। তবে সেইসব দলও নেহায়েত কম নয়, যাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়াতে ঘুরে দাঁড়াবার শক্তিও নিঃশ্বেষ করে ফেলে। তখন মনে হয় তাঁদের কাছে মহামূল্য উক্তিও কোনো কাজে লাগেনা। ডুবে যায় নিমজ্জিত অন্ধকারে। কারো কাছে একমাত্র স্বপ্নভঙ্গের সান্তনা থাকে না।
“যোগ্যতার বাইরেও স্বপ্ন দেখে যে পাবলিক, কি বলবো তাকে?
শুনেছি ছেঁড়া কাথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখে সে!!”
তৌহিদ
মন্তব্যের গভীরতায় মুগ্ধ হলাম। অনেক ধন্যবাদ আপু। আসলে জীবন নিয়ে আমরা অনেকেই বাস্তববাদী নই। এ কারনেই নানাবিধ জটিলতা দেখা যায়।
ভালো থাকুন আপনিও।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি কিন্তু হয়ত পূরন হয়না। তাই বলে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দিতে হবে এমনটা নয়। স্বপ্নই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।
শুভ কামনা ভাই।
তৌহিদ
স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকা, দেখাদেখি চলবে তবে তা বাস্তবতার নিরিখে হতে হবে অবশ্যই।
ভালো থাকুন আপনিও। শুভকামনা রইলো।
মনির হোসেন মমি
স্বপ্ন আর বাস্তবতাকে আপনি চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করলেন।তাইতো আমি এক ফেরিওয়ালা ভাই স্বপ্ন ফেরি করে বেড়াই….।।জীবনের একটা সময়ে আমি আমরাও খুব স্বপ্ন দেখতাম জীবনকে এমনিওমনি সাজাবো আবার আরেকটা সময়ে সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় আর শেষ সময়ে স্বপ্নরা জীবন হতেই পালায় ভাবে কী আর করার-ভুল সামর্থ আর অলসতার মাশুলতো দিতেই হবে।
জীবন ছুয়েঁ গেল লেখাটি।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাইয়া, মন্তব্যে প্রীত হলাম।
শুভকামনা রইলো।
রেজওয়ানা কবির
খুবই বাস্তব বিষয় ভাইয়া। আমরা এমন অনেক মানুষ আছে যাদের তুলনায় অনেক ভালো আছি এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। তবে প্রত্যেক মানুষই স্বপ্ন দেখে কিন্তু তা বাস্তবায়ন নাহলে মন খারাপের কিছু নাই, বরং পিছনে না তাকিয়ে আবার নতুন স্বপ্ন দেখি। আর যদি তাও পুরন না হয় তবে তা আমার জন্য হয়ত না সেজন্যই পাই নি।তবুও তো ভালো আছি।ভালো থাকবেন ভাইয়া, শুভকামনা ।
তৌহিদ
আপনার অনুভূতিকে সম্মান জানাই। চমৎকার অনুভব আপু।
শুভকামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভাইয়া এই বাস্তবতা মনে হয় সবার সাথেই কম-বেশি হয়ে থাকে। স্বপ্ন দেখা তারপর সেই স্বপ্নের সমাধি দেয়া হৃদয়ের গহীন অরণ্যে এযে অনেক বড় ক্ষত। আমাদের চাওয়া বা স্বপ্নটা আমাদের সামর্থ্য থেকে একটু বেশি ই দূরে থাকে তাইতো আকাঙ্ক্ষার জন্ম হয়, স্বপ্ন পূরণের জন্য একটা জেদ, নেশা কাজ করে যা আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তা নাহলে আমরা উপরে উঠতে পারতাম না। স্বপ্ন ই পথ দেখায় , স্বপ্ন ই বাঁচিয়ে রাখে সুন্দরের আশায়।
একরাশ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
তৌহিদ
সুন্দর বললেন, তবে সব স্বপ্ন পূরণ হয়না দিদিভাই। তাই একে মেনে নিয়েই পথ চলতে হয়।
শুভকামনা রইলো।
আলমগীর সরকার লিটন
সত্যই স্বপ্ননিয়ে থাকতে হয় অসাধারণ অনুভূতির প্রকাশ করেছেন প্রিয় তৌহিদ দা
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই, শুভকামনা রইলো।
খাদিজাতুল কুবরা
স্বপ্ন আশা মানুষকে কাজের উদ্যম যোগায়। তবে অকর্মন্য লোকের স্বপ্ন পূরণ হয়না। স্বপ্ন হবে সামর্থ্যের মধ্যে যা আপনি সুন্দরভাবে আলোকপাত করেছেন।
ভালো লাগলো পজিটিভ লেখা।
অনেক শুভেচ্ছা রইল ভাইয়া
তৌহিদ
চমৎকার বললেন আপু। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আরজু মুক্তা
স্বপ্ন হবে সাধ আর সামর্থ্যের মাঝে। তবুও হোঁচট খাওয়া। আবারও বুক বেঁধে পথচলা। চারটা থেকে একটা তো পূরণ হয়।
আপনার লেখাটা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এতটুকু মানুষ বুঝলেই হলো
তৌহিদ
ধন্যবাদ আপু, মন্তব্যে প্রীত হলাম। আপনি লক্ষী পাঠক বটে!
শুভকামনা সবসময়।